somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

সত্যিকারের মগের মুল্লুকের গল্প, না পড়িলে পুরাই মিসসস!!!!!!!!!!!!!!

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেক অনেক দিনকার পূর্বের কথা। এক গুরু বাহির হইয়াছিলেন দেশ ভ্রমনে। চিকনা পাতলা রোগা টাইপের এক চেলাও সফরসঙ্গী হইল তাহার।

গুরু চেলা চলিতে চলিতে বহুদূর গিয়া পৌঁছাইলেন। এক দেশের উপর দিয়া যাওয়ার সময় তাহারা দেখিলেন সেখানে সকল জিনিষপত্রের একই দাম। দুধ যেমন এক টাকায় ষোল সের। ঘি-ও এক টাকায় ষোল সের। তৈলও পাওয়া যায় এক টাকায় ষোল সের! আজব দেশই বটে!

ইহা দর্শনে গুরু চেলাকে ডাকিয়া কহিলেন, ''মগের মুল্লুকের নাম শুনিয়াছ। এক্ষনে সচক্ষে দেখিয়া লও! ইহাই হইলো সেই আসল মগের মুল্লুক, যেখানে ইনসাফ, ন্যায়াচার ও সত্য বলিতে কিছুই নাই। দেখিতেছ না, সকল জিনিষের দাম সমান! ইহার অর্থ হইলো, এইখানে ছোটতে বড়তে কোন ভেদাভেদ নাই। সুতরাং এইখানে বসবাস কিংবা বিলম্ব করা বিপজ্জনক হইবে। চল এখান হইতে শিগগির পালাই।''

চেলা অতিব উৎসুক হইয়া বলিল, ''না, গুরু, ইহা কি বলিতেছ! এইখান হইতে চলিয়া যাইব! তাহা কি করিয়া হয়! এইখানে ঘি আর দুধ যেইরকম সস্তা! এমন সস্তা দুধ, ঘি কোথাও পাওয়া যাইবে না। এইখানেই থাকিয়া যাই, গুরু। দুধ ঘি খুব খাওয়া যাইবে।''

গুরুর কপালে চিন্তার রেখায় ভাঁজ। নিতান্ত অনিচ্ছায় চেলার মন রক্ষা করিতে তিনি বলিলেন, ''ঠিক আছে। খাও তাহলে দুধ ঘি। তবে মনে রাখিও, কপালে বিপদ আসিতে পারে।''

চেলা মজা মারিয়া কিছু দিন দুধ ঘি খুব করিয়া খাইলো। খাইতে খাইতে তাহার অবস্থা বেগতিক। শরিরে চিকনাই আসিয়া গিয়াছে। চেহারা সুরতে দশাসই অবস্থা। দরজা দিয়া চলাচল করাই একপ্রকার কঠিন হইয়া দাঁড়াইয়াছে! ফলি মাছের মত কাত হইয়া তাহাকে দরজা দিয়া কামরায় প্রবেশ করিতে হয়! মহাখাদক চেলার পাল্লায় পড়িয়া গুরুও মহাবিরক্ত!



দিন যায়। মাস বহিয়া যায়।

এক দিন রাজ দরবারের পাশ দিয়া যাওয়ার সময় তাহারা দেখিল, সেখানে বিপুল মানুষের ভীড়। চেলা কহিল, ''গুরু, তুমি দাঁড়াও! আমি যাইয়া একটু দেখিয়া আসি, রাজবাড়ি কি কারনে এত লোকে লোকারন্য।''

গুরু সমবেত জনতার পাশে দাঁড়াইয়া থাকিলেন। চেলা ভিতরে উঁকি দিয়া দেখিল, সেখানে একটি মকদ্দমা পেশ করা হইয়াছে। মকদ্দমাটি ছিল এইরূপ:

দুই চোর চুরি করিতে যাইয়া এক বাড়িতে সিঁধ কাটিল। একজন বাহিরে দাঁড়াইয়া রহিল আরেকজন সিঁধের ভিতরে ঢুকিল। হঠাৎ সিঁধের উপরের দেওয়াল ধ্বসিয়া পড়িল। ফলে সিঁধের ভিতরের চোরটি মরিয়া গেল। বাঁচিয়া থাকা চোরটি এই বলিয়া বাদী হইয়া রাজদরবারে মকদ্দমা করিয়াছে যে, ''চুরি করিতে যাইয়া ইট পড়িয়া আমার বন্ধু মরিয়া গিয়াছে, সুতরাং বাড়িওয়ালার ফাঁসী চাই।''

