somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেজবাবা সুমনের কিশোর বয়সে ভৌতিক অভিজ্ঞতা

০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯০ সাল। মেট্রিক পরীক্ষা শেষে বেজবাবা আর ওনার ১৯ বন্ধু মিলে ট্যুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর সবাই মিলে কক্সবাজারে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। সবচেয়ে ইন্টারেষ্টিং পার্ট হল: সবার বয়স ১৫/১৬ হলেও, ওনাদের অভিভাবকরা সবাইকে একা ছাড়তে রাজি হয়েছিল।

যে কথা সে কাজ। কোন এক বৃহস্পতিবার গাড়ি নিয়ে দুরন্ত উনিশটা ছেলে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দেয়। আগে থেকেই কক্সবাজারের পুরোনো সার্কিট হাউজে ওনাদের জন্য দুটি রুম বুক করা ছিল।

১০ ঘন্টার এক দীর্ঘ জার্নির পর, সবাই মিলে পৌঁছে গেল বিশ্বের দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। বিকালের দিকে পৌঁছেই, সবাই মিলে গেল সমুদ্রপারে। সবাই খুব উত্তেজিত। বাঁধনহারা আনন্দ সবার মনে।

সন্ধ্যার পর খাওয়া দাওয়া করে, সবাই পুরোনো সার্কিট হাউজে চলে আসে। ওখানেই আড্ডাবাজি মজা মাস্তি হতে থাকে।

পুরোনো সার্কিট হাউজে ওনাদের জন্য যে দুটি রুম দেওয়া হয়েছিল, সেগুলা ছিল বেশ ইন্টারেস্টিং টাইপের। একটা রুম ছিল বেশ বড়। বিশ্ববিদ্যালয় হলের কমন রুম টাইপ। আর অন্য রুমটা ছিল ছোট। কমন রুম থেকে বের হয়ে হাতের বামে ৩০ ফিট যাওয়ার পর ডানে মোড় নিয়ে আরো ৩০ ফিট যাওয়ার পর ওই ছোট রুমটাতে যাওয়া যায়।

১৯ বন্ধুর কেউই ওই ছোট রুমে যেতে চাচ্ছিল না। সবাই কমন রুমেই মজা মাস্তি করছিল।

রাত ৯টার দিকে সার্কিট হাউজের দারোয়ান ওনাদের কাছে আসে। আসার পর ছোট রুমের ব্যপারে কিছু কথা বলে যায়। দারোয়ান বলে যে : “ওই রুমে কেউ একা থাইকেন না। দল বেঁধে যাবেন। কয়েক বছর আগে ওই রুমে এক বিদেশি লোক সুইসাইড করছিল। এরপর থেকে ওখানে কিসব আওয়াজ শোনা যায়।”

এসব শুনেতো সবাই খুব এক্সসাইটেড হয়ে পড়ল।

কয়েক ঘন্টা পর দুরন্ত ছেলেরা ওই রুম নিয়ে বাজি ধরা শুরু করলো। একজন প্রস্তাব দিল: “যে একা ওই রুমে পাঁচ মিনিট কাটায়ে আসতে পারবে, তার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।” এ কথা শুনে বেজবাবা সবার আগে বলে বসলো : “এটা কোন ব্যপার নাকি। আমি একাই যেতে পারব।”

বেজবাবার কথা শুনে সবার মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল। যে প্রস্তাব দিয়েছিল, সে তখন বললো : “আমাদের এই কমন রুম থেকে তো ওই রুমটা দেখা যায় না। আমরা কি করে বুঝবো, তুই ওখানে ছিলি?”

তখন বেজবাবা বললো: “আমার প্যান্টে কক্সবাজার থেকে কেনা চারটা আংটি আছে। আমি একটা আংটি ওই রুমে রেখে আসবো। কালকে সকালে তোরা গিয়ে দেখে আসবি। “

সবাই তখন একমত। বেজবাবা একাই যাবে ওই রুমে।

বেজবাবা সুমনের আসলে তখন কিছুটা ভয় লাগা শুরু করলো। বন্ধুদের সেটা উনি বুঝতে দিচ্ছিলেন না। ওনার ক্লোজ দুইটা ফ্রেন্ড ওনার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে, অন্যদেরকে বললো যে, বেজবাবার সাথে ওরাও যাবে।

সবাই মেনে নিলো ওদের কথা।

তিন জন মিলে ছোট রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিল। করিডোর পুরা অন্ধকার। বেশ কয়েক ফিট যাওয়ার পর, ডানের মোড়টা আসলো। মোড় নিয়ে অল্প কয়েক ফিট আগাতেই, ওনার এক বন্ধু বাবাগো-মাগো বলে কমন রুমের দিকে দৌড় দেয়। বেজবাবারাও ভয় পেয়ে ওই বন্ধুর পিছে পিছে দৌড় দিয়ে কমন রুমে ফিরে আসে। দৌড়িয়ে আসার সময়, বেজবাবার প্যান্ট থেকে একটা আংটি মেঝেতে পড়ে যায়। মেঝেতে আংটি পড়ার পর যে টং টং শব্দ হয় , সেটা বেজবাবা আর ওনার এক ফ্রেন্ড স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিল।

কমন রুমে আসার পর তো ,সবাই উনাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগলো। যে যেভাবে পারে, পচাতে লাগল উনাদেরকে।

এত বিদ্রুপ আর হাসাহাসি দেখে বেজবাবার জেদ চেপে যায়। সবাইকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলে : “আমার যে আংটিটা বারান্দাতে পড়ে গিয়েছিল, আমি সেটা একা নিয়ে আসবো।”

এ কথা শুনে কয়েকজন চাপাবাজি ভেবে ওনাকে তল্লাশি করতে চাইল। তল্লাশি করে চারটা আংটির জায়গায় তিনটা আংটিই পেল।
আরেকটা আংটি খুঁজতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে আরেকটা ফ্রেন্ড হঠাৎ প্রতিবাদ করে বললো যে, আরে তোর আরেকটা আংটিতো আমার কাছে। আমিই তো বিকালে তোর কাছ থেকে ধার নিছিলাম। তোর মনে নাই?

এ কথা শুনে তো বেজবাবা পুরা অবাক।মনে মনে ভাবলো: “আরে তাইতো। আংটিতো চারটাই এখানে আছে। তখন তাহলে কিসের আওয়াজ শুনলাম!” উনি ওনার সাথে যাওয়া ফ্রেন্ডটাকেও জিজ্ঞেস করলো : “কিরে তুই আওয়াজ শুনস নাই?” ফ্রেন্ডটা বললো : “শুনছিতো।”

অন্যরা উনাদের কথা বিশ্বাস না করে আরেকদফা হাসাহাসি করে নিল।

এরপর সবাই লুডু, কার্ড আর আড্ডাবাজিতে সময় কাটাতে লাগল। আড্ডাবাজির এক পর্যায়ে হঠাৎ বেজবাবা খেয়াল করলো ,ওনার এক ফ্রেন্ড খুব মনমরা হয়ে আছে। এটা দেখে উনারা তিন ফ্রেন্ড মিলে ওই ফ্রেন্ডের কাছে যায় আর জিজ্ঞেস করে: “কি হয়েছে তোর? মনমরা কেন?” ফ্রেন্ডটা বললো: “কিছু ভাল লাগছে না। ডিপ্রেসড খুব।”

ওই ফ্রেন্ড রিলেটেড একটা ছোট্ট ঘটনা আছে।ক্লাস টেনে পড়ার সময় ,ফ্রেন্ডটা হৃদয়বিদারক এক ঘটনা ফেস করেছিল। ওর খুব ক্লোজ এক বান্ধবী সড়ক দুর্ঘটনাতে মারা গিয়েছিল। মারা যাওয়ার পর থেকেই ওই ফ্রেন্ড হঠাৎ করে মনমরা হয়ে যেত।

