এ সংসারে কেউ নয় আপন জনা।
ওরে আসল রূপে নকল যত, আনবে আঘাত অবিরত,
যেমন কালভুজঙ্গ স্বভাব মতো তোলে বিষের ফণা,
এ সংসারে কেউ নয় আপন জনা।
ওরে মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে যদি ডাকিস তারে নিরবধি,
মনের আঁধার ঘুচবে রে তোর, দেখবি আলোর কণা।
সবার তরে আছে সে একজনা, চিনে নে তোর আপনরে ওরে অবুজ মনা।
এ সংসারে কেউ নয় আপন জনা।
মরমী কন্ঠশিল্পী আব্দুল আলীমের গানের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে হয় এ সংসারে কেউ নয় আপন জনা। পৃথিবীতে শুধুমাত্র বাবা-মা তার সন্তানের আপনজন যারা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেন। বাকীরা স্থান কাল পাত্র ভেদে ভালোবাসার সওদা করে।
জন্মের কয়েক মাস পরেই আমার পরম পূজনীয় বাবাকে হারাই। বাবাকে হারানোর পরে অনেক কষ্ট করে মা আমাকে বড় করে তোলে। আমি যখন মায়ের সেবা করার সুযোগ পেলাম তার দুই বছরের মধ্যে আল্লাহ পাক মাকে ওপারে নিয়ে আমাকে সম্পূর্ণ একা করে দিলো।
আমি একা বড় একা, আমার আপন কেউ নেই,
আশা নেই আলো নেই, শুধু যে আঘাত সবেতেই
আমার আপন কেউ নেই।
ও বিধাতা কি হে চাও,কেন এ ব্যাথা দিয়ে যাও,
জানিনা কী অপরাধে,দিলে তুমি অকরুণ সাজা এই,
আশা নেই আলো নেই, শুধু যে আঘাত সবেতেই
আমার আপন কেউ নেই।
জীবনের যত ছিল গান,অকালে তা হল অবসান,
রেশটুকু তাও তো গেল,ভাঙা এই হৃদয়ের ছোঁয়াতে,
আশা নেই আলো নেই,শুধু যে আঘাত সবেতেই
আমার আপন কেউ নেই।
ছোট বেলা থেকেই আমার পাশে কাউকে পাইনি। স্কুলে যখন পড়েছি আমার পক্ষে কখনও কোন অভিভাবক হাজির করতে পারি নাই। পঞ্চম শ্রেণিতে মেধা বৃত্তি পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হলে থানা সদরে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সহযোগী না থাকায় পরীক্ষা দিতে পারি নাই। অথচ আমরা ভাই-ব্রাদার আত্মীয় স্বজন সবই ছিলো কিন্তু সহযোগিতা করার কেউ ছিলো না। আল্লাহ পাকের সহযোগিতায় নিজগুনে বড় হয়ে পেশাজীবি হলাম। দেশ ও দশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও আমার পেশায় ঐক্যবদ্ধ শক্তি না থাকায় সামজিকভাবে পিছিয়ে থাকায় পেশাজীবি সংগঠনের মাধ্যমে দেশ ও দশের কল্যানের চেষ্টা করে দেখি পাশে কেউ নেই।
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের কথা মেনে একলা পথ চলা শুরু করলাম। একা চলতে গিয়ে ক্লান্ত মনে হলো। আবার মনে হয় একা মানে বোকা। তাই একাকীত্ব ঘুচানোর চেষ্টা করেও পারলাম বলে মনে হয় না। স্ত্রী-সন্তানও আমার কাজকে সমর্থন করে না। বলতে পারে আমার দোষ আছে। আর তা হচ্ছে সত্যের পক্ষে অবস্থান নেওয়া। সত্য কথা বা উচিৎ কথায় বন্ধু বেজাড় বা অসন্তুষ্ট। সত্য কথা বলা বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমি বন্ধুহীন হয়ে পড়েছি। প্রতিদিন আমি আত্মসমালোচনা করে আমার দোষগুলো খুঁজে বের করা চেষ্টা করি এবং স্বজ্ঞানে আমি কোন খারাপ কাজ করি না। তারপরও আমি ভালো না। আমার ভালো কাজেও কেউ সমর্থন করে না। অথচ চোর ডাকাতেরও সমর্থক আছে।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সাধারণ জনগণকে অন্ধকারে আলোর দিশা দিতে একটা মশাল জ্বালিয়েছি কিন্তু বাঙ্গালী অন্ধকারে থাকবে তবে আলোতে পথ চলবে না বলে পণ করেছে। এ সমাজে বাটপারের সমর্থন আছে ভালো লোকের সমর্থন নাই।
এলাকার তরুনদের খেলাধুলায় আগ্রহী করে তুলতে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে একটা ফুটবল টুর্ণামেন্ট ছেড়েছি তাতেও কারও সমর্থন নাই। জনগণের নীতি হলো আমি ভালো কাজ করবো না এবং কাউকে ভালো কাজ করতে দেবো না। এ যেন , ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’ নীতি মেনে বসে আছে অবুঝ বাঙ্গালী।
ভালো আছে যা কিছু আমি আছি তার পিছু নীতি গ্রহণ করে চেষ্টা করে যাচ্ছি ভালো কিছু করার জন্য। আপন লোক মনে করে যাদের সমর্থন আশা করি তারাও মুখ ফিরিয়ে নেয়। তখন মনে পড়ে আর একটা গান, আপন বলে যারে ভাবি সে তো আপন না,,,. আপন আমার মা জননী অন্য কেহ না।