somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

ব্লগে ৬০০ তম পোস্টঃ ইসলামে শিশু নির্যাতনের স্থান নেই

১৫ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ অন্তর্জাল।

ইসলামে শিশু নির্যাতনের স্থান নেই

কোমলমতি শিশুরা ফুলের মত নিষ্পাপ। স্নেহ-মমতা, ভালোবাসা এবং পবিত্রতার প্রতীক। শিশুরা আনন্দের উপকরণ। প্রেরণার উৎস। নির্মল আকাশের দিকে তাকালে হৃদয় যেমন প্রশান্ত হয়, তেমনি শিশুর নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকালে মন ভালো হয়ে যায়, চক্ষু শীতল হয়, অন্তর জুড়িয়ে যায়। শিশুর কোমল-কচি চেহারায় দুঃখ-বেদনার ছাপ নেই। বিষাদের ছায়া নেই। চিন্তার রেখার ভাঁজ নেই। পেরেশানির চিহ্ণ নেই। পাপ-তাপের গ্লানি নেই। তাই তারা দুনিয়াতেই যেন জান্নাতের একেকটি ফুল। শিশুদের দেখলেই মন প্রসন্ন হয়ে ওঠে। ইচ্ছে হয় একটু ছুঁয়ে দিতে। একটু আদর করতে। একটু স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিতে। শিশুদের নির্মল আনন্দ দেখলে মুহূর্তের জন্য আমরা ফিরে যাই আমাদের ফেলে আসা শৈশবে, দূরন্ত কৈশোরের ছোটাছুটি করার সেই দিনগুলোতে। আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের প্রতি ছিলেন সর্বাধিক স্নেহপরায়ন। সর্বাধিক কোমলপ্রাণ। শিশুদের তিনি ভালোবাসতেন। আদর করতেন। সোহাগ করতেন। স্নেহের পরশে সিক্ত করতেন। কোলে তুলে নিতেন। জীবনে কোনো শিশুকে তিনি সামান্য প্রহার করেছেন - হাদিসের কিতাবগুলো তন্ন তন্ন করে খুঁজে, হাজারো-লক্ষ হাদিসের ভীরে একটি হাদিসেও এমন বর্ণনা পা্ওয়া যায় না। ইতিহাসের কোনো পুস্তকেও নেই এমন তথ্য। এমনকি, আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন ইসলাম বিদ্বেষী চরম শত্রুগণও একথা বলতে সক্ষম হননি যে, আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো শিশুকে সামান্য প্রহার করেছেন।

ইসলামকে কলঙ্কিত করাই শিশু নির্যাতকদের উদ্দেশ্যঃ

আমরা যারা নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসি, তাঁর আচরিত সুন্নতকে মুহাব্বত করে ইসলামের আদর্শ ধারণ করে চলতে চাই, ইসলামের আদর্শে নিজেদেরকে আদর্শবান দাবি করি, ইসলামের মত মহান মানবিক জীবন বিধানের অনুসারী হতে পেরে গর্ববোধ করি - আমাদের বাস্তব জীবনে আমরা প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর এই মহোত্তম আদর্শ কতটুকু ফলো করছি, বা করতে পারছি - একবারও কি ভেবে দেখেছি? সত্যিকারার্থে, শিশুদের প্রতি ভালোবাসা ও স্নেহ প্রদর্শন কতটুকু আমরা করে থাকি? ইসলামের আতুরঘর বা সূতিকাগার বলা যায় যেসব স্থানকে, ইসলামী শিক্ষার সেই পাদপীঠ আমাদের দেশের মাদরাসাগুলোর অবস্থা কি? মাদরাসাগুলোর পরিচালনা বিশেষতঃ পাঠদানে যারা যুক্ত থাকেন, তাদের অবস্থা কি? তাদের কাউকে কাউকে তো এমনও দেখা যায় যে, শিশুদের প্রতি নির্মম নির্যাতনে মেতে ওঠেন তারা। শিক্ষা দেয়ার নামে, শেখানোর নামে যারা শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার আচরণ করেন, কোমলমতি শিশুদের নির্মমভাবে প্রহার করেন, অমানবিকভাবে তাদের প্রতি জুলূমের হাত উত্তোলন করেন, বস্তুতঃ মাদরাসার পবিত্র আঙিনায় শিশু নির্যাতকের ভূমিকায় এরা কারা? এরা কার আদর্শ বুকে ধারণ করেন? এরা আসলে কোথাকার কোন আদর্শ অনুসরণ করেন? এরা যা করেন তা নিশ্চয়ই ইসলামের সত্যিকারের আদর্শ নয়। তো, ইসলামের সত্যিকারের আদর্শকে উপেক্ষা করে শিশুদের প্রতি নির্মমতা আর নিষ্ঠুরতার ঘৃণ্য আচরণের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে এরা ইসলামকে কলঙ্কিত করতে চান কেন? কি এদের পরিচয় ও উদ্দেশ্য?

