somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাটি বাংলার নায়ক ঈশা খাঁ এর সোনারগাঁও জ্বলেছিলো সোনাবিবির রূপের আগুনে!

১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




নারী নিয়ে কম বিস্তর গবেষণা হয়নি। বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে স্টিফেন হকিং সকলেই নারী নিয়ে গবেষণা করে কোন রহস্য উৎঘাটন করতে পারেনি।কিন্তু শংকরের নিম্নোক্ত উক্তি আমার ভালো লেগেছে।
'' আমার এক এক সময় মনে হয়, নারী রূপের মোহনী মায়া রসে ভরা যে দুটি চোখ, সে চোখ দুটি ট্যাঁরা । সে যখন রামের দিকে চেয়ে থাকে, রাম পুলকিত হয়, শ্যাম তখন হিংসায় জ্বলে মরে। বস্তুত পক্ষে সে রামের দিকে চায় না , শ্যামের দিকেও তাকায় না। সে তখন মধুর দিকে চেয়ে থাকে অর্থাৎ নারী নিজেই জানে না , সে কাকে চায় রামকে না শ্যামকে না ঐ মধুকে।''

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর পূজারিনী কবিতায় বলেছেন,
“ নারী নাহি হতে চায় শুধু একা কারো
এরা দেবী, এরা লোভী, এরা যতো পূজা পায়, এরা চায় ততো আরো
ইহাদের অতিলোভী মন
একজনে তৃপ্ত নয়, এক পেয়ে সুখী নয়
যাচে বহু জন”।

গ্রীক মহাকবি হোমার তাঁর ইলিয়াড মহাকাব্যে দেখিয়েছেন, হেলেনের সৌন্দর্যের আগুনে পুড়ে ধ্বংস হলো ট্রয় নগরী। নারীর (ওয়ালিস সিম্পসন) কারনে ইংল্যান্ডের সিংহাসন ছাড়েন রাজা অস্টম এডওয়ার্ড। আবার মানব সেবায় অনবদ্য ভূমিকা রেখে অমর হয়ে আছেন মাদার তেরেসা।
কাঠ কয়লা অনেক বছর ভূ-গর্ভে থেকে যথেষ্ট চাপ ও তাপে রূপান্তরিত হয় মহা মূল্যবান হীরক খন্ডে তেমনি নারীদের মধ্যে থেকেই অনেকেই ত্যাগ-তিতিক্ষা,দূঃখ- কষ্ট ভোগ করে অনেক সাধনায় “মা” হিসেবে আবির্ভূত হন। মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নামটি মধুর তিন ভূবনে নাই।

