
ছবি: মানবজমিন।
ডুবন্ত বাংলাদেশ সবে মাত্র রেসকিউ হয়েছে। এখন সিপিআর এবং আদার'স মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স দরকার।
একটু প্যাসিভ ভাবে বললাম। কারণ ওই একটা বাক্য দিয়ে বেশ বড় একটি বিষয় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি।
৭১ এর পর থেকে বাংলাদেশে কখনোই কনভেনশনাল পলিটিকাল কালচার ছিল না। যারাই ক্ষমতায় গিয়েছে তাদের ওপর মামদভূত ভর করেছিল। এই কারণে বাংলাদেশের ৭১ এর পর্বর্তী প্রজন্ম কনভেনশনাল পলিটিক্স বা সুষ্ঠ রাজনীতি কী জিনিস সেটার এবিসি ও জানে না। আইজে কথায় আছে না; খাঁচায় জন্মানো পাখি উড়তে পারে না। কিছুটা সেরকম!
তবে, খাঁচায় জন্মানো সব পাখি যে উড়তে পারবে না, এটা সত্য নয়। বাংলাদেশের জেন জি'স সেটা প্রমাণ করেছে!
বাংলাদেশে এখন যারা সেন্ট্রালে পলিটিক্স করেন তারা বেশির ভাগই কনভেনশনাল পলিটিক্স এ বিশ্বাস করেন না বা ভরসা রাখতে পারেন না। তাদের স্বপ্ন বড় নেতা হওয়ার। কেমন? ঐযে যারা ধপধপে সাদা পাঞ্জাবি পড়ে ঘুরে বেড়ান হাত উঁচু করে দেবতাদের বর দেয়ার ভঙ্গিতে, যাদের আসে পাশে ১৫/২০ জন চেলা-চামন্দা ঘুরে সব সময়। করো করো তো সাথে বডি গার্ড থাকে সাথে পিস্তল-শর্টগান নিয়ে! আরও যদ্দি একটু ডিটেইলস এ বলি তাহলে; যাদের বড় গাড়ির ডোর এর সাথে ৪/৫ জন ঝুলে থাকে বাদুড়ের মতো! এগুলো ওদের বড্ড নেতা নেতা তৃপ্তি দেয়। কারণ ওরা এমনটাই দেখে বড় হয়েছে। ওদের চিন্তা শক্তি বিক্কলঙ্গ হয়ে ওরা মানসিক ভাবে পঙ্গু হয়েছে সেটা ওরা নিজেও জানে না।
সিপিআর এন্ড আদার মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স: বাংলাদেশে বিএনপি এর সামনে এখন তেমন কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ নেই। জাতীয় পার্টিকে দেশের জনতা ভালো ভাবে চিনে ফেলেছে। এরা সাপ এর গালেও চুমু খায়, ব্যাঙ এর গালেও চুমু খায়! এজন্য এটা পরিষ্কার, আসছে ইলেকশনে এরা ১টি সিট্ পায় কিনা সন্দেহ। যদিও জোট এ শরিক হলে হিসাব আলাদা। তখন ভিক্ষা হিসাবে যে সিট্ পাবে ১/২টা সেটাও জিততে পারবে কিনা বলা যাচ্ছে না। এদিকে বিএনপি এর মাঠপর্যায়ে মোটামুটি একটি সমর্থক গোষ্ঠী আছে। এরা ডাই-হার্ড বিএনপি করে। তাছাড়া, রুমিন ফারহানা, গোলাম মওলা রনির মতো কিছু নেতা আন্দোলনে বেশ সক্রিয় অংশ গ্রহণ এর ফলে বেশ ভালো একটি তরুণ আবুজ ফ্যান বেশ কুড়িয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে বিএনপির এখন মূল প্রতিপক্ষ হচ্ছে বাম দল গুলো।
লীগ এর নাম উচ্চারণ এখন বাংলাদেশে সুইসাইড এর মতোন। এরা আসছে ৫০ বছরেও মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ এখন লীগ ঘৃণা করে। এমনকি বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আওয়ামলীগ সহ এর সকল অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধ হতে পারে! মোটাদাগে বললে; বাংলাদেশ থেকে একটি "ডাইনাস্ট" বা পরিবার তান্ত্রিক পলিটিকাল পার্টি নকআউট হয়েছে। এই সুযোগে বিএনপি কী ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে দিবে? এই মুহূর্তে বিষয়টা খুবই জটিল। এমনও হতে পারে জামাত-বিএনপি জোট হচ্ছে না। এদিকে বিএনপি বাম দল জোট হচ্ছে। জামাত এবং পীর ফকির এর দল গুলো এক জোট হয়েছে। সিচুয়েশনটা খুবই কমপ্লিকেটেড।
