somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

গিবত, মারাত্মক এক সামাজিক ব্যাধি; গিবত থেকে বাঁচার উপায়

১৬ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অধিকাংশ গিবতের আসরের সূচনাটা যেভাবে হয়..........:
'যদিও গীবত করা ভালো না, তারপরও একটা সত্য কথা বলি...'। হ্যাঁ, এই কথাটি দিয়েই আমরা শুরু করি। গিবতের সূচনাটা এখন এভাবেই, একটা সত্য কথা বয়ান করার ছলেই অধিকাংশ লোককে করতে দেখা যায়। গল্পের আসরে সরাসরি তো আর গিবত করা যায় না! একটা সঙ্কোচবোধ থাকা উচিত না! তাই এই কথাটা দিয়ে গিবত জায়েজের বৃথা চেষ্টা আর কি! গিবতটা আসলে কি? গিবত তো হচ্ছে, কারো বিষয়ে তার পেছনে এমন কথা বলা যা তার সামনে বললে যদি সে কষ্ট পায় যদিও কথাটি সত্য হোক না কেন। সত্য হলে গিবত আর বানিয়ে বললে হবে মিথ্যা অপবাদ, যা গীবতের চেয়েও মারাত্মক।

গিবত, আজকের সমাজের অন্যতম ব্যাধি:
প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, বর্তমানে আমাদের সমাজের অনাকাঙ্খিত এবং রুঢ় বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা গিবত করতে খুব ভলোবাসি। গিবত না করতে পারলে আমাদের পেটের ভাত হজম হয় না। গিবত না করতে পারলে চায়ের আডডা জমে না। গিবত না করে যেন একটি দিনও আমাদের কাটে না। গিবত আজ আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অপ্রত্যাশিত অনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরে বাইরে আজ গিবতের সয়লাব। আজকের সমাজের অন্যতম ব্যাধি এই গিবত। ধর্মীয় জ্ঞানের অপ্রতুলতা, সঠিক শিক্ষার অভাবের ফলে আমাদের অধিকাংশ লোক জানেই না এই গিবতের শাস্তি কত ভয়াবহ! আরও দু:খজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের ভেতরে অনেকেই আবার এমনও রয়েছি, যাদের ঠিক জানাও নেই যে, গিবত কাকে বলে!

বিষয়টি ক্লিয়ার করার জন্য আমার নিজেরই অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। বহু দিন পূর্বের ঘটনা। পরিচিত এক ভদ্রলোককে অন্য এক ব্যক্তির পেছনে (অনুপস্থিতে) তার গিবত করতে দেখলাম। তাকে এই কাজ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করলে তিনি বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন, 'আমি তো গিবত করছি না। আমি যা বলেছি, এগুলো তো সত্য কথা। তার যে দোষ বর্ণনা করেছি এসব দোষ তো তার আসলেই রয়েছে। তাহলে এসব কথা গিবত হয় কিভাবে?'

তাকে গিবতের বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পরে তিনি তার ভুল বুঝতে পারলেন।

এই বিষয়ে অামাদের সকলের জানা প্রয়োজন। আজ আমরা গিবত সম্পর্ক জানব। গিবত থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানবো। আল্লাহ পাক অামাদের তাওফিক দান করুন।

গিবত -এর সংজ্ঞাঃ
‘গিবত’ অর্থ বিনা প্রয়োজনে কোন ব্যক্তির দোষ অপরের নিকটে উল্লেখ করা। ইবনুল আছীর রহ. বলেনঃ 'গিবত হল কোন মানুষের এমন কিছু বিষয় যা তার অনুপস্থিতিতে উল্লেখ করা, যা সে অপছন্দ করে, যদিও তা তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে।'

আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গিবত কাকে বলে তোমরা জান কি? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোন ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তাই গিবত। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যে দোষের কথা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গিবত হবে? উত্তরে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার গিবত করলে আর তুমি যা বলছো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ। (সহিহ মুসলিম)

