ছেলেটি ছিল স্কুলের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। 'ও' লেভেল পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ভাল ফলাফল করেছিল। কিন্তু ছেলেটি তার এই ফলাফল দেখে যেতে পারেনি। দুনিয়ার সকল চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছিল। ঠিক মারা যাওয়ার আগ মুহূর্তে ত্বকী কি ভাবছিল? একটু পানি চেয়েছিল কি সে? আচ্ছা তার অপরাধ ই বা কি ছিল? সে কার পাকা ধানে মই দিয়েছিল যে তাকে এভাবে বড্ড অসময়ে চলে যেতে হল। হ্যাঁ, তার অপরাধ ছিল, সে একজন সচেতন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বাবার সন্তান। যে বাবা কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি।
ত্বকী গেল, গেল স্কুল ছাত্র সিয়াম,আল আমিন। ঘাতকদের কিছু হল না। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। র্য্যালিতে, মানববন্ধনে ত্বকীর স্মৃতি আমাদেরকে কাঁদায়। শুধু কাঁদাতে পারেনা শাসকগোষ্ঠীকে।
নারায়ণগঞ্জ এখন অপহরণ ও লাশের নগরী। শুধু গত একবছরেই এই শহর থেকে উদ্ধার হয়েছে শতাধিক লাশ। গত ৩০ দিনেই লাশ পাওয়া যায় ৩৬ টি। এই বৃহস্পতিবার উদ্ধার হয় ব্যবসায়ী সাইফুলের লাশ। বাংলা সিনেমায় আমরা দেখি কিভাবে গডফাদাররা তাদের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। নারায়ণগঞ্জের গডফাদাররাও তেমনি। কোন আইন, নীতি, মনুষত্ব্য তাদের কাছে ঘেঁষতে পারে না। তাদের টর্চার সেল আবিষ্কার হয়, অপহরণের সকল আলামত তাদের কাছে পাওয়া যায়। কিন্তু তারা গ্রেফতার হয় না। গাড়িতে কালো কাচ লাগিয়ে তারা ঘুরে বেড়ায় আইনশৃংখলা বাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা বাদ দিলাম, যখন কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকার অপহৃত ও নিহত হন, তখন নারায়ণগঞ্জের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। সেলিনা হায়াত আইভী মেয়র হওয়ার পর বলেছিলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি শহর থেকে গডফাদার, সন্ত্রাসী, জমিদস্যু, চাঁদাবাজদের উৎখাত করবেন। কিন্তু তা হয়নি। আমরা আশায় আছি। নারায়ণগঞ্জ একদিন আর আতংকের শহর থাকবেনা। শীতলক্ষাও একটি লাশবাহী নদী হবেনা। কার কাছে যেন শুনেছিলাম,
রক্তই মূলত শক্তি
রক্তে রক্তে জনপদ ছেয়ে গেলে, তারপর
এসে যায় জনতার মুক্তি।।