প্রত্যেক আদম সন্তানই সম্মানের যোগ্য, শিশুওঃ

কুরআনুল কারিম এবং হাদিসে নববীর আলোকে প্রত্যেক আদম সন্তানই সম্মানের যোগ্য। সেই অর্থে একজন শিশুও সম্মান পাবার যোগ্য। তার প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করা জরুরি। কুরআন মজিদে বর্ণিত হয়েছে:

وَاللّهُ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنْ أَزْوَاجِكُم بَنِينَ وَحَفَدَةً وَرَزَقَكُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ

আল্লাহ তোমাদের থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবন উপকরণ দিয়েছেন। -সুরা আন নাহল, আয়াত ৭২

শিশু মানবজাতির অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শৈশবেই মানুষের জীবনের গতিপথ নির্ধারিত হয়। তাই শৈশবকাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি শিশুর নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়ে ওঠার জন্মগত অধিকার রয়েছে। শিশুদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু দেখা যায়, আমাদের সমাজে শিশুরা অহরহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

শিশুদের শারীরিক শাস্তি প্রদান একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছেঃ

একথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, শিশুদের শারীরিক শাস্তি প্রদান আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অঘোষিতভাবে অনুমোদিত হয়ে গিয়েছে। অশিক্ষা, কুশিক্ষা এবং পারিবারিক নেতিবাচক মূল্যবোধ থেকে এসব কুধারণার সৃষ্টি এবং সামাজিক নৈতিক অবক্ষয়ের কুফলও এর জন্য বিভিন্নভাবে দায়ী। আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে, শিশুর পিতা, মাতা ও অভিভাবকদের একটি বড় অংশ নিজেরা এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং এরা শুধু নিজেরাই শিশুর নির্যাতক হয়ে থেমে থাকেন না, বরং তাঁরা শিক্ষকসহ অন্যদের এ বিষয়ে উৎসাহ প্রদান ও সহযোগিতাও দান করে থাকেন। আমাদের সমাজে অনেক শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সমাজের সকল স্তরের মানুষের একটি বড় অংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত না থাকলে এত শিশু শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা নয়। শিশুদের শারীরিক শাস্তি ও মানসিক নির্যাতন বর্তমানে একটি সামাজিক ব্যাধিরূপে আবির্ভূত হয়েছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়; এর আশু নিরসন প্রয়োজন। শিশুদের শারীরিক শাস্তির মতো বর্বর সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সামাজিক উদ্যোগ।

