somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাপক .......... পারসিক ড্রোননামা..........

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘পাখিটার দিকে আমরা কিছু এলোমেলো সংকেত পাঠাই। এতে পাখিটার মাথা যায় বিগড়ে। তখুনি ওটা ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে মাথা খাটানো বন্ধ করে দেয় পাখিটা। আর ইরানকে ভেবে বসলো তার অবতরণ ঘাঁটি।’


ডানা মেলা ঈগলের মতো পাখিটার নাম ড্রোন। আমেরিকার অনেকগুলো চোখের একটা। যে চোখের ডিকশনারিতে সার্বভৌমত্ব বলে কোনও শব্দ নেই। আছে কেবল অতি চালাকি। এবার সেই অতি চালাক চোখে দড়ি বেঁধে নিচে নামিয়ে লকারে ভরে বেশ করে চোখ টিপ দিল ইরান। যেদিন অক্ষত ড্রোনটার ছবি দেখাল দেশটার টিভি, সেদিন হোয়াইট হাউজের লোকগুলোর সামনে কোনো ক্যামেরা তাক করা না থাকলেও কিংকর্তব্যবিমূঢ চেহারাগুলো কল্পনা করতে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। মনে মনে যারা নিজেদের বিজ্ঞানীদের মুণ্ডপাত করে যাচ্ছিলেন। কোটি কোটি ডলার খরচা করে শেষে এই বানালি!


ইরানের এক প্রকৌশলী আবার ঘটা করে ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরকে ব্যাখা করলেন, কীভাবে তারা মার্কিন গোয়েন্দাবিমানকে মাথায় হাত বুলিয়ে নিচে নামিয়ে আনলেন। শুরুর কথাগুলো তারই বলা।

একটি দু’টি নয়, ইরানের দাবি তারা যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ও ইসরায়েলের চারটি চালকবিহীন বিমানকে মাটিতে নামিয়ে এনেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল- সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ওই বিমান নিয়ন্ত্রণের ইলেক্ট্রনিক কোড হ্যাক করলো কী করে পারসিকরা?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ইরানি বিজ্ঞানী বললেন, ড্রোন যতই আধুনিক হোক না কেন, পথ চিনতে তাকে সেই আদ্যিকালের গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ওরফে জিপিএস প্রযুক্তির কাছেই ধরণা দিতে হয়। আর সেই জিপিএস কাজ করে তিনটি আলাদা আলাদা স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া অবস্থান নির্দেশক তথ্য নিয়ে। ওই সংকেতগুলোকে এলোমেলো করে দিতে ড্রোনের দিকে তাক করে এলোপাতাড়ি তরঙ্গ ছুড়েছেন ইরানি বিজ্ঞানীরা। যাকে বলে ‘নয়েজ’ তৈরি করা।

ওদিকে ড্রোনটার জিপিএস তরঙ্গ গ্রাহকযন্ত্রটা বুঝতে পারলো না, কোনটা তার কাজের তথ্য, আর কোনটা তরঙ্গ-দূষণ। এতে করে মার্কিনিদের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে ড্রোনটা ‘অটোপাইলট’ অবস্থায় চলে আসে। পরের কাজটা অবশ্য খানিকটা জটিল। আর তা হলো ড্রোনটাকে ভুল বুঝিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। সেটাও করে দেখিয়েছে ইরান। একের পর এক কৃত্রিম জিপিএস সিগনাল পাঠিয়ে ড্রোনটাকে বুঝিয়ে দিল (সোজা কথায় যাকে বলে ‘টুপি পড়ানো’)- বাছা তুমি আফগানিস্তানে মার্কিন ঘাঁটির ঠিক উপরেই আছো, ভালোয় ভালোয় ল্যান্ড কর। ঠিক যেন কবিতার লাইন আওড়ে বুলবুলিকে খাঁচায় ভরেছেন পারস্যের কোনো কবি।


কিন্তু দৃশ্যপটের অপর পিঠে ‘নাদান পারিন্দা’ (অবুঝ পাখি) গুলোকে ঘরে আনতে একেবারেই রাজি নয় ওবামার সরকার। ১৩ ডিসেম্বর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্টা ফক্স নিউজকে বললেন, ইরানের পরমাণু কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি চলবেই। প্যানেট্টা মশাই কি এটা জানেন না যে, ২০০৯ সালের জুনেই ইরান নিজস্ব ড্রোনের পরীক্ষা চালিয়েছে? যেটা কিনা রাডার ফাঁকি দিয়ে বোমাও ছুড়তে পারে! ক`দিন আগে ইরান আরও বানাল ‘রাদ’ আর ‘নাজির’ নামের দুই ধরনের বেশক’টা চালকবিহীন জঙ্গিবিমান। দুটোরই দেখার ক্ষমতা ঈগলের মতো বলে জানালেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আহমদ বাহিদি। এমনকি ক’দিন পর নিজেদের ড্রোন অন্যদেশে বিক্রির কথাও বলেছেন বাহিদি!

