somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

দুআ মুনাজাত: মুমিনের শ্রেষ্ঠতম হাতিয়ার

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রাককথন

পার্থিব জীবন ক্ষনস্থায়ী। সীমিত এই জীবনে দু:খ কষ্ট, রোগ শোক, অভাব অনটন, বিপদ মুসিবত আসবেই। বিশ্বাসীদের থেকে পদে পদে পরীক্ষা নিবেন বলে ঘোষনা রয়েছে মালিক মহিয়ানের পক্ষ থেকে। মহান আল্লাহ তাআ'লার ইরশাদ-

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ

'এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।' সূরাহ আল বাক্কারাহ, আয়াত-১৫৫

أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ

'তোমরা কি ধারণা কর যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে না?' সূরাহ আল মুমিনূন, আয়াত-১১৫

মুমিন বান্দার জীবনে পদে পদে যেহেতু পরীক্ষা আসবে এবং এটাই যেহেতু মহান প্রতিপালকের ঘোষনা, সেহেতু বিচলিত হওয়ার কিছু নেই, ধৈর্য্যধারন করে বিপদাপদে মালিক মহিয়ানের কাছে বিনীতভাবে নিজেকে সোপর্দ করতে হবে। আর এটাও যে তাঁরই নির্দেশ। তাঁর অমোঘ ঘোষনা-

أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَاء الْأَرْضِ أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ

'বল তো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে পুর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই ধ্যান কর।' সূরাহ আন নামল, আয়াত-৬২

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ

'তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে।' সূরাহ আল মুমিন, আয়াত-৬০

فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُواْ لِي وَلاَ تَكْفُرُونِ

'সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।' সূরাহ আল বাক্কারাহ, আয়াত-১৫২

বারবার ফিরে ফিরে আসি

মুমিনগন দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ, রোগ-শোকে কেবল তার প্রভুর কাছেই ধরণা দেয়। তাঁর কাছেই ফিরে আসে। সে অন্যায় করে। ভুল করে। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়। চিরশত্রু শয়তানের ধোকায় কিংবা নফসের প্রতারনায় অন্যায় অবিচার জুলূম করে বসে নিজের নফসের উপরে। পরক্ষনেই তার অনুভূতি জাগ্রত হয়। বিবেকের দংশনে লজ্জিত, অপমানিত এবং আহতবোধ করতে থাকে সে। এবং অবশেষে সে ফিরে আসে মালিকের দরবারে। অস্ফুটে বলতে ইচ্ছে করে-

বারবার ভুল করি, গোচরে কি অগোচরে
ওগো প্রভূ, কখনো তো হইনি বিদ্রোহী,
ভুল বুঝে অনুতাপে পুড়িয়ে হৃদয় বারবার
ফিরে আসি - ক্ষমার আসায় চেয়ে রহি।
আখিপাতে অশ্রু ঝড়ে, মনের মুকুরে ব্যথা
আপনার প্রেমলাভে দিশেহারা মন,
ক্ষমার আশায় বেকারার পাপি হৃদে তবু
জাগে সাহারা সমান আশা অনুক্ষন।


নির্জনে দুহাত বাড়িয়ে দেয় মহিয়ানের দয়ার প্রত্যাশায়। ক্ষমা, মাফি আর মার্জনার আশায়। অশ্রুর ফোঁটা কপোল বেয়ে বেয়ে নেমে আসে নিচের দিকে। বুকের অলিন্দে। বুক ভেসে যাওয়া কান্নার অশ্রুতে ধুয়ে মুছে আবার পাক সাফ হয়ে যায় বান্দা। যেন নিষ্পাপ। সদ্য ভূমিষ্ঠ। মাতৃক্রোড়ে নবজাত সে। আল্লাহ পাক কতই না সুন্দর আশার বানী শুনিয়েছেন আমাদের মত পাপী গোনাহগারদের-

إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُوْلَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

'কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' সূরাহ আল ফুরকান, আয়াত-৭০

وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُواْ أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُواْ اللّهَ فَاسْتَغْفَرُواْ لِذُنُوبِهِمْ وَمَن يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ اللّهُ وَلَمْ يُصِرُّواْ عَلَى مَا فَعَلُواْ وَهُمْ يَعْلَمُونَ

'তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না।' সূরাহ সূরা আল ইমরান, আয়াত-১৩৫।

আর যারা মহান প্রতিপালকের ক্ষমালাভের আশায় তাঁর দিকে ফিরে আসবেন তাদের শুনিয়েছেন আশার বানী। সুমহান পুরষ্কারের প্রতিশ্রুতির ঘোষনা রেখেছেন তাদের জন্য। পরবর্তী আয়াতে ইরশাদ বর্নিত হয়েছে-

أُوْلَـئِكَ جَزَآؤُهُم مَّغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ

'তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান।' সূরাহ সূরা আল ইমরান, আয়াত-১৩৬।

দুআ করি কিন্তু কবুল হয় না কেন? তাহলে আল্লাহ পাক কি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন?