শাসনের নামে শিশুদের শারীরিক নির্যাতন গ্রহনযোগ্য নয়ঃ

ইসলামের বিধানগুলো যৌক্তিক ও মানবিক। শিশুর সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার জন্য পিতা, মাতা, শিক্ষক ও অভিভাবকের সুশাসন অবশ্যই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু শাসনের নামে শিশুর প্রতি নির্যাতন ইসলাম অনুমোদন করে না। এটি অমানবিক জুলুম। সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, শিশুরা বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। সাধারণত শারীরিক শাস্তিটা পরিবারে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই বেশি হয়। গড়ে শিশুর ৩ বছর থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে শারীরিক শাস্তি বেশি দৃশ্যমান হয়ে থাকে; এর মধ্যে ৭ বছর থেকে ১১ বছর বয়সের সময়ে শারীরিক শাস্তিটা শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি পরিলক্ষিত হয়। নাবালেগ মাসুম (নিষ্পাপ) শিশুদের শাসনের নামে এমন শাস্তি প্রদান যাতে শরীরের কোনো অংশ কেটে যায়, ফেটে যায়, ছিঁড়ে যায়, ভেঙে যায়, ফুলে যায়, ক্ষত হয়, বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় অথবা মানসিক ক্ষতি হয়; ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক, কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এবং ফিকহের বিধানমতে এগুলো সম্পূর্ণরূপে হারাম, নাজায়েজ, অবৈধ, অনৈতিক, অমানবিক ও বেআইনি এবং কবিরা গুনাহ বা বড় পাপ; যা থেকে তাওবা করা ছাড়া ক্ষমাপ্রাপ্তির আশা করা যায় না।

এক্ষেত্রে তাওবা করে ক্ষমাপ্রাপ্তিতেও থেকে যায় জটিলতাঃ

এক্ষেত্রে তাওবা করে ক্ষমাপ্রাপ্তিতেও থেকে যায় আরেকটি জটিলতা। সেটি হচ্ছে, এই অপরাধটি সরাসরি আল্লাহ তাআ'লার হক বা অধিকার হরণ করার মত কোনো বিষয় নয় যে, আল্লাহ তাঅ'লার কাছে তাওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেই তিনি ক্ষমা করে দিবেন। বরং, এটি বান্দার সাথে সম্পৃক্ত একটি হক বা অধিকার নষ্ট করার অপরাধ। এটাকে বলা হয় হক্কুল ইবাদ। এই ধরণের হক্কুল ইবাদ কারও দ্বারা বিনষ্ট হয়ে থাকলে এর থেকে তার ক্ষমাপ্রাপ্তির একমাত্র পথ হচ্ছে, উক্ত শিশুর নিকট থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া এবং শিশুটির ক্ষমাপ্রদান করে দেয়া।

জটিলতার শেষ এখানেই নয়ঃ

পিটিয়েছিলেন শিক্ষক মহোদয়। শিশু ছাত্রকে। সাপের মত। নিষ্পাপ শিশুটি মাটিতে গড়াগড়ি খেয়েছে আর কেঁদেছে। বাঁচার জন্য চিৎকার করেছে। ক্ষমা চেয়েছে। পায়ে ধরতে চেয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই মন গলেনি শিক্ষক মহোদয়ের। তিনি পিটিয়ে গেছেন নির্বিকারভাবে। বরং, নিজের শরীরের সবটুকু শক্তি ব্যয় করেই পিটানোর দায়িত্বটা পালন করেছেন। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। পারঙ্গমতার সাথে। দুর্ভাগ্যক্রমে শিশুর প্রতি এই ধরনের নির্মমতাও কদাচিত প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে আমাদের। কিন্তু একটা সময়ে এসে এই শিক্ষকের ভেতরের আত্মাটা যখন জাগ্রত হয়, তিনি বুঝতে পারেন যে, শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতার স্থান নেই ইসলামে। তিনি এটাও অবগত হন যে, এই অপরাধ থেকে মুক্তির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে নির্যাতিত শিশুর কাছ থেকেই। নিজের আমিত্ব, অহমিকা, বড়ত্ব, ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পারিক অবস্থান- সব কিছু মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে অবশেষে তিনি শিশুটির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই, জটিলতার তো শেষ কিন্তু হয়নি এখনও। এখানেও তো থেকে যায় আরেক জটিলতা। কারণ, শিশুর গায়ে হাত তোলা কিংবা তাকে মারধোর করা যত সহজ, শিশুর নিকট থেকে তার ক্ষমাপ্রাপ্তিটা তত সহজ মোটেই নয়। এর কারণ হচ্ছে, ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে যতক্ষণ পর্যন্ত একজন লোক বালেগ না হয় তথা নাবালেগ থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে শিশু বলেই গণ্য হয়ে থাকে। আর কোনো শিশুর প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ-নিষেধ, শাস্তিমুলক কোন বিধান বা দন্ডবিধি প্রযোজ্য হয় না। তার সাক্ষ্যও কার্যকর নয়। কার্যকর বলে গ্রহনযোগ্য নয় তার ক্ষমাপ্রদানও। এ ব্যাপারে সারা বিশ্বের উলামায়ে কেরাম একমত।