রাজা বাড়িওয়ালাকে ডাকাইয়া আনিলেন এবং জিজ্ঞাসা করিলেন, ''এইরকম বাড়ি বানানোর উদ্দেশ্য কী ছিল? তোমার ফাঁসীর হুকুম হইলো। আত্মপক্ষ সমর্থনে তোমার কোন কথা থাকিলে বলিতে পার।''

বাড়িওয়ালা বলিল, ''হুজুর, আমি একেবারে নির্দোষ। এই কাজ কস্মিনকালেও আমি করি নাই। ইহা করিয়াছে রাজমিস্ত্রী। সে-ই মানুষ হত্যার এই মহাচক্রান্তের হোতা।''

রাজা জল্লাদকে বলিলেন, ''ইহাকে ছাড়িয়া দাও। ডাকিয়া আনো ব্যাটা রাজমিস্ত্রীকে।''

রাজার হুকুম বলিয়া কথা! ছাড়িয়া দেওয়া হইল বাড়িওয়ালাকে। পাইক পেয়াদা পাঠাইয়া ধরাইয়া আনা হইল রাজমিস্ত্রীকে।

রাজার সামনে আনা হইলে রাজা তাহাকে বলিলেন, ''এইরকম ওয়াল বানাইবার উদ্দেশ্য কী? তোমার তো ফাঁসীর হুকুম। আত্মপক্ষ সমর্থনে তোমার কোন কথা থাকিলে বলিতে পার।''

রাজমিস্ত্রী বলিল, ''হুজুর, আমি একেবারেই নির্দোষ। এই কাজ ভুলেও আমি করি নাই। যোগানদার বালি সিমেন্ট মিলাইয়া তাহাতে পানি ঢালিয়া 'গারা' তৈরি করিত। সে পাতলা 'গারা' আনিয়াছিল যাহার দরুন গাঁথুনি মজবুত হয় নাই। ব্যাটা বেআক্কল যোগানদারই মানুষ হত্যার এই চক্রান্তে জড়িত। আমি সম্পূর্ন নির্দোষ।''

রাজা জল্লাদকে বলিলেন, ''ইহাকে খালাস দাও। যোগানদারকে ফাঁসী দাও।'

রাজার হুকুমমত রাজমিস্ত্রীকে ছাড়িয়া দেওয়া হইল। পাইক বরকন্দাজগন মিলিয়া ধরিয়া আনিলেন যোগানদারকে।

রাজার সামনে আনা হইলে রাজা বলিলেন, ''এইরকম ওয়াল বানানোর জন্য 'গারা' পাতলা করার উদ্দেশ্য কী ছিল তোমার? 'গারা' পাতলা করিয়া মানুষ হত্যা করিতেই বা তোমার কোন অভিপ্রায়, বাপু হে? তোমার তো ফাঁসীর হুকুম। কোন কথা থাকিলে বলিতে পার।''

যোগানদাতা বলিল, ''হুজুর, আমি একেবারেই নির্দোষ। এই কাজ ভুলেও আমি করি নাই। সেই সময় একটা হাতী ক্ষেপিয়া গিয়াছিল। হাতীটি আমার দিকে ছুটিয়া আসিতেছিল। আমি ভয়ে থতমত খাইয়া গিয়াছিলাম। হাত পায়ে রীতিমত কাঁপন ধরিয়া গিয়াছিল। তাই পানি বেশি পড়িয়া 'গারা' পাতলা হইয়া গিয়াছিল। সুতরাং, সম্পুর্ন দোষ সেই হাতী আর হাতীর মাহুতের। আমি নির্দোষ, হুজুর।''

রাজা জল্লাদকে বলিলেন, ''ইহার খালাস। ফাঁসী দিয়া দাও হাতীর মাহুত ব্যাটাকে।'



রাজার হুকুমমত রাজমিস্ত্রীকে ছাড়িয়া দেওয়া হইল। সৈন্য সামন্তরা গিয়া হমলাইয়া পড়িলেন হাতীর মাহুতের উপর। ধরিয়া আনা হইল তাহাকে।

রাজা তাহাকে বলিলেন, ''মিয়া, খবর রাখো? হাতী লইয়া হাতীর পিঠে উঠিয়া ফুর্তি কর, আর হাতী লাফ দেয়, গারা পাতলা হয়, ওয়াল ধ্বসিয়া পড়িয়া মানুষ মারা যায়। এইসবের খবর আছে তোমার? মানুষ হত্যা করিতে তো দেখা যায় তুমিই আসল ষড়যন্ত্রকারী! তোমার ফাঁসীর হুকুম। কোন কথা থাকিলে বলিতে পার।''