মুঘল আগ্রাসন থেকে সোনার বাংলাকে রক্ষা করার প্রতিরোধ যুদ্ধে একসাথে কাজ করতে গিয়ে মহারাজ কেদার রায় ও ঈশা খাঁ এর মধ্যে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তী কালে কেদার রায় ও চাঁদ রায়ের সাথে ঈশা খাঁর বন্ধুত্ব শত্রুতায় পরিণত হয়|কারণ ঈসা খা জোর করে কেদার রায়ের বিধবা বোন স্বর্ণময়ীকে বিয়ে করে ছিলেন| স্বর্ণময়ীর রূপ দেখে মোহিত হয়েছিলেন ঈসা খাঁ বিয়ে করতে চায় বিধবা স্বর্ণময়ীকে।এই কারনে স্বর্ণময়ীর বাবা চাঁদ রায় ও ভাই কেদার রায় দুজনেই ভয়াবহ ক্ষেপে উঠলেন । কেদার রায় আর ঈসা খাঁর বন্ধুত্ব সেখানেই শেষ। ঈসা খাঁ একদিন যাত্রা পথে আক্রমণ করে স্বর্ণময়ীকে তুলে নিয়ে যায়। তার নাম হল সোনাবিবি।কেদার রায়ের কুলগুরু শ্রীমন্ত খাঁ(ভট্টাচার্য) স্বর্ণমণিকে ছলপূর্বক ইসার হাতে তুলে দেয় | শ্রীমন্তের প্রতিহিংসাপরায়ণতার কারণ ছিল তার পরিবর্তে এক দেবল ব্রাহ্মণকে কেদার-চাঁদ ভ্রাতৃদ্বয়ের গুরু রূপে গ্রহণ করা| স্বর্ণময়ী বা সোনাবিবির নাম থেকে ঈসা খাঁর রাজধানীর নাম লোকমুখে সোনারগাঁ হয়েছে।এরপর এনায়ৎ খানকে দূতরূপে পাঠিয়েছিল চাঁদ রায়ের কাছে পত্র দিয়ে। এর ফলে ক্রুদ্ধ কেদার রায় ঈসা খানের কলাগাছিয়া দুর্গ আক্রমণ করে বিধ্বস্ত করেন| সেখান থেকে ঈসা পলায়ণ করে মেদিনীপুরে ত্রিবেণী দুর্গে চলে যায়|
কেদার রায় তীব্র যুদ্ধে ঈসা খাকে হারিয়ে একের পর এক অঞ্চল বিধ্বস্ত ও করায়ত্ত করতে থাকেন| এরপর এক ছিন্ন করে ঈশা খার রাজধানী আক্রমণ করেছিলেন।আরাকান রাজের সাথে যুদ্ধে ঈশা খাকে সাহায্য করলেন না|মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি ঈশা খাকে ক্রমাগত আক্রমণ করেছিলেন।
সোনারগাঁও ছিল বাংলার মুসলিম শাসকদের অধীনে পূর্ববঙ্গের একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। এর অবস্থান ঢাকা থেকে ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। মধ্যযুগীয় নগরটির যথার্থ অবস্থান নির্দেশ করা কঠিন। বিক্ষিপ্ত নিদর্শনাদি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এটি পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী ও উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত একটি বিস্তৃত জনপদ ছিল।
সোনারগাঁও বাংলার ঐতিহাসিক অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন রাজধানী এবং পূর্ব বাংলার একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। এটি একটি নদী বন্দরও ছিল। তাঁতি ও কারিগরদের বিশাল জনসংখ্যার সাথে বাংলার মসলিন বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সোনারগাঁও। প্রাচীন গ্রীক ও রোমান বিবরণ অনুসারে, এই পশ্চাদভূমিতে এম্পোরিয়াম বা বাণিজ্যিক কেন্দ্র অবস্থিত ছিল, যা প্রত্নতাত্ত্বিকরা ওয়ারী-বটেশ্বর ধ্বংসাবশেষের সাথে সনাক্ত করেছেন। অঞ্চলটি বঙ্গ, সমতট, সেন এবং দেব রাজবংশের একটি ঘাঁটি ছিল।
দিল্লি সালতানাতের সময় সোনারগাঁও গুরুত্ব লাভ করে। এটি ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ এবং তার পুত্র ইখতিয়ারউদ্দিন গাজী শাহ দ্বারা শাসিত সালতানাতের রাজধানী ছিল। এখানে রাজদরবার এবং বাংলা সালতানাতের টাকশাল এবং গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালে বঙ্গীয় সালতানাতের রাজধানীও ছিল। এসময় সোনারগাঁও বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনপদে পরিণত হয়। অনেক অভিবাসী ওই এলাকায় বসতি স্থাপন করে। সুলতানরা মসজিদ ও সমাধি নির্মাণ করেন। পরে এটি বারো-ভূঁইয়ার ঈসা খান এবং তার পুত্র মুসা খানের নেতৃত্বে মুঘল সম্প্রসারণকে প্রতিহত করেছিল। বারো ভূইয়াদের পরাজয়ের পর সোনারগাঁও মুঘল সুবাহ বাংলার একটি জেলায় পরিণত হয়।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে, বণিকরা পানাম পাড়ায় অনেকগুল ইন্দো-সারাসেনিক টাউনহাউস তৈরি করেছিল। ১৮৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত নিকটবর্তী নারায়ণগঞ্জ বন্দরের মাধ্যমে এর গুরুত্ব শেষ হয়ে যায়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
কররানী রাজবংশ এর প্রথম নবাব তাজ খান কররানী এর সময়কালে এটি ছিল সাম্রাজ্যের রাজধানী।
উল্লেখযোগ্য নিদর্শন
• ঈশা খাঁর রাজধানী ছিল সোনারগাঁও।
• ঈশা খাঁর স্ত্রী সোনাবিবির নামে সোনারগাঁও এর নামকরণ করা হয়।
• এখানে সোনাবিবির মাজার, পাঁচ পীরের মাজার, গিয়াস উদ্দিন আযম শাহের সমাধি, ইব্রাহীম দানিশমান্দ-এর দরগা ইত্যাদি নানারকম স্থাপনা রয়েছে।
• সোনারগাঁও-এ শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর অবস্থিত।
• পানাম নগর - এই এলাকাটি ১৯শ শতকে সোনারগাঁওয়ের উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ছিলো। এখানে মসলিন কাপড় ব্যবসায়ীরা বাস করতেন। এখানকার সুদৃশ্য বাড়িগুলো এখন ধ্বংসের মুখে রয়েছে।
• এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র এবং সারাবছর অনেক মানুষ এখানে বেড়াতে আসে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৫৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার সন্ধান, যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫



কেউ একজন জানতে চেয়েছেন ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়? বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম বাংলাদেশে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×