somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধুর এক সহোচর খয়রাত হোসেনের পরিবার অবহেলিত

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামনের সারি( বাম থেকে ডানে): খয়রাত হোসেন, শেখ মুজিবর রহমান, শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, আতাইর রহমান, বসন্ত দাস এবং মোহাম্মদ আলী পিছনের সারি(বাম থেকে ডানে) আবদুর রহমান খান, মনোরঞ্জন ধর, মশিউর রহমান, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলী

বাংলাদেশ স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন রাজনৈতিক সহোচর ভাষা সৈনিক ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ খয়রাত হোসেন। জন্ম-১৯০৯ সালের ১৪ ই নভেম্বর, মৃত্যু-১০ ই মার্চ ১৯৭২। তাঁর নীলফামারী জেলার খয়রাত হোসেন সড়কে অবস্থিত বাসস্থানটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদধূলির স্মৃতিবিজরিত ঐতিহাসিক একটি বাড়ি হিসেবে সুপরিচিত। বর্তমানে এখানে খয়রাত হোসেনের পুত্র হাসনাত বিন খয়রাত(স্ত্রীসহ), দুই নাতি-নাতনীর ছোট্ট একটি পরিবার। একসময় এই বাড়িতে অসংখ্যবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেরে বাংলা এ,কে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সহ বিভিন্ন রাজনীতিবিদরা আসতেন, থাকতেন এবং রাজনৈতিক মিটিং করতেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে খয়রাত হোসেনের অবদানের কথা বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২১ শে ফ্রেব্রুয়ারী ২০১৯ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত ৫.২৮ মিনিটে তাঁর বক্তব্যর মাঝে ভাষা সৈনিক খয়রাত হোসেনের কথা তুলে ধরেন।

তাঁর জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনা: খয়রাত হোসেন ১৯২৯ সালে কারমাইকেল কলেজে ছাত্র সংসদের মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে প্রথম মুসলমান ভি.পি নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ সালে তিনি নীলফামারী থেকে এম.এল.এ নির্বাচিত হন। আসামের “লাইনপোতা আন্দোলনে” মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। মুসলীমলীগ থেকে আওয়ামীলীগ গঠিত হলে আওয়ামীলীগে যোগ দেন এবং পরপর ০৩ বার এম.এল.এ নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এসময় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আসামে মুসলিম উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন শুরু করলে তিনি উক্ত আন্দোলনে যোগ দেন। মুসলিম উচ্ছেদ আন্দোলন ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করলে তিনি গ্রেফতার হন এবং আসামের কারাভোগের পর ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের জনক কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও পরবর্তীকালে খাজা নজিমুদ্দিন ও পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন ‘উর্দূকে’ একমাত্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলে দেশপ্রেমী খয়রাত হোসেন এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। ১৯৫০ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতা খয়রাত হোসেনের উদ্যেগে নীলফামারী মহকুমায় দবির উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মহকুমা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে খয়রাত হোসেনের ভূমিকা ছিলো গৌরবোজ্ঝল। তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছাত্র জনতার উপর পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ,আবুল কালাম শামসুদ্দিনের সাথে খয়রাত হোসেন পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের অধিবেশন বর্জন করেন এবং ভাষা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। তিনি ২১শে ফেব্রুয়ারী ভাষার দাবীতে ধর্মঘট পালনের নির্দেশ দেন এবং এম,এল,এ পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর পাকিস্তানী শাসক চক্রের হীন চক্রান্তে তিনি কারাবদ্ধ হন এবং দীর্ঘ ১৮ মাস কারাভোগের পর মুক্তিলাভ করেন।

১৯৫৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর আতাউর রহমান খানের মুখ্যমন্ত্রীতে গঠিত কোয়ালিশন সরকারের অন্যতম মন্ত্রী হন খয়রাত হোসেন। তিনি কৃষি,খাদ্য,মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং একজন সফল মন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে খয়রাত হোসেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। খযরাত হোসেন,দবির উদ্দিন আহমেদ,আফসার আলী আহমেদ,রহমান চৌধুরী সহ অন্যান্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দ “সংগ্রাম পরিষদ” গঠনের প্রক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করতে থাকেন। কিন্তু খয়রাত হোসেনকে ভাষা সৈনিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও তাঁর নীলফামারীর পরিবারটি প্রথম থেকেই অতি কষ্টে মানবেতরভাবে জীবন যাপন করে যাচ্ছে। এই পরিবারটি শুরু থেকেই চরমভাবে অবহেলিত। পরিবারটি রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি। পরিবারের সদস্যরা সরকারী চাকুরি থেকেও বঞ্চিত। গত কয়েক বছর যাবত প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠানো হলেও তাঁর টেবিলে চিঠি পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

তাঁর নাতি-নাতনীরা বলেন নীলফামারীর ০৫ জন ভাষা সৈনিককে প্রতিবছর একদিনের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদন জানালেও তাঁদের ব্যপারে কোন উদ্যেগ নিলে সফল হতে পারি না। দাদার নামে স্মৃতিসংসদ রয়েছে কিন্তু সেখানে কোন ফান্ড নেই। দাদা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন সংগঠক হলেও অনেকবার অসংখ্য প্রমাণাদীসহ মুক্তিযোদ্ধা সনদের আবেদন করা হলে তা প্রতিবারই বাতিল করে দেয়া হয়। তিনি আজীবন দেশ ও দশের সেবা করে গেছেন কিন্তুু তাঁর বেলায় কেন এতো অবহেলা? কয়েক বছর আগের কথা, খয়রাত হোসেনের পুত্র প্রয়াত সাংবাদিক মোজাহিদ বিন খয়রাত এবং তার মা আরেফা খয়রাত নিজ বাসভবনে ০২টি টিভি চ্যানেলে ১.৫০ মিনিটের একটি সাক্ষাতকার দিয়ে বলেছিলেন“ আমাদের কোন রাজনৈতিক নেতাই কখনোও কোন উপকারে আসলো না। আমরা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করতে চাই। বাবা আমাদের বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে বারবার রাজনীতি মাঠে নামতে বলে গেছেন”এই সাক্ষাতকারটিও চ্যানেলে প্রচারিত হয়নি। এদিকে ২০০৯ সালে এই প্রবীণ নেতার জীবনীগ্রন্থের কাজ শুরু হলেও আর্থিক সংকটের কারণে থমকে যায় গ্রন্থটির প্রকাশনা। খয়রাত হেসেনের নীলফামারীর পরিবারের নাতি-নাতনীরা প্রিয় নেত্রী,জননেত্রী শেখ হাসিনা,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পবিত্র হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ভাষা সৈনিকের নীলফামারীর এই পরিবারটির উপর একটু সদয় দৃষ্টি দিলেই পরিবারটি অবহেলা আর মানবেতর জীবন যাপন থেকে চীরতরে রক্ষা পেতে পারে।
সূত্রঃ http://onenews24bd.com/
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:২৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×