গিবত ও চোগলখোরী; পাশাপাশি কঠিনতম দুই অপরাধ:
ইতোমধ্যেই উপরের আলোচনা দ্বারা আমরা বুঝতে পেরেছি যে, মানুষের অজান্তে দোষ বর্ণনার নাম গিবত, যদিও উক্ত দোষ তার মাঝে বর্তমান থাকে। পক্ষান্তরে চোগলখোর ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যে মানুষের মাঝে ঝগড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনের কাছে বর্ণনা করে। গিবতকারী ও চোগলখোরের মধ্যে পার্থক্য এই যে, চোগলখোরের মধ্যে ঝগড়া লাগানোর ইচ্ছা বিদ্যমান থাকে। আর গিবতকারীর মধ্যে তা থাকা শর্ত নয়। গিবতকারী ও চোগলখোরেরা মানুষের মধ্যে বিচ্ছেদ ও ঝগড়া সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনের কাছে বর্ণনা করে থাকে। মানুষের পারস্পরিক ভালবাসাকে শত্রুতায় পরিণত করে। তারা মানুষের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক। তাদেরকে দেখা যায়, একজনের কাছে একরকম এবং অন্যজনের কাছে অন্যরকম চেহারা নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। তারা নিজেদের ইচ্ছামত যখন যা খুশী তাই বলে থাকে। কবরের আযাবের অন্যতম কারণ এই চোগলখোরী।



গিবত করার ভয়ঙ্কর পরিনতি:
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

'হে মুমিনগণ! তোমরা বেশি বেশি ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই কতক ধারণা গুনাহ এবং গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান কর না। আর তোমাদের কেউ যেন কারও পেছনে গিবত না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? অথচ তোমরা তা ঘৃণাই কর। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী পরম দয়ালু।' (সূরা আল হুজরাত :১২)

-অত্র আয়াত প্রমাণ করে যে, গিবত করা মৃত ব্যক্তির গোশত ভক্ষণ করার শামিল।

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ তাআ'লা বলেন-

'আল্লাহ মন্দ কথা প্রকাশ করা ভালোবাসেন না, তবে কারও ওপর জুলুম করা হয়ে থাকলে অন্য কথা। জেনে রেখ, আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন।' (সূরা নিসা : ১৪৮)

গিবত জাহান্নামে শাস্তি ভোগের কারণঃ
রাসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ 'মিরাজের সময় আমি এমন কিছু লোকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখগুলি পিতলের তৈরি, তারা তা দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল ও বক্ষগুলিকে ছিঁড়ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম- এরা কারা, হে জিবরাঈল? তিনি বললেন, এরা তারাই যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের ইজ্জত-আবরু বিনষ্ট করত।' (মিশকাত)

আব্দুল্লাহ্‌ ইবন মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেনঃ- একদা আমরা নাবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে ছিলাম। এমতাবস্থায় একজন ব্যক্তি উঠে চলে গেল। তার প্রস্থানের পর একজন তার সমালোচনা করল। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, 'তোমার দাঁত খিলাল কর।' লোকটি বলল, 'কি কারণে দাঁত খিলাল করব? আমিতো কোন গোশত ভক্ষণ করিনি।' তখন তিনি বললেন, 'নিশ্চয়ই তুমি তোমার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করেছ অর্থাৎ ‘গিবত’ করেছ।' (মিশকাত)

গিবত করলে কবরে শাস্তি হয়:
একবার রাসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদেরকে তেমন বড় কোন অপরাধে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না (যা থেকে বেঁচে থাকা তাদের জন্য সহজ ছিল)। এদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, চোগলখোরী করার কারণে এবং অন্যজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে পেশাবের ব্যাপারে অসতর্কতার কারনে। (পেশাবের ছিটা থেকে বেঁচে থাকতো না) অপর হাদিসে চোগলখোরীর পরিবর্তে গিবত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। মুসলিম ,আবূ দাউদ, তিরমিযী, (হাদিস সহীহ্‌)

গিবত, বহু কষ্টে অর্জিত আপনার পূণ্যকে অন্যের আমলনামায় ট্রান্সফার করে দেয়ার মাধ্যম
যার গিবত করা হয় তার আমলনামায় গিবতকারী ব্যক্তির অর্জিত পূণ্য ট্রান্সফার করে দেয়া হয়। যার গিবত করা হচ্ছে তার গুনাহগুলো গিবতকারীর কাছে চলে যাবে আর গিবতকারীর নেক আমলগুলো যার গিবত করা হয়েছে তার কাছে চলে যাবে। এভাবে হাশরের ময়দানে প্রচুর আমল নিয়ে আসলেও শুধুমাত্র গিবত করার কারণে আমাদের আমলগুলো অন্যদেরকে দিয়ে দিতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে নিচে একখানা হাদিস উল্লেখ করা হলো-

