পবিত্র বাইতুল্লাহর ছাদে জমে থাকা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অনিন্দ্য সুন্দর নালা। এটিকে মীযাবে রহমত বলা হয়।
তিনি অনন্যসাধারন একজন
জীবনে কত সালাতইতো আদায় করলাম। আল্লাহ পাক তাওফিক দিলেন। কত জনপদের কত মসজিদে যে পাপে পূর্ন এই মস্তক সিজদায় অবনত হয়েছে তার কি ইয়ত্তা আছে? আল্লাহু আকবার! আমার মালিকের সামনে। আমার রবের সামনে সিজদাহ দেয়ার সৌভাগ্য! আহ, মাঝে মাঝে তো মন বলে ওঠে, এ জীবন যদি একটি সিজদায় কাটিয়ে দিতে পারতাম! আচ্ছা, সিজদায়-সালাতে এত মধুর স্বাদ কেন? প্রিয়তম প্রভূর সবচে' কাছে, সবচে' নিকটে পৌঁছে যায় যে বান্দা তখন! আমারতো মনে হয়, সত্যিকার হুজূরে ক্কলব আর খুশূ' খুজূ' নিয়ে আদায় করা দু'রাকাআত নামাজ হাজার রাকাআত থেকে উত্তম। 'ছল্লূ কামা রআইতুমূনী উছল্লি' 'সেইভাবে সালাত আদায় কর, যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখ' প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশমতে এইরকম তরতাজা নামাজ আদায়ের অনুভূতি ভিন্ন! স্বাদ আলাদা! এতে মন-প্রানে প্রশান্তি আসে। হৃদয়ে তৃপ্তি জাগে। প্রাপ্তি-পরিতৃপ্তির ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙে যায় কৃত্রিমতার সকল বাধার প্রাচীর! মালিকের সাথে দিদারের-সাক্ষাতের-মোলাকাতের মাধুর্যে আমোদিত মন বিমোহিত হয়! তাঁর রহমত অবারিত হয়ে ঢেকে দেয় বান্দার পাশ ও পরিপার্শ্ব! জীবনে অনেকবার এরকম ধ্যান-জ্ঞান একাকার করা নামাজ আদায়ের সৌভাগ্য হলেও পবিত্র বাইতুল্লাহর সম্মুখে এইবারই প্রথম। আচ্ছা, প্রিয় রসূলের নামাজ কেমন ছিল? সালাতে দাড়ালে তাঁর অবস্থা কেমন হত? কান্নার তোড়ে বুকের ভেতর ফুটন্ত ডেকচির মত বলক উঠতে থাকার কথা কি আমাদের নামাজে আমরা খুঁজে পাই? প্রিয় নবিজীর সেই দীর্ঘ কিয়াম, ততোধিক দীর্ঘ রুকূ', তারও অধিক দীর্ঘ-দীঘল সিজদাহর কথা কি আমাদের নামাজে আমরা খুঁজে পেতে চেষ্টা করি? চোখের পানিতে কপোল-দাড়ি ভিজে যাওয়া সেই ভেজা-সিক্ত, প্রেমপূর্ন নূরানী নামাজের কোন নমুনা কি আমাদের ভেতরে আমরা তালাশ করি কখনও? আল্লাহু আকবার! বন্ধু, বিশ্বাস করুন, এ বছরের হজ্বের সফরে যারা ছিলেন, তাদের থেকে ইচ্ছে করলে হয়তো জেনেও নিতে পারেন, শুধু একটি মানুষ, হ্যাঁ, একজন ব্যক্তি তিনি, তিনি যতবার যত ওয়াক্ত নামাজে লিড দিয়েছেন। আল্লাহর কসম, কেঁদেছেন, কাঁদিয়েছেন। প্রতি ওয়াক্তে তাঁর ভরাট কন্ঠে কান্নার নূর মিশ্রিত সেই মধুর ক্কিরাত শোনার প্রতিক্ষায় অপেক্ষমান থাকতাম। তিনি আর কেউ নন। কাবা শরীফের প্রধান ইমাম এবং প্রেসিডেন্ট অফ হারামাইন ৪৮ বছর বয়স্ক ড. আব্দুর রহমান বিন আবদুল আজীজ আস সুদাইস। আল্লাহ পাক তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিন। তার হায়াতে বরকত দান করুন। তার প্রতি বর্ষন করুন রহমতের অফুরান বারিধারা।