হাতীর মাহুত বলিল, ''হুজুর, আমার কোন দোষ নাই। এই কাজ ঘূনাক্ষরেও আমি করিতাম না। ঘটনাটা তাহলে মহারাজার সম্মুখে খুলিয়াই বলিতে হয়, আমি যখন হাতী নিয়া সেই রাস্তা অতিক্রম করিতেছিলাম, সেই সময় কাঁকন নোলক পড়া এক মহিলাও জল ভর্তি কলসি কাখে করিয়া হাতীর পেছন পেছন আসিয়াছিল। তার চুড়ি আর কাঁকন পিতলের কলসিতে লাগিয়া ঝুনঝুন করিয়া এমন এক আওয়াজ হইয়াছিল যে, তাহাতে আমার হাতী ক্ষেপিয়া গিয়া শুরু করিয়অ দিয়াছিল লম্ফ ঝম্ফ। কি আর বলিব মহারাজ! হাতীকে আমি শত চেষ্টা করিয়াও থামাইতে পারি নাই। আমার কোনো দোষ নাই। আমি নির্দোষ।''

রাজা জল্লাদকে বলিলেন, ''ইহাকে ছাড়িয়া দাও। ফাঁসী দাও নির্বোধ সেই মেয়ে লোকটিকে।'

সুতরাং রাজার হুকুমমত ফাঁসি মঞ্চে আনা হইল মেয়ে লোকটিকে। মেয়ে লোকটি তাহার শেষ ইচ্ছা পূরন করিবার উদ্দেশ্যে বলিল, ''আমাকে মহারাজার সহিত কথা বলিতে দাও।''

মহারাজার সম্মুখে আনা হইলে মেয়ে লোকটি রাজাকে বলিল, ''মহারাজ, দোষ আমার নহে। দোষ স্বর্নকারের। সে-ই আমার চুড়ি তৈরি করিয়া দিয়াছে। তাহা ছাড়াও এই চুড়ি ব্যতিত আমার অন্য যতসব স্বর্ন গয়না সবই সেই লোকই বানাইয়া দিয়াছে। সে তৈরি করিয়া না দিলে এইসব আমি বানাইতেও পারিতাম না, আর কোনো দিন পরিধানও করিতে পারিতাম না। এই রকম ঝুনঝুন শব্দের কারনে হাতী লাফাইতো না, গারা পাতলা হইয়া ওয়াল খারাপ হইতো না, আর সেই ওয়াল ধ্বসিয়া পড়িয়া মানুষও মারা পড়িত না। মহারাজ, আমাকে বেকসুর খালাস দিন। ''

সব শুনিয়া রাজা বলিলেন, ''ইহার বেকসুর খালাস। ধরিয়া আনো স্বর্নকার ব্যাটাকে।''

লোক লষ্করের বিরাট রাজকীয় বাহিনী চিরুনী অভিযান চালাইয়া স্বর্নকারের হদিস করিল। তাহাকে আটক করিয়া রাজার সম্মুখে উপস্থিত করিলে রাজা গুরু গম্ভীর স্বরে বলিলেন, ''কি হে মিয়া স্বর্নকার! স্বর্নের ব্যবসায় তো ভালোই আয় রোজগার করিয়া চলিয়াছ! তাহা তোমার লোক মারার ফন্দি কেন, বাপু হে? চুড়ি তৈরি করিয়া, সেই চুড়ি মহিলার হাতে পড়াইয়া, তাহা দিয়া ঝুন ঝুন আওয়াজ তৈরি করাও, তাহাতে হাতী লাফ দেয়, গারা পাতলা হয়, ওয়াল ধ্বসিয়া পড়িয়া মানুষ মারা যায়, খবর রাখো মিয়া? তোমার তো ফাঁসীর হুকুম। কিছু বলার থাকিলে বলিতে পারো।''

স্বর্নকার দুই হাত কচলাইয়া কাচুমাচু করিতে লাগিল। কোনো জবাব দিতে পারিল না। এক্ষনে তাহার বাপ দাদাদের কথা মনে পড়িয়া গেল। তাহারা আজ কেহ বাঁচিয়া নাই। তাহারাই তাহাকে এই কাজ শিখাইয়াছিল। তাহারা বাঁচিয়া থাকিলে তাহাদের জিজ্ঞাসা করিয়া মনের ক্ষোভ কিছুটা হইলেও দূর করা যাইতো যে, কেন তাহারা তাহাকে এই অলক্ষুনে পেশায় আনিয়াছিল, যে পেশা ধারন করার অপরাধে আজ তাহাকে জীবন দিতে হইতেছে!