প্রকৃত দরিদ্র কে?
হাদিস শরিফে এসেছে, একবার রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করলেন, বল তো, দরিদ্র কে? সাহাবায়ে কেরাম উত্তর দিলেন, যার হাতে টাকা-পয়সা নেই। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। মূলত: দরিদ্র সে নয়। বরং প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র ওই ব্যক্তি, যে দুনিয়া থেকে অসংখ্য নেক আমলসহ বিদায় নিবে। নামাজ-রোজা, দান-সদকা, জিকির-তাসবীহসহ হাজারো নেক আমল তার আমলনামায় মওজুদ থাকবে। কিন্তু কিয়ামতের দিন যখন হিসাব শুরু হবে, তার আমলনামার পাশে মানুষের ভিড় জমে যাবে। কেউ দাবি করবে, আমি এ ব্যক্তির নিকট হক পাই, যেহেতু সে দুনিয়াতে আমার হক নষ্ট করেছে। কেউ বলবে, এ ব্যক্তি আমার গিবত করেছে। আরেকজন বলে উঠবে, এ ব্যক্তি আমাকে হিংসা করেছে। অপরজন দাবি জানাবে, এ ব্যক্তি আমার সাথে অনধিকার চর্চা করেছে। এভাবে একেকজন একেকভাবে তার কাছে অধিকার দাবি করবে। আখিরাতের জীবনে তো টাকা-পয়সা, সহায়-সম্পদ ইত্যাদি থাকবে না, যেগুলো দ্বারা হক পূর্ণ করা যাবে। আখিরাতের টাকা-পয়সার নাম একমাত্র নেক আমল। সুতরাং, প্রত্যেকে নিজস্ব হক বাবদ এ ব্যক্তির নেক আমলগুলো নিয়ে যাবে। একজন নামাজ নিয়ে যাবে, অপরজন রোজা নিয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে ইমাম আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে নিয়ে শিক্ষনীয় সুন্দর একটি ঘটনা:
হযরত সুফিয়ান সাওরী রহ. ছিলেন ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর সমকালীন ব্যক্তিত্ব। উভয়ের দরবারেই দরস বসত। একদিন হযরত সুফিয়ান সাওরী রহ. কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ইমাম আবু হানিফা রহ. সম্পর্কে আপনি কেমন ধারণা পোষণ করেন? তিনি উত্তর দিলেন, ইমাম আবু হানিফা রহ. তো বড় কৃপণ লোক। লোকটি বলল, আমরা তো শুনেছি, তিনি খুব দানশীল। সুফিয়ান সাওরী রহ. বললেন, তিনি এতো বড় বখিল যে, নিজের নেক আমল কাউকে দিতে চান না, অথচ অন্যের নেক আমল নিজে নিয়ে নেন। সেটা এভাবে যে, মানুষ তাঁর সম্পর্কে সমালোচনা করে, যার ফলে সমালোচকদের নেক আমল তাঁর আমলনামায় চলে যায়। অন্যদিকে তিনি সমালোচনা করেন না এবং সমালোচনা শুনেনও না। এজন্যই বলছি, তিনি পার্থিব দৃষ্টিকোণে খুব দানশীল হলেও আখিরাতের দৃষ্টিকোণে নিতান্তই কৃপণ।

গিবত সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য:
গিবত করা হারাম ও মারাত্মক অপরাধ। কোনো অবস্থাতেই গিবত বৈধ নয়। চাই তা কারো সামনে কিংবা পেছনে হোক। তবে মানুষের পেছনে গিবত করা অধিকতর দোষণীয় অপরাধ। কিন্তু জেনে হোক কিংবা না জেনে গিবত করে ফেলেছেন, এখন গিবতের অপরাধ থেকে বাঁচতে করণীয় কী? গিবতের মত সমাজের সর্বোতব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এমন ভয়ঙ্কর অপরাধ করা থেকে বাঁচতেই বা করণীয় কী?

