বেঁচে থাকতে হলে প্রতিদিন আমাদের খাবার গ্রহণ করতেই হয়। প্রতিনিয়ত আমরা ভয়ে থাকি যা খাচ্ছি তা কি আসলেই খাবার না কি বিষ। এটা সত্যি যে, একটু অসতর্ক হলেই আপনার প্রিয় খাবারটাই আপনার জন্য বিষ হয়ে যেতে পারে, যা আপনাকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। আর একটু সতর্ক থাকলেই খাদ্যে জীবাণু সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব। নিচে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত নোট দেয়া হল--
১. প্রথমেই চিন্তা করুন, খাদ্য সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য মাধ্যম কি কি হতে পারে? আপনার হাত, কিচেনে ব্যবহৃত ছুরি, ছাঁকনি, প্যান, বেসিন ইত্যাদি বস্তুই হতে পারে উত্তম মাধ্যম।
২. খাদ্য সংক্রমণ রোধে প্রধান যে জিনিসটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় সেটা হল কাচা মাংস, রান্নাকৃত খাবার এবং দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার।
আপনার ফ্রিজে কখনো কাঁচা মাংস সবার ওপরের তাকে রাখবেননা। তাতে করে সেখান খেকে দূষিত রক্ত বা জীবাণু যুক্ত পানি চুইয়ে নিচে পড়বে এবং নিচের খাবারগুলোও নষ্ট হবে। সবার ওপরে রাখবেন দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার, তার নিচে রান্নাকৃত খাবার আর তার নিচে কাঁচা মাছ বা মাংস।
৩. খুব ভাল করে মনে রাখবেন, কোন ভাবে যদি দূষিত রক্ত বা পানি আপনার খাবারের সাথে মিশে যায় সেটি ভুলেও খেয়ে টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করবেননা। পরে আপনার জীবন বাঁচানোর জন্য টাকার সমস্যা হয়ে যাবে।
৪. বাজার থেকে ফল কিনে এনেছেন। সুস্বাদু ফল। কিন্তু ফরমালিন দেয়া? নো টেনশন। লবণ পানিতে ৫ মিনিট ফল ভিজিয়ে বা ডুবিয়ে রাখুন, ফরমালিনের গুষ্টিসুদ্ধ হয়ে যাবে।
৫. বাজার থেকে অনেক সময় যে শাক সবজি কিনে আনা হয় তা ঠিকমত পরিষ্কার করা হয় না্। ফলে মাটি বা বালি লেগে থাকে। (ব্যাচেলর মেস কিংবা ছাত্রাবাসে এ ঘটনা বেশি ঘটে )। একটু কষ্ট করে বুয়া বা বাবুর্চি কে বলবেন এমনভাবে শাক সবজি ধুতে যাতে কোন ময়লা না লেগে থাকে। মাটিওয়ালা সব্জি খেলে কিন্তু ভাইরাস- ব্যাকটেরিয়া অনেক কিছুই পেটের ভিতর ঢুকে যেতে পারে।
৬. ডাইনিং টেবিলে ভাত বেড়েছেন, তরকারি বেড়েছেন। ভাল কথা, একটু কষ্ট করে ঢেকে দিন না। অনেক ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবেন।
৭. কিছু গৃহস্থালি কীট-পতঙ্গ আছে যেগুলো মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। মাছির এদের মধ্যে অন্যতম। ছোটবেলায় আমরা সবাই শুনেছি মাছি যেখানেই বসে সেখানেই বমি করে। কিভাবে করে জানেন? মাছির জিহ্বা অনেক লম্বা। তো ধরুন, মাছি কোন খাবারে গিয়ে বসল, সে তার লম্বা জিহ্বা দিয়ে খাবার টানবে। পরে সে আরেক জায়গায় গিয়ে বসবে। তখন আবার জিহ্বা বের করবে। সে সময় তার জিহ্বায় আগের খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ লেগে থাকবে যা পরের খাবারকে দূষিত করবে। আর মাছির জিহ্বায় কম করে হলেও কয়েক লাখ জীবাণু থাকে। ( খাবার ঢেকে রাখলেই কিন্তু এসব ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন)
৮. এ তো গেলো মাছির কথা। এবার আসি তেলাপোকার কথায়। রান্না ঘরে তেলাপোকা নেই এমন রান্নাঘর পাওয়া কষ্টকর। তেলাপোকা যদি আপনার খাবারের ওপর হেঁটেও যায়, দয়া করে ঐ খাবার আর খাবেন না। আর তেলাপোকা দমনের জন্য বাজারে অনেক কীটনাশক পাওয়া যায়। নিয়মিত কীটনাশক প্রয়োগ করলে তেলাপোকা দমন করা যাবে।(ইঁদুরের ক্ষেত্রেও একই কথা)
৯. চেষ্টা করবেন মাছ বা মাংস কাটার জন্য একটা ছুরি, আর ফল, শাক-সবজি কাটার জন্য একটা ছুরি ব্যবহার করতে। সম্ভব না হলে অবশ্যই মাছ মাংস কাটার পর ভাল করে ছুরি ধুতে হবে।
১০. বেসিন পরিষ্কার রাখতে হবে। কারণ সব জীবাণু তো ঐ রাস্তা দিয়েই যায়। আর হ্যাঁ, সেই সাথে ওপরের ট্যাপটাও। বেসিন ঝকঝকে রাখতে গিয়ে আমাদের আবার ট্যাপের কথা মনেই থাকে না।
১১. চপিং বোর্ড, কিচেনের মেঝে এগুলো নিয়মিত উপযুক্ত ডিটারজেন্ট বা ডিসইনফেক্টেন্ট দিয়ে ধুতে হবে।
আরও অনেক অনেক কথা আছে। সময় করে সেগুলোও অন্য একদিন বলব। ততদিন পর্যন্ত ভাল থাকুক আমাদের ভুড়ি
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৫২