somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘাড়ে চাপ, ভারী ঘাড়

১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১/

২০০৮ সাল। সুমনদা প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশনের জন্য গঠন করলেন ভৌতিস্ট টিম। টিমের সদস্য সাকিব এবং জিবরান ভাই। দুজনেই সুমনদার কাছের জুনিয়র ফ্রেন্ড। ভৌতিক বিষয়ে তিনজনেরই চরম আগ্রহ থাকায়, বিদেশী ঘোস্ট হান্টারের আদলে সুমনদা শুরু করলেন ভৌতিস্ট টিমের কার্যক্রম।

প্রথম তদন্তের ভেন্যু হিসেবে জরাজীর্ন এক বাড়ি নির্বাচন করা হয়েছিল,যেটা ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত এক জেলায় অবস্থিত। বাড়িটাতে সুমনদা আগেও ইনভেস্টিগেশনে গিয়েছিলেন। তদন্তের ফলাফলও ছিল বেশ ইন্টারেস্টিং।

সুমনদা বাড়িটার ভিতর শয়তানের উপাসনা করার বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছিলেন। বাড়িটাতে ঢুকতেই হাতের ডানে যে রুমটা ছিল, সেই রুমের মেঝেতে দেখতে পেয়েছিলেন পেন্টাগ্রাম আঁকা। ভাল করে লক্ষ্য করার পর বুঝতে পেরেছিলেন, রুমের ডিজাইনটাও পেন্টাগন টাইপ। বুঝতে আর বাকি রইল না যে, বাড়িটাতে একসময় কালো জাদুর চর্চা হত।

এরপর সুমনদা দোতলাতে অন্য একটা রুমে যান।রুমের পুরানো এক আলমারি অনেক কষ্টে খোলার পর, ভিতর থেকে কালোজাদুতে ব্যবহৃত মুরগির কাঁটা পা, কালো পেঁচানো সুতলী ইত্যাদি খুঁজে পান। ওগুলো পাওয়ার পর সুমনদা ১০০ ভাগ নিশ্চিত হন, ওই বাড়িটা নরমাল কোন বাড়ি না।

বাড়ির ভিতরে তদন্তের সময়, ভয়ানক আওয়াজও রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছিলেন সুমনদা। আওয়াজগুলোর উৎস নিয়ে উনি বেশ ধাঁধাঁয় পড়ে গিয়েছিলেন। একবার মনে হচ্ছিল ছাদ থেকে আসছে, আবার মনে হচ্ছিল নিচ তলা থেকে আসছে। উপর নিচে বেশ কয়েকবার দৌড়াদৌড়ি করেও আওয়াজের ব্যপারে নিশ্চিত হতে পারেননি।

তদন্তের শেষ পর্যায়ে, আলমারির রুমটাতে সুমনদা ভিডিও করছিলেন। হঠাৎ পায়ের পিছনের দিকে শব্দ পাওয়ার পর, দ্রুত ঘুরে গিয়ে পায়ের দিকে উনি ওনার ক্যামেরা ধরেন। স্পষ্টভাবে শব্দটা শুনতে পেলেও, সুমনদার চোখে ও ক্যামেরাতে কোন কিছুই ধরা পড়েনি।

২/
ভৌতিস্ট টিম গঠন করার পর, সুমনদা, সাকিব আর জিবরান আবারও ওই বাসার রেকর্ডিংগুলো নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। ইন্টারেস্টিং ব্যপার হল: ফুটেজগুলো থেকে টিম মেম্বার সাকিব ভাই অদ্ভুত একটা জিনিস আইডেন্টিফাই করতে সক্ষম হন। সুমনদা আলমারির রুমে পায়ের পিছনের দিকে শব্দ পাওয়ার পর পিছনে ঘুরে পায়ের দিকে তাক করে যে ভিডিওটা করেছিলেন, সেই ভিডিওতে চার কোনা একটা ছোট বস্তু চিহ্নিত করা হয়, যেটা নিচের থেকে উঠে গিয়ে সুমনদার কাঁধ অতিক্রম করে চলে যাচ্ছিল। আরো ইন্টারেস্টিং ব্যপার হল - বস্তুটা তার শেপ পরিবর্তন করেছিল। লম্বা শেপ থেকে রংধনুর মতো শেপ হয়ে কাঁধ অতিক্রম করে চলে গিয়েছিল।

ব্যপারটা দেখার পরতো সুমনদা, জিবরান সবাই ই বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। উত্তেজনার কারণ ছিল - এই ধরণের বস্তু আগেও সুমনদা দেখেছিলেন ওনার শ্রীপুরের ফার্মহাউজে। সাকিবদাও ওই শেপের জিনিস দেখেছিল জিবরান ভায়ার নানা বাড়িতে।

