somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসার দুরত্ব

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভালবাসার দুরত্ব
লেখক: নিলয় আহসান নিশো
.
(১)
..
...
"আপনাকে কত বার বলেছি এইসব ফালতু জিনিস কখনো আমার জন্য আনবেন না।" আমার এলার্জি আছে বেলীফুলের এর ঘ্রাণে। আর আপনি যখন তখন আমার রুমে ঢুকবেন না।
তাহলে কিন্তু আমি আপনার বাসা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হব।
আপনার সাথে আমার যেমন ডিল হয়েছিল ঠিক সেইভাবেই চলতে পারলে চলেন নাহলে আমি কিন্তু চলে যাবো। এই শেষ বারের মত বললাম।
..
আপনি আপনার কাজ করবেন আপনার মত করে আমার কাজে নাক গলাবেন না। আর আমার কাছে এসে ভাব জমাতেও চেষ্টা করবেন না।আপনাকে আমার মোটেও সহ্য হয় না এই টুকু কথা আপনার মাথায় যায় না? আমি আপনার মত বেহায়া মানুষ জীবনেও দেখি নাই।একটা মানুষ কতটা বেহায়া হতে পারে সেটা আপনাকে না দেখলে আমি জানতাম ই না।
..
আপনি কি বুঝেন না যে আপনাকে আমি কখনোই আমার স্বামী হিসেবে মানবো না আর মানতে পারবো না। আমি মরে গেলেও আপনার মত একটা গাইয়ে ভুত খ্যাত মার্কা মানুষ কে আমার পাশে মেনে নিতে পারবো না।তাই ভাল হয় আপনি নিজে সব শেষ করে দিবেন।
..
আচ্ছা এমন আর কখনো হবে না। ভাত বেড়ে দিচ্ছি টেবিলে আসেন খেয়ে নিবেন।
আমার খাওয়ার রুচি নেই। আপনার হাতের অখাদ্য গুলো আপনি নিজেই খেয়ে উদ্ধার করুন।
..
(২)
..
পুরো ৩০মিনিট লেট হয়ে গেছে আজকে রাস্তার জ্যামের জন্য অফিসে আসতে।
এসেই বুঝলাম অফিসে কিছু একটা বিশেষ পরিবর্তন হয়েছে।আমার সহকর্মীরা সবাই আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছিল এমন ভাবে যেন আমি মাত্র চিড়িয়াখানা থেকে পালিয়ে এখানে এসেছি। যাই হোক আমি কাউকে কে কিছু না বলে চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে বসলাম।
.
কিছুক্ষন পরেই MD স্যারের রুম থেকে আমার ডাক পড়লো।
আমাদের MD স্যার মানে জনাব কাজী ঈশা সাহেব খুবই ভাল মনের মানুষ। আর এই অফিসে আমার অবস্থান টা MD স্যারের পরেই।স্যার আমাকে অনেক আদর আর স্নেহ করেন।আমি আমার কাজের প্রতি অনেক যত্নবান তাই তিনি আমাকে অনেক বিশ্বাস করেন।
.
আমি স্যারের রুমে ঢুকেই একটা বড় ধরনের ধাক্কা খেলাম।কারন স্যারের চেয়ারে একজন মেয়ে বসে আছেন আর স্যার পাশে সোফায় বসে আছেন। আমি সালাম দিতেই স্যার বসতে বলে চেয়ারে বসে থাকা মেয়েটি তার মেয়ে বলে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
.
নিরুপমা,
এই হল নিলয়, আমার অফিসের সেরা স্টাফ।আর নিলয় এই হল আমার মেয়ে।লেখাপড়া শেষ করেছে কিছুদিন হল। এখন থেকে এই অফিসেই বসবে।
মানে নতুন MD হলেন মিস নিরুপমা।
আমাকে তাকে অফিসের সব কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে তোমাকে। কাল থেকেই নতুন প্রজেক্ট টা দিয়েই অফিসের কাজে হাত দিবে।
আর সেই প্রজেক্ট এর কাজ টা আজকে রাতের মধ্যেই শেষ করে কাল সকালেই আমার কাছে সাইন করিয়ে নিয়ে ওকে জমা দিও।
আমি এখন থেকে উত্তরার নতুন খুলা ব্রাঞ্চ টাতে বসবো।
আমি মাথা নেড়ে বেরিয়ে আসলাম।
.