দুঃখ-কষ্ট, দুর্দশায় নিপতিত হলে আমরা মহান প্রতিপালকের সামনে দুআর হাত বাড়িয়ে দিই, কিন্তু কখনো কখনো দেখি, দুআ ইস্তিগফারের পরেও তা বাড়ে বৈ কমে না; তাই অনেক সময় আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। ভাবতে থাকি, আসলে ব্যাপারটা কী? আল্লাহ পাক কি তাঁর বান্দার সাথে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারেন!

মুমিন ব্যক্তির দৃঢ় বিশ্বাস, কখনোই নয়। আল্লাহ পাক কখনোই ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। এটা তাঁর সুমহান শান ও মর্যাদার বিপরীত। তিনি সর্বাবস্থায় ওয়াদা অঙ্গিকার রক্ষাকারী। বর্নিত হয়েছে-

رَبَّنَا إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوْمٍ لاَّ رَيْبَ فِيهِ إِنَّ اللّهَ لاَ يُخْلِفُ الْمِيعَادَ

'হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি মানুষকে একদিন অবশ্যই একত্রিত করবেঃ এতে কোনই সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ওয়াদার অন্যথা করেন না।' সূরা আল ইমরান, আয়াত-০৯

মুমিন ব্যক্তির দুআর ফল তিনভাবে লাভ হতে পারে

তাহলে আমাদের দুআর ফলাফল আমরা কেন সাথে সাথে প্রত্যক্ষ করি না? ১) দুআর ফল কখনো সাথে সাথে প্রদান করা হয়। ২) কখনো কিছুটা দেরিতে পার্থিব জীবনেই দান করা হয়। আর কিছু দুআর প্রতিফল ৩) পারকালীন জীবনে প্রদানের জন্য আল্লাহ পাক তাঁর হাতে জমা রেখে দেন। কিন্তু একথায় বিশ্বাস রাখতে হবে, মুমিন বান্দার প্রতিটি দুঅা আল্লাহ পাক শ্রবন করেন এবং প্রতিটি দুআর ফলাফল দুআকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রদান করা হবে। আল্লাহ পাক অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন-

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُواْ لِي وَلْيُؤْمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ

'আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।' সূরাহ আল বাকারাহ, আয়াত-১৮৬

-এ আয়াতে স্পষ্ট যে, ডাকতে হবে কেবল আল্লাহ পাককে এবং এ জন্য কোনো মাধ্যম তালাশ করা বা কোনো পথ অতিক্রম করার প্রয়োজন নেই। তিনি আরো বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ إِنَّ اللّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ

'হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।' সূরাহ আল বাকারাহ, আয়াত-১৫৩

উপরোক্ত আয়াতগুলোর বক্তব্যের আলোকে স্পষ্ট যে, আল্লাহপাক তাঁর বান্দাহদেরকে তাঁর কাছে চাওয়ার জন্য যেমন বলেছেন, সাথে সাথে প্রার্থনা মঞ্জুর করার প্রতিশ্রতিও প্রদান করেছেন। এর সাথে এটাও বলা হয়েছে যে, বিপদাপদ তাদের জন্য একটি পরীক্ষা। আল্লাহ পাক এই দুনিয়াকে একটি পরীক্ষাগার হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তার জ্ঞানের ভিত্তিতে কাউকে যেমন শাস্তি দেবেন না, আবার কাউকে পুরস্কৃতও করবেন না। বরং প্রত্যেককে তার আমলের ভিত্তিতে বদলা দেবেন।

এ প্রসঙ্গে কিছু হাদিস উল্লেখ করা যেতে পারে। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে বেশি বেশি বিশেষ করে নামাজের মধ্যে চাওয়ার জন্য বলেছেন। নামাজ নিজেই একটি প্রার্থনা। তারপর বান্দাহ যখন সিজদায় যায় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বর্ণনা মতে, সে তখন আল্লাহর খুব নিকটবর্তী হয়ে যায়। সিজদায় এবং শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও দরুদ পড়ার পর বেশি বেশি করে আল্লাহ পাকের নিকট চাইতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজে আল্লাহ পাকের নিকট চাওয়ার উপযুক্ত সময়।

মজলুমরা বারবার আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছেন এবং তাঁর সাহায্য কামনা করছেন। আমাদেরকে বুঝতে হবে, মজলুমের দুআ কখনো বৃথা যেতে পারে না। ফিরিয়ে দেয়া হয় না। কারণ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মজলুম ও আল্লাহর মাঝে কোনো আড়াল নেই। তিনি আরো বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া তাৎণিক কবুল হয়। ১. সন্তানের জন্য পিতামাতার, ২. মুসাফির ও ৩. মজলুমের।’

