somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

ইমাম আজমের সাথে নাস্তিকের বাহাস

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেক দিন আগের কথা। ইমাম আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তখন জীবিত। বাগদাদে একজন নাস্তিক বক্তা বেশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করে নানানসব কূযুক্তি ছড়িয়ে বেড়াতেন লোকসমাজে। মানুষজন তার কথা শুনে কেউ তাকে পাগল বলতো। কেউবা আবার তার শিষ্যত্ব গ্রহন করে নতুন দলে যোগ দিয়ে নতুন কিছুর স্বাদ নেয়ার চেষ্টা করতো। সুচতুর এই লোকটির সাথে যুক্তি তর্কে সচরাচর কেউই পেরে উঠতো না।

তখন বাগদাদের আকাশে বাতাসে আলোকোজ্জ্বল ধুমকেতুর ন্যায় ছড়িয়ে ইমাম আজমের নাম যশ। ধর্মীয় বিষয়ে তাঁর অসাধারন মেধা, অখন্ডনীয় যুক্তি, অতুলনীয় প্রজ্ঞার কথা বাগদাদ আর ইরাকের সীমানা ছাড়িয়ে আরব আজম, তথা মাশরিক মাগরিবে পরিবিস্তৃত।

নিজের জ্ঞান গরিমায় উল্লসিত উক্ত নাস্তিক ব্যক্তি একদিন লোকদের জড়ো করে বললেন, 'ডাকো তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ বক্তাকে, আমি আজ তাকে পরাজিত করে প্রমান করে দেখাবো, সৃষ্টিকর্তা কিংবা আল্লাহ বলে কেউ নেই। এই পৃথিবীসহ সমস্ত বস্তুনিচয় নিজে থেকেই প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। এর পেছনে স্রষ্টার ধারনা ভুল।'



ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির নিকট উক্ত নাস্তিকের সংবাদ জানানো হল। ইমাম আজমের সাথে তার বাহাস করার মনোবাসনাও অবহিত করা হল। ইমাম আজম সম্মতি দিলেন। দিন তারিখ নির্ধারন করা হল।

একপর্যায়ে অবশেষে এল বাহাসের নির্দিষ্ট সেই দিনটি। উম্মুক্ত প্রান্তর কানায় কানায় পূর্ন। লোকে লোকারন্য। দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন মানুষেরা। বাহাস দেখতে। সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে বাহাস বলে কথা! সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে বাহাস! মানুষের যেন আগ্রহ আর উতসাহের শেষ নেই! সবাই খোশ মেজাজে টান টান উত্তেজনা নিয়ে নির্দিষ্ট মাঠে এসে সমবেত। নাস্তিকও এসে হাজির।

বাহাসের জন্য নির্ধারিত সময় শেষ। প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন তখনও উপস্থিত সবাই। সন্ধ্যা প্রায় ছুঁই ছুঁই। ইমাম আজমের খবর নেই।

মাঠভর্তি অপেক্ষমান লোকদের ধৈর্য্যে যেন আর কুলোয় না!

নাস্তিকের মুখে ব্যাঙাত্মক হাসি! লোকদের বলে ওঠেন তিনি, 'দেখ, সে যুক্তিতে পেরে উঠবে না ভেবে পালিয়ে গেছে।'

কিন্তু নাস্তিকের ঠোটের কোনের বিদ্রুপের হাসি ফুরোতে না ফুরোতেই ইমাম আজম এসে হাজির। দেরি হবার কারন হিসেবে নিজেই কৈফিয়ত দিয়ে জানালেন, 'দু:খিত, কিছুটা দেরি হওয়াতে! কিন্তু দেরিটা আমার অনিচ্ছায় হয়েছে! ঘটনা হচ্ছে, আমি রওনা সময়মতই হয়েছিলাম, কিন্তু নদী পার হওয়ার জন্য যখন নদীর তীরে আসলাম, সেখানে এক আজব ঘটনা দর্শনে একটু দেরি হয়ে গেল!'

নাস্তিক বললো, 'কী এমন ঘটনা দেখলেন, যা আপনার কাছে আজব মনে হল?'