একটি ওয়াইল্ড প্রেডিকশন করে বলা যেতে পারে; যারা এই গণ অভ্যুখানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারাই নতুন দল বানিয়ে রাজনীতির মাঠে নামবে। এমনটা হলে বিষয়টা দারুণ হবে! কারণ, যদি এমনটা হয় তাহলে তাঁরা ৩০০ এর ভেতর ২০/২৫ বা তারও বেশি সিট পেয়ে বসতে পারে। আর ওদিকে বিএনপি যদি জোট না করে তাহলে হয়তো ১০০ এর আশে পাশে পেতে পারে বা তার কিছু কম। জামাত এবং পীর ফকির গুলোর দলের এর বেশ কিছু অন্ধ সমর্থক আছে দেশের বিভন্ন অঞ্চলে এরা যদি বেশ ধর্ম দিয়ে মানুষকে ভয়ে দেখিয়ে ভোট আদায় করতে পারে তাহলে জামাত ৪০/৫০টা সিট্ পেতে পরে। এবং পীর ফকির গুলো ৪/৫টা খুব বেশি হলে।
বাম দল গুলোর অবস্থান বাংলাদেশে খুব একটা ভালো না। এঁরা এরা লাউ এর মাচায় ঝুলে থাকা বুড়ো লাউ এর মতো। এদের মানুষ খুব একটা পছন্দ করেন না। এরাও খুব বেশি হলে ৫/১০ তা আসন পেতে পারে। যদি দল গঠন করে ইলেকশনএ যায়। আর যদি সোলো গেম প্লে করে তাহলে ৩/৪ টা ম্যাক্স।
যেটা বড় গেম চেঞ্জের হতে পারে সেটা হলো; নতুন দল। সেট হতে পারে গণ অভ্যুখান থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব দিয়ে! আমার বিশ্বাস এরা যদি পর্যাপ্ত সময় পায় দল সুগঠিত করে নিজেদের প্রার্থী বাছাই করার তাহলে তারা যদি ৪০/৫০ টা আসন পেয়ে যায় আসন্ন নির্বাচনে তাহলে আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না। আর দল গঠন করে যদি শরিক দল গুলোর সাথে থাকে তাঁরা ক্ষমতায়ও চলে আসতে পারে।
রাজনীতির এই জটিল হিসাব নিকেশ কিছুই কনস্ট্যান্ট কিছু না। সবই ওয়াইল্ড প্রেডিকশন!
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি; অভ্যুখানের নেতাদের উচিত এখন দল গঠন করা। এবং সঠিক জোট পার্টনার চুজ করা। তাঁদের যদি লাক ফেভার করে তাঁরা ক্ষমতায় আসবেন। আর যদি লাক ফেভার নাও করে। তাহলে তারাই হবে প্রধান বিরোধী দল। কী দারুণ একটা ব্যপার হবে!! বাংলাদেশের পার্লামেন্ট অধিবেশনে দেখা যাবে তরুণ নেতৃত্ব!! তাঁদের ডেস্ক চাপড়ে বুক চিতিয়ে দ্বুরদান্ত জ্বালাময়ী বক্তিতা!!! এক অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণা হবে!
কিছু ভয়ও আছে। ক্ষমতা মানুষকে অমানুষ করে দেয় অনেক সময়! এজন্য এই তরুণদের পাশে থাকতে হবে প্রকৃত বুদ্ধিজীবীদের। তাদের তৈরি করতে হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য।
একটা কথা একদম পরিষ্কার; বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের সমীকরণ দারুণ জটিল হতে চলেছে। একদিকে মাজা ভাঙ্গা বিএনপি-জামাত, অকর্মণ্য বাম দলগুলি। অন্যদিকে গণঅভুখানের গণ সমর্থন পাওয়া একটি নতুন দল!