এজন্য শিশু বালেগ বা বয়সপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সে ক্ষমা করে দিলেও তার সে ক্ষমারও কার্যকারিতা থাকে না বা, তা গ্রহনযোগ্য বলে গন্য হয় না। অতএব, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারীর সামনে একটি মাত্র পথই খোলা থাকে, আর তা হচ্ছে, প্রহৃত শিশুটির বড় হয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। শিশুটি প্রাপ্ত বয়স্ক হলেই কেবল তার কাছ থেকে তিনি ক্ষমা চেয়ে নিতে পারেন এবং তখন যদি উক্ত শিশু স্বেচ্ছায় ক্ষমা করে দেন, তাহলে তা গ্রহনযোগ্য হতে পারে।

দুঃখিত! এই ক্ষেত্রেও তো থেকে যায় আরেকটি জটিলতাঃ

না বলে পারছি না বলে দুঃখিত! এই ক্ষেত্রেও তো থেকে যায় আরেকটি জটিলতা। সেটি হচ্ছে, আমার তো জানা নেই যে, প্রহৃত শিশুটির প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকবো কি না। সে পর্যন্ত আমি হায়াত পাব কি না, অথবা, শিশুটি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া অবদি জীবিত থাকবে কি না, কিভাবে বুঝা সম্ভব? এর কি কোনো উপায় আছে? আদৌ নেই। আর যদি ভাগ্যক্রমে উভয়েই হায়াতে বেঁচেও থাকি, তবুও এই শিশু তখন কোথায় থাকবে কিংবা তার সাথে আমার যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হবে কি না, তারও কি কোনো নিশ্চয়তা লাভ করা সম্ভব?

সুতরাং, শিক্ষা দেয়ার নামে, শাসনের নামে শারীরিক শক্তিতে দুর্বল এবং অসহায় শিশুদের নির্বিচারে যারা প্রহার করেন, এবং এগুলোকে নিছকই মামুলি বিষয় ভেবে থাকেন- তাদের এসব কাজ করার পূর্বে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করি। সম্মানিত পাঠক, আপনার কি অভিমত? এমনটা করাই আমাদের দায়িত্ব নয় কি?

অপ্রাপ্ত বয়স্কদের তা'জীর নয়, তা'দীব শেখানো আমাদের দায়িত্বঃ

ইসলামী শরিয়তের আলোকে এ কথা সুসাব্যস্ত এবং প্রমানিত যে, শিশুর প্রতি দন্ড বিধি প্রয়োগের সুযোগ স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই রাখেননি। সৃষ্টির প্রতি যেখানে স্বয়ং স্রষ্টারই এই প্রকারের দৃষ্টিভঙ্গি, সেখানে মা-বাবা কিংবা অভিভাবক অথবা শিক্ষক বা কারোর জন্য কোনো শিশুর প্রতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কোন অধিকার নেই। এ জন্য শিশুদের প্রতি তা’জীরের (শাস্তি) কোন কথা ইসলাম বলে না। তবে তা’দীব তথা আদবের কথা, তাদেরকে শিষ্টাচার শেখানো, প্রশিক্ষণ দেয়া, শৃংখলা শিখানো- এগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে ইসলাম।