ঝগড়া নয়, উত্তম কথা দিয়ে গিবতকারীকে থামিয়ে দিন:
গিবত যেমন হারাম কাজ, তেমনি গিবতকালীন সময় যারা তা শুনে তারাও সমান অপরাধী। তাই যখন কেউ কারো সামনে গিবতে লিপ্ত হয়, তখন তার উচিত গিবতকারীকে সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে থামিয়ে দেয়া। তাকে গিবতের ভয়াবহ পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। তা করতে পারলেই গিবতের পরিমান কমে আসবে।

গিবত থেকে মুক্তি লাভে করণীয়:
গিবত করা যাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে, তাদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখা অনেক কঠিন। তাইতো মহান প্রভু ব্যভিচারের অপরাধ ক্ষমা করলেও গিবতের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। তবে গিবতের ভয়াবহ অপরাধ থেকে বেঁচে থাকতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-

‘গিবত বা পরনিন্দা ব্যভিচার হতেও জঘন্য অপরাধ। সাহাবাগণ বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! গিবত কিভাবে ব্যভিচার অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ হতে পারে?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ব্যভিচার করার পর মানুষ আল্লাহর কাছে তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা তাওবা কবুল করেন। কিন্তু গিবতকারী ব্যক্তিকে যে পর্যন্ত ওই ব্যক্তি (যার গিবত করা হয়েছে সে) ক্ষমা না করে; ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহও তাকে (গিবতকারীকে) ক্ষমা করেন না।’ (মিশকাত)

এক. যার গিবত করা হয়েছে তার নিকট থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবে:
এ হাদিস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, গিবত জঘন্য অপরাধ। তবে কারো দ্বারা গিবত হয়ে গেলে সে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে ক্ষমা চেয়ে নেবে কিংবা (মারা গেলে) গর্হিত গিবতের ক্ষতিপুরণ স্বরূপ তার গোনাহ মাফে দোয়া করতে হবে।

দুই. যার গিবত করা হয়েছে তার গোনাহমাফির জন্য দুআ করবে:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে গিবতের একটি ক্ষতিপূরণ হলো, তুমি যার গিবত বা কুৎসা রটনায় লিপ্ত ছিলে তার জন্য এভাবে দোয়া কর- ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ও (যার গিবত করা হয়েছে) তার গোনাহ মাফ করে দাও। (মিশকাত)

আশা করা যায়, গিবতকারীর কাছ থেকে ক্ষমা লাভে তাকে না পেলে তার জন্য এভাবে দোয়া করলে হয়ত আল্লাহ তাআলা গিবতকারীকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।

তিন. গীবত থেকে বেঁচে থাকতে সর্বাবস্থায় অপরের কল্যানকামী হওয়া অত্যন্ত জরুরি:
এ থেকে বাঁচার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে অপরের কল্যাণ কামনা করা। কেননা, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দ্বীন হচ্ছে নিছক কল্যাণ কামনা করা।’

চার. নিজের উপরে অপর ভাইকে অগ্রাধিকার দেয়া:
আত্মত্যাগ, স্বার্থত্যাগ অর্থাৎ যে কোনো প্রয়োজনে অপর ভাইকে অগ্রাধিকার দেয়া। যেমন আল্লাহ তাআ'লা সূরা হাশরের ৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেছেন,

‘তারা নিজের ওপর অন্যদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তারা অনটনের মধ্যে থাকে।’

পাঁচ. অপরের অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া:
স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায়, অপরের অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া হলে তার সমালোচনা বা গিবত করার প্রশ্ন মনে উদয় হবে না। তাই এই মহত গুনে আমাদের গুনান্বিত হতে হবে।

ছয়. মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী বেশি বেশি করে অধ্যয়ন করা:
মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী বেশি বেশি করে অধ্যয়ন করার প্রতি মনযোগী হতে হবে। আমাদের সব সময় আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে তিনি যেন অনুগ্রহ করে গিবতের মতো জঘন্য সামাজিক ব্যাধিতে আমাদের নিমজ্জিত হতে না দেন।

সাত. জিহবাকে সংযত রাখতে হবে সবসময়:
এক্ষেত্রে জিহবাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সর্বাগ্রে। কেননা, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা যখন ভোরে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয় তখন শরীরের সব অঙ্গ জিহবার কাছে আরজ করে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহর নাফরমানি কাজে পরিচালিত করো না। কেননা, তুমি যদি ঠিক থাক, তবে আমরা সঠিক পথে থাকব। কিন্তু যদি তুমি বাঁকা পথে চলো, তবে আমরাও বাঁকা হয়ে যাব।' (তিরমিজি)

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার জিহবা ও লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’ (বুখারি)



