somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরগনা আসলে কিসের গনণা?

০৯ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২৪ পরগনা একটা বহুল প্রচারিত শব্দ। ভারতের পশ্চিম বঙ্গের একটা গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহর ও প্রাচীন জনপদ হিসেবে খ্যাত ২৪ পরগনা। আসলে এই পরগনা বলতে কি বোঝায় তা জানতে হলে পড়তে হবে নিচের লেখা।
পরগনা কিছু গ্রাম নিয়ে গঠিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পূর্ব রাজস্ব একক। প্রাচীনকালেও এ ধরনের এককর অস্তিত্ব ছিল, যদিও এর নাম ছিল ভিন্ন। সুলতানি শাসনামলে পরগনা শব্দটির সর্বপ্রথম প্রচলন ঘটে। সুলতানদের অধীনে একগুচ্ছ গ্রাম মিলে একটি পপুলিগঠিত হতো। কয়েকটি গ্রাম মিলে একটি পরগনা গঠিত হতো। শেরশাহের আমলে অতিরিক্ত কর্মকর্তা যেমন সিকদার (সেনা প্রধান, পরগনা প্রধান ), আমিন (বা মুনসেফ), রাজস্ব নির্ধারণ ও আদায়ের জন্য দীউয়ানি বিচারক ও রাজস্ব অফিসার এবং কারকুন (দলিলপত্র সংরক্ষক) নিয়োগের মাধ্যমে পরগনা প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী করা হয়। আকবর প্রবর্তিত সরকার ব্যবস্থায় পুরনো পরগনা প্রথা অক্ষুণ³ ছিল এবং তা আরও বিশদ করা হয়। টোডরমলের বন্দোবস্তে (১৫৮২) পরগনাকে সরকার-এর স্থানীয় একক হিসেবে গ্রহণ করা হয় । পরগনা প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তা ছিলেন সিকদার (নির্বাহি প্রধান, পরগনা প্রধান ও বিচারক), আমিল (রাজস্ব নির্ধারক ও আদায়কারী), বিতিক্‌চি (প্রধান হিসাবরক্ষক ও নিবন্ধক), কানুনগো (রাজস্ব দলিলাদি সংরক্ষক), ফতাহদার বা খাজিনাদার (কোষাধ্যক্ষ)। পরগনার প্রধান ছিলেন সিকদার । কখনও কখনও তাকে পরগনাদারও বলা হতো।

প্রশাসনিক সুবিধার জন্য জমির বিভিন্ন ধরনের স্বত্বাধিকারীদের অধিকার ও দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রচলিত প্রথা ও রীতিনীতির অভিন্নতার ভিত্তিতে পরগনাগুলিকে দস্তুর বা এলাকায় ভাগ করা হতো। সরকার ও অপরাপর সকল পক্ষ প্রথাগতভাবেই পরগনা দস্তুর বা পরগনা নিয়ম কানুন মেনে চলতে বাধ্য ছিল। পরগনা দস্তুরে পরগনা নিরিখ বলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। পরগনা নিরিখের মাধ্যমে জমির খাজনা, ফিস ও মজুরি, ওজন ও পরিমাপ নিয়ন্ত্রিত হতো। প্রতিটি পরগনার নিজস্ব নিরিখ ছিল যা সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ জানত ও বুঝত, যদিও বহিরাগতদের কাছে এগুলি অদ্ভুত ও কৌতুকাবহ মনে হতো। এ পরগনা দস্তুর ও পরগনা নিরিখ প্রথাগতভাবে বহুকাল পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল। খাজনা বৃদ্ধি ও কৃষিক্ষেত্রে নতুন পরিমাপের মানদণ্ড চালু করার ক্ষেত্রে জমিদারদের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এগুলি ছিল নিশ্চিতভাবেই বড় বাধা। এ কারণে কর্নওয়ালিস প্রশাসন পরগনা দস্তুর ও পরগনা নিরিখসহ পরগনা পদ্ধতি বিলুপ্ত করে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে কার্যকর করার জন্য এ ধরনের পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আওতায় জমিদারগণ জমির একচ্ছত্র মালিক হন এবং তাদেরকে যে কোন প্রতিপক্ষের প্রভাবমুক্ত রাখা হয়। পরগনা দস্তুর ও পরগনা নিরিখ যেহেতু জমিদারি অধিকারে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছিল, তাই পরগনা ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়। পরগনা এক সময় ছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করার ফলে এ ব্যবস্থা অনাবশ্যক ও সঙ্গতিহীন হয়ে পড়ে।

কিন্তু বিভিন্ন পরগনার রায়তগণ পরগনা দস্তুর ও পরগনা নিরিখের সঙ্গে এতটাই সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিল যে, তারা কখনোই সরকারি ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেয় নি। তারা তাদের ঠিকানায়, সম্পত্তির দলিলে এবং নিজেদের পরিচয় শনাক্তকরণে অনিবার্যভাবে পরগনার উল্লেখ করত। সরকারও এ বাস্তবতা মেনে নেয়। এভাবে ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে পরগনা পদ্ধতি বিলুপ্ত হলেও সরকারি কর্মকর্তারা জমিজমা জরিপ, গ্রাম চিহ্নিতকরণ, আদালতের ডিক্রি প্রদান ইত্যাদি কাজে পরগনা শব্দটি বরাবরই ব্যবহার করত।

আইন-ই-আকবরীতে মুঘল আমলের যে সকল পরগনার কথা উল্লেখ করা হয় তার মধ্যে বৃহত্তর ফরিদপুর এর ভূষণা, তেলীহাটি, বাকলা, বিক্রমপুর, সাহাবাজপুর, ফতেহাবাদ পরগনা অন্যতম।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৪
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×