
এবার এক হালচাষী বললো, আমাদেরকে কাজ সম্পর্কে কিছু বলুন। আর তিনি উত্তর দিলেন, বললেন:
তোমরা কাজ করবে যেন তোমরা ধরণী আর ধরণীর আত্মার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারো।
কারণ অলস থাকার অর্থ হল ঋতুর অচেনা হয়ে পড়া, জীবনের যে শোভাযাত্রা রাজকীয়তা ও গর্বিত আত্মসমর্পণের সঙ্গে অনন্তের দিকে এগিয়ে চলে তা থেকে ছিটকে পড়া।
তোমরা যখন কাজ কর তখন তোমরা একটা বাঁশি হয়ে ওঠো, যার হৃদয় থেকে উৎসারিত কালের ফিশফিশ ধ্বনি সঙ্গীতে রূপান্তরিত হয়।
সবাই যখন একযোগে গান করে তখন তোমাদের মধ্যে কে হতে চাইবে একটা নলখাগড়া, বোবা এবং নীরব?
সবসময় তোমাদেরকে বলা হয়েছে যে কাজ একটা অভিশাপ, শ্রম একটা দুর্ভাগ্য।
কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, যখন তোমরা কাজ করো তখন তোমরা পৃথিবীর সুদূরতম স্বপ্নের একটা অংশ পূরণ করো, ওই স্বপ্নের জন্মলগ্নে যে অংশের দায়িত্ব তোমাদের ওপর অর্পণ করা হয়েছিল।
আর শ্রম করার মধ্য দিয়েই তোমরা প্রকৃতপক্ষে জীবনকে ভালোবাসো।
আর শ্রমের মাধ্যমে জীবনকে ভালোবেসেই জীবনের গভীরতম গোপন রহস্যের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা স্থাপন করা যায়।
কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের ব্যথার কারণে জন্মকে একটা দুর্ভাগ্য মনে করো এবং মাংসের সহায়তাকে একটা অভিশাপ ভাবো তাহলে আমি বলবো যে সেটা আর কিছু নয়, তা তোমাদের ভ্রূর উপরের স্বেদবিন্দু, যেটা সেখানে যা লেখা আছে তা ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
তোমাদেরকে বলা হয়েছে জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন, আর তোমাদের ক্লান্তির কারণে তোমরা ক্লান্তজনদের কথার প্রতিধ্বনি করো।
আর আমিও বলবো, কোনো উদ্দীপনা না থাকলে জীবন সত্যিই অন্ধকারাচ্ছন্ন।
আর জ্ঞান যদি অনুপস্থিত থাকে সকল উদ্দিপনাই অন্ধ।
কর্মহীন সকল উদ্দীপনা নিরর্থক আর ভালবাসা না থাকলে সকল কর্ম শূন্যতায় পর্যবসিত হয়।
আর তুমি যখন ভালোবাসার সঙ্গে কাজ করো তখন তুমি তোমার নিজেকে, তোমাদের পরস্পরকে এবং বিধাতাকে এক বন্ধনে বেঁধে রাখো।
আর ভালোবাসার সঙ্গে কাজ করার অর্থ কি? তোমাদের হৃদয় থেকে টেনে আনা সুতা দিয়ে কাপড় বোনা, যেন ওই কাপড় পরিধান করবে তোমার প্রিয়া।
তার অর্থ হলো মমতার সঙ্গে একটা বাড়ি বানানো, যেন তোমার প্রিয়া সেখানে বাস করবে। তার অর্থ হলো ভালো
বাসার সঙ্গে বীজ বপন করা আর আনন্দের সঙ্গে ফসল ঘরে তোলা, যেন তোমার প্রিয়া ওই ফল খেতে পারে।
তার অর্থ হলো তোমার তৈরি সব জিনিসের মধ্যে তোমার আত্মার একটা নিঃশ্বাস সঞ্চারিত করা।
আর এই কথা জানা যে সকল আশীষধন্য মৃতরা তোমার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে, তোমাকে তারা লক্ষ্য করছে।
আমি তোমাদেরকে প্রায়ই বলতে শুনেছি, যেন তোমরা ঘুমের মধ্যে কথা বলছো, "যে মানুষ মর্মপাথর দিয়ে কাজ করে পাথরটির মধ্যে নিজের আত্মার আকৃতি দেখতে পায় সে জমিতে লাঙল চালানো চাষীর চাইতে মহত্তর। আর যে মানুষ রামধনু ধরে এনে মানুষের আকৃতিতে তাকে কাপড়ের উপরে আঁকে সে আমাদের পায়ের জন্য জুতা তৈরি করা চর্মকারের চাইতে মহত্তর। "
কিন্তু আমি বলবো, ঘুমের মধ্যে নয়, মধ্যদুপুরের জাগ্রত মুহূর্তেও, বাতাস বিশাল ওক তরুরাজির সঙ্গে যে রকম মধুর কণ্ঠে কথা বলে তৃণগুচ্ছের ক্ষুদ্রতম ফলার সঙ্গেও তার চাইতে কম মধুর কণ্ঠে কথা বলে না।
আর একমাত্র সে-ই মহান যে তার আপন ভালবাসার মাধ্যমে বাতাসের কণ্ঠস্বরকে আরো মধুর করে তোলে।
কাজ হলো দৃশ্যমান করে তোলা ভালোবাসা আর তোমরা যদি ভালোবাসার সঙ্গে কাজ করতে না পরো, যদি শুধু বিতৃষ্ণার সঙ্গে কাজ করো তাহলে তোমাদের জন্য ভাল হবে, তোমাদের উচিত হবে, তোমাদের কাজ বাদ দিয়ে মন্দিরের ফটকের সামনে বসে যারা আনন্দের সঙ্গে কাজ করে তাদের কাছ থেকে ভিক্ষার দান গ্রহণ করা।
কারণ তুমি যদি ঔদাসিন্যের সঙ্গে রুটি সেঁকো তাহলে তুমি বানাবে তেতো রুটি, যা মানুষের ক্ষুধাকে অর্ধেক প্রশমিত করবে।
আর তুমি যদি অসন্তোষ ভরে আঙ্গুর পেষো তাহলে তোমার ওই অসন্তোষ মদের মধ্যে বিষ ঢেলে দেবে।
আর তুমি যদি দেবদূতদের মতোও গান করো, কিন্তু তোমার গানকে না ভালোবাসো, তাহলে তুমি মানুষের কানকে বন্ধ করে দাও, তখন তারা দিনের কণ্ঠস্বর আর শুনতে পায় না, রাতের কণ্ঠস্বরও না।

ছবি সূত্র : ইন্টারনেট।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


