মদীনা মুনাওয়্যারায় ঈদ
সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে শায়িত আছেন সেই ঐতিহাসিক মদীনা মুনাওয়্যারায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তবুও আমি অধমের সেই সৌভাগ্য হওয়ায় মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের দরবারে অসংখ্য অগণিত শুকরিয়া জানাই। প্রায় ১১ বছর পূর্বে সৌদি আরবের জিদ্দা শহরে পবিত্র রমজান শরিফের পুরো মাস অতিবাহিত করার পরই আকাশে যখন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগমণী বার্তা নিয়ে নতুন চাঁদ উঠল সেই মধুর ণে চট্টগ্রামের দুই ব্যবসায়ী পবিত্র মদীনা শরিফে ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য যাবেন জেনে আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন আব্বা আমাকেও তাদের সঙ্গী হওয়ার জন্য সুযোগ করে দিলে মনটা ভরে উঠল যেন বাধভাঙ্গা আনন্দে। আনন্দের প্রবল শিহরণ অনুভুত হলো এজন্যই যে, এই প্রথমবার আমার প্রাণপ্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রওজা মুবারক জিয়ারত নসীব হবে। একেবারে সন্নিকটে হাজির হয়ে জানাতে পারবো সালাতো সালাম। জিদ্দা শহর থেকে যথারীতি গাড়িতে উঠলাম আমরা তিনজন। মরুভুমির বুক চিরে অধিকাংশই চার লেন বিশিষ্ট ওয়ানওয়ে ও খুবই উন্নতমানের পিচঢালা পথ। মাঝে মধ্যে বিরতি ও নাস্তা করার জন্য রোডের পাশে বিশাল আয়তনের হোটেল। যেখানে চা থেকে শুরু করে বড় বড় খাসি হুক্কা পর্যন্ত সাজানো আছে তামাক সেবনের জন্য। চোখে পড়লো অনেকগুলি হুক্কার হোটেল। যেখানে গিয়ে সৌদিরা হুক্কায় গুড়–ম গুড়–ম টান দেয় আয়েশের সাথে আর আমাদের দেশের ঘাপলার মতো একটি খেলা খেলে সময় পার করে। সারা রাত গাড়িতে ভ্রমন। মজার ব্যাপার হচ্ছে সৌদি আরবের এসব রোডে গাড়ি চালানোর সময় ড্রাইভার গাড়ির পুরো গতিবেগ ছেড়ে দিতে কার্পণ্য করেনা বরং আরও যদি গতিবেগ থাকতো তবে তাও ছেড়ে দিতো বলেই হাবভাবে মনে হয়। এমনি গাড়ির সমস্ত মতার গতিবেগে সারারাত চলে রাস্তায় কান্তি দুর করার জন্য একবার মহাসড়কের পার্শ্বের একটি হোটেলে ঢু মেরে ফজরের আজানের পূর্ব মুহুর্তে আমার প্রিয় নবীজির শহর মদীনার উপকন্ঠে পৌছতেই চলন্ত গাড়িতে থাকা অবস্থায় দুর থেকেই পবিত্র মসজীদে নববীর সুউচ্চ সবুজ মিনার অবলোকন করে মনটা যেন আনন্দে নেচে উঠল। অবলোকনের সাথে সাথে একটি মায়াবী সুঘ্রাণের আভা এসে আমার নাকে লাগল যে ঘ্রাণের পরশ এখনও আমার নাকে যেন লেগেই আছে। এই মধুর ঘ্রাণ আর কোথাও পাই নাই। খানিকটা পর পৌছে গেলাম পবিত্র মসজিদে নববীতে। সেখানে চলন্ত সিড়ির মাধ্যমে যেতে হয় মাটির নিচে উন্নতমানের ওজুখানা গোসলখানা ও প্রস্রাবখানায়। সৌদি আরবে বলা হয় হাম্মামখানা। জীবনে এই প্রথম ঈদের গোসল পবিত্র মদীনায় সম্পন্ন করলাম। ওজু গোসল সেরে আমার প্রাণের নবী যে মসজিদে নামাজ আদায় করতেন সেই পবিত্র মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলাম। ফজরের আজান হলো। জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করার পর সবাই নিজ নিজ স্থানেই বসে রইলেন পবিত্র ঈদের জামাতের অপোয়। অনেক ধনাঢ্য সৌদিরা হরেক স্বাদের খেজুর বিতরণ করলেন মুসল্লিদের মধ্যে। নির্ধারিত সময়েই পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত শুরু হলো। প্রবল আনন্দে আমরা ঈদের জামাত আদায় করার পর পরই আমার প্রিয় নবীজীর পবিত্র রওজা মুবারক জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সামনের সেই নির্ধারিত রাস্তা দিয়েই প্রচন্ড ভিড় ঠেলে ঠেলে এগিয়ে যেতে লাগলাম। সকল মুসল্লিয়ানে কেরাম আবেগ আপ্লুত হয়ে সেদিকেই এগুচ্ছেন আর সুর করে বলছেন ‘‘আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসুল আল্লাহ, আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ইয়া হাবীব আল্লাহ’’। নবীজির প্রেমে মনটা তখন যেন বেফানা হয়ে উঠল। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মুসলমান সিমাহীন আবেগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন একেবারে পার্শ্বে থেকে পবিত্র রওজা মুবারক জিয়ারতের উদ্দেশ্যে। আমরাও সেদিকে যাত্রা করছি আর দুরুদ শরিফ পড়ছি। যেখানে যাওয়ার তাওফিক দানের জন্য সারা জীবন অসংখ্য অগণিতবার দোয়া করেছি আমার মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের পাক দরবারে। অগণিত মুসল্লির প্রচন্ড ভীড়ের চাপে আমার তখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা। বিশেষ করে আফ্রিকার লম্বা কালো মানুষের ধাক্কা সামলানো মুশকিল। প্রচন্ড ভীড় ঠেলে ঠেলে অবশেষে আমার কাঙ্খিত মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রওজা মুবারকের পাশে গিয়ে অন্তরের সকল আবেগ উজাড় করে বললাম ‘আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসুল আল্লাহ, আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ইয়া হাবীব আল্লাহ, আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ইয়া সায়্যিদাল মুরসালিন, আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাহমাতাল্লিল আলামীন’’। পবিত্র রওজা মুবারকের পাশেই দাড়ানো সউদী মুতাওয়া। তারা সেখানে কাউকে দাঁড়ানোর সুযোগ দিচ্ছেন না বরং ঠেলে ঠেলে সকলকে বের করে দিচ্ছেন। পবিত্র রওজা মুবারকের পার্শ্বে দাড়িয়ে থেকে আমার প্রাণপ্রিয় মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বার বার সালাম দিতে মনটা ভীষন আকুবাকু করলেও প্রচন্ড ভীড়ের চাপে সে সুযোগ পাওয়া গেল না। অন্তরের হাহাকার রয়েই গেল। বেরিয়ে পড়লাম বাহিরে। জান্নাতুল বাকীসহ অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামদেরও জিয়ারত করলাম। ঘুরে ঘুরে দেখলাম আমার কাঙ্খিত মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত মদীনার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। এরপর খানিকটা সামনে গিয়ে দেখলাম জিয়ারাহ জিয়ারাহ বলে সৌদি ট্যাক্সি ড্রাইভাররা উচ্চস্বরে ডাকছেন। তারা প্রতিটি ট্যাক্সিতে কয়েকজন করে দর্শনার্থী নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামদের স্মৃতি বিজড়িত দর্শনীয় বেশ কয়েকটি পবিত্র স্থান পরিদর্শন করতে। আমরা তিনজনও উক্ত গাড়িতে উঠে তাদের স্মৃতিবিজড়িত মজিদের আবু বক্বর (রা.), মসজিদে উমর (রা.), মসজিদে আলী (রা.), মসজিদে উসমান (রা.) সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক মসজিদ ও মসজিদে জুল ক্বিবলাতাইন অর্থাৎ দুই ক্বিবলার মসজিদ যেখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজরত অবস্থায় ওহী নাযিল হয় এবং পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে ক্বিবলা পরিবর্তন হয়ে পবিত্র কা’বা শরিফের দিকে ক্বিবলা নির্ধারন হয়। ওহী নাযিলের সাথে সাথে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজরত অবস্থায়ই পবিত্র কা’বা শরিফের দিকে ঘুরে বাকী নামাজ আদায় করেন । ঐতিহাসিক ওহুদ প্রান্তর পরিদর্শন করলাম যেখানে ঐতিহাসিক ওহুদের যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। সেখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র দান্দান মুবারক শহীদ হয়েছিল। শহীদ হয়েছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রাণপ্রিয় চাচা হযরত আমির হামযা (রা.) সহ আরও অনেক প্রসিদ্ধ সাহাবায়ে কেরাম। তাদেরকে সেখানেই সমাহিত করা হয়েছে। পাথর দিয়ে চিহ্নিত করা তাঁদের পবিত্র কবর জিয়ারত করলাম।
সারাদিন শান্তির শহর পবিত্র মদীনা শরিফে ঘুরে ঘুরে ঐতিহাসিক স্থানসমুহ পরিদর্শন ও শহরের অনুপম সৌন্দর্য্য অবলোকন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসল্লিয়ানদের সাথে মতবিনিময় ও খাওয়া দাওয়া শেষে রাতে আবার জেদ্দায় ফিরলাম।
লেখকঃ সভাপতি, সিলেট লেখক ফোরাম।
![](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/generic-ads-580x400.jpg)
কোকাকোলা সহ সকল কোমল পানীয় বর্জন করুন। তবে সেটা নিজের স্বাস্থ্যের জন্য, অন্য ব্যবসায়ীর মার্কেটিং কৌশলের শিকার হয়ে না।
মার্কেটিং এর ম্যাডাম একবার বলেছিলেন, "No publicity is bad publicity." প্রচারের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের মনে ব্র্যান্ডের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া। কিছুদিন পরে মানুষ ভালো কি মন্দ সেটা মনে রাখে না,... ...বাকিটুকু পড়ুন
ওরা আমাদের ঐতিহ্যের পোশাককে নোংরা পোশাক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। ওরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চায়।
"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"
এক মৌলভী পোস্ট দিয়েছেন
"শাড়িকে একটি নোংরা পোশাক বানিয়ে দিয়েন না।
শরীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
সমূদ্র-সৈকতে - ১৬
ছবি তোলার স্থান : মেরিনড্রাইভ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : পহেলা অক্টোবর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।
বেড়াবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমূদ্র সৈকত। কখনো কখনো আমারও সুযোগ হয় বেড়াতে যাবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেইন্ট মার্টিন ও কোক ইস্যু
বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়, কোকের বয়কট ও গত দুই দিন ধরে সেইন্ট মার্টিন মায়ানমার দখল করে নেয়ার খবর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্রিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, মায়ানমার সেইন্ট মার্টিন দখল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন