ডেইলী স্টার পত্রিকায় একটি কলাম এসেছে। river,where? একবছর আগেও যমুনা কিংবা মেঘনায় যে সমস্ত অংশে পানির প্রবাহ ছিল এখন সেখানে শুধু ধূ ধূ বালুচর। গরুগুলো হেঁটে হেঁটেই নদী পার হচ্ছে। সেলুকাস! একসময়ের প্রমত্তা নদী এখন বালুচর। এমন না যে, বড় কোন ভূমিকম্পের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। নদীতীরের যে সমস্ত মানুষ গত বছরে পর্যন্তও জীবিকা নির্বাহের জন্য নদীর উপর নির্ভরশীল ছিলেন তারা এবছর কর্মসংস্থানহীন। যারা গতবছর দিনে ৭০০ টাকা আয় করতেন তারা এবার ২০০ টাকাও আয় করতে পারছেননা। অনেকেই মাছ ধরতেন, কেউ কেউ নৌকা বাইতেন। গত বছর যেখানে সমুদ্রপৃষ্ট তেকে ৫.৮২ মিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হত সেখানে এ বছর ৫.৩৬ মিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অর্থাৎ অবস্থা শোচনীয়। তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ এই মার্চ মাসে ৪১৬ কিউসেক কমে গিয়েছে।
সমস্যাটা হচ্ছে নদীর এই অপর্যাপ্ত পানি বাংলাদেশের মানুষের কর্মসংস্থানের যেভাবে ক্ষতি করছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি করছে আমাদের জলবায়ুর। অবশ্য নদীতে পানি না থাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে বৃষ্টিপাত কম হওয়া। বিগত বছরগুলোতে আমাদের জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। সাধারণত এপ্রিল মাসে যে বৃষ্টি হওয়া দরকার তার ৬০ শতাংশ কম হয়েছে এ বছর। আর এ অবস্থা যদি চলতে থাকে জুন-জুলাই পর্যন্ত তাহলে এবারের পাটের ফলন নিয়ে সমূহ আশংকা থাকবে। আমন ধানের ফলনের ব্যাপারেও থাকবে অনিশ্চয়তা।
অতীতের দিনগুলোতে ভারত থেকে আসা নদীগুলোর যথাযথ পানির হিস্যা আমরা পাইনি। গত বছরের শুষ্ক মৌসুমে ভারত বাংলাদেশকে প্রায় ৬০ হাজার কিউসেক পানি কম দিয়েছে। গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী যে সময় বাংলাদেশের এক লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৩ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা; সেখানে বাংলাদেশ পেয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৯৭২ কিউসেক।
গঙ্গা চুক্তির সংলগ্নি-১-এর পানি বণ্টন ফর্মুলা অনুযায়ী ফারাক্কায় ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি প্রবাহ থাকলে ভারত ৪০ হাজার কিউসেক এবং অবশিষ্ট পানি বাংলাদেশ পাবে। প্রবাহ ৭০ হাজার কিউসেক হলে উভয় দেশ সমান সমান পানি পাবে। প্রবাহ ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক হলে বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক এবং অবশিষ্ট পানি ভারত পাবে। এ ছাড়া ১১ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত প্রবাহ যাই থাকুক উভয় দেশ ১০ দিন পরপর গ্যারান্টিযুক্ত ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে অর্থাৎ বাংলাদেশ ১১-২০ মার্চ, ১-১০ এপ্রিল ও ২১-৩০ এপ্রিল গ্যারান্টিযুক্ত ৩৫ হাজার পানি পাবে। ভারত ২১-৩১ মার্চ, ১১-২০ এপ্রিল ও ১-১০ মে গ্যারান্টিযুক্ত ৩৫ হাজার কিউসেক পানি নেবে। কিন্তু আদতে বাংলাদেশ তা পায়নি।
এই অবস্থা যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে বাংলাদেশের নদী অববাহিকার মানুষ ও দেশের কৃষি আবাদ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। তিস্তায় দিন দিন পানি প্রবাহ কমে আসছে। পানি প্রবাহ কমে আসার কারণ হচ্ছে, ভারত গজালডোবা ব্যারেজ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে ক্যানেলের মাধ্যমে মহানন্দা নদী দিয়ে বিহারের মেতী নদীতে নিয়ে যাচ্ছে বলে একটি রিপোর্টে প্রকাশ। এর ফলে তিস্তার পানি অস্বাভাবিক কমে আসে। যার কারণে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প অকার্যকর হয়ে পড়ে রয়েছে।
আমরা আশা করছি, ভারতের নব নির্বাচিত সরকার এ ব্যাপারে সুদৃষ্টি দিবেন এবং দুই দেশের বন্ধুত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেননা।