ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত মনে হবে। কিংবা ব্যাক ডেটেডও মনে হতে পারে। ব্যাপারটি আসলেই জটিল আকার ধারণ করে ফেলেছে। কয়েকটি ঘটনার কথা বলি---
ঘটনা ১--অামার এক বন্ধু ঢাকার একটি নামী কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেয়। ক্লাস সেভেন। ক্লাসে সে দেখে একটা মেয়ে একটু পর পর ব্যাগ খুলে কি যেন দেখছে। কতক্ষণ পর বন্ধু সেই মেয়ের কাছ থেকে ব্যাগের ভিতরের জিনিসটি নিল। একটি সুন্দর শোপিস। তাতে আরও সুন্দর করে লেখা 'আমি তোমাকে ভালবাসি'(ইংরেজি তে লেখা ছিল)। দেখে বন্ধু হতবাক। ঘটনা শোনার পর আমিও অবাক। ক্লাস সেভেনেই এ যুগের কিশোর কিশোরীরা ভাল করেই ভালবাসছ।
ঘটনা ২-- কলকাতার হাল আমলের কোন একটি প্রেমের চলচ্চিত্র দেখল স্কুল ছাত্র নিশাদ( ছদ্মনাম)। দেখল মেয়ের(নায়িকা) পেছনে বারবার ধর্ণা দিয়েও ছেলে( নায়ক) মেয়ের মন পাচ্ছে না। কিন্তু নায়ক পিছনে লেগেই থাকল। একসময় ঘুরতে ঘুরতে নায়ক সফল। নিশাদের মনে ঝড় বয়ে গেল। ক্লাসের সুন্দরী মেয়ে মিতা(ছদ্মনাম)'র জন্যও তার কেমন জানি লাগে। মাঝে মাঝে বুকটা চিনচিন করে। শুরু হল প্রেমের চেষ্টা। ফলাফল চলচ্চিত্রের মত হয়নি। বরং পড়ালেখা নষ্ট।
আমি কিশোর বয়সের এই ভালবাসা কিংবা এই আবেগকে কোনভাবেই অশ্রদ্ধা করছিনা। স্বাভাবিকভাবেই বয়ঃসন্ধিকালের সময়টাতে কিশোর কিশোরীরা নতুন একটা পৃথিবীর সাথে পরিচিত হয়। চেনা পৃথিবীটাই অচেনা হয়ে ধরা দেয়। এক একটা বসন্ত আসে একটা নতুন, আলাদা রূপ নিয়ে। মন তখন ভিন্ন কিছুর ছোঁয়া চায়। ডানা মেলতে চায় আকাশে। তখন সেই কিশোর বা কিশোরীটি যদি ভাল সংগ কিংবা সঠিক দিকনির্দেশনা পায় তাহলে তার জীবন হয়ে উঠে ফুলের মত পবিত্র ও সুষমামণ্ডিত। কিন্তু এর বাত্যয় ঘটলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। তখন অন্ধকারের দিকে হাত বাড়ায় সে। নিজের অজান্তে; অবচেতন মনে। আর এভাবেই অনেক সম্ভাবনা অঙ্কুরেই নষ্ট হয়।
কথা বলছিলাম বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে। সহজ কথায় বললে প্রেমের চলচ্চিত্র নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই নায়ক নায়িকারাই মিডিয়ার কল্যাণে কিশোর কিশোরীদের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়(মডেল) হয়ে যান। তাদের কথা-বার্তার স্টাইল, পোশাকের স্টাইল, হাঁটার স্টাইল সবাই নকল করার চেষ্টা করে। সেটিও খুব একটা সমস্যা ছিল না। সমস্যাটা তখনই বাঁধে যখন কিশোরটি দেখে একটু মারামারি করলেই, কিংবা মেয়ের পিছনে ঘুরাঘুরি করলে পরে মেয়েটিও মন দিয়ে দেয়। সে যখন বাস্তব জীবনে এটি করতে চেষ্টা করে তখনই বিপত্তি বাঁধে। স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক বাস্তবতার কারণে খুব কম ক্ষেত্রেই মেয়েটি তার প্রেমের ডাকে সাড়া দেয়। অর্থাৎ ছেলেটি তার প্রেমে ব্যর্থ। ফলাফল; ছেলেটি নিজেকে তার ভিতরে গুটিয়ে নেয়। পড়াশোনায় আর মন বসে না। সৃজনশীলতার কোন কাজ তাকে দিয়ে হয়না। এ হতাশ অবস্থা কাটতেও অনেক সময় লাগে। আমার মনে হয় বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থেই।।
কিশোর কিশোরীদের মানসিক বিকাশের জন্য পরিবারের ভূমিকাও অপরিসীম। সন্তান কোথায় যায়,কাদের সাথে চলাফেরা করে এগুলোর প্রতি নজর দেয়া দরকার। তবে অবশ্যই গোয়েন্দাগিরি নয়। তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। পরিবারে যেন বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালের সময় কিশোর কিশোরী বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে হয়তোবা প্রেমঘটিত কারণে ক্লাস সেভেনের ছেলে বা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে এ ধরনের খবর আমাদেরকে পত্রিকার পাতায় পড়তে হবে না।।