যেসব ক্ষেত্রে গিবত করা বৈধ:
ইমাম নববীর রহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, যদিও গিবত করা হারাম, কোনো কোনো পরিস্থিতিতে গিবত করার অনুমোদন রয়েছে যখন তা কোনো মঙ্গলের জন্য করা হয়ে থাকে। গিবত করার এ ক্ষমতা কেবলমাত্র একটা ন্যায়সঙ্গত ও বৈধ কারণেই প্রদান করা যাবে, অন্যথায় এর অনুমতি দেয়া যাবে না। নিম্নের ছয়টি কারণের যে কোনো একটি কারণ উপস্থিত থাকলে গিবত করা যেতে পারে:

১. জুলুম/ নিপীড়নের বিচার চাইতেঃ যে ব্যক্তি নিপীড়িত হয়েছে, তার জন্য এই অনুমতি রয়েছে যে, সে তার অবস্থা সম্পর্কে শাসক বা বিচারককে বা অন্য যে কাউকে অবগত করতে পারে, যার ক্ষমতা রয়েছে তাকে জালিমের বিরুদ্ধে সুবিচার দেয়ার ৷তাকে উল্লেখ করতে হবে, 'অমুক লোক আমার প্রতি অন্যায় করেছে' এবং 'সে আমার সাথে এই করেছে' এবং 'সে আমাকে দমিয়ে রেখেছে 'এভাবে' বা এরকম প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যাদি।

২. একটি মন্দকে পরিবর্তন করা এবং পাপী ব্যক্তিকে সঠিক পথের দিকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য চাওয়াঃ একজন ব্যক্তির উচিত, যার পক্ষে কোন মন্দ কাজ থামানো সম্ভব তাকে বলা, 'অমুক ব্যক্তি এরকম করেছিল, ফলে আমি তাকে তা থেকে বিরত রাখি' বা এরকম কিছু ৷ তার লক্ষ্যই হবে মন্দকে সম্পূর্ণরূপে দূর করা ৷ যদি এ ধরনের কোন উদ্দেশ্য না থাকে, তবে তার জন্য কোন কথা উল্লেখ না করাই উত্তম

৩. ফতোয়া (ইসলামী বিধান) চাওয়া/ জানাঃ একজন ব্যক্তির উচিত একজন মুফতীকে (যিনি ফতোয়া দিতে পারেন) বলা: “আমার বাবা” বা “আমার ভাই” বা “এই এই ব্যক্তি আমার সাথে এইরূপ অন্যায় করেছে ৷ তার কি এটা করার অধিকার রয়েছে?” – “কিভাবে আমি সেটা বন্ধ করতে পারি এবং আমার উপর থেকে জুলুম বন্ধ করে আমার অধিকার আদায় করতে পারি?” এবং এরকম আরো তথ্য ৷ এমনিভাবে, একজন বলতে পারে যে, “আমার স্ত্রী এরূপ করেছে” বা “আমার স্বামী এরূপ করেছে” এবং এরকম আরো তথ্য ৷ প্রয়োজনের তাগিদে এ ধরনের ফতোয়া চাওয়া অনুমতিযোগ্য, কিন্তু সাবধানতা অবলম্বনের জন্য যে কারো উচিত এভাবে বলা, “একজন ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কি বলেন – যে এরূপ করেছে?” বা “একজন স্বামীর ব্যাপারে” বা “একজন স্ত্রী সম্পর্কে যে এরূপ করেছিল” (আমার স্ত্রী এভাবে না বলে) ইত্যাদি ৷ এই পদ্ধতিতে, কাউকে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করেই লক্ষ্য অর্জন করা যায় ৷ যাহোক, একজন ব্যক্তির নামোল্লেখ করা এরকম পরিস্থিতিতে অনুমোদিত এ হাদীসের ভিত্তিতে যে, হিন্দ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানান, “বস্তুত, আবু সুফিয়ান (তার স্বামী) একজন কৃপণ লোক ৷” এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে একথা বলা থেকে বিরত রাখেননি ৷