পরের দিন সব কিছু গুছিয়ে স্যারের কাছে সাইন করিয়ে এনে ম্যাডামের রুমে জমা দিয়ে বেরিয়ে আসতেছিলাম।
তখন ম্যাডাম আমাকে ডাকলেন,
নিলয় সাহেব শুনুন...
.
:জ্বি ম্যাডাম,
:আব্বু আপনার কথা শুনলেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকেন। বলেন আপনি অফিসে থাকলে নাকি উনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।আমার যেকোন প্রয়োজনে আপনার সাহায্য নিতেও বলেছেন।কারন কি বলবেন?
:আমি ঠিক জানিনা ম্যাডাম তবে হয়তো উনি আমাকে অনেক ভালবাসেন তাই এমন করেন।
.
এই কথা শুনার সাথে সাথেই ম্যাডামের চেহারায় প্রচন্ড রাগ দেখতে পেলাম।আমি আর কিছু না বলেই আমার ডেস্ক এ চলে আসলাম।
.
মাস ছয়েক এভাবেই চলতে লাগলো অফিস।
এতদিনে বুঝে গেলাম যে আমাদের ম্যাডাম প্রচন্ড বদরাগী টাইপের একটা মেয়ে।আর আমার উপর একটু বেশি ই রাগ কারন অফিসের সব কলিগ রা নিলয় বলতে পাগল আর আমাদের পুরোনো MD মানে উনার আব্বু ও আমার প্রশংসা করেন নাকি সব সময় বাসাতেও। তাই হয়তো আমার উপর একটু বেশি ই রেগে থাকেন সব সময়।
যখন তখন অহেতুক কাজে আমাকে চাপে রাখে।আর আমাকে বকুনি দেবার উপায় খুজে।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেটা কখনো পেয়ে উঠেন নি।
.
৭মাস এভাবে চলার পর,
হঠাত আমাদের MD স্যারের হার্ট এটাক হয়।স্যারের আপন বলতে এই মেয়ে ছাড়া আর কেউ নাই।স্যার এর হার্ট এ ৩টা রিং পড়াতে হবে।আর সেটার জন্য স্যার কে বিদেশে নিতে হয়।একা মেয়ে মানুষ এসবসব সামলাতে পারবে না।তাই জন্য স্যার আমাকে বাসায় ডেকে নিয়ে তাদের সাথে উনার অপারেশন এর জন্য বিদেশে যেতে বললেন আর এটা বললেন আমার অথবা আমার পরিবারের অসুবিধা হবে কিনা।
আমার তিন কুলে যে আমি ছাড়া আর কেউ নেই সেটা সেদিন ই স্যার জানতে পারে।
যাই হোক আমি স্যার এবং স্যারের মেয়ে যাই স্যারের অপারেশন এর জন্য।
মাসখানেক পরে দেশে ফিরে স্যার রেষ্ট এ থাকেন। উত্তরার ব্রাঞ্চ টাকে বাসায় নিচতলায় শিফট করিয়ে নেন।
জরুরি কোন কাজে দরকার হলে আমাকে বাসায় ডেকে নিয়ে বলেন কিভাবে করতে হবে।আর আমিও সেভাবেই করি যেভাবে উনি বলেন।
..
...
হটাত একদিন উনি সন্ধ্য বেলার অফিস টাইমের পর আমাকে বাসায় জরুরি ভাবে ডেকে পাঠালেন।
আমি বাসায় যেতেই উনি আমাকে বসতে দিয়ে ইতস্তত করছিলেন।
আমি তখন বললাম,
স্যার, আমাকে কি কিছু বলবেন? অথবা আমি কি ভুল কিছু করে ফেলেছি?