এছাড়াও ভাল লেগেছে। প্রান জুড়িয়েছে প্রতি ওয়াক্তের নামাজে যাদের সুমধুর তিলাওয়াত তারা হচ্ছেন- ডেপুটি চীফ অফ ইমাম এট মাসজিদ আল হারাম ড. সাউদ বিন ইবরাহিম আশশুরাইম, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার এবং মসজিদের হারামের ইমাম, ড. আব্দুল্লাহ আওয়াদ আল যুহানী, প্রফেসর এট কিং আব্দু্ল্লাহ সাউদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি এবং মসজিদের হারামের ইমাম, ড. মাহির আল মুআইকালি, জজ অফ দাওয়াহ এন্ড উসূল আদদ্বীন ফ্যাকাল্টি এট উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটি ড. খালিদ আল গামদি, শাইখ সালেহ বিন হুমাইদ, শাইখ মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ সুবাইয়াল, শাইখ খাইয়াত, শাইখ সালেহ আতত্বালিব, শাইখ ফায়সাল আলগাযাবী, শাইখ আদিল আল কালবানী বারাকাহুমুল্লাহু ফি হায়াতিহিমুল আলিয়্যাহ।
প্রিয় বাইতুল্লাহয় মুআজ্জিন রয়েছেন প্রায় ১১ জন। এর মধ্যে ১৯৭৫ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রবীন সজ্জন ব্যক্তি শাইখ আলী আহমদ মোল্লা চীফ মুআজ্জিনের দায়িত্ব পালন করছেন। তার সুললিত কন্ঠের সুমধুর আজানে বিমোহিত হয়ে ওঠে মক্কার পথ-প্রান্তর। এছাড়া ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট মুয়াজ্জিন ড. ইছাম আলী খানের মনোমুগ্ধকর আজানও হৃদয় কেড়েছে প্রতিবার। বাকিদের আজানও অনিন্দ্য সুন্দর। আল্লাহু আকবার। আজান শুরু হলে তার প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পরে মক্কার পাহাড়ে-কন্দরে-ইমারতে-অট্টালিকায়। ইথারের বুক চিড়ে সে আজান হৃদয়ের বদ্ধ অর্গল খুলে দেয়। মন অবচেতনে বলে ওঠে- এ আজান যদি চলতেই থাকতো! চলতেই থাকতো! শেষ ন হত কখনও!
যতটুকু জানতে পেরেছি, পবিত্র কা'বা শরীফে বর্তমানে সম্মানিত ইমাম সাহেবগনের সংখ্যা অনধিক ১২। মাহে রমজানে বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য এ সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ১৬ কিংবা ১৭ তে পৌঁছায়। আলহামদুলিল্লাহ, মহান রবের শোকর এবং শোকরিয়া, তাঁর ঘরের মহান এ খাদেমদের কাছে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করার তাওফিক তিনি দয়া করে দিয়েছেন।
এই পর্বেও যুক্ত করা হল প্রিয় বাইতুল্লাহ এবং বাইতুল্লাহ রিলেটেড আরও কিছু ছবি। আশা করি ভাল লাগবে প্রত্যেকের।
প্রিয়তমের ঘরের সুদৃশ্য একটি গেইট।
কা'বা শরীফের ভেতরের অপূর্ব কারুকাজ।
চোখ জুড়ানো নকশায় বাইতুল্লাহর ভেতরের সৌন্দর্য্য।
বাইতুল্লাহর অপরূপ সৌন্দর্য্যের মুগ্ধতা।
প্রিয়তমের ঘরের সুদৃশ্য কারুকাজে নয়ন কেড়ে নেয়া আরেকটি গেইট।
অনাবিল সৌন্দর্য্য। অন্তহীন মুগ্ধতা!
সাফা পাহাড়। এখান থেকে সায়ী শুরু করতে হয়।
সকলের জন্য শুভকামনা, অফুরন্ত দোআ এবং ভাল থাকার কামনা। আল্লাহ পাক পৃথিবীর সকল প্রানীকে ভাল রাখুন।
হামদ এবং সানা পরম প্রিয় মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার জন্য। দরুদ ও সালাম প্রিয়তম রসূল মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রূহের প্রতি। শুরু এবং শেষে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:২০