আসছে সময় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অতি উজ্জল হবে, না হয় যা-তাই থেকে যাবে। তরুণ দের উচিত হবে এখন পলিটিক্স এ ইনভলব হওয়া। যদিও ওদের ভেতর একটি গোষ্ঠীর বিদ্যমান দলীয় আডিওলজি আছে। এদের মস্তিষ্ক এখনও দাসত্বতে আবদ্ধ! তরুণদের এখন মুক্ত চিন্তা করতে হবে পারলে সোলো পলিটিকাল আইডেন্টিটি তৈরি করে রাজনীতির মাঠে থাকতে হবে। শুধুমাত্র তখনই বাংলাদেশের ব্যাড পলিটিকাল প্রাকটিস বা ডাইনাস্ট পলিটিকাল আডিওলজি পরাজিত হবে। কিছু বুড়ো দাস মস্তিষ্ক বা পরিবার তন্ত্র এর মতো জঘন্য পলিটিকাল প্রাকটিস থেকে মুক্তি মিলবে। তখনই আসবে প্রকৃত বিজয়!
একটি রক্তাত্ব গণঅভ্যুখান পরবর্তী চলমান অরাজগতা নিয়ে বলব; এখন যা চলছে সেটা আর ৫টি গণঅভভূখান এর সূত্র ধরে চলছে। এটাই ফ্যাক্ট। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইতিহাস ঘটলে এমনটাই পাওয়া যায়। যদিও কিছু এক্সেপশন আছে। একটা বড় স্ট্রাকচার যখন হটাৎ ক্রাশ করে, তখন কলাট্ট্রাল ড্যামেজ হওয়া সাভাবিক ব্যপার। তাছাড়া সংখ্যলঘু ওপর আক্রমণ বা যেসব সহিঙ্গতার নিউজ আসছে সেগুলো বেশিরভাগই গণঅভ্যুখানে পরাজিত স্বৈরাচারী শক্তির মাস্টার প্ল্যান এর অংশ মাত্র। তাদের এটা অনেক আগেই প্ল্যানড ছিল। এটা নিয়ে আমি একটি পোস্টও দিয়েছিলাম। একটি স্ক্রিনশট ভাইরাল হতে দেখেছি।
একটি ব্যাটেল ফিল্ড এ যখন কোনো পক্ষের পরাজয় ঘটে বা তারা ফলব্যাক করে। তখন তারা অনেক ল্যান্ড মাইনস বা বুবি ট্র্যাপ্স সেট করে রাখে। দেশে চলমান সহিংসতা কিছুটা সেটার মতোই। গত ১ সপ্তা থেকে পরাজিত শক্তি এটা প্ল্যান করেই রেখেছিল। ইফ দে লুস দিস ব্যাটেল, দে উইল প্লে দ্য ডার্টি ট্রাম কার্ড টু ব্লেম দ্য উইনার্স ফর রেস্ট অফ দ্য লাইফ। ওরা মাস-প্যানিক ছড়িয়েছে সংখলঘু সম্প্রদায়ের ভেতর। এবং সেটা ওয়ার্ক আউট ও করেছে। আমার হাইপোথিসিস হলো: দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ইউজ হয়েছে আওয়ামীলীগ দারা। কিছুটা ব্রেনওয়াশ'ড ও বলা যায়। এটা নিয়ে হয়তো পরে একটা লেখা হবে।
এখন সবাইকে এটাই বলতে চাই; বাংলাদেশ ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন হয়েছিল। ২০২৪ এর ৫ই অগস্ট বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে তাঁদের মানবিক স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে!
ইনকিলাব জিন্দাবাদ!
এই গণঅভ্যুখানে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের জন্য অনেক অনেক প্রার্থনা করবেন। তাঁদের জন্যই বাংলাদেশ নতুন উজ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে।
সকলকে শুভেচ্ছা!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


