somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবার স্বপ্নই কাল হলো

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাবি (বাংলাটাইমস টুয়েন্টিফোর):
মায়ের ইচ্ছে ছিল একমাত্র ছেলে ঢাকায় থাকবে। পড়াশুনা করে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু সেদিন মায়ের ইচ্ছেই বাঁধ সাধেন বাবা। বাবার ইচ্ছে ছেলেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। শেষ পর্যন্ত বাবার ইচ্ছেতেই সম্মতি দেয় অনিক। অন্যদিকে উচ্চমাধ্যমিকে পড়া অবস্থাতেই বাবা মারা যায় অনিকের বন্ধু খায়রুলের। তিন ভাই বোনের মধ্যে মেজ খায়রুল। বাবার মৃত্যুর শোককে দুকুল ছাপিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বন্ধুর সাথেই ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগে। ২০১২ সালের জানুয়ারীতে ৩য় বর্ষে পা রাখত ওরা। কিন্তু ডাকাত দলের নির্মম আঘাত তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মাড় করে দেয়। একই সাথে শোকে বিহ্বল করে দিয়েছে তাদের আত্মীয় স্বজন সহ বন্ধু বান্ধবদের।
খুবই চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে ছিল অনিক। বেড়ানো ছিল তার কাছে এক ধরনের নেশা। এজন্যই ফুপাতো ভাই রাজীব ঘোষকে ঢাকা থেকে ফোন করে নিয়ে আসে সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে। দল ভারী করতে খায়রুল সহ আরো ৫ বন্ধু বান্ধবীকে নিমন্ত্রণ জানায়। তারাও সম্মতি জানায়। সবার সম্মতিক্রমে সিলেটের বাঁধাঘাটে শুক্রবার রওয়ানা করে অনিক ও তার দলবল। নির্ধারিত জায়গায় পৌছাতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। ইঞ্জিন চালিত একটি নৌকায় করে তারা শুরু করে নৌভ্রমণ। তাদের পিছু নেয় একদল ডাকাত। এক পর্যায়ে তাদের নৌকার পথ গতিরোধ করে ডাকাত দল। কেড়ে নেয় ভ্যানিটি ব্যাগসহ মোবাইল ও টাকা পয়সা। তাতে সাধ মেটেনি ওই ডাকাত দলের। শেষ পর্যন্ত চড়াও হয় অনিকের মেয়ে বান্ধবীদের উপর। কিন্তু বাঁধ সাধে অনিক খায়রুল ও তাদের বন্ধুরা। ডাকাতের বেধড়ক পিটানোতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অনিক ও খায়রুল। এতেও ক্ষান্ত হয়নি তারা। লাশ দুটোকে ফেলে দেয়া হয় চেঙ্গেরখাল নদীতে। অনিক ও খায়রুলের বাকি বন্ধুরা ডাকাতের হাত থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। অনিক ও খায়রুলের লাশ ক্যাম্পাসে পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলে ক্ষোভ আর শোক মিলে সৃষ্টি এক অন্যরকম পরিবেশ। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দোষারুপ করছে অন্যদিকে অনিকরা কেনইবা গেল ওই জায়গায় এনিয়ে বিলাপ করছে অনেকেই।
কথা হয় অনিকের কলেজবন্ধু ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের ৩য় বর্ষেও ছাত্র মো. রিয়াসাত আল নূরের সাথে। সে জানায়, অনিক ছিল সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল একজন ছেলে। অপরিচিত কাউকে দেখলে সে পরিচিতের মতো আচরণ করতো। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথেও সে ছিল জড়িত। কিন্তু ডাকাতদল তাকে এভাবে মেরে ফেলবে কল্পনা করতে পারিনি। আমার আজ বিশ্বাসই হচ্ছে না অনিক নেই। অনিকের স্মৃতিগুলো এখনো আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।
অনিক চেয়েছিল ভালো একটা রেজাল্ট কওে দেশে থেকেই চাকরী করবে। মা বাবার মুখে হাসি ফুটাবে। কিন্তু এগুলো এখন দুস্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয় বলে জানায় রিয়াসাত।
পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র ও খায়রুলের মেসম্যাট জানায়, খুবই মেধাবী একজন ছেলে ছিল খায়রুল। এসএসসি এবং এইচএসসিতে তার জিপিএ এ ছিল। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় তার বাবা মারা গেলেও সে নানা প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
অনিক ও খায়রুলের ক্লাসমেটজাহিদ রহমান জোসেফ জানায়, নৌভ্রমণে যাওয়ার জন্য আমাকে খুবই পীড়াপীড়ি করে অনিক। আমি ওকে বলি যে আমার কাজ আছে। কিন্তু সে নাছোরবান্দা। শেষ পর্যন্ত নৌভ্রমণে যেতে আমি রাজী হই। কিন্তু এমন নির্মম ঘটনার স্বাক্ষী যে আমাকে হতে হবে তা কখনো কল্পনাই করিনি আমি।
খায়রুল ও অনিক খুবই খেলা প্রিয় ছেলে ছিল। বিশেষ করে ক্রিকেট। ভারত ও বাংলাদেশ এর মধ্যে খেলা হলে অনিক ভারতকেই সাপোর্ট করত। প্রায়ই ওরা আমার মেসে যেত খেলা দেখার জন্য। আমরা রাতভর খেলা দেখতাম। আড্ডা দিতাম। কিন্ত এগুলো আজ স্মৃতি হয়ে গেলো বলে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি তাকায় জোসেফ।
অনিকের ফুপাতো ভাই রাজীব ঘোষ জানায়, ‘অনিক মা বাবার একমাত্র সন্তান। তার আরেকজন ছোট বোন আছে। বড় সন্তান হওয়ায় অনিককে খুবই ভালবাসতো তার মা বাবা। অনিক মাঝে মাঝে দেরী করে বাড়ি যেত, যার ফলে অনেক দুশ্চিন্তায় ভুগত ওর বাবা মা। কিন্তু এখনতো সে চিরদিনের জন্য চলে গেছে, যে আর কোনদিন দেরী করেও ঘরে ফিরবে না।
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর নিলয় চন্দ্র সরকার জানায়, আসলে শিক্ষার্থী হিসেবে ওরা ছিল অসাধারণ। মেধাবী ছাত্র হিসেবে বিভাগে ওদের আলাদা সুনাম ছিল। এভাবে অকালে তাদের প্রাণ হারাতে হবে, তা কল্পনাও করিনি। আমি চাই ওদেরকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম আবেগজড়িত কন্ঠে বলেন, ওরা ছিল আমার ছেলের মতো। ওদেরকে এভাবে অকালে চলে যেতে হবে আমি স্বপ্নেও ভাবি নি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সালেহ উদ্দিন জানায়, ওদেরকে হারিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। দেশ হারিয়েছে দুজন মেধাবী সন্তান।
http://www.banglatimes24.com/?p=72674
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×