somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি কারো করুণা চাই না

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘আমি, ফাহাদ কবির ইউল্যাবে মিডীয়া স্টাডিজ এন্ড জার্নালিজম বিভাগের ১০ম সেমেস্টারের ছাত্র। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে চলতি সেমেস্টারের পুরো টাকা পরিশোধ করতে না পারায়, ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আটকে দেয়। বিষয়টি সুরাহার জন্যে তাদের সাথে গত এক সপ্তাহ যাবৎ কয়েকদফা আলাপ করেও কোন সমাধান পাইনি। তারপরও আজ ২৭ ডিসেম্বর, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে গেলে রেজিস্টার অফিস থেকে লোক এসে আমাকে পরীক্ষা দানে বাঁধা দেয়।
সাত ভাই বোনের সংসারে আমার মা’ই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তবুও জমি বিক্রি করে আমার মা আমার লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন গত সাড়ে তিন বছর। হঠাৎ করেই আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে চলতি সেমেস্টারে এই ব্যয় বহন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তারপরও তাদের কাছে আমি আর্জি পেশ করি যে, যদি টাকা পরিশোধ না করতে পারি, তারা চাইলে আমার রেজাল্ট আটকে দিতে পারে। কিন্তু কোন কথা না শুনে আমাকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়া এবং অনেক পরীক্ষার্থীর আমার মতো সমস্যা থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দিয়ে তারা পুরোপুরি বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে।
এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে ইউল্যাব ক্যাম্পাস বি’র সামনে আমি অবস্থান করছি। আমার সকল বন্ধু, বড়ভাইবোন, ছোট ভাইবোনদের আমার পাশে দাঁড়াবার আহবান জানাচ্ছি। আমি কারো করুণা চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে এ দাবি আমার অধিকার।’

উপরের লেখাটি একজন তরুনের, শেষ বাক্য দুটি দিয়েই আলোচনা শুরু করতে চাই–

১) আমি কারো করুণা চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে এ দাবি আমার অধিকার

:অধিকার ব্যাপারটি আসলে কি? এটা কি এমনি এমনি পয়দা হয়। জানা মতে অধিকার এর দু’টি অংশ একটি প্রাকৃতিক অপরটি মানবিক। প্রাকৃতিকটি জন্মগত এবং সেটা শুধুই প্রকৃতির উপর মানবাকৃতি বা মানুষ নামক প্রানীটির, তবে সে অধিকার নিরঙ্কুস কিনা তা নিয়ে সন্ধেহ আছে! সেই সন্ধেহই নৈতিকতা, ভূত, ইশ্বর, ধর্ম ইত্যাদি রুপে আজো আমাদের মাঝে উপস্থিত। অপরটি মানবিক বা মানুষের সৃস্ট বা নিজস্ব, মানুষের সৃষ্ট (বা অর্জিত) সুযোগ, চর্চা ও বস্তু সমূহে অধিকার বা মানবাধীকার। ইতিহাসের আগে থেকেই সকল মানবিক অধিকার আসলে বানিজ্য আলোচনা, মূল্য নির্ধারন পূর্বক যে বিনিময় তাহাই বানিজ্য। কিসে কি বা কতটুকু অধিকার তা নির্ধারিত হয় আইন দ্বারা বা আইন মান্য করবার মধ্য দিয়ে বা দায়ীত্বশীলতার বিনিময়ে অধিকার অর্জিত হয়। হ্যা ‘করুণা’ বলে একটি বিষয় আছে সেটা প্রাপ্তির সুযোগ কি অধিকার? না, সেটা দাতার ইচ্ছায় তৈরী একটি সুযোগ মাত্র, আর এটাও জানি যত (বিবেচনাহীন) করুনা ততই অপরাধ চর্চার পথ তৈরী।



২) সাত ভাই বোনের সংসারে আমার মা’ই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তবুও জমি বিক্রি করে আমার মা আমার লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন গত সাড়ে তিন বছর

:বাংলাদেশে আমরা সকলেই ভবিষ্যৎ ভাবনায় ভাবিত। এ ব্যাপারে অমরা এতোই চিন্তিত যে আমরা ইহকাল বিষয়ে ভাববারই সময় পাইনা, তাই ইহকালে কতগুলি দায়ীত্ব জ্ঞানহীন অধিকার পয়দা করিবো তা ভাবিবার সময় আমাদের হয় না। আর চোখের কান্নার বিপরীতে করুণা প্রাপ্তীর সুযোগতো প্রায় অধিকারের সমান, যদি করুণাই না চাই তবে কেন এ বাক্য উচ্চারন?



