somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ পরিণতি (রহস্য হরর গল্প)

১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব

বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের জরাজীর্ণ এক বাড়ি।

বাইরে থেকে পেন্টাগন শেপের দোতলা বাড়িটি এক পলক দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলেন কলকাতা নিবাসী গৌতমদা।

বাড়িটির ভিতর দেখবার উৎসাহ দমন করতে না পেরে রহস্যপ্রিয় গৌতমদা এগিয়ে গেলেন গেটের দিকে। হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল, মরচে পড়া গেটটা। সামনের দিকে বেশ অন্ধকার থাকায় হাতের টর্চটা নিয়ে ভিতরের দিকে এগিয়ে গেলেন গৌতমদা। সহজেই খুলে ফেললেন বাড়ির সদর দরজা। ঘরে ঢুকেই বাইরের আলো ভিতরে আসার জন্য জানালাগুলো দিলেন খুলে।

এত জরাজীর্ণতার মাঝেও বাড়ির ভিতরে কি একটা প্রচন্ড টান অনুভব করতে লাগলেন গৌতমদা।

শুরুতেই হাতের ডানে যে রুমটা ছিল, সেখানে ঢুকে পড়লেন। ঢোকার পরেই সর্বপ্রথম চোখে পড়ল পাঁচ-কোণযুক্ত পেন্টাগ্রাম। পুরো মেঝে জুড়ে পেশাদার কোন ডিজাইনারের আঁকা - পেন্টাগ্রাম। ভাল করে লক্ষ্য করার পর বুঝতে পারলেন রুমের ডিজাইনটাও পেন্টাগন টাইপ।

এতসব পেন্টাগন আর পেন্টাগ্রামের খেলা দেখে গৌতমদার বুঝতে আর বাকি রইল না,বাড়িটাতে একসময় কালো জাদুর চর্চা হত। একেবারে শয়তানের উপাসনা বলতে আমরা যা বুঝি সেটাই এখানে হতো।পেন্টাগ্রামের পাঁচ কোনায় পাঁচজন উপাসক বসতো,আর মাঝে বসানো হত মানব বলিকে। শয়তানের জন্য ওই বলিকে উৎসর্গ করা হত।

ভাবতেই গা শিউরে উঠলো গৌতমদার।

মানব বলি নিয়ে ভাবতে ভাবতে গৌতমদা আনমনেই উঠে গেলেন দোতলাতে। ঢুকে পড়লেন সাদামাটা ,পরিত্যক্ত আরেকটি কক্ষে। কক্ষের ভিতর চেয়ার, টেবিল আর একটি পুরনো আলমারি। আলমারি অনেক কষ্টে খোলার পর, ভিতর থেকে গৌতমদা যা যা পেলেন তা সত্যিই বেশ পিলে চমকানোর মত। কালোজাদুর কাজে ব্যবহৃত মুরগির কাঁটা পা,কালো পুতুল, কালো পেঁচানো সুতলি ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ ছিল আলমারিটি।

ওগুলো পাওয়ার পর গৌতমদা ১০০ ভাগ নিশ্চিত হয়ে যান, দুর্গাপুরের এই বাড়িটি স্বাভাবিক কোন বাড়ি নয়। ঠিকমত তদন্ত করলে মানুষের মাথার খুলিও পাওয়া সম্ভব।

বাড়ির দোতলাতে অবস্থান করার সময়, গৌতমদা হঠাৎ করে মন্ত্র পড়ার আওয়াজ শুনতে শুরু করেন। আওয়াজগুলোর উৎস নিয়ে উনি বেশ ধাঁধাঁয় পড়ে যান। একবার মনে হচ্ছিল ছাদ থেকে আসছে, আবার মনে হচ্ছিল নিচ তলা থেকে আসছে। উপর নিচে বেশ কয়েকবার দৌড়াদৌড়ি করেও আওয়াজের ব্যপারে নিশ্চিত হতে পারলেন না।

কিছুটা ক্লান্ত হয়ে, নিচ তলার পেন্টাগন রুমের মাঝের সোফাতে গাঁ এলিয়ে দিলেন গৌতমদা। পাঁচ মিনিটের মত পার হওয়ার পর, হঠাৎ করে গৌতমদার অস্বস্তি লাগা শুরু হল। বাম ঘাড়ে বেশ চাপ অনুভব করতে লাগলেন। মনে হচ্ছিল ভারী কোন কিছু ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজেকে খুবই অসহায় মনে হতে লাগল গৌতমদার। অবশ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি পুরো শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।

অবশ,অসহায় গৌতমদা চারপাশ থেকে শয়তানি মন্ত্র পড়ার আওয়াজ শুনতে লাগলেন। ধীরে ধীরে সব আশা যেন ফুরিয়ে যাচ্ছে । ঘুম,গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হতে লাগলেন সবার প্রিয় গৌতমদা ।

শেষ পর্ব


চঞ্চল সেন। গৌতমদার আদরের পিসতুতো ভাই। বর্ধমানে বেড়াতে আসলেই চঞ্চলদের বাসার আতিথ্য নিয়ে থাকেন গৌতমদা।

এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এক সপ্তাহের ছুটি কাটাতে বর্ধমান দূর্গাপুরে চঞ্চলদের বাসাতে হাজির সবার প্রিয় গৌতমদা।

গৌতমদাকে পেয়ে সবসময়ের মত মহাখুশি চঞ্চল সেন। সম্পর্কে পিসতুতো ভাই হলেও, দুইজনের হৃদ্যতা দেখে আপন ভাইয়ের থেকে কম মনে হয় না।

ঘটনার দিন, চঞ্চল সেন বাজার থেকে ফিরেই প্রিয় কাজিনের খোঁজ করতে লাগল। চঞ্চলের মা জানালঃ তোর দাদাতো সেই দুই ঘন্টা আগে বাইরে বেরিয়েছে। এখনও তো ফিরল না।

দুই ঘন্টা !!