স্যার বললেন,
না বাবা তেমন কিছু না তুমি তো আমার শরিরের অবস্থা জানোই।কখন কি হয় বলা যায় না।
ঘরে বিবাহ যোগ্য মেয়ে আছে।মেয়েটাকে বিয়ে দিতে পারলে একট শান্তি পেতাম।
তো স্যার দিয়ে দিন ম্যাডামের বিয়ে। আর ম্যাডামের মত উচ্চ শিক্ষিতা ভদ্র সুন্দরী মেয়ের বিয়ে নিয়ে আপনি এত দুশ্চিন্তা করবেন না।
শুধু বলেন কেমন ছেলে আপনি খুজতেছেন, তাহলে কালকেই আমি মেরিজ ব্যুরো তে জানাই দিবো।
বাবা নিলয়,
জানিনা কথা টা বলা ঠিক হচ্ছে কিনা।আর তোমার তো মুরুব্বি ও নাই।থাকলে আমি তাদেরকে ডেকেই কথা টা বলতাম।
.
:বলছিলাম কি বাবা... আমার নিরুপমাকে তোমার কেমন লাগে?
:মানে?? আমি ঠিক বুঝলাম না স্যার
:বাবা আসলে আমার মা মরা মেয়ে টা একটু জেদি আর বদরাগী হয়ে গেছে। আমার মেয়ে টা যার তার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না। তাহলে আমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবো। আমি আমার মেয়ের জন্য তোমার মতই একজন সৎ ন্যায় নিষ্ট কর্মঠ ছেলেই খুজতেছিলাম।তাই আমি চাই তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমার নিরুপমাকে তুমি বিয়ে করো। আমার একটা মেয়ে আর একটা ছেলেও হবে তখন।
:স্যার আমি আপনার একজন সামান্য বেতনভুক্ত কর্মচারী। আর ম্যাডাম মনে হয় আমাকে মেনে নিবে না।কারন এখনি ম্যাডাম আমাকে সহ্য করতে পারেন না।
: আমি জানি বাবা, আর তাই জন্যই আমি চাই তুমি আমার মেয়ে টাকে বিয়ে করো।আর আমি ওকে বিয়ের জন্য রাজি করাবো।তুমি শুধু আমার মেয়ে টাকে একটু আগলে রেখো কষ্ট দিওনা। আসতে আসতে ভালবাসা দিয়ে সব ঠিক করে নিও বাবা।
..
...
(৩)
..
...
২৩শে জুন ২০১৭...
আমাদের বাসর রাত....
আগে মেস এ থাকতাম। কিন্তু বিয়ের জন্য আগের সব জমানো টাকা আর ব্যাংক থেকে কিছু ঋণ নিয়ে ছোট্ট একটা ফ্লাট কিনি।কারন বিয়ের পর তো মেস অথবা শ্বশুর বাড়ি কোন টাতেই থাকা যায় না।
..
রাত ১১টার দিকে বাসর ঘরে ঢুকি।
নিরুপমার পাশে গিয়ে বসতেই নিরুপমা একবারে রেগে মেগে আগুন।
বলতে শুরু করলো,
শুনেন নিলয় সাহেব। আপনাকে আমি বিয়ে করেছি শুধু মাত্র আব্বুর অসুস্থতার জন্য আব্বু কে না করতে পারি নাই তাই।কারন এই পৃথিবী তে আমার আব্বু ছাড়া আর কেউ নাই।আব্বুর কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে?
আর আপনি ভাল করেই জানেন আপনাকে আমার মোটেও সহ্য হয় না।সাথে আপনার এই তেল মার্কা বিচ্ছিরি হাসিটাও।
তাই আপনি আমার কাছে আপনার স্বামীত্বের অধিকার ফলাতে আসবেন না।পরিনাম ভাল হবে না।
আর হ্যা এগুলো যেন আব্বু না জানে।
আপনি ফ্লাটের অন্য রুমে ঘুমাবেন আমি অন্য রুমে।
কোন কারন এবং আমার অনুমতি ছাড়া আমার রুমে আসবেন না।
আর হ্যা আমি রান্না করতে পারি না কাপড় কাচতে পারি না।
সকালে বেড টি লাগে আমার। আমি ঠান্ডা পানিতে শাওয়ার নিতে পারি না।
সো আপনাকে এগুলো করতে হবে।
আর ভুলেও আমার সাথে ভাব জমাতে আসবেন না।
আর অফিসে আমি আপনার বস সেখানে সবার সামনে বউ ভেবে ঢং করবেন না।
..