ইমাম আজম বলেন, 'নদী পার হবার জন্য কিনারে এসে দাড়ালাম। মনে মনে নৌকা খুঁজছিলাম। কিন্তু কোনো নৌকার দেখা মিলছিল না। নদীর পাড়ে যেখানে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম তার পাশেই ছিল বিশাল এক বটবৃক্ষ। কোথাও কোনো লোকজনের চিহ্ন নেই। হঠাত দেখি, কোত্থেকে এক কড়াত, চলে এলো। বিশাল বট গাছটি মুহূর্তের মধ্যে কাটা হয়ে গেল। একের পর এক তক্তা বেড়িয়ে এলো সেই কাটা গাছ থেকে।'

এই পর্যন্ত বলে ইমাম আজম একটু থামলেন।



নাস্তিক ভ্রু কুঁচকে তাকালেন তাঁর দিকে। কী বলবেন, যেন তাল পাচ্ছেন না।

ইমাম আজম যোগ করলেন, 'একটু পরে দেখি, কোথা হতে পেরেকে এসে এসে তক্তাগুলো জোড়া লাগিয়ে একটি নৌকা বানিয়ে ফেলা হল। এরপর কোথা থেকে একটা বৈঠাও এলো। কোন মাঝি ছাড়াই নৌকাটি আমার দিকে ভেসে আসলো। আমি তাতে উঠে বসলাম। অতঃপর নৌকাটি নিজে থেকেই আমাকে এখানে নিয়ে আসলো। এতেই একটু যা দেরি।'

ঘটনা শুনে নাস্তিক হাসিতে লুটিয়ে পড়ে। লোকদের উদ্দেশ্যে বলল, 'এই বুঝি, তোমাদের শ্রেষ্ঠতম বক্তা? ভেবেছিলাম তার বোধ হয় স্ক্রু দু'য়েকটি ঢিলা! আসলে তো দেখছি, তিনি পুরোই লুজ!'

ইমাম আজম জিজ্ঞেশ করলেন, 'কেন? কি সমস্যা?'

নাস্তিক বলল, 'আপনি দাবি করেন, কোন কারিগর ছাড়াই আস্ত বটগাছ কেটে ফেলা হলো! গাছ ফেড়ে অটোমেটিক তক্তা বেরিয়ে এলো! কাঠের টুকরো একের সাথে আরেকটি লেগে নিজে নিজে নৌকা হয়ে গেল! আবার মাঝি ছাড়াই নিজে থেকেই আপনাকে নদী পার করে এখানে নিয়ে আসলো? এসব কি পাগলের প্রলাপ নয়?'

ইমাম হেসে উত্তর দিলেন, 'নদীর পাড়ের বট গাছ বিশাল এই সৃষ্টি জগতের অতি ক্ষুদ্র একটি সৃষ্টি! সামান্য এই গাছটি যদি কোনো কারিগর ছাড়া কাটা না যায়, একটি নৌকা নিজে থেকে তৈরি হয়ে যেতে না পারে, নিজেকে পরিচালিত করতে না পারে- এগুলো যদি আপনার কাছে পাগলের প্রলাপ মনে হয়, তাহলে বলুন, এই সমগ্র সৃষ্টিজগত, প্রাণীকুল, আকাশ-বাতাস, গ্রহ-নক্ষত্র, চাঁদ-সূর্যসহ তামাম কিছু নিজে থেকেই তৈরি হয়ে গেল? আর কারো সুনিপূন হাতের সুদক্ষ ইশারা ব্যতিতই এত সুন্দরভাবে সুপরিচালিত হয়ে আসছে?'

উত্তর শুনে নাস্তিকের জীবনের ভুল ভেঙ্গে গেল। ইমাম আজমের হাতে হাত রেখে জনাকীর্ন বাহাসের ময়দানে নাস্তিক বিমুগ্ধ অন্তরে পাঠ করে নিলেন বিশ্বাসের কালিমা, 'লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।'

সৌভাগ্যবান নাস্তিক বটে! হাজারো মানুষের সম্মিলনে জীবন পাল্টে নেয়া কি কম সৌভাগ্যের! ছিলেন নাস্তিক! এসেছিলেন বিশ্বাসের প্রদীপ নিভিয়ে দিতে! কিন্তু জগতের শ্রেষ্ঠতম ফকিহ আলেমে দ্বীন ইমাম আজমের পরশে বদলে গেলেন মুহূর্তেই! হয়ে গেলেন বিশ্বাসে পরিপূর্ন আলোর পথের অন্য মানুষ! ময়দানে সমবেত লোকদের দুআয় ধন্য হলো নাস্তিকের নতুন জীবন!



পড়ে দেখতে পারেন ইমাম আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে নিয়ে আমার অারও কিছু পোস্ট-

জ্ঞানের প্রজ্জ্বলিত মশালকে নিভিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা রুখে দিন

ইমাম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি: জাতির শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস, ফকীহ এবং আল্লাহওয়ালা
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:৩৪
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×