স্বর্নকার চিন্তা করিতেছে, আজ বাপ দাদাদের কাউকে এই কাঠগড়ায় হাজির করাও যাইবে না, জিজ্ঞাসাও করা যাইবে না- কেন তাহারা তাহাকে এই কাজ শিখাইয়াছিল! তাই সে চুপ করিয়াই রহিল। সুতরাং, বেচারার ফাঁসীর হুকুম হইয়া গেল।

ফাঁসীর মঞ্চে নেওয়া হইল স্বর্নকারকে। জল্লাদ আসিল। ফাঁসী দিতে যাইয়া জল্লাদ দেখিল, তাহার গলার চাইতে দঁড়ির ফাঁস বড়। গলায় কোনমতেই রসি আটকায় না। যতবারই গলায় রসি পড়ানো হয়, ততবারই চিকন গলা হইতে তাহা বাহির হইয়া যায়।

অবশেষে উপয়ান্তর না পাইয়া রাজাকে জানানো হইল বিষয়টি।

রাজা সহাস্যে বলিয়া উঠিলেন, ''ঠিক আছে, ইহাতে এত পেরেশান হওয়ার কি আছে! স্বর্নকারকে ছাড়িয়া দাও। যার গলা মোটা তাহাকে ফাঁসী দিয়া দিলেই তো সব ঝামেলা চুকিয়া যায়। তোমাদের সাধারন জ্ঞানেরও দেখিতেছি, বড়ই অভাব!''

রাজ দরবারে যত মানুষ ছিল তাহাদের মধ্যে সেই চেলাটিই সবচেয়ে মোটা। তাহাকেই ফাঁসীর মঞ্চে আনয়ন করা হইল।

চেলা বড় বিপদে পড়িয়া গেল। চক্ষে সরিষা ফুল দেখিতে লাগিল সে। গুরুকে ধরিয়া বলিল, ''গুরু, আমাকে এইবারের মত বাঁচাইয়া দাও। তোমার কথার অবাধ্য আর কোনো দিন হইব না।''

অতিশয় দু:খে কাতর হইয়া গুরু বলিলেন, ''ব্যাটা, আমি তোকে আগেই বলিয়াছিলাম, এই দেশে থাকিলে খুব বিপদ হইতে পারে! এখন দুধ-ঘি খাওয়ার মজা দেখ।''



চেলা বলিল, ''আমি তৌবা করিলাম। গুরু, এইবার আমাকে বাঁচাইয়া নাও। জীবনে আর কোন দিন তোমার কথার বিরুদ্ধে যাইবো না। যাহা বলিবা তাহাই শুনিব।''

গুরু গম্ভীর স্বরে জল্লাদকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলেন, ''উহাকে ছাড়িয়া দাও। ফাঁসী আমার হইবে। আমাকে ফাঁসী দিয়া দাও।''

ইহা দেখিয়া চেলা ভাবিল, আমাকে বাঁচানোর জন্য গুরু ফাঁসীতে চড়িবেন? ইহা কিছুতেই সম্ভব হইতে পারে না। আমি বাঁচিয়া থাকিব আর গুরুর ফাঁসী হইবে? তাহা আমি জ্যান্ত থাকিতে হইতে দিব না।

সে জল্লাদকে বলিল, ''কক্ষনও নহে! ফাঁসী আমাকে দিয়া দাও!''

গুরু বলিলেন, ''না। ফাঁসী আমাকে দিতে হইবে।''

ইহা নিয়া দুইজনে তুমুল ঝগড়া! একরকম ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কি অবস্থা! এ বলে, আমাকে দাও তো, ও বলে, আমাকে ফাঁসী দাও।

জল্লাদ বেচারা পড়িল মহাফাঁপড়ে! বিপদে পড়িয়া দিশাহারা অবস্থা তাহার! বুঝিতে পারিতেছে না, এখন কাহাকে ফাঁসী দিবে সে!

উপয়ান্তর না পাইয়া গুরু চেলার একজন অন্যজনকে রাখিয়া ফাঁসীতে ঝুলিয়া মরিবার বাসনায় ঠেলাঠেলির ঘটনা সে রাজার কানে তুলিল।

রাজা গুরুকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ''কি হইয়াছে তোমার? তুমি কেন অযথা ফাঁসীতে ঝুলিতে চাহিতেছ?''