বিশেষ করে একজন শিক্ষকের শিক্ষার্থীর প্রতি কী ধরনের আচরণ হওয়া উচিত, সে নির্দেশনা পাই আমরা পবিত্র কুরআনুল কারিমের বাণী থেকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন,

الرَّحْمَنُ

করুনাময় আল্লাহ।

عَلَّمَ الْقُرْآنَ

শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন,

خَلَقَ الْإِنسَانَ

সৃষ্টি করেছেন মানুষ,

عَلَّمَهُ الْبَيَانَ

তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা। -সূরা আর-রহমান, আয়াত ১-৪

অত্র আয়াতগুলোর দিকে একটু লক্ষ্য করলেই এ কথা সহজে বুঝে আসার কথা যে, এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই গোটা মানবজাতির কুরআনের শিক্ষক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। নিজেকে তিনি মানবজাতির শিক্ষক হিসেবে পেশ করেছেন বা উপস্থাপন করেছেন। আর এক্ষেত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শিক্ষক হিসেবে নিজের যে গুণটি উপস্থাপন করেছেন, গুণবাচক নামটি নির্বাচন করেছেন সেটি হলো, ‘তিনি পরম দয়ালু এবং অত্যন্ত মায়াময়।’

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আরও যেসব গুণবাচক নাম রয়েছে, যেমন- 'আল আলীম' বা ‘অধিক জ্ঞানী’, 'আল হাকীম' বা ‘মহাজ্ঞানী’, 'আল আজিজ' বা 'পরাক্রমশালী', 'আল জাব্বার' বা 'মহাক্ষমতাশালী', -এ সকল গুণবাচক নামগুলোর কোনো একটি প্রয়োগ না করে তিনি 'আর রহমান' বা ‘দয়ালু’ গুণবাচক নামটি ব্যবহার করেছেন। সমাজে আমরা যারা শিক্ষকের মহান পেশায় নিয়োজিত, আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, মহান রব্বুল আলামীন এখানে এই 'আর রহমান' বা ‘দয়ালু’ গুণবাচক নামটি ব্যবহার করে এ বার্তা দিয়েছেন যে, যারা শিক্ষক হিসাবে অবতীর্ণ হবেন তাদেরকে দয়ালু হতে হবে। তাদের অন্তরে থাকতে হবে দয়া-মায়া, প্রেম-প্রীতি আর মমত্ববোধের ধারা, স্নেহ-ভালোবাসা, হৃদ্যতা-কোমলতা, আন্তরিকতার অনাবিল ছোঁয়ায় তারাও হবেন একেকজন দয়ার্দ্র চিত্ত ও বিগলিত অন্তরের অধিকারী। কুরআন যার বাণী, তাঁরই বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যবান হবেন তারাও। আর তাঁর গুণে গুণান্বিত হওয়ার এ নির্দেশনাটিও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের দিয়েছেন আল কুরআনের অন্যত্র। তিনি ইরশাদ করেন-

صِبْغَةَ اللّهِ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللّهِ صِبْغَةً وَنَحْنُ لَهُ عَابِدونَ

তোমরা আল্লাহর রংয়ে রঙিন হও। আল্লাহর রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে? আমরা তাঁরই এবাদত করি। -সূরা আল বাকারাহ, আয়াত ১৩৮

তাফসীরে জালালাইনে অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, অত্র আয়াতে আল্লাহ তাআ'লার রং বলতে আল্লাহ তাআ'লার গুণ ও স্বভাবকে বুঝানো হয়েছে।

সুতরাং, নির্দ্ধিধায় বলা যায়, সত্যিকারার্থে যিনি কুরআনুল হাকিমের শিক্ষক, তিনি শিক্ষার্থীদেরকে বেদম প্রহার করতে পারেন না। তার পক্ষে অমানবিক আচরণ করা শোভা পায় না। যদি করেন, তাহলে তিনি প্রকৃতপক্ষে কুরআনের শিক্ষক নন বরং কুরআনের শিক্ষকের ছদ্মাবরণে বাস্তবিকতার প্রেক্ষিতে তাকে একজন জল্লাদ নামে আখ্যায়িত করা মোটেই অত্যুক্তি কিংবা অযৌক্তিক হবে না।