...
আমি সব কিছু চুপচাপ শুনে দাঁড়িয়ে ছিলাম দেখে নিরুপমা বললো, এখনো দাঁড়িয়ে আছেন যে?
অন্য রুমে যান আমি চেঞ্জ করে ঘুমাবো কাল সকালে অফিস আছে আমার।
আমি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য রুমে গিয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম স্যারের অসুস্থতার কথা ভেবে ভুল করলাম নাতো?
স্যার কে একটা ফোন দিয়ে সব জানিয়ে দিলাম...
স্যার বললো আমি তোমার পাশে আছি বাবা... আমার একটাই মাত্র মেয়ে।একটু ভালবেসে সব ঠিক করে নিও।
.
পরের দিন সকাল থেকে শুরু হল আমার নতুন জীবন..
বিবাহিত ব্যাচেলর জীবন... আগে এক জনের রান্না করতাম।এখন দুইজনের করি... আগে একজনের কাপড় কাচঁতাম এখন দুইজনের কাচি।
..
(৪)
..
আমার অফিস সকাল ৯টায়...
তাই সকাল ৭টায় উঠে নাস্তা বানিয়ে সব রেডি করে নিজে নাস্তা করে নিরুপমার জন্য টেবিলে নাস্তা দিয়ে। নিরুপমার ঘুম ভাঙিয়ে বেড টি দিয়ে। আমি শাওয়ার নিয়ে শাওয়ারে নিরুপমার জন্য গরম পানি করে রেখে বাস এ ঝুলতে ঝুলতে অফিসে যাই।
.
আমার অনেক শখ ছিল আমার বউ আমার সামনে মাথায় চুলে বেলি ফুলের মালা গুজে আসবে।কখনো বজড়া দিবে।অনেক সুন্দর করে কাজল দিবে।
তাই মাঝে মাঝেই আমিমি অফিস থেকে আসার পথে বেলি ফুলের মালা নিয়ে আসি নিরুপমার জন্য।আমি জানি এটা নিরুপমার অনেক পছন্দের।
আব্বু বলেছে আমাকে।
আমি আব্বুর থেকে নিরুপমার সব পছন্দ অপছন্দ গুলো জেনে নিয়েছি।
নিরুপমার বিরিয়ানি অনেক পছন্দের।তাই আমি ট্রাই করি সপ্তাহে অন্তত ৪দিন বিরিয়ানি রান্না করার। আমার অনেক ইচ্ছে করে নিজের হাতে নিরুপমাকে বিরিয়ানি তুলে খাওয়াই। বিরিয়ানি আমার কখনই পছন্দের ছিল না।
.
তো আমি যতদিন ই বেলি ফুলের মালা এনেছি। এনে চুপি চুপি নিরুপমার রুমে রেখে আসি।নিরুপমা এটা দেখেই আমাকে বকতে শুরু করে।আমার অনেক ভাল লাগে ওর বকুনি শুনতে।
.
অনেক মায়া ভরা মুখ টা নিরুপমার।
আমার অনেক ইচ্ছা নিরুপমাকে নীল শাড়িতে দেখবো।
কাজলে আকঁবে চোখ আর মাথায় বেলিফুলে মালা...
আমরা কখনো হাত ধরে হেটে, কখনো রিক্সায় পাশাপাশি বসে অফিস থেকে ফিরবো। রাস্তার পাশে ফুচকার দোকানে অনেকনেক ঝাল দিয়ে ফুচকা খাবো।নিরুপমার অনেক পছন্দ ফুচকা।আর হ্যা... নিরুপমার আরো অনেক অনেক পছন্দের একটা জিনিস আছে।আর সেটা হল টি,এস,সি'র কাঁচাকলা ভর্তা...
