প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছে। পাশের ঘরটা উড়ে চলে গেল বাতাসের সাথে। প্রকৃতির কাছে অসহায় এক মা তার কোলের সন্তানটিকে অাঁকড়ে ধরে আছেন। কোনভাবেই সন্তানের কোন ক্ষতি হতে দিতে চান না। কিন্তু প্রকৃতি যে আজ বড়ই রুদ্র। পাষাণের মত সে আঘাত করল মায়ের উপর। হাত থেকে ছিটকে গেল আদরের সন্তানটি। অসহায় হতভাগা মা আজো অন্ধের মত খুঁজে বেড়ান তার সন্তানটিকে। হয়ত এরকম কোন ঘটনাই ঘটে ছিল ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল।
এবার একটু অন্য দিকে যাই। রানা প্লাজা ধ্বসে গেল। এটিও একটি দুর্যোগ ছিল। মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। কারও হাত কাটতে হল,কারও বা পা। আর মাননীয় দুর্যোগ মন্ত্রী তখন ব্যস্ত দিনাজপুরে তার দলীয় কর্মসূচি নিয়ে। রানা প্লাজার ধ্বসে পড়ার খবর পাওয়া মাত্রই তিনি ছুটে আসেননি। যখন এই ধরনের ব্যর্থতা গুলো আমাদের সামনে প্রতিনিয়তই ঘটছে তখন মনে প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবসাথাপনা কি আদৌ সুষ্ঠু নাকি বাংলাদেশের সক্ষমতাই নেই। দুর্যোগের ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্ব অনেক। অথচ স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও খুব বেশি জনসচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। উপকূলের মানুষরা এখনও মনে করে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস এগুলো আল্লাহর গজব। অনেকেই নিজের বাড়ি ঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চান না। মরলে যেন নিজের ঘরেই মরতে পারেন এই কারণে। এখন কথা হচ্ছে তাদের জনসচেতনতা যে এখনো সৃষ্টি হয়নি এই দায় কার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় নিশ্চয় তাদের দায় এড়াতে পারেননা।
উপকূলীয় অঞ্চলে কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ দেয়া হয়েছিল এরশাদ সরকারের আমলে। কিন্তু সময়ের আবর্তনে সেগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। এটা ঠিক যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে বিশ্ববাসীর কাছে। কিন্তু ছোট ছোট ব্যর্থতা কিংবা ভুলগুলো বড় ব্যর্থতার জন্ম দেয়। যেমন জন্ম দিয়েছিল রানা প্লাজায়। বিল্ডিং কোড কিংবা ইমারত নির্মাণের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তৈরী করা হয় বহুতলবিশিষ্ট দালানটি। যার খেসারত দিতে হয় হাজার হাজার শ্রমিককে। যাদের অনেকে এখনো মানসিক ভারসাম্যহীন, শারীরিক ভাবে পঙ্গু। একটা কিছু খারাপ না ঘটা পর্যন্ত আমাদের টনক নড়ে না।
আমাদের দেশে দুর্নীতি টাও যদি একটু কম হতো তাহলেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনেকাংশে সফল হওয়া যেতো। সুশাসনের অভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মুখ থুবড়ে পড়ে সবসময়। ভবিষ্যতে মানব সৃষ্ট দুর্যোগের আরেকটি প্রধানতম কারণ হবে আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা। রাজউক এর নিয়ম নীতি যারা না মেনে বিল্ডিং বানাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সরকার নেয় না কেন? ভূমিকম্প হলে আরো ২০ টা রানা প্লাজা ধ্বসলে পরে বোধ হয় সরকার ব্যবস্থা নিবে।
তাও কি ব্যবস্থা নিবে সেটা বোধহয় উপরওয়ালাই জানেন। আমরা জানি না সেই কুখ্যাত সোহেল রানা এখন প্রশাসনের হেফাজতে কেমন আছেন।
আমরা মনে করি দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের কারিগরী সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু নেই রাজনৈতিক সদিচ্ছা কিংবা কারিগরী সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর জন্য দক্ষ জনবল। আমরা আর দেখতে চাই না কোন ধ্বসে যাওয়া রানা প্লাজা কিংবা জলোচ্ছাসে সন্তান হারিয়ে যাওয়া কোন মায়ের কান্না।।