somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেজবাবার ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভার্জিনিয়ার এক পাগলাগারদের প্যারানরমাল বিষয়গুলোর তদন্ত করতে গিয়ে বাংগালি এক ইনভেস্টিগেটরের যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেটাই আজ তুলে ধরার চেস্টা করবো । ২০১০ সালে বিখ্যাত এক রেডিও শোতে উনি ওনার ভৌতিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছিলেন।

বাংগালি ওই প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর হলেন অর্থহীন ব্যান্ডের সুমন। বাংলাদেশে উনি পরিচিত বেজবাবা হিসেবে। পশ্চিমবংগেও ওনার আলাদা ফ্যানবেজ রয়েছে ।

বেজবাবা সুমন গানবাজনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্যারানরমাল সাইটগুলোতে তদন্ত করতে যান। ভূতুরে জায়গাগুলোতে কোন ধরণের অস্বাভাবিকতা থাকলে, সেটা তিনি ফীল করতে পারেন। অতিপ্রাকৃত কোন কিছুর টের পেলে উনি খুব অস্বস্তিবোধ করে থাকেন। এছাড়া ওনার টিম বিভিন্ন ধরণের ডিভাইসও ব্যবহার করে অস্বাভাবিকতাগুলো ডিটেক্ট করার জন্য।

বেজবাবা সুমনের সাথে বিখ্যাত সাইফাই চ্যানেলের ঘোস্ট হান্টার টিমের যোগাযোগ ছিল। ২০১০ এ আমেরিকাতে যাওয়ার পর ঘোস্ট হান্টার টিমের সাথে তার মিট আপ হয়। ওই টিম তখন ভার্জিনিয়ার পরিত্যক্ত পাগলাগারদ নিয়ে কাজ করছিল। ওরা বেজবাবাকে তাদের সাথে তদন্তে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। বেজবাবাও ওনার ফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে ঘোস্ট হান্টারের সাথে যোগ দেয়।

পাগলাগারদে পৌছানোর পর ঘোস্ট হান্টার টিম তাদের সাথে থাকা ডিভাইসগুলো সেট করার কাজ শুরু করে দেয়। বেজবাবাও এমন পেশাদার টিমের অংশ হতে পেরে বেশ পুলকিতবোধ করছিলেন। শুরুতে উনি তেমন নেগেটিভ কোন কিছুই বোধ করেননি। উল্টো জায়গাটা ওনার কাছে বেশ ওভাররেটেড মনে হচ্ছিল।

১ম আর ২য় তলাতে বেজবাবা কোন কিছুই ফীল করেননি। ঘোস্ট হান্টার টিমকে এ কথা জানালে, ওরা বেজবাবার এই কোন কিছু ফীল করার ব্যপারটা নিয়ে জানতে বেশ আগ্রহী হয়।

২য় তলাতে বেসবাবাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল লিলির রুমে। লিলি ছিল ওই মানসিক হাসপাতালের একজন পেশেন্ট। মাত্র নয় বছর বয়সে লিলির মৃত্যু হয়েছিল।

ওই রুমে ঢুকে ঘোস্ট হান্টার টিম বল নিয়ে খেলতে বসে গিয়েছিল। তাদের টার্গেট ছিলঃ রুমে যদি লিলির কোন স্পিরিট থাকে, তাহলে সেটা তাদের সাথে বল খেলবে।

তাদের এসব কাজ কারবার দেখে বেজবাবার প্রথমে খুব ফানি লাগে। কিন্তু পাঁচ মিনিট পর তার সেই মনোভাব একদম পরিবর্তন হয়ে যায়। তিনি নিজের চোখে অস্বাভাবিক এক ঘটনা দেখতে পান ৷ ঘোস্ট হান্টার টিমের স্টিভ তার দিকে যে বল ঠেলে দেন, সেই বল তার কাছে আসার আগেই তা ডানে মোড় নেয়, ডানে কিছু দূর গিয়ে আবার পিছনে ওনার দিকে ফিরে আসে। বলটা ওনার পাশ দিয়ে ক্রস করে আরও ১০ ফিটের মত যায়। এরপর থেমে গিয়ে একাই দুইবারের মত বাউন্স খায়। এটা দেখে বেজবাবা প্রচন্ড অবাক হয়। ওনার কিছুটা সন্দেহ হওয়ায় বলটা বেশ কয়েক মিনিট পরীক্ষা করেন। মেঝেটাও একদম ঢালু না হওয়ায় বল ঘুরে যাওয়ার কোন ব্যাখ্যাও উনি দাঁড়া করাতে পারলেন না। কোনধরণের অস্বস্তিকর অনুভূতি না আসায় পুরো সন্তুষ্ট হতে পারলেন না বেজবাবা। ঘোস্ট হান্টার টিম বেশ খুশি ছিল কাংখিত ফুটেজ পাওয়ায়।

