১.
রনি আর ইরা রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। একটু আগেই তৈরি সর্ববৃহৎ মানবপতাকার একটি অংশ ছিল তারা। এখন আবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে হবে। সেখানেও একসাথে গলা মিলিয়ে জাতীয় সংগীত গাইবার ইচ্ছা দুজনারই আছে। অনেক কষ্ট করে দু'জন লাল সবুজ ম্যাচ করে জামা কিনেছে। দূর থেকে দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে দু'জনকে। হঠাত্ রনির ফোন বেজে উঠল। রনির বাবা ফোন দিয়েছে।
-কোথায় তুমি?
-সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাব। রিকশা খুঁজছি।
-আমি কি গাড়ি পাঠাব?
-দরকার নেই বাবা।
-আচ্ছা। সাবধানে যেও।
এই বলে ফোনটা কেটে দিলেন রহমান সাহেব। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কথা শুনে তার মনে পড়ে গেল ১৯৭১ এর সেই ভয়াল ১৬ ডিসেম্বরের কথা। সবাই আত্নসমপর্ণ করায় তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নয় মাসের তার কার্যক্রমের জন্য মুক্তি বাহিনী তাকে ছেড়ে দিবে বলে মনে হয় না। যেকোন সময় তারা প্রতিশোধ নিবেই। কিন্তু কয়েকদিন পর সব শান্ত হলে তিনি পালানো বন্ধ করবেন। হুজুগের মধ্যে একটি মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেটও তিনি পেয়ে গেলেন। এখন অবশ্য সে সরকারের এক বিরাট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। যুদ্ধের নয় মাসের মত এখনও তিনি শান্তিতেই আছেন। হ্যাঁ, অনেক সুখেই আছেন।
২.
অনেক তপস্যার পর রনি আর ইরা রিকশা পেয়েছে। তবে রিকশা অনেক ধীরগতিতে চলছে। বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা। ইরার হাতটা ধরে অন্য হাতে মুঠোফোনে বন্ধুদের বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে এবং দ্রুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে বলছে রনি। দেশপ্রেমের টানে যেন সবাই সেখানে চলে আসে এ আহবান করছে রনি। ফেসবুকে এ নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়াও ইতিমধ্যে শেষ করে ফেলেছে সে। ইভেন্টে প্রচুর মানুষ going দিয়েছে।
৩.
রাত ৮টা। নুরুজ্জামান দ্রুত রিকশা টানছে। বাসায় চাল নিয়ে যেতে হবে তার নাইলে রান্না হতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। আজ উপার্জনটা ভালই হয়েছে তার। কেউ কম ভাড়া তো দেয়ই নেই বরং অনেকে বেশিই দিয়েছে। এক কপোত-কপোতী দুটি বিশ্বরেকর্ড করায় অনেক আনন্দিত। অবশ্য ৭১ এর এই দিনে নুরুজ্জামান এর চেয়েও বেশি আনন্দিত ছিল। শয়তান গুলো দেশ ছেড়ে চলে যাবে এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কি হতে পারে। বিয়ের দ্বিতীয় দিনই তো সে যুদ্ধে এসেছিল এই দিনটা দেখার জন্য। তবে তার এ আনন্দটা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। দারিদ্রতা তার কষ্ট টা বাড়িয়েই চলেছে। আজ সে রিকশা চালাচ্ছে। তবুও দেশ তো স্বাধীন। হঠাৎ শোনা যায় ককটেলের আওয়াজ। জ্ঞান হারায় নুরুজ্জামান। জ্ঞান আসার পর জানতে পারে তার রিকশাটা পুড়ে গেছে। কিছুক্ষন চুপ করে দাড়িয়ে থাকে সে। তারপর একদলা থুতু ফেলে। থুতুটা কার উদ্দেশ্যে ফেলে সেটা দেখা যায় না। এরপর সে বাড়ির পথে হাটা দেয়। পথটা এখনো অনেক দূর।
.
.
.
বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে মিল খুঁজলে পেয়েও যেতে পারেন।