somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতার গল্প

১৭ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

।। নাসীমুল বারী ।।

আকাশের কালো সামিয়ানার পেছন থেকে ভেদ করে আসা জোৎøা আঁধারের লঘুত্বকে কমিয়ে দিয়েছে। যুবতী মেঘ আকাশের সাথে মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে কেঁদে কেঁদে ছেড়ে আসছে পিত্রালয়। মায়াবী সে কান্নায় জেগে উঠে জায়েদা।
জানালায় এসে দাঁড়ায়।
তিনতলার এ জানালা বরাবর একটা আমগাছ সগৌরবে ডালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে। একটি ছোট্ট ডাল জানালার গ্রীল স্পর্শ করে ঘরের ভিতর উঁকি দিয়েছে। বাতাসের হালকা দুলুনিতে মাথা নেড়ে নেড়ে ঘরের মানুষের সাথে কথা বলে সারাক্ষণ।
ঝিরঝিরে বৃষ্টি ঝরছেই।
সুরেলা সে বৃষ্টির আলতো ছোঁয়ায় আমপাতাগুলোকে ঘুম পারাচ্ছে নেমে আসা আকাশ নাইওরী। নিরালা রাতের আধো আধো আঁধারীর এ চিত্রপটে মোহিত জায়েদা জানালায় দাঁড়িয়ে আছে একাকীই। নিরব একাকীত্বের এমন চমৎকার রাতটা একটা কবিতা। অনুভবে অণুক্ষণে এ কবিতা ফোঁটায় ফোঁটায় সুখ দেয় জায়েদাকে।
জানালা থেকে একটু পিছিয়ে দাঁড়ায়।
তারপর পা উঁচু করে দেখতে চেষ্টা করে দূরের রাতকে। রাতের মিষ্টি চেহারাকে।
—এই তুমি জানালায় কী করছ?
অনুভবে অনুভূতির কবিতায় পতন ঘটে ছন্দের। চমকে যায় জায়েদা। পেছনে ফিরে দেখে জীবনের হিসেব মিলানো সাথী উপল। কাছে এগিয়ে এসে বলে—ঘুমোও নি এখনো?
—না।
—কেন?
—রাত দেখছি।
—মানে?
—রাত দেখার মাঝেও কবিতা আছে। আছে কবিতার ছন্দ। আছে ভালবাসা। দেখ না বৃষ্টির নূপুরেও সে কবিতা।
উপল অত্যন্ত মোলায়েম কণ্ঠে বলে—জায়েদা - - -।
—একটু বৃষ্টিরাতটা দেখতে দাও।
—কাগজ দেব? কলম?
—না লিখলে কি কবিতা হয় না? অনুভবেও কবিতা আছে। সে কবিতা অনুভবেই লিখতে হয়।
—বাহ্! চমৎকার তো!
আর কোন কথা না বলে আরেকটু জানালা ঘেঁসে দাঁড়ায় জায়েদা। বৃষ্টির বেগ কমে এসেছে; বাতাসের একটু যেন বেড়েছে। ও বেগে জায়েদার শ্যাম্পু করা চুলগুলো ওড়ছে। উড়া সে চুল উপলের চোখ মুখ ছুঁয়ে ছুঁয়ে মনের তৃষ্ণাকে চাঙ্গা করে তোলে। উপল একটু এগিয়ে পেছন দিয়ে জায়েদার ডান কাঁধে চিবুকটা রেখে ফিসফিসিয়ে বলে—এ রাতটা বুঝি তোমার দারুন লাগছে?
—হু।
—আর তোমাকে আমারও দারুন লাগছে এখন।
উপলের এ কথায় একটু মুচকি হেসে জায়েদা বলে—আর?
—ধূসর আঁধারে মেঘবাতাসের খেলায় তোমার ভেলা ভেসে বেড়ানোটাও দারুন!
—এ্যা!