ওই তলাতেই ঘোস্ট হান্টার টিম এরপর লেজার গ্রিড পেন সেট আপ করে। সারাঘর সেই সময় লেজার রশ্নিতে ভরে যায়। এক্সপেরিমেন্টের অংশ হিসেবে দুটি টর্চ সেখানে রাখা হয়। ঘোস্ট হান্টার টিম বেজবাবাকে ওনার নিজস্ব টর্চটাও বের করে ওই দুই টর্চের সাথে রাখতে বলে।

উনি ওনার টর্চটাও রাখলেন। এরপর শুরু হল ইন্টারেস্টিং সব কার্যকলাপ৷ ঘোস্ট হান্টার টিম অদৃশ্য কোন কিছুর সাথে কমিউনিকেট করা শুরু করলো। খুব বিনয়ের সাথে বলতে লাগলঃ এখানে যদি কেউ থাকেন, প্লিজ ভয় পাবেন না। আমরা কোন ক্ষতি করতে আসিনি। আপনি শুধু টর্চলাইটের আলো জ্বালিয়ে আপনার উপস্থিতি প্রমাণ করুন। কিছুক্ষণ এই অনুরোধ জানানোর পর, ধপ করে বেজবাবার টর্চটা জ্বলে উঠলো। এটা দেখে সবাই বেশ খুশি। পরে ওনারা বাকী দুইটা টর্চও জ্বালানোর জন্য বেশ অনুরোধ করতে লাগলো। অদৃশ্য কেউ সেই অনুরোধও রাখলো৷ এক্সপেরিমেন্ট সফল হওয়ায় ঘোস্ট হান্টার টিম খুবই খুশি ছিল। কিন্তু বেজবাবা কোন ধরণের ফীল না হওয়াতে কিছুটা হতাশ ছিলেন। ১ম, ২য় এবং ৩য় তলাতে উনি কিছুই ফীল করেননি।

চতুর্থ তলার দিকে যাওয়ার সময় রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়ে যায় বেজবাবার। সিঁড়ি দিয়ে উঠে ডানে তাঁকাতেই ২০ ফিট দূরে দেখতে পেলেন সবুজ রংয়ের অনেক গুলো জোনাকি পোকা সদৃশ কোন কিছু জ্বলছে। উনার ফ্রেন্ড তমালও সেটা দেখতে পেলেন। বেজবাবা ওগুলোর দিকে ছূটে যান, সাথে ফ্রেন্ড তমালও ছূটে যায়। ঘোস্ট হান্টার টিমের এক সদস্যও ফুটেজ নেওয়ার জন্য দৌড়ে যান। কিন্তু ওনারা কাছে যাওয়ার আগেই ওই আলো গায়েব হয়ে যায়। বেজবাবা তখন থেকেই কিছু একটা ফীল করতে থাকেন।

এরপর চতুর্থ তলাতে হন্টেড এক রুমে ওনারা সবাই ঢুকে যান। ওই রুমটাতে মানসিক বিকারগ্রস্ত ক্রিমিনালদের রাখা হত। ওই রুমেই নৃশংস এক খুনের ঘটনা ঘটেছিল। বেজবাবার অস্বস্তিকর অনুভূতি বেড়েই চলছিল। কিছুক্ষণ পর টিমের সবাই টুং করে একটা শব্দ শুনতে পান। বেজবাবার ভাষ্যমতে পানির পাইপে লাঠি দিয়ে বাড়ি দিলে যে আওয়াজ হবে, ঠিক সেরকম শব্দ। শুরুতে শব্দটা বেশ দূরে ছিল, ক্রমে তা ওনাদের কাছে এসে পড়ে৷ ওনারা ফীল করতে থাকে কোন কিছু তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ফ্রেন্ড তমাল কিছু একটার স্পর্শের কথা বেজবাবাকে জানায়।

সবাই তখন বেশ উত্তেজিত। ভীতসন্ত্রস্থ। অবস্থা বেগতিক দেখে ঘোস্ট হান্টারের লীডার নিচে চলে আসার সিগন্যাল দিয়ে দেয়। সবাই কোনরকম প্যানিক না করে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসে। নিচে আসার সাথে সাথে বেজবাবা আবার স্বাভাবিকবোধ করা শুরু করেন।

পরে ঘোস্ট হান্টার টিম তাদের রেকর্ডের বিশেষ কিছু অংশ বেজবাবাকে দেখায়। প্যারানরমাল ব্যপারে তাদের ব্যাখ্যা দেয়। টিমের কাছ থেকে লেজার গ্রিড পেন উপহার পেয়েছিল বেজবাবা।

২০১০ এ অন্ধকার রুমে শুয়ে শুয়ে এই ঘটনা রেডিওতে শোনার পরে যে গুজবাম্প হয়েছিল, তা একেবারেই ভোলার নয়।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:০৬
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×