৪. মুসলিমদের পাপ সম্পর্কে সতর্ক করা এবং উপদেশ দেয়াঃ এর বেশ কয়েকটি দিক রয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে: কাউকে হাদীস বর্ণনা ও সাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে অনির্ভরযোগ্য ঘোষণা করা ৷ ইজমা (মুসলিম স্কলারদের ঐক্যমত) অনুযায়ী এটি করা জায়েয ৷ বরং গুরুত্বের ভিত্তিতে এটি কখনও কখনও অবশ্য কর্তব্য হয় ৷ আরেকটি অবস্থা হচ্ছে, যখন কোন ব্যক্তি কারো সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়, বিবাহ, ব্যবসা, সম্পত্তি হস্তান্তরের সময়, দৈনন্দিন লেনদেন ও যেকোন কিছু হস্তান্তরের সময় বা অনুরূপ কোন পরিস্থিতে – আপনার জন্য ফরয সেই ব্যক্তিকে অপর ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে অবগত করা, যার সঙ্গে সে লেনদেন করতে যাচ্ছে – উপদেশের লক্ষ্যে ৷ যদি আপনার উদ্দেশ্য এ কথা বলাতেই অর্জিত হয় যে “তার সাথে ব্যবসায়িক লেনদেনে জড়ানো আপনার জন্য মঙ্গলজনক নয়” বা এটা বলাতেও, “আপনার এটা করা উচিত নয়” বা এধরনের কিছু, তবে সেটুকুতেই সারতে হবে; তাই বলে ঐ লোকটির অন্যান্য (প্রসঙ্গ বহির্ভূত) খারাপ দোষগুলো সম্পর্কে জানানো যাবে না ৷ আর যদি এতে কাজ না হয়, তবে আপনি নির্দিষ্টভাবে লোকটির অবস্থা সম্পর্কে তাকে অবগত করতে পারেন ৷

আর একটি অবস্থা হচ্ছে, যখন আপনি কাউকে এমন কোন লোকের কাছ থেকে কোন কিছু কিনতে দেখেন, যে নাকি চুরি, ব্যভিচার বা মদ্যপানের মত অপরাধের সাথে জড়িত ৷ তখন ক্রেতাকে এ সম্পর্কে অবগত করানো আপনার কর্তব্য, যেহেতু তিনি জানেন না ৷ এমনকি, এটা তখনও প্রযোজ্য যখন আপনি জানেন লোকটি যে বস্তুটি কিনতে যাচ্ছে তা ত্রুটিযুক্ত ৷

আর একটি ব্যাপার হচ্ছে যে, যখন আপনি কোন শিক্ষার্থীকে (দ্বীনের ক্ষেত্রে) দেখেন একজন বিদ‘আতী বা পথভ্রষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করছে এবং আপনি তার ক্ষতির আশংকা করেন ৷ তখন আপনি অবশ্যই সেই ছাত্রকে উপদেশ দেয়ার লক্ষ্যে সে ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে অবগত করবেন ৷ এক্ষেত্রে অনেক মানুষই ভুল করে থাকে, কেননা ব্যক্তিটি যার সম্পর্কে উপদেশ দিচ্ছেন তার ব্যাপারে তিনি ঈর্ষাপরায়ণ হতে পারেন বা শয়তান তাকে ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে, এভাবে যে, তিনি ভাবতে পারেন যে তিনি যেটা করছেন তা হচ্ছে নসীহত এবং সমবেদনা প্রকাশ করা ৷

সর্বশেষে যে অবস্থাটি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, যখন কোন ব্যক্তি কোন নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছে এবং সে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না কেননা সে উপযুক্ত নয় বা সে একজন অমনোযোগী বা পাপী ইত্যাদি ৷ এমতাবস্থায় একজন ব্যক্তির উচিত অন্যরা যারা তার উপর নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন, তাদের নিকট বিষয়টি জানানো, যাতে তাকে এই পদ থেকে সরানো যায় এবং একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া যায়৷ অথবা, যাদের সে ব্যক্তিটির উপর ক্ষমতা রয়েছে তারা যেন তার সম্পর্কে জানতে পারেন, যেন তার দ্বারা যাতে ক্ষতি সাধন না হয় তার ব্যবস্থা করতে পারেন বা তাকে ভাল হতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন বা অন্য কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন ৷