এতসব প্রমান পাওয়ার পর, ভৌতিস্ট টিম তাদের প্রথম তদন্ত হিসেবে ঢাকার বাইরের ওই বাড়িটাকেই সিলেক্ট করে।

ঠিক হয়, পরের মাসের প্রথম শুক্রবার তিনজন মিলে ওই বাড়িটাতে যাবে।


৩/
এর কিছুদিন পরই ঘটলো অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা।

যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে, জিবরান ভায়ার মা-বাবা সুমনদা আর সাকিব ভায়াকে ডেকে পাঠান। দুইজনেই মনে করলেন যে, নিশ্চিত জিবরানকে যেতে দিবে না আর এই কথাটাই ফরমালি আমাদেরকে জানানোর জন্য ডেকে পাঠিয়েছে।

জিবরানের বাসায় যাওয়ার পর, সবাই মিলে ড্রয়িং রুমে বসল। জিবরান ভায়ার মা এসে : সুমনদা আর সাকিব ভায়াকে ট্যুরের ব্যপারে নিরুৎসাহিত করতে লাগলেন। আন্টি বললেন যে: বাবারা আমি একটা স্বপ্ন দেখলাম, তোমরা যে জায়গাটাতে যেতে চাচ্ছ, সেই জায়গাটা ভালো না। খুবই খারাপ। তোমরা ওখানে যেও না।
এই কথা শোনার পরতো, সুমনদা আর সাকিব, জিবরানের উপর মনে মনে বেশ ক্ষেপে গেল। প্রথমেই মাথায় আসলো - নিশ্চয়ই জিবরান তদন্তের ব্যপারটা আন্টিকে বলে দিছে। দুজনই জিবরানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল। জিবরান ভায়া বিব্রত হয়ে ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিল: আমি কিছু বলি নাই।
পরে আন্টি আরও বলতে থাকলেন : স্বপ্নে আমাকে অমুক জায়গার একজন পীরের কথা বলা হয়েছে ,যার সাথে তোমাদের পরামর্শ করতে হবে।

সব শুনে টুনেতো সুমনদারা বেশ বিস্মিত হয়ে পড়ল।

৪/
পরে জিবরান ভায়ার আব্বার সাথে কথা চলতে লাগল। গল্পের এক পর্যায়ে হঠাৎ করে সুমনদার অস্বস্তি লাগা শুরু হয়। বাম ঘাড়ে উনি বেশ চাপ অনুভব করতে লাগলেন। চাপের চোটে উনি বাম পাশে বেশ কাত হয়ে গেলেন। উনি যে কাত হয়ে কথা চালায়ে যাচ্ছেন, সেই জিনিসটা খেয়াল করে সাকিব ভায়া সুমনদাকে জিজ্ঞেস করলেন : আর ইউ অলরাইট, সুমন ভাই ? সুমনদা বলল: হুম, ঠিক আছি।
উনি যে কাত হয়ে কথা বলছিলেন,সেই ব্যপারটা উনি নিজে বুঝতে পারেননি, শুধু বুঝতে পারছিলেন বাম ঘাড়ে বেশ ভারী কিছু একটা আছে যেটার কারণে উনার খুব অস্বস্তি লাগছে ।

পরে অস্বস্তি ভাব কাটানোর জন্য, উনি পাশের সোফাতে গিয়ে বসেন। বসার সাথে সাথেই ওই ভার ভার ভাব নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।

ওনার কান্ডকারখানা সামনের সোফাতে বসে লক্ষ্য করছিলেন জিবরান ভাইয়ের আব্বা। উনি শেষে জিজ্ঞেস করলেন : “বাবা, তুমি ওই সোফা থেকে এই সোফাতে কেন আসলা?”
সুমনদা বললেন: “না, এমনি।” আংকেল তখন বলল: “আরে বল বল , তুমি কি কিছু টের পাইছো নাকি?” সুমনদা তখন স্বীকার করলো যে: “জি, আংকেল, কে জানি বাম ঘাড়ে চাপ দিয়ে আমাকে টেনে নিচের দিকে নামাতে চাচ্ছিল।”

এ কথা শুনে তো আংকেল বেশ ইমপ্রেসড। উনি বলেই বসলেন: "তুমি ঠিক বলছ।" "ঐখানটাতে কিছু একটা আছে।" "সবাই ব্যপারটা ধরতে পারে না।" "তুমি দেখি ধরে ফেললা।"

৫/
প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশনে গিয়ে অস্বস্তিকর এই টাইপের অনুভূতি সুমনদা পরেও বেশ কয়েকবার পেয়েছেন। উনার টিমের জিবরানও প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশনে ঘাড়ে এমন ভারী ভারী চাপ অনুভব করে থাকে।

(রেডিও ফুর্তির ভূত এফএম প্রোগ্রামে প্রচারিত একটি গল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই লিখা)








সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:০৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×