১৯৬৮ সাল। একটা কাপল। নতুন বিয়ে হয়েছে তাদের। চট্টগ্রামে।
৭০ সালে তাদের কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে এক সন্তান। সন্তান হওয়ার পর বাবাটা ঢাকাতে চলে আসে চাকরির কারণে। ওয়াইফটা চট্টগ্রামেই থেকে যায়। ঢাকাতে যাওয়ার আগে লোকটা ওনার মাকে ওয়াইফের সাথে থাকার জন্য গ্রাম থেকে নিয়ে আসে।
কয়েকদিন সবকিছুই সুন্দরভাবে চলার পর, লোকটার মা কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা খেয়াল করতে থাকে। উনি খেয়াল করলেন যে, বাসার জিনিসপত্র গায়েব হয়ে যাচ্ছে। বিছানাতে কোন কাপড় রেখে অন্য রুমে গেলে, কিছুক্ষন পর এসে দেখেন ওই কাপড় আর পাওয়া যাচ্ছে না। ড্রেসিং টেবিল থেকে পাউডার, লিপস্টিকও গায়েব হয়ে যাচ্ছে।
এসব যখন বেড়েই চলছিল , মা টা তার ছেলের বৌকে ব্যপারগুলো জানায়। ওয়াইফ এর তো প্রথমেই সন্দেহ হয় কাজের মেয়েটার উপর।
একদিন ওয়াইফটা তার কি একটা জিনিস খুঁজে পাচ্ছে না দেখে, কাজের মেয়েকে নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ওয়াইফ বিছানাতে বসে বসে প্ল্যান করছিল , কি করা যায় কি করা যায়। এসময় হঠাৎ করে সাদা শাড়ি পড়ে বাসার আয়াটা রুমের পাশ দিয়ে করিডোর হয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছিল। ওয়াইফটা তো কাজের মেয়েটাকে ডাক দিতে থাকল। বিছানা থেকে উঠে দরজা পার হয়ে যেই ডান দিকে তাকাল, দেখে যে করিডোরে কেউই নাই। পরে রান্নাঘরে যেয়ে দেখে, আয়াটা তরকারি কাটতেছে।
আরেকদিন, মহিলার স্বামী ঢাকা থেকে দুই দেবরকে নিয়ে বাড়িতে আসলো। অনেকদিন পর আসায়, সবাই খুব খুশি। বেশ আনন্দেই কয়েকটা দিন কাটিয়ে, দেবর দুইজনকে রেখে ঢাকাতে ফিরে গেল স্বামীটা। দুই কিশোর দেবর একরাতে ঘুমানোর সময় খেয়াল করল, কে জানি ওদের চাদর ধরে টানছে। এক ভাই তখন আরেক ভাইকে দোষারোপ করতে লাগল। অন্য ভাই চাদর টানাটানি অস্বীকার করল। কিছুক্ষন পর দুই ভাই ই দেখতে পারল, অদৃশ্য কোন কিছু তাদের চাদর ধরে টানছে। দুই ভাই প্রচন্ডভাবে চাদর গুলা ধরে রাখল। একসময় কোন একটা প্রচন্ড ফোর্স ওদের দুইজনকে বিছানা থেকে ফেলে দিল। ওরাতো মেঝেতে গড়াগড়ি খেলো কিছুক্ষণ। এরপর হঠাৎ ওদের রুমের জানালা প্রচন্ডভাবে ধাক্কা খেতে লাগল। অথচ তখন বাইরে কোন বাতাসও ছিল না। জানালা দিয়ে তাকায়ে দেখে তাল গাছের পাতাগুলাও খুব নড়াচড়া করছে। এ অবস্থা ফজর পর্যন্ত চলার পর হঠাৎ করে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। সকালে ওদের মা আর ভাবী এসব কথা শুনে খুব ভয় পেয়ে যায়। ছেলেগুলা সেদিনই ওই বাড়ি থেকে ভয়ে ঢাকা চলে যায়।
আরেকবার স্বামীটাকে কয়েকদিনের জন্য ওই বাড়িতে একা থাকতে হয়েছিল। উনি আবার এসব প্যারানরমাল ব্যপার বিশ্বাস করতে চাইতেন না। উনি রাতে একা বিছানাতে শুয়ে আছেন। হঠাৎ দেখেন যে, ঘরের সদর দরজা কে জানি ভেঙে ফেলতে চাচ্ছে। সজোরে ধাক্কা মারছে। ফজর পর্যন্ত এ অবস্থা চলে। পরে সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। ব্যপারটা নিয়ে উনি এক মৌলভীর সাথে আলাপ করে। মৌলভী বাসায় এসে সব তদন্ত করে বলে যে: “কিছুই নাই এ বাসায়। সব মনের ভুল।”
পরের রাতেও একই অবস্থা। লোকটা ফজর পর্যন্ত এসব জিনিস সহ্য করলো। পরে আজান দেওয়ার সাথে সাথে দোতলার বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে, ওই মৌলভীর খোঁজে মসজিদে চলে যায়।
এরপর অনেকদিন টুকটাক এসব কাহিনী চলতেই থাকে। মহিলাটার বেশ কয়েকটা বাচ্চা হয়। একদিন ওনার ছোটোছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে মহিলাটা কাপড় ইস্ত্রি করছিল। হঠাৎ দেখে যে, ওনার দুই বছরের ছেলে, শাড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। উনিতো প্রচন্ড ভয় পেয়ে যান। মাত্রই ঘুম পাড়িয়ে আসলো। এত তাড়াতাড়ি এই বাচ্চা কিভাবে এখানে আসলো !!
কয়েক বছর পর, স্বামীটা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকাতে চলে আসেন। ঢাকাতে আসার পরও এসব ঘটনা ঘটতে থাকে। সবচেয়ে ঝামেলা হতো রান্নাঘরে।
রান্নাঘরে মহিলাটা কাজ করছিলেন। হঠাৎ মনে হল কেউ একজন ঘাড়ে হাত রেখেছে। ঘাড়ের মধ্যে হাত দিয়ে জোরে চাপ দিচ্ছে। পিছনে তাকালেই দেখা যাচ্ছে কেউ নাই।
আবার, রান্নাঘরে কাজ করার সময় মনে হতে থাকবে,সদর দরজা খুলে স্বামী অফিস থেকে ঘরে ফিরে এসেছে। পরে ভিতরে ঢুকে দেখে আসলে দেখা যাবে আসলে কেউই আসে নাই।
শেষে টিকতে না পেরে ওই রান্নাঘর পুরা সিলগালা করে, ড্রয়িং রুম কে রান্নাঘরে পরিণত করা হয়েছিল।
এই পরিবারটা সম্পর্কে জানার পর, মহিলাটার সাথে কথা বলেছিলেন : বেজবাবা সুমনের জুনিয়র ফ্রেন্ড জিব্রান। জিব্রান মহিলার থেকে এসব কাহিনী শুনা শেষ করার পরপরই, পুরা ফ্লোরের ইলেকট্রিসিটি চলে যায়। অন্য ফ্লোরে কারেন্ট থাকলেও , ওনাদের ফ্ল্যাট টাতে ইলেকট্রিসিটি প্রব্লেম হয়। পরে জিব্রান ভাই, ওদের ফিউজ বক্স , আইপিএসের লাইন চেক করে দেখেন যে, বেশ কয়েকটা সুইচ অৰ্ধেক চাপিয়ে রাখা।
এসব আলামত দেখে ভৌতিস্ট টিম পরিবারটাকে নিয়ে আরও গবেষণা করবে বলে ভেবে রেখেছিল। কিন্তু পরে বিভিন্ন কারণে কাজটা করা আর সম্ভব হয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:০৫