৫. যখন কেউ উন্মুক্তভাবে মন্দকর্ম বা বিদআতী কাজে লিপ্ত থাকে: এর উদাহরণ হচেছ যখন কেউ খোলাখুলিভাবে মদপান করে, লোকের টাকা আত্মসাৎ করে এবং তাদের নিকট থেকে অন্যায়ভাবে ট্যাক্স নেয় ইত্যাদি ৷ ফলে জনসাধারণের সামনে ঐ ব্যক্তিটি যে সকল কাজ করে, তা নিয়ে আলোচনা করা বা কথা বলা বৈধ ৷ কিন্তু ঐ লোকের অন্যান্য দোষত্রুটি সম্পর্কে আলোচনা করা নিষিদ্ধ যতক্ষণ না সেগুলো ঐ ক্যাটাগরীতে পড়ে, যে সকল কারণে গিবত করা জায়েয ৷

৬. কোন ব্যক্তিকে সংজ্ঞায়িত করা: কোন ব্যক্তি যদি লোকজনের নিকট তার ডাক নামে পরিচিত থাকে, যেমন ‘ঝাপসা চোখ বিশিষ্ট যিনি’, ‘যিনি খোঁড়ান’, ‘বধির লোকটি’, ‘অন্ধ লোকটি’, ‘টেরা চক্ষু বিশিষ্ট’, ‘চ্যাপ্টা নাকওয়ালা’, ইত্যাদি ৷ তাহলে তাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার জন্য এভাবে বলা জায়েয ৷ যাহোক, তাকে হেয় করার জন্য এরকম নামকরণ করা নিষিদ্ধ ৷ যদি তাকে অন্য কোনভাবে চিহ্নিত করা যায়, তবে তাকে সেভাবেই চিহ্নিত করা উচিত ৷

এগুলো হচ্ছে সেই ছয়টি অবস্থা যে ক্ষেত্রে গিবত করা জায়েয, যদি তা আলেমগণ যেভাবে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবে করা হয়ে থাকে ৷সহীহ হাদীস থেকেও এসব পরিস্থিতে গিবত করার অনুমোদন পাওয়া যায় ৷

সহীহ আল বুখারী ও মুসলিমে আয়িশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেছেন, একজন লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তার গৃহে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি বললেন: “তাকে আসার অনুমতি দাও, এবং সে তার আত্মীয়-স্বজনের জন্য কত খারাপ ভাই ৷” ইমাম বুখারী এ হাদীসটিকে গিবত করার ক্ষেত্রে প্রমাণস্বরূপ ব্যবহার করেছেন।

ইবন মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেছেন, “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধলব্ধ সম্পদের একাংশ বন্টন করছিলেন। তো একজন আনসারী বলল, “আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, মোহাম্মদ আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা রাখে না (অর্থাৎ, তিনি ন্যায্যভাবে বন্টন করেননি)।” ফলে আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম এবং তাঁকে ব্যাপারটি জানালাম ৷তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেল (অর্থাৎ তিনি রাগান্বিত হলেন) এবং বললেন: “আল্লাহ তা’আলা মূসা আলাইহিস সালাম -এঁর উপর রহম করুন ৷বস্তুত: তিনি এর চেয়ে গুরুতরভাবে অভিযুক্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি ধৈর্যশীল ছিলেন।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

তাছাড়া হিন্দ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসটি রয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন, “বস্তুত আবু সুফিয়ান হচ্ছে একজন কৃপণ ব্যক্তি ৷” এবং এ হাদীসটি যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা বিনতে কায়েস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহাকে বললেন (দু’জন পানিপ্রার্থীর প্রসঙ্গে): “মুয়াবিয়ার ক্ষেত্রে, সে হচ্ছে খুবই দরিদ্র এবং আবু জাহম এর ব্যাপারটি হচেছ, সে তার কাঁধ থেকে লাঠি নামায় না অর্থাৎ, ‘সে তার বউদের মারধর করে’৷” (সহীহ মুসলিম)

বক্ষমান নিবন্ধের দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা একথা পরিষ্কারভাবে বুঝা গেল যে, গিবত করা গর্হিত একটি অপরাধ এবং এটি সম্পূর্ণ হারাম কাজ। কোনো অবস্থাতেই নিকৃষ্ট এই কাজটিতে যাতে আমরা প্রবৃত্ত না হই সেজন্য সদাসতর্ক থাকা নিতান্ত বাঞ্চনীয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদেরকে গিবত করা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো পদ্ধতিতে নিজের জন্য এবং যার গিবত করা হয়েছে তার জন্য দুআ করে নিজেদের গোনাহমাফির জন্য প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।



ছবি: অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১১:২৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×