আল্লাহ পাকের প্রতিনিধি হিসেবে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা মূলত: আল্লাহরই কাজ এবং এ কাজে বান্দাহর সাথে শত্রুতা আল্লাহ পাকের সাথে শত্রুতা হিসেবেই তিনি গ্রহণ করেন। ফলে বান্দাহর আল্লাহর ওপর ভরসা করে নির্ভীকভাবে দায়িত্ব পালন করা এবং শত্রুদের মোকাবেলার দায়িত্ব সম্পূর্নভাবে আল্লাহ পাকের ওপরই ন্যস্ত করা দরকার। আমরা দুনিয়ার জীবনেও লক্ষ্য করি, কোনো চাকর তার মনিবের বাগান পাহারা দিতে গিয়ে কোনো ব্যক্তির দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হলে, কিংবা জুলূমের শিকার হলে সে এসে তার মনিবের কাছে নালিশ করেই নিজেকে খালাশ মনে করে। তখন মনিব চাকরের আঘাতকে নিজের ওপর আঘাত মনে করে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আল্লাহ পাকের বিষয়টিও এমনই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার পথে চলতে গিয়ে কোনো বান্দাহ নির্যাতিত হলে বিষয়টি তিনি নিজের ওপরই গ্রহণ করেন এবং প্রতিশোধ গ্রহণ করা তাঁর দায়িত্ব হয়ে পড়ে। আল্লাহ পাকের বাণী,

إِنَّ الَّذِينَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوبُوا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيقِ

‘যারা ঈমানদার নর ও নারীর ওপর অত্যাচার করেছে অতঃপর তওবা করেনি, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠোর আজাব এবং তাদের জন্য রয়েছে আগুনে জ্বলেপুড়ে যাওয়ার শাস্তি।’ সূরাহ আল বুরুজ, আয়াত-১০

তিনি আরো বলেন,

إِنَّ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ

‘নিঃসন্দেহে তোমার রবের পাকড়াও ভীষণ শক্ত।' সূরাহ আল বুরুজ, আয়াত-১২

আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে প্রতিশোধ দুনিয়ায়ও হতে পারে আবার আখেরাতে তো রয়েছেই। কারণ, জালেম যখন সীমালঙ্ঘন করে, তখন আর সময় না দেয়া তাঁর নীতি। আল্লাহ পাক উভয়কেই পরীক্ষা করেন। জালেম কতখানি অগ্রসর হয় এবং তার জুলুমের মাত্রার ওপর শাস্তির ভয়াবহতা নির্ভর করে। পক্ষান্তরে মজলুম কতখানি ধৈর্যধারণ করতে পারে এবং তার ধৈর্যের মাত্রার ওপর তার পুরস্কার নির্ভর করে। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পরই হজরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালামকে আল্লাহ পাক দুনিয়ার ইমাম নিয়োগ করেন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর অনুসারীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সমসাময়িক দুনিয়াতেও তাই ঘটছে। কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রমের মাধ্যমেই তারা তাদের কাঙ্খিত ফললাভে সক্ষম হয়েছেন। বাতিলের পক্ষেও দুনিয়ার নেতৃত্ব লাভের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষার বিকল্প নেই। মুমিনদের সুবিধা হলো, দুনিয়াতে ফল লাভ না করতে পারলেও এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহ পাক তার সব দোষত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে তাকে নিশ্চিত জান্নাতে দাখিল করবেন। আল্লাহ পাকের ভাষায় এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। অবশ্য আমরা যা কামনা করি, আল্লাহর সাহায্য ও দুনিয়ার বিজয়। তারও প্রতিশ্রুতি দান করা হয়েছে। এজন্য আমাদেরকে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। ঈমানদারদের সাথে আল্লাহ পাকের ওয়াদা নানাভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,

وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُم فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সে অনুযায়ী নেক কাজ করে, তাদের সাথে আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা করেছেন, তিনি জমিনে তাদের অবশ্যই খেলাফত দান করবেন, যেমনিভাবে তিনি তাদের আগের লোকদের খেলাফত দান করেছিলেন; সর্বোপরি যে জীবনবিধান তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন তাও তাদের জন্য (সমাজ ও রাষ্ট্রে) সুদৃঢ? করে দেবেন, তাদের ভীতিজনক অবস্থার পর তিনি তাদের অবস্থাকে নিরাপত্তা ও শান্তিতে বদলে দেবেন, তবে এ জন্য শর্ত হচ্ছে তারা শুধু আমারই গোলামি করবে, আমার সাথে কাউকে শরিক করবে না; এরপরও যারা তাঁর নেয়ামতের নাফরমানি করবে তারাই গুনাহগার হবে।' সূরাহ আন নূর, আয়াত-৫৫