কিছুক্ষণ পর ওই ফ্রেন্ডটা কথা বলতে বলতে হঠাৎ কান্না শুরু করে দেয়।। কান্না করতে করতে বলে বসে: “আমার কিছু ভাল লাগছে না। মনে হইতেছে বাঁইচা থেকে লাভ নেই, আমার বাঁচতে ইচ্ছা করছে না।”

এ কথা শুনেতো বেজবাবাসহ অন্য তিন ফ্রেন্ড খুব সিরিয়াস হয়ে গেল। দারোয়ান ছোট রুমের যেই সুইসাইডের কথা বলে গিয়েছিল, সেটা মনে পড়ে গেল।ফ্রেন্ডটাকে নিয়ে কিছুটা সতর্ক হয়ে গেল উনারা ।

একটা সময় ১৯ জনের মধ্যে বেশিরভাগই ঘুমায়ে পড়ল। বেজবাবা সহ তিন/চারজন মাত্র জেগে ছিল। ওই ডিপ্রেসড ফ্রেন্ডটাও জেগে ছিল তখন। বেজবাবারা আড্ডা মারার ফাঁকে হঠাৎ খেয়াল করলো যে, ডিপ্রেসড ফ্রেন্ডটা কি জানি লিখালিখি করছে। বেজবাবারা দেখার জন্য যেই উঠতে গেছে, ওই ফ্রেন্ডটা কাগজ ছিঁড়ে ফেলে পকেটে ভরে ফেলল। উনারা জোর করে পকেট থেকে ওই কাগজ বের করে পড়ে দেখে যে: ওইটা একটা সুইসাইড নোট। এরপর উনারা তো চিল্লাফাল্লা শুরু করল। ওই ফ্রেন্ডটাকে চোখে চোখে রাখতে লাগল। বন্ধুটা বাথরুমে যাওয়ার পর, দরজাও বন্ধ করে রাখতে পারেনি কড়া গার্ডের কারণে।

একটা সময় বেজবাবারা কার্ড খেলতে বসে গেল। ওই ফ্রেন্ডটা ওনাদের পাশেই দরজার কাছের এক সোফাতে বসে ছিল।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে রুমের লাইটটা অফ হয়ে যায়। রুমের দরজা খুলে যায়। বেজবাবারা অন্ধকারের মধ্যে বুঝতে পারেন যে, সোফায় বসে থাকা ফ্রেন্ডটা দরজা দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গিয়েছে। এটা বুঝতে পেরে উনারা কয়েকজনও জোরসে এক দৌড় দেয়। দরজা পার হয়ে দেখতে পায় যে, ওই ফ্রেন্ড বারান্দার রেলিং এর ঐখানে। রেলিং এ উঠে ঝাঁপ মারার চেষ্টা করছে। বেজবাবারা কয়েকজন মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফ্রেন্ডটাকে নিচে নামিয়ে নিয়ে আসে। শক্ত করে ধরে রুমে ঢুকায়।

পরে সার্কিট হাউজের লোকজন চিল্লাফাল্লা শুনে উনাদের রুমে আসলে, ওনারা আসল ঘটনা চেপে যায়।পরের দিন সকালেই সবাই ঢাকাতে ফিরে এসেছিল।

ওই ফ্রেন্ডটা এখনো বেঁচে আসে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হলে, বেজবাবারা সার্কিট হাউজের ওই ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে চায় ফ্রেন্ডটার কাছে। ফ্রেন্ডটা বলে যে, উনার লাফ দেওয়ার ব্যপারটা কিছুই মনে নেই। উনার শুধু মনে আছে - উনি সোফাতে বসে আছেন। লাইটটা অফ করলেন। এরপরের কয়েক মিনিট ওনার একেবারেই মনে নেই।

কিশোর বয়সের এই অভিজ্ঞতাকে বেজবাবা প্যারানরমাল বলেই মনে করেন। সার্কিট হাউজটা এখন মিউজিয়াম হয়ে যাওয়াতে,ইনভেস্টিগেশনেরও কোন সুযোগ নেই।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:৪০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×