হাদিসে সন্তানকে প্রহারের কথার ব্যাখ্যাঃ

কেউ কেউ বলতে পারেন যে, হাদিসেও তো সন্তানকে প্রহারের কথা এসেছে। সেটা এসেছে ঠিকই। কিন্তু সেই প্রহারের স্থান কোথায় এবং তার সীমা কতটুকু, এই বিষয়গুলো আমাদের বুঝতে হবে। যে হাদিসে সন্তানকে প্রহারের কথা এসেছে সেটি আবু দাউদ শরীফের হাদিস। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

حَدَّثَنَا مُؤَمَّلُ بْنُ هِشَامٍ، - يَعْنِي الْيَشْكُرِيَّ - حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، عَنْ سَوَّارٍ أَبِي حَمْزَةَ، - قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَهُوَ سَوَّارُ بْنُ دَاوُدَ أَبُو حَمْزَةَ الْمُزَنِيُّ الصَّيْرَفِيُّ - عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مُرُوا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِينَ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ ‏"‏ ‏.

‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ করো। আর তারা যখন দশ বছর বয়সে উপনীত হয় তখনও যদি নামাজ আদায় না করে, তাহলে শাসনমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করো, অর্থাৎ, প্রহার করো।

এখানে প্রহার করার কথা শুনে অনেকেরই ভুল ধারণা আসতে পারে যে, প্রহারের কথা তো হাদিসেই রয়েছে, অতএব সমস্যা কোথায়? ইচ্ছেমত প্রহার করে হাড় গোড় ভেঙ্গে দিলেই বা অসুবিধা কি? ব্স্তুতঃ প্রিয় পাঠক, বিষয়টি মোটেই এমন নয়। এ প্রহারটা হতে হবে নিছক শাসনমূলক। হালকা ধরণের, যাতে সন্তানের ভাব, ভাবনা এবং অনুভবে এই বিষয়টি এসে যায় যে, নামাজ অতিব গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল যা পরিত্যাগ করার সুযোগ নেই। যাতে তার অন্তরে নামাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করার অনুভূতি জাগ্রত হয়। কিন্তু বড়ই দুঃখজনক যে, আজকাল প্রহার করার নামে যে অমানবিকতার দৃশ্য আমরা দেখতে পাই এই হাদিসের বক্তব্য বা ভাষ্যে তা মোটেও বুঝানো হয়নি।

উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমদ, ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহিমগণসহ সকল উলামায়ে কেরাম এবং ইসলামী স্কলারগণ বলেছেন যে, নামাজ না পড়ার কারণে শিশুকে সর্বোচ্চ তিনটি বাড়ি দেয়া যেতে পারে এবং সেটিও শাস্তিমুলক নয় বরং, শাসনমূলক। শুধুমাত্র তাকে নামাজের প্রতি গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এই ক্ষেত্রেও তাকে এমন কঠিনভাবে কোনোক্রমেই প্রহার করা যাবে না, যার ফলে তার গায়ে দাগ পড়তে পারে, সে অনেক বেশি ব্যথা পেতে পারে।

শিশুকে মাত্রাতিরিক্ত শাস্তিপ্রদান একটি মারাত্মক অপরাধ ও জুলুমঃ

শিশুকে মাত্রাতিরিক্ত শাস্তিপ্রদান একটি মারাত্মক অপরাধ ও জুলুমও বটে। শিশুকে যদি অন্যায়ভাবেও প্রহার করা হয়, সে শারীরিকভাবে দুর্বল ও অক্ষম হওয়ার কারণে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে না। এই ক্ষেত্রে বলা সঙ্গত যে, সে জুলূমের শিকার। যিনি কারও প্রতি জুলূম চাপিয়ে দেন, তাকে বলা হয় জালিম। জালিমের প্রতি কঠোর হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে কুরআন হাদিসে এবং জুলূম করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা উঠে এসেছে তাতে। জালিম শ্রেণিকে উদ্দেশ্য করে কুরআন হাদিসে উল্লেখিত কিছু সতর্কবাণী তুলে ধরছি-