ঝড়ের বেগের মতো আচমকা ঘুরে দাঁড়ায় জায়েদা উপলের মুখোমুখি। ক্ষণিকের জন্য থমকে যায় সব চিন্তা। তারপর নিজে নিজেই জায়েদা বলে—এ কবিতা কোথায় পেলে তুমি?
—কবিতা! কোন কবিতা?
—এই যে বললে ‘ধূসর আধারে মেঘবাতাসের খেলায় তোমার ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে।'
উপল আলতো হেসে বলে—কেন, প্রকৃতিটাই তো কবিতা।
—বাহ্!
কথাটা বলে উপলের বুকে মাথা রেখে উষ্ণতা ভাগাভাগি করে দু'জনে।
উপল মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে ছন্দায়িত কণ্ঠে বলে—এই- - - -! করছ কী তুমি?
—ভালোবাসা দিচ্ছি। কবিতা দিচ্ছি তোমাকে।
—না, না! আমাকে দেবে কেন? দেবে তো রাতকে?
—কেন? কেন?
—তুমি না একটু আগে বললে রাতটা একটা কবিতা।
—হ্যাঁ বলেছি। শুধুই রাত; রাতের সৌন্দর্যই কি কবিতা? তুমিও তো কবিতা। আমার অস্তিত্ব জুড়ে তো শুধু তুমিই; তাই না?
উপল মিটি মিটি হাসে। কোন কথা বলে না।
জায়েদাও মিটি মিটি হেসে আবার বলে—তোমার অস্তিত্বে আমি, আমার অস্তিত্বে তুমি। শুধুই তুমি—এটাই তো কবিতা। এ কবিতা ভালোবাসার। এ কবিতা যৌবনের, উষ্ণতার।
বৃষ্টি আরো একটু বেড়ে গেছে।
আকাশের নেকাব খুলে কান্নার জল পড়ছে গাছের পাতায়, জানালার কার্ণিশে। ফোঁটায় ফোঁটায় পড়া এ কান্নার জল উষ্ণ নয় হিমেলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা অঙ্গে। এক সুখানুভূতিতে আচ্ছন্ন জায়েদা।
বাতাস থেমে গেছে বৃষ্টি বাড়ার সাথে সাথেই। থেমে গেছে ওর চুল ওড়াও। শাড়ীর ভাঁজ থেকে উষ্ণ এক তীব্র ভালোবাসা উপলকে ডাকছে। উপল জায়েদার আরো কাছ ঘেঁসে দাঁড়ায়। দু'হাতে জড়িয়ে ধরে জায়েদার কপোলে উষ্ণতা দিয়ে বলে—এই--- এই--।
—বলো।
—মেঘ ডাকছে। ডাকছে রাতের কবিতা। ওরা আমাদের দু'জনরে ভালোবাসে বুঝি?
চোখটা একটু বুঁজে জায়েদা বলে—আমি, শুধু আমিই তোমাকে ভালোবাসি। তুমিই আমার কবিতা। আমিও তোমার কবিতা। আমাদের এ কাব্যগীতিতে মেঘ বৃষ্টিরা অলঙ্কার মাত্র।
বৃষ্টি থেমে আসে প্রায়।
আকাশের নেকাবটা সরে যাচ্ছে দ্রুত। পশ্চিমাকাশের কাছাকাছি চাঁদের থালাটা লুকোচুরি খেলছে চলমান নেকাবের সাথে।
রুম থেকে বেরিয়ে দু'জনে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। আরেকটু এগিয়ে রেলিংটায় ঠেস দেয়। ফিকে অন্ধকারে ঘোলাটে দেখাচ্ছে প্রকৃতিকে। নাকের ইন্দ্রিয় স্পর্শ করে মালতির সুবাসিনী হাসিকে। এ রাত ঘ্রাণের রাত। হাসির রাত। আনন্দের রাত। বারান্দার কাছ ঘেঁসেই ক'টি বাদুর উড়ে যায়। ধূসর কালোতে ঘনকালো বাদুরের ছন্দে ছন্দে উড়োউড়িটাও এক নতূন আলপনা তৈরি করেছে। এমনি সময়ে দূর থেকে ভেসে আসে লক্ষ্মীপেঁচার ছন্দায়িত উক্--উক্---ডাক। চকিত তাকায় জায়েদা। এদিক। ওদিক। হৃদয়ে অনুভব করে নতুন কবিতা, নতুন ছন্দ। নিচু কণ্ঠে উপলকে ডাকে- এ-ই---।
—কী?
