(ডিবেটিং সোসাইটির সাপ্তাহিক বিতর্ক সেশনের প্রস্তাব ছিল, এই সংসদ মনে করে যে, ছিটমহল হস্তান্তর ছিটমহলবাসীদের ভাগ্য পরিবর্তন করবে না)। বিতর্কে অংশগ্রহণ করে এবং কিছু বিশ্লেষণ করে আমার উপলব্ধি...
ছিটমহলবাসীদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। দুই দেশের ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ঘুচল তাদের ৬৮ বছরের বন্দিত্ব। বাংলাদেশের ভিতরে ভারতের ১১১ টি ছিটমহলের নাম এখন 'বাংলাদেশ'। তবে ছিটমহল বিনিময়ের এ মাহাত্ম্য ঢাকায় বসে পত্রিকা পড়ে বোঝানো যাবে না। এটা নতুন আলো, নতুন খাতা, নতুন হিসাব। 'ছিটবাসীরা' তাদের রাষ্ট্র পেয়েছে।
ছিটমহলগুলো যখন বর্তমান ছিল সে অবস্থার বর্ণনা অসহনীয়। তাচ্ছিল্যের শিকার, প্রতারণার শিকার এ গুলোই ছিল তাদের ভাগ্য নিয়তি। বৃটিশ গেল, পাকিস্তান গেল, কিন্তু ছিটবাসীদের নাগরিক অধিকারের প্রাচীর এক ইঞ্চি পরিমাণেও বাড়ে নি, অধিকার কিছু ছিলও না অবশ্য। অসুখ হয়েছে?? ঝাড়ফুক কর। কারণ হাসপাতাল নেই। স্কুল নেই, কলেজ নেই, মাদ্রাসা নেই। প্রশাসন, বিচার তো যোজন দূর।
তবে যাই হোক, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের অধিবাসীরা এখন বাংলাদেশী। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলও একইভাবে লীন হয়ে ‘ভারত’ হয়ে গেছে। সেখানকার নাগরিকরা এখন ভারতীয়। নরেন্দ্র মোদী সরকার এরই মধ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ দিয়েছেন নতুন অতিথি নাগরিকদের পুনর্বাসনের জন্য।
বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টারও কমতি নেই। সাবেক ছিটমহলবাসীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে নতুন বাংলাদেশিদের জীবনমান উন্নয়নে করপোরেট স্যোশাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) খাতে ব্যয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চারটির মতো সরকারি দপ্তর ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে। তবে সরকার আশানুরূপ বাজেট দিতে পারেনি। ৩৭০০০ লোকের জন্য ২০০ কোটি টাকার বাজেট যথেষ্ট নয় বলেই আমার মত। দ্রুত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা নির্মাণ, হাসপাতাল নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরি এবং সংস্কার, প্রশাসনিক কাঠানো সৃষ্টির মাধ্যমে বঞ্চিত ছিটবাসীকে এগিয়ে নিতে হবে। সরকারের এটা নৈতিক দায়িত্ব।
তবে সার্বিকভাবে ছিটমহলবাসীদের ভাগ্যেন্নোয়ন তখনই হবে যখন সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সেক্টর মিলিতভাবে পদক্ষেপ নেবে। তাছাড়া ছিটমহলের আশপাশের এলাকাগুলোর জনসাধারণের উচিত তাদেরকে আপন করে নেয়া। '৭১ এ এরা স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। সুতরাং তাদের ভাগ্যেন্নোয়নের লক্ষ্যে সরকারি চাকরিতে তাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা রাখা যেতেই পারে। তবে ছিটমহলবাসীদের নিয়ে যাতে নোংরা রাজনীতি না করা হয় সে ব্যাপারে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি থাকা উচিত। এবং নতুন বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড যেন টিপিক্যাল উন্নয়ন কর্মকান্ডের মত না হয়ে যায়(খাই খাই) সে দিকেও কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি রাখতে হবে। তাহলেই কেবল ছিটমহলবাসীদের ভাগ্যেন্নোয়ন ঘটতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:২৪