এই জিনিস টা দেখলে নিরুপমা পাগল হয়ে যায়।যদিও আমার সামনে দেখায় না।যেদিন যেদিন আমার কাজ আগেই শেষ হয়ে যায় সেদিন সেদিন আমি নিরুপমার জন্য কাঁচাকলা ভর্তা নিয়ে এসে ওর রুমে রেখে আসি।এসেই যখন দেখে কাঁচাকলা ভর্তা.. আগে সব টা খেয়ে নিবে তারপর এসে আমাকে বকা দেয়া শুরু করবে।আপনার লজ্জা করে না একটা মেয়ের অনুপস্থিতি তে আপনি তার রুমে ঢুকেন।??
ব্লা ব্লা ব্লা আমার কানে এসব কিচ্ছু যায় না।আমি শুধু মনোযোগ দিয়ে আমার নিরুপমার ঠোট নাড়ানো দেখি...
কি সুন্দর করে আমাকে যে বকে... আমি বার বার প্রেমে পড়ে যাই।
..
নিরুপমাকে নিয়ে আমার সব ইচ্ছে গুলো আমি ডায়রি বন্দি করে আমার বালিশের নিচে রেখে দেই।জানি নিরুপমা কখনো আমার রুমে আসবে না আর জানতেও পারবে না।
.
মাঝে মাঝে মধ্য রাতে আমি নিরুপমার রুমে যাই।কত সুন্দর করে বাচ্চাদের মত গুটিশুটি মেরে ঘুমায় মেয়েটা।কত মায়া তার ঘুমন্ত মুখটাতে।ইচ্ছে করে ছুয়ে দেই একটু।
কিন্তু না... দেয়া হয় না... আবার রুমে ফিরে এসে ডায়রিতে লিখে রাখি.... আজ কি কি দেখলাম কতক্ষন দেখেছি।আজ ঘুমের মধ্যে কিভাবে হাত পা নাড়ছিল আমার নিরুপমা।
.
সেদিন যখন আবার বেলিফুলের মালা নিয়ে আসি তখন নিরুপমা আগে থেকেই অনেক রেগে ছিল।
আর আমার হাতে বেলিফুলের মালা দেখে প্রচন্ড রেগে গিয়ে আমাকে অনেক বকাবকি করে আব্বুর বাসায় চলে যায়।আর এটা বলে আমাকে হুমকি দেয় যে আমি যদি তাকে আনতে যাই তাহলে সে বাসায় অনেক গ্যাঞ্জাম করবে আর সেটা আব্বুর জন্য ভাল হবে না।
তাই আমি যদি আব্বুর ভাল চাই তাহলে যেন তাকে আনতে না যাই।
আমি আব্বু কে সব খুলে বললে আব্বু আমাকে বলে কিছুদিন থাকুক এখানে। তারপর তিনি সব বুঝিয়ে তাকে পাঠিয়ে দিবেন।
..
...
(৫)
..
...
অফিসে আমার কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় অফিসে আমাকে এসিস্ট করার জন্য একটা মেয়ে কে নিয়োগ করা হয়েছে।
অফিসে এখনো আমার বস নিরুপমা।আর নিরুপমা যে আমার স্ত্রী এটা অফিসের সবাই জানলেও মেয়েটি জানতে পারেনি।
কারন আমি অফিসে নিরুপমাকে ম্যাডাম বলেই ডাকি।আর নিরুপমার রাগের জন্যা কেউ তাকে নিয়ে কথা বলার সাহস পায়নি।
আর মেয়েটিকে মানে সুমা কে আমার রুমেই ডেস্ক দেয়া হয়েছে।
আমার রুমে আমি আর সুমা বসি।
..
...
