একটা সময় ছিল যখন এসএসসি পরীক্ষাকে মেট্রিক পরীক্ষা বলা হত। সেটা ছিল স্ট্যান্ড ও স্টারদের যুগ। যে শিক্ষার্থীটি বোর্ডে স্ট্যান্ড করত আশেপাশের দশ গ্রামের মানুষ একনজর তাকে দেখতে আসত। স্বাভাবিক ভাবেই সমাজে তাদের মূল্যায়ন ছিল বেশি। যুগ পাল্টেছে। জিপিএ'র প্রবর্তন হয়েছে। শুরুর দিকে এপ্লাস ধারীদের কদর ছিল অনেক। আস্তে আস্তে জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর কমতে থাকে শিক্ষার মান। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৭৫ নম্বরের উত্তর করলেও এপ্লাস পাওয়া যায়। যাই হোক শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে আজকে কথা বলতে চাচ্ছি না। কথা হল, যে পরিমাণে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যাটা বাড়ছে সে পরিমাণে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুণে কিংবা মানে বাড়ছে না। এ কারণে পরবর্তীতে এই এপ্লাস ধারীদেরকেই পস্তাতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই এসএসসিতে একটা ছেলে বা মেয়ে এ প্লাস পাওয়ার পর সবাই আশা করে যে সে এইচ এস সি তেও এ প্লাস পাবে। কিন্তু বিধি এই জায়গাটিতে বাম হয়ে যায়। বাংলাদেশের খুব কম কলেজই আছে যেখানে যথাযথভাবে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠদান করা হয়। ফলে পরবর্তীতে ফলাফল আর আশানুরুপ হয়না। এমনও ঘটেছে যে, শিক্ষার্থীরা এসময় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যায় অনেক শিক্ষার্থীর চাপ সহ্য করতে না পেরে। এ কারণে এই শনিবার কিংবা রবিবারে যাদের হাতে ফলাফল পৌঁছুবে তাদের প্রতি আমার কিছু পরামর্শ----
ঠিক ফল পাবার পর মুহূর্তে--
যদি কাংখিত ফলাফল এসে যায় তাহলে তো কথাই নেই। অভিনন্দন তোমাকে। তোমার আনন্দ ভাগ করে নাও সবার সাথে। কৃতজ্ঞতা জানাও সবার প্রতি। আর অবশ্যই অবশ্যই সমবেদনা জানাবে তোমার বন্ধুদের যারা আশানুরুপ ফল লাভ করতে পারেনি।
যারা আশানুরুপ ফল পাবেনা---
চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের খুব কষ্ট হয় যখন দেখি সামান্য একটি এসএসসি'র রেজাল্টের জন্য অনেকেই আত্মহত্যা করে বসে। দয়া করে এ কাজটি কেউ করবেনা। প্রথমে মার্কশীট চেক করবে। এখন তো বোর্ডে উত্তরপত্র রিভিউ করা যায় খুব সহজেই। আর একটু আধটু পরীক্ষা তো খারাপ হতেই পারে।
কলেজে ভর্তির সময়---
গোল্ডেন এ প্লাস কিংবা এ প্লাস পাওয়ার পর সবারই ইচ্ছা থাকে দেশের নামীদামী কোন কলেজে ভর্তি হওয়ার। তখন একটু চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিও। যারা গ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে চাও তাদেরকে অবশ্যই ভাল একটি আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে আগে। প্রায়ই দেখা যায় প্রথম ঢাকায় আসার পর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে বড় ধরনের অসুখ যেমন জন্ডিস কিংবা টাইফয়েড হয়ে যায়। চেষ্টা করবে নিজের জেলা শহরে ভাল কোন কলেজে ভর্তি হতে। কারণ ঢাকায় আসলে এই শহরে নিজেকে মানিয়ে নিতেই অনেক সময় চলে যায়। তাছাড়া ঢাকা শহরে জীবন যাপন করার খরচটাও অনেক বেশি। অনেক সময় মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত অভিভাবকের পক্ষে খরচ যোগানো সম্ভব হয় না।
কলেজে ভর্তি হবার পর----
এইচএসসির সিলেবাস আর এসএসির সিলেবাসের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য আছে। তাছাড়া এসএসসিতে ছোট বই পড়তে হয় দুই বছর ধরে, আর এখানে বড় বড় সব বই পড়তে হবে খুব স্বল্প সময়ে। সবচেয়ে ভাল হয় ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই তুমি যদি সিলেবাসের একাংশ শেষ করে ফেরতে পার। আর তুমি যদি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হও তাহলে অবশ্যই তোমাকে জ্যামিতি ও ত্রিকোণোমিতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। সময়ের ব্যবহার করতে হবে পুংখানুপুংখভাবে।
ভবিষ্যতের প্রস্তুতি--
ভর্তি হওয়ার পরপরই ঠিক করে নাও ভবিষ্যতে কি হতে চাও। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী,কৃষিবিদ, আইনজীবী যাই হতে চাও না কেন প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। এখন থেকেই দেখতে থাক ভর্তি পরীক্ষায় কোন ধরনের প্রশ্ন আসে। আর সে অনুযায়ী কিছু কিছু প্রস্তুতি নেয়া শুরু কর। তা না হলে প্রতিযোগিতার এই যুগে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে।
আশানুরুপ হোক তোমাদের ফলাফল।।