কাজী আবেদ হোসেন যখন কবর থেকে উদ্ধার কৃত মুমূর্ষু ২জনকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা করলেন তখনও প্রকৃতির আলো একেবারেই মিলিয়ে যায় নি।পশ্চিম আকাশে তখনও ছিল প্রায় অস্তমিত সূর্যের হালকা রক্তিম আভা। পথে প্রচন্ড ভীড় ছিল।সেই ভীড়ের মাঝে মৃত্যুপথ যাত্রী যুবক দু’জন যেন সূর্যের রক্তিম আভার মত লাল হয়ে দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছিল। ভীড় উপেক্ষা করে হাসপাতালে পৌঁছানোও ছিল বেশ কষ্টসাধ্য।পুলিশসহ,ফায়ার ব্রিগেডের সকল কর্মী এই ভীড় নিরসনে যথেষ্ট তৎপর ছিলেন।কাজী আবেদ হোসেন ভীড় নিরসনের জন্যে নিজেই তৎপর হয়ে একটা মোটর সাইকেলের পেছনে আরোহণ করে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ির সামনে চলে গেলেন।মোটর সাইকেলে একপ্রকার দাঁড়ানো অবস্থায় অবস্থান করে হাত নেড়ে জনগনকে পথ থেকে ভীড় নিরসনের জন্যে আহ্বান করছিলেন।সবাইকে অবাক করে দিয়ে পুরো পথ ফাঁকা করে দিয়ে সমস্ত জনগণ পথের দু’পাশে অবস্থান করলেন।এবার ভীড়মুক্ত পথ দিয়ে অতি সহজেই তারা দেড় কি.মি.দূরে অবস্থিত হাসপাতালে পৌঁছে গেলেন।মুমূর্ষু দু’জনকে হাসপাতালের ভেতর নিয়ে অক্সিজেন দেয়া হল।ধীর গতিতে নিঃশ্বাস নেয়া মুমূর্ষু যুবকটিকে যখন অক্সিজেন দেয়া হল তখন তার নিঃশ্বাসে বুক ভরে উঠছিল আর মৃত বলে মনে হওয়া যুবকটিকে যখন অক্সিজেন দেয়া হল তখনও তার কোন সাড়া মিলছিল না । সে নিথর,নিশ্চুপ হয়ে পড়ে রইল। ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষনা করলেন।এতে তিনি খুবই ভেঙ্গে পড়লেন।কেননা অক্সিজেন বিহীন অন্ধকার নিছিদ্র গুহা থেকে বের করে প্রকৃতির আলো দেখামাত্রই তার জীবন প্রদীপ নিভে গেল।কাজী আবেদ হোসেনের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু। মৃত যুবকটি কে তার বাবা –মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হলো। মৃত যুবকটি শাহজাদা।সে মোহনগঞ্জ পাবলিক স্কুলে দপ্তরীর চাকুরী করত।সে খুবই দরিদ্র ছিল।তার একার রোজগারে পুরো সংসার চলত।তার বাড়ি ছিল বরকাশিয়া- বিরামপুর ইউনিয়নে।কাজী আবেদ হোসেন তার জানাজায় যান।তার পরিবারের নাজুক অবস্থা দেখে তিনি ভীষণ কষ্ট পান।শাহজাদা পুরো সংসারের ব্যয়ভার বহন করত ।সে নেই সেই অভাব যেন তার পরিবারে পরিলক্ষিত না হয় সেজন্য তিনি তার ভাইকে মোহনগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তার পদে চাকুরীর ব্যবস্থা করেন।জীবিত যুবকটি হাবিবুর রহমান।তাকে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।সে মোহনগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নানের ছেলে।নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।সদর হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকার পি.জি হাসপাতালে পাঠানো হয়।স্বভাবতই সবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ২২ ঘন্টা ওরা কবরে থাকল কিভাবে?আলোর দেখা নেই,ঘুটঘুটে অন্ধকার,নেই অক্সিজেন,মাটির নিচে ভয়ংকর এই মৃত্যুপুরীতে ওরা বাঁচল কিভাবে?এটা নিশ্চিত হতে স্বয়ং কাজী আবেদ হোসেনের ৩ মাস সময় লেগেছিল।যেহেতু শতভাগ সত্যি ঘটনা তাই ধৈর্য্ ধরে সাথেই থাকুন।
(চলবে)
বিঃদ্রঃ[তথ্যসূত্র শেষ পর্বে দেয়া হবে]
[link|ht২২ ঘন্টা পর কবর থেকে উদ্ধার জীবন্ত মানুষের লিংকtp://অবাক চোখে দেখি বিস্ময়কর বাংলাদেশ]