তো কিছুদিন এভাবে চলার পর সুমা ও আমার সাথে অন্য সব কলিগদের মত ফ্রি হয়ে গেল।
আর যখন জানলো আমি একাই রান্না করে খাই তখন থেকে রেগুলার আমার জন্য লাঞ্চ রান্না করে নিয়ে আসতে লাগলো।
আমি আর কি করবো মেয়েটি এত করে রেকুয়েষ্ট করতো যে তার সাথেই লাঞ্চ করতে হত।
আমি কোন একদিন কথার ফাকে বলেছিলাম মেয়েদের কে শাড়িতে বেশি সুন্দর লাগে। তুমিও ট্রাই কর। সেদিন থেকে সুমা রোজ শাড়ী পড়েই অফিস করতে লাগলো।
অফিস শেষ করে আমি এখন হেটেই বাসায় আসতাম। তো সেদিন সুমা আমাকে দেখে বললো সে ও আমার সাথে হেটে আসবে। যেহেতু আমাদের বাসা একই দিকে তাই আমি বললাম এসো।
পথে ফুচকার দোকান দেখে সুমার ঝাল দিয়ে ফুচকা খাওয়ার ইচ্ছা হল।
আমি ২প্লেট ফুচকার অর্ডার দিয়ে ফুচকা নিয়ে এসে সুমার হাতে একটা প্লেট দিতেই দেখি পাশেই আমার শ্বশুর মশাইয়ের কালো হ্যারিওর এর গ্লাস টা উঠলো যেটা দিয়ে আমার বউ মানে নিরুপমা অফিস করে।
তারপর গাড়িটা চলে গেল।
..
...
পরের দিন অফিসে গিয়েই আমার তলব পড়লো MD ম্যাডামের রুমে।
শুনেন নিলয় সাহেব, আপনার অফিস টাইম এখন থেকে ১ঘন্টা বাড়ানো হল। সবাই যাওয়ার পর আপনি যাবেন।
এজন্য আপনার স্যালারি বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে।
আমি কিছু না বলে চুপচাপ নিজের ডেস্ক এ এসে বসলাম।আর চিন্তা করলাম এইকাজ টা কেন?
পড়ে বুঝলাম যাতে সুমা আমার সাথে যেতে না পারে তাই জন্য এই ব্যবস্থা।
যাই হোক একটু পড়ে সুমা বেচাড়ি কে রুমে ডেকে নিয়ে কোন একটা কাজের ভুল দেখিয়ে মনের আঁশ মিটিয়ে বকুনি দিল।
..
এভাবেই চলছিল,
হঠাত সুমা সেদিন নীল শাড়ী পড়ে বেলী ফুলের মালা খোপায় গুজে অফিসে আসে।
আর প্রতিদিনের মত নিরুপমা অফিসে ঢুকেই আমার রুমে উকি মেরে দেখে আমি এসেছি কিনা।
সেদিন ও সেটাই করতে গিয়ে দেখে সুমা বেশ সেজে গুজেই এসেছে এভাবে।
..
আমার দিকে রক্তচক্ষু দেখিয়ে নিরুপমা নিজের রুমে গিয়েই আমাকে ডেকে পাঠালো।
আমি দরজায় গিয়ে নক করে বললাম
আমাকে ডেকেছেন ম্যাডাম?
ভিতরে আসো...(প্রথমবারের মত তুমি সম্বোধন)
জ্বি ম্যাডাম বলে রুমে আসলাম।
আমাকে সোফায় বসতে বলে রাগে গজ গজ করতে লাগলো নিরুপমা।
প্রায় ৩০-৪০মিনিট এভাবে বসে থাকার পর আমি বললাম ম্যাডাম আমার অনেক কাজ আছে ডেস্ক এ আমি কই এখন যাবো?
নিরুপমা বললো,
কোন কাজ করতে হবে না। এখানে চুপচাপ বসে থাকবে আর আমার দিকে তাকাই থাকবে সারাক্ষন। মানে শুধু আমাকে দেখবে।
নাহলে তোমার চোখ উপড়ে নিয়ে মার্বেল খেলবো।
আমি এই ভয়ংকর রুপ নিরুপমার আগে কখনো দেখি নাই।তাই চুপচাপ বসে আছি।
..
...
লাঞ্চ এর সময় সুমা আমাকে ডাকতে আসে লাঞ্চ করার জন্য।
তখন নিরুপমা এত জোরে ধমক দেয় মেয়ে টাকে যে একটু হলে কেদেই দিতো মেয়েটা।
তারপর পিয়ন কে দিয়ে নিরুপমা দুজনের লাঞ্চ আনিয়ে নিল।তারপর বললো, চল লাঞ্চ করবে।
লাঞ্চ করার সময় নিরুপমা খাচ্ছে না দেখে বললাম,
কি হল ম্যাডাম খাবেন না?
তোমার না খুব ইচ্ছে আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবার?
দাও খাইয়ে দাও আমাকে....
আমি অবাকের পর অবাক হচ্ছি।
নিরুপমাকে এক নেওলা বিরিয়ানি তুলে দিতেই দেখি মেয়েটার চোখে পানি... অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো বাকি টা শেষ করে গাড়িতে আসো কাজ আছে।
..
...
(৫)
..
...
আমি লাঞ্চ শেষ করে গিয়ে নিরুপমার গাড়িতে বসলাম।
নিরুপমা বললো ড্রাইভার ভাল শাড়ি যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে চলেন শপিং করবো?
আমি বললাম, হটাত শাড়ি কিনবেন?
আমার স্বামীর আমাকে নীল শাড়িতে দেখার অনেক ইচ্ছা তাই।
আমি তখন বললাম,
ড্রাইভার তাহলে বাসায় চলেন
.
বাসায় গিয়ে নিরুপমাকে তার জন্য এনে রাখা নীল শাড়ী নীল চুড়ি বেলি ফুলের মালা সব দিলাম।
নিরুপমা বললো,
:আমি শাড়ি পড়তে পারি না?
:আমি বললাম আমি পারি। পড়িয়ে দিবো?
:দাও.
:লজ্জা করবে না?
:আমি তো তোমার ই... তোমাকে আর লজ্জা কিসের...
"আমার লজ্জা আমার ভয়
তুমি বুঝলেই আমার সয়...."

: আমি আমার চোখে নিরুপমার ওরনা বেধে নিরুপমা কে শাড়ি পড়িয়ে দিলাম।
নিরুপমা চোখে কাজল দিয়ে খোপায় বেলিফুলের মালা দিয়ে সাজলো
..
...
ততক্ষনে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।
নিরুপমা বললো চল,
আমরা হাটতে বের হবো।
আমি আজ তোমার হাত ধরে হাটবো আর ঝাল দিয়ে ফুচকা খাবো।
..
আমি অবাক হলাম কিন্তু কিছু বললাম না। নিরুপমাকে নিয়ে হাটতে হাটতে ফুচকার দোকানে আসলাম। তারপর ফুচকা খাইয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলাম তুমি এসব কিভাবে জানলে.???
..
..
এগুলো তো সিক্রেট বলা যাবে না....
বলো না প্লিজ....
আরে বুদ্ধু আমি তোমার ডায়রিটা প্রতিদিন ই পড়তাম।
আর তোমাকে কষ্ট দিয়ে পরিক্ষা করছিলাম তুমি আমাকে কত ভালবাসো।
কিন্তু ওই শাঁকচুন্নি সুমার জন্য সব শেষ হয়ে গেল আমার।
বজ্জাত মেয়ে আমার স্বামী কে দেখানোর জন্য শাড়ি পড়ে, রান্না করে আনে।
ওর চাকরি শেষ......
আরে না এমন করো না। চাকরি টা ওর দরকার।
অকে অকে তাহলে আব্বুর ব্রাঞ্চে দিয়ে দিবো অকে...

তুমি শুধু আমার...
আমার সামনে থাকবে সময়।
আর আমাকে দেখবে।
ভালবাসি তোমাকে নিলয়...
ভালবাসি আমিও তোমাকে অনেক নিরুপমা।
..
...
নিরুপমা: আচ্ছা এখন চল রিক্সায় করে বাসায় যাই...
আমি:বাসায় গিয়ে কি হবে? আবার তো আমাকে রান্না করতেক হবে।
নিরুপমা:আজ বাসায় রান্না হবে না।
..
আজ আমাদের বাসর হবে বুদ্ধু...♥♥♥
তাই নাকি??
তাহলে এখনি চল.......




সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৫১
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×