চঞ্চল সেনতো বেশ অবাক! মনের ভিতর কেন জানি খচখচ করা শুরু হল।

মাকে বলে দাদার খোঁজে বেরিয়ে গেল চঞ্চল সেন।

চঞ্চল যখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে, গৌতমদা তখন পেন্টাগ্রামের মাঝে প্রায় অচেতন হয়ে পড়া। কান দিয়ে শুধুই মন্ত্র পড়ার আওয়াজ ঢুকছে।

ঘুরতে ঘুরতে চঞ্চল সেন, ওই বাড়িটাই অতিক্রম করছিল। হঠাৎ করে বাড়ির গেটটার দিকে চঞ্চল সেনের নজর যায়। এত বছর ধরে দুর্গাপুরে বসবাস, জীবনেও সে এই বাড়ির গেট এভাবে খোলা থাকতে দেখেনি। এমনিতেও এ বাড়ির সম্পর্কে ছোট থেকে যা যা শুনেছে, তা ভাবলেও পিলে চমকে যায়৷
বাড়িটা অতিক্রম করে, কয়েক মিটার যাওয়ার পর চঞ্চল সেন প্রচন্ড এক টান অনুভব করতে লাগল। মনে হঠাৎ এক ভাবনার উদয় হল ::: "গৌতমদা বাড়ির ভিতরে ঢুকেননিতো"!?

কথাটা মনে আসতেই বুকটা বেশ করে কেঁপে উঠল চঞ্চল সেনের। অজানা আশংকায় মনের খচখচানি বেড়ে চলল।

সাহস করে পিছনে ফিরে আবার বাড়িটির দিকে রওনা দিল। গেটের কাছে আসার পর জোরে চিৎকার করে ডাক দিল:

গৌতমদা, ও গৌতমদা। তুমি ভিতরে আছো নাকি?

নিচতলার রুমে আটকে থাকা গৌতমদার কানে সহজেই চিৎকারটা পৌছে গেল। টানেলের শেষে আলো দেখার পর মানুষের যে অনুভূতি হয়, ঠিক তেমন বোধই করতে লাগলেন গৌতমদা। শয়তানী মন্ত্রগুলোর সম্মোহনী ক্ষমতা যেন হঠাৎকরেই হ্রাস পেতে লাগলো। অবশভাবও কেটে যেতে শুরু করলো। প্রায় অচেতন গৌতমদা ধীরে ধীরে শক্তি ফিরে পেতে লাগলেন।

শোয়া অবস্থা থেকে উঠে, শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠলেনঃ চঞ্চল, আমি এখানে।

চিৎকার দিয়েই অজ্ঞান হয়ে পড়লেন গৌতমদা।

গৌতমদার আওয়াজ কানে আসতেই, চঞ্চল বাড়ির ভিতরে ছুটে যান। অজ্ঞান অবস্থায় নিচতলায় পড়ে থাকতে দেখেন প্রিয় গৌতমদাকে।

অজ্ঞান গৌতমদাকে ওখানেই থিতু করার চেষ্টা করতে লাগলেন চঞ্চল সেন। প্রচন্ড দুর্বল গৌতমদা পেন্টাগ্রামের মাঝখানেই শুয়ে ছিলেন। চঞ্চলও প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে লাগলেন।

প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার একপর্যায়ে চঞ্চল, হঠাৎ করে মন্ত্র পড়ার আওয়াজ শুনতে শুরু করেন। গৌতমদার মত আওয়াজগুলোর উৎস নিয়ে বেশ ধাঁধাঁয় পড়ে যায়। একবার মনে হচ্ছিল আওয়াজ ছাদ থেকে আসছে, আবার মনে হচ্ছিল নিচতলার রান্নাঘর থেকে আসছে।

উপর নিচে বেশ কয়েকবার দৌড়াদৌড়ি করেও আওয়াজের ব্যপারে নিশ্চিত হতে পারলো না চঞ্চল সেন।

গৌতমদার মত একই ঘটনা চঞ্চলের সাথেও ঘটতে লাগল।

শয়তান উপাসকদের টোপ এবার চঞ্চলের মুখে।

দৌড়াদৌড়ি করে ক্লান্ত চঞ্চল নিচতলায় এসে গৌতমদার পাশে বলির পয়েন্টাতেই গা এলিয়ে দিলেন।

পাঁচ মিনিটের মত পার হল। গৌতমদার মত চঞ্চলেরও অস্বস্তি লাগা শুরু হল। বাম ঘাড়ে বেশ চাপ। মনে হচ্ছিল ভারী কোন কিছু কাঁধের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রচন্ড অসহায় অনুভূতি। এতটা অসহায় নিজেকে আর কখনোই লাগেনি।

চারপাশে শয়তানি মন্ত্র পড়ার আওয়াজ যেন বেড়েই চলছিল।

অবশ, অসহায় চঞ্চল সেন টানেলের শেষের আলো দেখার আশা একেবারেই হারিয়ে ফেললেন। নিজের উপর শয়তানী আধিপত্য স্বীকার করে নিলেন।

শয়তান উপাসকদের আজ মহাখুশির দিন। শয়তানি বলির শিকার হতে যাচ্ছে সুস্থ-সবল, প্রাণরসে পরিপূর্ণ দুজন পুংলিঙ্গের মানুষ।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:২৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×