মানুষের জীবনের পুরোটা সময় পরীক্ষা।আপনি শিশু হয়ে জন্ম নেবার পরই আপনাকে কাদতে হবে!এটা নবজাতকের জন্য একটা পরীক্ষা ।শিশু আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে।এ সময় তাকে দিতে হয় ভালো-মন্দের পরীক্ষা যা কিনা তার আচার-আচরণে বুঝা যাবে।যেমন বড়দের দেখলে সালাম দেয়া কিংবা সবার সাথে মিলেমিশে চলাফেরার পরীক্ষা। শিশুর বয়স ৪-৫ বছর হলেই গ্রামের মসজিদে পাঠানো হয় নামাজ শিক্ষা এবং নামাজের সূরা শিখার জন্য।সেখানেও তাকে ওস্তাদের কাছে দিতে হয় পরীক্ষা ।
যখন তার বয়স হয় ছয় তাকে ভর্তি করা হয় স্কুলে।এইখান থেকে শুরু হয় তার ছাত্রজীবন।প্রত্যেক ক্লাসে দিতে হয় তাকে ২-৩ টা পরীক্ষা যেমন ১ম সেমিস্টার,২য় সেমিস্টার এবং বার্ষিক পরীক্ষা।এছাড়াও ক্লাসটেস্টতো রয়েছে।এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে প্রমোশনের জন্য শিশুকে দিতে হয় পরীক্ষা ।এভাবে এক সময় প্রাইমারী লেভেল পাশ করে সে।
প্রাইমারী স্কুল পাশ করে তাকে ভর্তি হতে হয় মাধ্যমিক স্কুলে।সেখানেও প্রাইমারীর মতো দিতে হয় পরীক্ষা।মাধ্যমিকে আসার পর তার পড়াশুনার চাপ বাড়তে থাকে।এইভাবে সে পাশ করে মাধ্যমিক।এবার সে ভর্তি হবে কলেজে।কিন্তু এবারও ভর্তি পরীক্ষা আছে ।ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে ভালো কলেজে ভর্তি হয় সে।তবে এখন সে আর শিশু নেই।চলাফেরার বুদ্ধি হয়েছে তার ।যাই হোক কলেজেও সে চিরচেনা পরীক্ষা।এভাবে পরীক্ষা আর পরীক্ষা।আর পরীক্ষা দিয়ে দিয়েই একসময় সে I.A পাশ করে।তারপর ডিগ্রী কিংবা অনার্স।সবজায়গায়ই পরীক্ষা ।
এই পুরো সময়টা যে ছাত্রছাত্রী শুধু স্কুল,কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা দেয় তা না।ছাত্র-ছাত্রী থাকাকালে সে যদি প্রেমে পড়ে তাহলে তো আরেক পরীক্ষা ।প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার সামনে দিতে হয় পরীক্ষা।দীর্ঘসময় তার জন্য বসে থাকার পরীক্ষা,ভালো ভালো রেস্ট্রোরেন্টে খাইয়ে বিল দেয়ার পরীক্ষা কিংবা ভ্যালেন্টাইনে তাকে দামী গিফ্ট দিয়ে তাকে যে আপনি অনেক ভালোবাসেন সেটার পরীক্ষা ।
যাই হোক , এক সময় শেষ হয় ছাত্রজীবন।এই দীর্ঘসময়ে আপনি যে কয়টা সার্টিফিকেট পেয়েছেন সেগুলো নিয়ে এবার খোজ করতে হয় চাকরীর। কিন্তু এই চাকরীর জন্যই আপনাকে দিতে হবে ইন্টারভিউ নামক পরীক্ষা ।এটায় পাশ করলে তবেই চাকরী।শুরু হলো কর্মজীবন।
এক সময় নিজেকে মনে হবে একা আর মনে হবে যে এখন একটা বিয়ে করার দরকার ।ল্যাও ঠেলা,এবার পাত্রী খুজতে গিয়ে দিতে হবে আরেক পরীক্ষা।আপনি কেমন পাত্রী চান,বয়স কত,লেখাপড়া কী হেন তেন।একসময় পাত্রী পছন্দ হলে তার বাড়ী গিয়ে তার সাথে কথা বলে পরীক্ষা করে নিতে হবে যে তার সাথে আপনি সারা জীবন কাটাতে পারবেন কিনা।তার পছন্দের সাথে আপনার পছন্দের মিল-অমিল।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তবেই বিয়ে।শুরু হল সংসারজীবন।
বিয়ের পর প্রথম কয়েকমাস ভালোই কাটতে পারে।তারপর এক-দুই বছর হলে সন্তানের বাবা।এবার সন্তানের বাবা হিসেবে শুরু হবে আরেক পরীক্ষা।সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা,তার সঠিক ভবিষ্যত নিশ্চিত করাটা আপনার জন্য একটা পরীক্ষা ।
এভাবে একসময় জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করার পর বৃদ্ধকালে এসে পড়বেন।তখনই শুরু হবে আরেক ধরনের পরীক্ষা।ডায়বেটিস,শরীরে প্রেসার ঠিকঠাক আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে সবসময় ।ডাক্তারের কাছে গেলে এক্স-রে,আল্ট্রাসনোগ্রাফী এসব পরীক্ষা ।এভাবে যেকদিন বাচবেন বাচলেন তারপর আসবে মৃত্যু।ইহকালের কাহিনী শেষ করে পাড়ি জমাতে হবে পরকালে।
পরকালে কবরেও রয়েছে পরীক্ষা,আসল পরীক্ষা।সারা জীবনের ভালো-মন্দ কাজের হিসাব নেয়া হবে।তবে এই পরীক্ষায় ফেল করলে কস্টের সীমা নাই।কিন্তু পাশ করলে সুখেরও সীমা নাই।
মানুষের গোটা জীবনটাই পরীক্ষা পরীক্ষা আর পরীক্ষা।সংক্ষেপে আরোও কয়েকটা পরীক্ষা যেমন,কোনো ধরনের কম্পিটিশন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরীক্ষা,বাইরের দেশে যেতে হলে স্বাস্হ্য এবং ভিসা পরীক্ষা,বাস,ট্রেন কিংবা প্লেনে চড়লে তার টিকিট পরীক্ষা ।আবার গাড়ী নিয়ে কোথাও গেলে ট্রাফিক পুলিশের লাইসেন্স পরীক্ষা,গাড়ি কিনতে চাইলে গাড়ী ভালো নাকি খারাপ তার পরীক্ষা। কোনো কিছু রুপন করলে যেমন কিছুর গাছ রুপন করলে তার যত্নআত্নি,তার রুগ পরীক্ষা। শপিংয়ে গিয়ে ভালো জামা-কাপড় কিংবা জুতা কেনার পরীক্ষা,মোবাইল কিনলে তার কী-প্যাড টিপে ভালো মন্দের পরীক্ষা ।এভাবে মানুষের জীবনে রয়েছে হাজারো পরীক্ষা আর পরীক্ষা। পরীক্ষা পরীক্ষা আর পরীক্ষা।
পরিশেষে বলব,লেখাটা আরোও চমৎকার হতে পারতো,কিংবা হয়নি।তবে আপনাদের ভালো লাগার মতো করে লেখার চেস্টা করেছি।আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
::: মুমিন আহমেদ
তাং ০৯-০৮-২০১৪ ইং