৩) ছবিটি দেখুন…

যতটুকু জানি মানুষ মাকে চিঠি লেখে মাতৃভাষাতেই, অন্যভাষায় সে চিঠি লেখা হলে পন্ডিতী প্রকাশ পায় এবং মাকে অত্যন্ত দায়ীত্বশীলতার সঙ্গে অপমানও করা হয়। বাংলাদেশের একটি ছেলের মায়ের ভাষা ইংরেজী! ধন্য হে মা তুমি…





৩) আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে চলতি সেমিস্টারের পুরো টাকা পরিশোধ করতে না পারায়, ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আটকে দেয়

:আলোচনা করবার প্রক্রিয়ায় করুণা ভিক্ষা ছাড়া আর কি কোন পথ আছে? সেমিস্টারের টাকা পরিশোধ সাপেক্ষেই তো ক্লাস করিবার এবং পরীক্ষা দেবার অধিকার প্রাপ্ত হওয়া যাবে এ রকমইতো চুক্তি, তাই নয় কি? যদি এর ব্যত্বয় ঘটে তবে কে চুক্তির শর্তাবলী ভঙ্গ করিয়াছে? অপরাধী কে, সাজা কার প্রাপ্য?

৪) না এ অংশটুকু কোন নির্দিষ্ট বাক্য নিয়ে নয়…

:ছেলেটির লেখার পুরো টেক্সটে বাংলাদেশের সমাজ ও শিক্ষা ভাবনার যে চিত্র উঠে এসেছে তার বিবেচনায় আমি মনে করি শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষার পার্থক্য ও প্রয়োজনীয়তার আলোচনাটি সমাজে জরুরী হয়ে পড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় নামধারী কিন্ডারগার্ডেন গুলির সমাজে আদৌ প্রয়োজন আছে কি? কেন প্রয়োজন?

পড়তে পারার সক্ষমতার জন্য ১০ বছরের স্কুল যাপনই অনেক বেশী। আর চাকুরী পাওয়ার জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিষয় অনুসারে ৩ মাস থেকে ২ বছরের ডিপ্লোমাই যথেষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয় হোক গবেষনা বা জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্র।

না ডিপ্লোমার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানানোর কোন প্রয়োজন নেই। এ সব বিশ্ববিদ্যালই এটা চালু করতে পারে, আর এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক পক্ষ তাদের মালিকানাধীন কোম্পানীর নিয়োগ প্রক্রিয়াটি একটু সংশোধন করে নিলেই চাকুরির বাজারটাও সচল থাকবে প্রসারিতও হবে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকেরা বসেই এ সমস্যার সমাধান করে ফেলতে সক্ষম। সরকারী নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সময়ের দাবীতেই পালটে যাবে। আশা করি এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক পক্ষ সত্যিকার উদ্যোক্তা হয়ে উঠবেন। আমাদের বাবা/মায়েরা চিন্তা ও অর্থ উভয় অর্থেই গরিব, তবে ডিপ্লোমা ও চাকুরী পাইবার সুযোগ afford করিবার সামর্থ্য তাহারা এখোনো হারাননি। তাহাদের পথ দেখানো আপনাদেরই দাযীত্ব হে এলিট সকল। আর কত করুণা বেচিয়া মহান হইবেন? আমরা আর করুণা চাই না। সময় আসিয়াছে আপনাদের সত্যিকার Great হইবার। আর মার্কিন বা বিলেতের বাজারেতো সকলে মেধা বিকোবে না, দেশের বাজারেই সকলের কর্ম সংস্থান হোক…

৫) আইন অনুযায়ী কোন উপায় না থাকিলে ফাহাদ কবির পরীক্ষা দিতে পারুক এ জন্য আমি ইউল্যাব কতৃপক্ষের কাছে করুনাই ভিক্ষা করছি। করুনা নির্ভর এ সমাজে ফাহাদ কবিরও সেটা পেলে ইউল্যাব কতৃপক্ষের ২০/৩০ হাজার টাকা লস হবে মাত্র।

আরো একটি পথ আছে, ছেলেটির কিছু সামাজিক বা এক্সট্রা কারিকুলাম আছে বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে, সেটা বিবেচনায় এনে তাকে বৃত্তি/স্টাইফেন/স্কলারশিপ দেয়া যেতে পারে।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৭
১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×