ইরান যে আফগানিস্তান কিংবা ইরাক নয় তা জানা গেল দেশটির ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) এর ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বিভাগের কর্মকর্তা জেনারেল মোহারাম গোলিজাদের কথাতেও।

গোলিজাদ বললেন, শুধু ড্রোন হ্যাকিং নিয়েই পড়ে নেই ইরান। জিপিএসচালিত মিসাইল ছিনিয়ে নেওয়ার কাজেও তারা অনেক দূর এগিয়েছে। আর কিছুদিন পর ছুটে আসা মিসাইলকে বোকা বানিয়ে লক্ষ্যচ্যুত করে পছন্দমতো জায়গায় পাঠিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারবে ইরানিরা! হোয়াইট হাউজ নিশ্চয়ই এসব খবর রাখে। হয়তো একারণেই ড্রোন আটকের পর ইরান নিয়ে তাদের ও ইসরায়েলের হম্বিতম্বি খানিকটা কমেছে।

মার্কিন সরকারের ভয়টা আরো বাড়িয়ে দিল সেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানি বিজ্ঞানী। বলেছেন, আটক করা ড্রোনটার ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’ বা করে আগ-পাশ-তলা খুলে সব জানার চেষ্টা করছেন তারা। পর্যবেক্ষকদের মতে, সামরিক প্রযুক্তিতে ইরান যেভাবে মিসাইল গতিতে এগিয়েছে তাতে বোধকরি আরকিউ-১৭০ মডেলের মতো ড্রোন বানাতে তাদের আর বেশিদিন লাগবে না।

এ তো গেল প্রাযুক্তিক যুদ্ধের কথা। ইরান কিন্তু রাজনৈতিক আক্রমণের ব্যাপারেও সজাগ। প্রযুক্তিতে সহসা মার্কিনিদের টপকে না গেলেও, কিছু দিক দিয়ে যদি ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সমান সমান হয়ে যায় তবে মার্কিন-বিরোধীরা ইরানের বাড়ানো হাত ধরতে খুব একটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে বলে মনে হয় না। এরই মধ্যে শোনা গেল ইরানের কয়েকজন রাজনীতিক পাকিস্তানকে অনুরোধ করেছেন তারা যেন তাড়াতাড়ি আমেরিকার আঁচলের তলা থেকে বেরিয়ে ইরানের হাত ধরে। পাকিস্তানের জন্য যা কিনা দ্বিধায় পড়ে যাওয়ার মতো প্রস্তাব।

কেননা, এক সময়ের আত্মীয় আমেরিকা তো পাকিস্তানের জন্য দিন দিন কংস মামা হয়ে যাচ্ছে। এই সেদিন ন্যাটোর অতর্কিত হামলায় মারা গেল ২৮ পাকিস্তানি সেনা। অন্যদিকে চলতি সপ্তাতেই পাকিস্তানে জঙ্গিবাদ বিরোধী যুদ্ধে পূর্বপ্রস্তাবিত ৮৫ কোটি ডলার সাহায্যের ৬০ শতাংশই আটকে দিল মার্কিন কংগ্রেস। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পাকি রাজনীতিকরা এও বললেন, চীন তাদের সঙ্গেই আছে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিষফোঁড়া হয়ে যদি মার্কিন বিরোধিতায় কথা আর কাজে আবার উত্তর কোরিয়াও যোগ দেয়, তবেই ষোলকলা পূর্ণ।

এদিকে, ইরানে জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের সদস্যদের হাতে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এসেছে, আগামী নির্বাচনে ঝামেলা পাকানোর পাঁয়তারা করছে কয়েকটা পশ্চিমা দেশ। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া সিআইএ এজেন্ট আমির মির্জা হেকমতিকে জিজ্ঞাসাবাদে হয়তো এ নিয়ে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে। তবে এতকিছুর পরও হোসনি মোবারক বা গাদ্দাফির সঙ্গে যেহেতু আহমাদিনেজাদকে মেলানো সম্ভব নয়, তাই ধরে নেয়া যায় দেশটির রাজনীতির আকাশে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের আশংকাও নেই।

লেখক: সাংবাদিক

[email protected]

লিঙ্ক এইখানে
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×