গুরু কহিলেন, ''হুজুর, আমি হইলাম শাস্ত্রের পন্ডিত, ঠাকুর মহাশয়, শাস্ত্রের পন্ডিত! শাস্ত্র গনিয়া আমি জানিতে পারিয়াছি, এক্ষনে এমন একটি লগ্ন, এই লগ্নে যে ফাঁসীতে ঝুলিয়া প্রান সংহার করার সৌভাগ্য লাভ করিবে, সে সাক্ষাত বৈকুন্ঠ স্বর্গে চলিয়া যাইবে! এই জন্যে আমি চাহিতেছি, ফাঁসীটা আমাকেই দেওয়া হউক।''

রাজা খুশিতে গদগদ হইয়া আহলাদি গলায় বলিলেন, ''তাই না কি! তাই যদি হয়, তাহা হইলে বৈকুন্ঠ স্বর্গে তো আমাকেই যাইতে হইবে সকলের আগে! ফাঁসী আমাকেই দিয়া দাও।''

রাজার আগে বৈকুন্ঠ স্বর্গে যাওয়ার সাহস আর কেহ করিল না। অগত্যা সকল ঝগড়া মিটিয়া গেল। ফাঁসী রাজাকেই দেওয়া হইল।

মহামতি রাজার ফাঁসী হইয়া গেল। দেশ ঠান্ডা হইল।

গুরু চেলাকে বলিলেন, ''আর এক মুহূর্ত এই দেশে নহে। চল, এখান হইতে কাটিয়া পড়ি। এই জনপদ মোটেই নিরাপদ নহে।''

এই গল্পটিকে যদিও কেউ কেউ একটি খামখেয়ালী গল্প বলিয়া মনে করিতে পারে, কিন্তু বিশৃঙ্খলা এবং অন্যায় অত্যাচারের একটি সুন্দর চিত্র আঁকা হইয়াছে গল্পটিতে।



গল্প হইতে শিক্ষনীয় বিষয়: মানুষ আজকাল আল্লাহ পাককে প্রায় যেন সেই রকমই ভাবিয়া বসিয়াছে। তাই প্রায়শই আল্লাহ পাক সম্মন্ধে এমনসব উক্তি করিতে শোনা যায়, যাহাতে প্রতীয়মান হয়, তিনি সামঞ্জস্য ও উদ্দেশ্যহীন এবং অবিবেচনাবশত: বিনা প্রয়োজনে কোনো কিছু করিয়া থাকেন। যেমন, ছোট ছোট বাচ্চা রাখিয়া যুবক বয়সের কোনো লোকের মৃত্যু সংবাদ শুনিয়া, অতি দরদ দেখাইতে যাইয়া অনেকে আফসোস করিয়া বলিয়া বসেন, ''আল্লাহ এই কাজটি কি ঠিক করিলেন? অথবা, ইহাদের (বাচ্চাদের) উপর তিনি জুলূম করিলেন।'' নাউজুবিল্লাহ।

এমনি করিয়া, কেউ মরিয়া গেলে অনেক শিক্ষিত লোককেও দু:খ করিয়া বলিতে শোনা যায়, ''আহ! বেচারা বড় ভালো মানুষ ছিলেন! অসময়ে চলিয়া গেলেন।''

-এইসব কথা প্রকারান্তরে আল্লাহ পাকের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার শামিল বলিয়া ইহা বড়ই অন্যায় এবং ঈমান হরনকারী কথা হিসাবে প্রতীয়মান হয়। কারন, কোনো লোকের অকালে চলিয়া যাওয়ার অর্থ হইল, আল্লাহ পাক তাহাকে তাহার সময় আসিবার পূর্বক্ষনেই মৃত্যু দান করিয়া তাহার প্রতি ইনসাফ করিলেন না! নাউজুবিল্লাহ।

প্রকৃত প্রস্তাবে কথা হইল, আল্লাহ পাক সর্বাবস্থায় ন্যায় বিচারক। তিনি কখনও কাহার সাথেই ন্যায়পরিপন্থী আচরন করেন না। করিতে পারেন না।

আল্লাহ পাক চিরন্তন ন্যায়বিচারকারী। মনুষ্য প্রজাতিকেও তিনি ন্যায়ের উপরে প্রতিষ্ঠিত হইতে যথোপযুক্ত যোগ্যতা দান করিয়া তাহাদের নসিব বুলন্দ করিয়া ধন্য করুন।

ছবি কৃতজ্ঞতা: ইন্টারনেট।

ছবি কৈফিয়ত: মগের মুল্লুকের বিপরীতে সাজানো গোছানো পরিপাটি জনপদের সুন্দর সব ছবি দেখিয়া অন্তত: হৃদয়ে কিছুটা প্রশান্তি আনয়ন তো করিতে পারি!

গল্প কৃতজ্ঞতা: মূল গল্পটি হাকীমুল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহির লেখা মুসলমানের হাসি বই হইতে সংগৃহীত এবং ইষত পরিমার্জিত।

সকলের কল্যান হোক।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:৪০
১৪টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×