—নতুন আরেকটি কবিতা দেখছ?
—নতুন কবিতা!
—মালতির সুঘ্রাণে লক্ষ্মীর ছন্দে আঁধারকালো বাদুরের উড়োউড়িতে কবিতার গালিচাটা ভরে উঠছে ক্রমেই। দেখছ?
—তুমি?
—আমি তো দেখছি নতুন কবিতা। অনেক কবিতা। কবিতার ছড়াছড়ি। উহ! দারুণ এক পৃথিবী! কবিতার পৃথিবী!
জায়েদার শাড়ীর আঁচল ফ্লোরে ছড়িয়ে। চুলগুলো এলিয়ে সারা পিঠে। দু'কাঁধের পাশ দিয়ে ক'গাছি চুল বুকের উপরও ছড়িয়ে আছে।
জায়েদার এ জীবন্ত জলরংক্যানভাস চাঁদের আলো আধারীতে মোহময় হয়ে ওঠেছে। উপল তাই পেছন থেকে ডান হাতে জড়িয়ে ধরে আলতো ঝাঁকুনি দিয়ে বলে—তোমার শরীরও তো কবিতার মতো কথা কয়! আমি শুনছি আর শুনছি!
জায়েদা মুচকি হেসে উপলের চোখে চোখ রেখে বলে—পড়ো সে কবিতা!
আসলে জীবনটাই একটা কবিতা। এ কবিতায় কখনো থাকে ছন্দের মজবুত গাঁথুনী, কখনো ঘটে ছন্দের পতন। জীবনের জন্যেই জীবনের কবিতাকে উৎসৃজন করতে হয়।
চোখ নামায় জায়েদা।
উপল শান্ত কণ্ঠে বলে—তোমাকে ছুঁয়ে ছুয়ে সে কবিতা পড়তে হয়।
উপলের এ কথায় জায়েদা আবেগানুভূতিতে এলিয়ে দেয় তার শরীর উপলের বুকে। বারান্দায় এ ভালোবাসা রাতের কবিতারাই দেখছে। আর দেখছে প্রকৃতির ছন্দরা।
জায়েদা বলে—উপল---।
কোন কথা না বলে উপল ওর চুলে আলতো হাত বুলায়।
হিমেল বাতাস মৃদুপায়ে বয়ে চলছে এ বারান্দায় ওদের উপর দিয়ে। শীতল আমেজে আলো-আধারির গালিচায় দাঁড়িয়ে ওরা দুজন। এখনো রাত। কাব্যময় এ রাত শেষ হবে না যেন কখনো। এ রাত ছবির মতো। কবিতার মতো। গানের মতো। এলোচুলো জায়েদা পড়ছে অনুভবের কবিতা। ভালবাসায় অনুভব। মন উৎরে বেরিয়ে আসে গান। উপলকে আবার আলতো নাড়া দিয়ে বলে—গান গাই? কবিতার গান!
—গাও।
অমনি জায়েদা গুনগুনিয়ে গেয়ে ওঠে—
“তুমি যে আমার কবিতা
আমার বাঁশির রাগিনী। - - - - ”
#
অন্য গল্পগুলো পড়তে টোকা দিন :
নিষিদ্ধ গল্প
গল্প : শিশির
গল্প : বাঁশির সুরে নদীর গান
গল্প : প্রজাপতি
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×