আলোচ্য আয়াতে লক্ষ্যনীয়, আল্লাহ পাকের ওয়াদা স্পষ্ট কিন্তু শর্ত হচ্ছে যে, আমাদেরকে নেক কাজ করতে হবে এবং এ নেক কাজের কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকা নেই। আমাদের সব কাজকর্ম-লেনদেন, কেনাবেচা, মানুষের সাথে আচরণ, বিরোধীদের সাথে আচরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি সব ক্ষেত্রে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ পাকের আনুগত্য করতে হবে এবং সততা ও ন্যায়পরণতার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে। আমরা এটা পারলে অবশ্য অবশ্যই আল্লাহ পাকও তাঁর ওয়াদা পূরণ করবেন। আমাদের দুআর ফলাফল প্রত্যক্ষ করার দীর্ঘসূত্রিতাও পরিবর্তিত হবে বলে আশা করা যায়।

মানুষ আল্লাহ পাকের প্রতিনিধি

পাশাপাশি আমাদেরকে এটাও অনুভব করতে হবে যে, আমরা আল্লাহ পাকের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি অর্থাৎ আমরা তাঁর সাহায্যকারী এবং আমরা তাঁর বাছাইকৃত বান্দাহ। আমাদের মর্যাদা সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে এবং বুঝতে হবে ঈমানদারদেরকে আঘাত করা মানে আল্লাহ পাককেই আঘাত করা এবং প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তিনিই যথেষ্ট। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কী যুগে নীরবে আঘাত সহ্য করেছেন। তিনি মদিনায় আল্লাহ পাকের নির্দেশক্রমেই পাল্টা আঘাতও হেনেছেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি একটি নিয়ম-নীতি প্রতিষ্ঠা করেছেন। আত্মরক্ষার অধিকার সবার রয়েছে; কিন্তু আগ বাড়িয়ে আঘাত করা আল্লাহ পাকের নিকট পছন্দনীয় নয়। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের আশায় একজন মুমিন তার সব দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারে। কারণ, তার কোনো কষ্টই আল্লাহ পাকের অগোচরে নয়। কিন্তু মুমিন এবং আল্লাহ পাকের প্রতিপক্ষ হিসেবে যুগে যুগে যারাই আবির্ভূত হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে তাদের কোনোই প্রাপ্তি নেই। বরং তারা যত হিংস্রতা নিয়ে আঘাত করবে এবং আঘাত করে তারা যত তৃপ্তি পাবে তাদের শাস্তি ততটাই বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ পাক তাঁর রশি একটু ঢিল দিয়েছেন এবং সময়মতো ঠিকই টান দেবেন। যেমনটি তিনি বলেছেন কুরআনুল কারিমে-

وَأُمْلِي لَهُمْ إِنَّ كَيْدِي مَتِينٌ

'বস্তুতঃ আমি তাদেরকে ঢিল দিয়ে থাকি। নিঃসন্দেহে আমার কৌশল সুনিপুণ।' সূরাহ আল আরাফ, আয়াত-১৮৩

মুমিনের অভিভাবক আল্লাহ পাক স্বয়ং

আমাদের আরও বিশ্বাস রাখতে হবে, আল্লাহ পাকই মুমিনদের একমাত্র অভিভাবক এবং অবিশ্বাসীদের কোনো অভিভাবক নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলাকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে অন্তরে অনুভব করতে হবে যে, শক্তি-সামর্থ্য বলতে যা বোঝায় তা সবই আল্লাহ পাকের এবং তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট। মনে রাখতে হবে তাঁর ঘোষনা-

وَلِلّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ وَكَفَى بِاللّهِ وَكِيلاً

'আর আল্লাহরই জন্যে সে সবকিছু যা কিছু রয়েছে আসমান সমূহে ও যমীনে। আল্লাহই যথেষ্ট কর্মবিধায়ক।' সূরাহ আন নিসা, আয়াত-১৩২

পরিশেষে

কাতরভাবে আল্লাহ পাকের কাছে চাইতে হবে। নামাজে এবং নামাজের বাইরে। একাকি নিরবে। অশ্রুপাত করতে হবে। নিজের কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে এবং দৃঢ়বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তিনি আমাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করবেনই। কখন, কিভাবে সেটা একান্তই তাঁর ইচ্ছা। তিনি চাইতে বলেছেন তাই আমরা তাঁর দরবারে হাত পেতেছি। কী দিবেন, কতটুকু দিবেন, কখন দিবেন, এগুলো সম্পূর্নভাবে তাঁর ইচ্ছাধীন। আমাদের কাজ, তাঁর কাছে চাওয়া এবং ধৈর্য্যধারন করে তাঁর পুরষ্কার প্রদানের অঙ্গিকার বাস্তবায়নের প্রতীক্ষায় আশাবাদি মন নিয়ে অপেক্ষা করে যাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:৩৭
১০টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×