প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআ'লার কথা বর্ণনা করে বলেন,

يا عبادي إني حرمت الظلم على نفسي وجعلته بينكم محرماً، فلا تظالموا

‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলূম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব, তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না।’ -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৭৩৭

পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। এক স্থানে ইরশাদ হয়েছে,

وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ

আর অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে। -সুরা আশ শুআরা, আয়াত ২২৭

আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। যেখানে কল্যান ও ন্যায়পরায়নতা থাকে, সেখানে জুলূমের স্থান নেই। পবিত্র কুরআনে এসেছে,

إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ وَإِيتَاء ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন। -সুরা আন নাহল, আয়াত ৯০

যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬১৩

রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ

أتقوا الظلم فإن الظلم ظلمات يوم القيامة

তোমরা জুলুম থেকে বিরত থাকো। কেননা কিয়ামতের দিন জুলুমের পরণিাম হবে খুবই অন্ধকার। -সহিহ মুসলিম

জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ -তিরমিজি, হাদিস ২৫১১

সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ -সুরা আর রূম, আয়াত ৪১

মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ -তিরমিজি, হাদিস ৩৫৯৮

রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ -বুখারি, হাদিস ১৪৯৬

শিশুর পিতা, মাতা কিংবা অভিভাবকও শিশুকে মাত্রাতিরিক্ত প্রহারের অনুমতি দেয়ার অধিকার রাখেন নাঃ

ইদানিংকালে লক্ষনীয় হয়ে উঠেছে যে, কিছু কিছু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নাবালেগ মাসুম শিশুদের শারীরিক শাস্তির হার সর্বাধিক। শিশুর পিতা, মাতা বা অভিভাবকের অনুমতি বা নির্দেশক্রমেও শিশুদের শারীরিক শাস্তি প্রদান শিক্ষক বা অন্য কারও জন্য জায়েজ নয়। কারণ, পিতা, মাতা বা অভিভাবক নিজেই তাঁর নিজের নাবালেগ সন্তানকে (শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে এমন প্রচণ্ড ও কঠিন আঘাতের মাধ্যমে) শাস্তি দানের অধিকার আদৌ রাখেন না। সুতরাং, যিনি নিজেই একটি অধিকার রাখেন না, তিনি অন্যকে সেই অধিকার কোনোভাবে দিতেও পারেন না। -ফাতাওয়ায়ে শামি, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি

আজকের দিনে নিজ ঘরেও নিরাপদ নয় শিশুঃ

নিজের ঘর শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। মাতৃকোল শিশুর পরম শান্তির নিবাস। মায়ের যথাযথ শিক্ষা না থাকায় এখানেই শিশু প্রথম বঞ্চনা ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। কুসংস্কার ও অজ্ঞতার কারণে শাল দুধ ফেলে দিয়ে শিশুর ক্ষতি করা হয়। অভাবের সংসারে এবং অনেক মা কর্মব্যস্ততার কারণে মেজাজ বিগড়ে গেলে শিশুদের মারধর করেন। কর্মজীবী বা শ্রমজীবী পিতারা শিশুদের খেলাধুলা ও চঞ্চলতার জন্যও মেরে থাকেন, যা আদৌ কাম্য হতে পারে না। সুশিক্ষা, সচেতনতা সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে এ পর্যায়ে শিশুর শারীরিক শাস্তি ও জুলুম বন্ধ করা সম্ভব।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক শাস্তি নয়ঃ

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সুশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই, যা আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, তা–ই শিক্ষা। শিক্ষা তথা সুশিক্ষার জন্য রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাঁরা শিক্ষা প্রদানে ব্যাপৃত থাকেন, তাঁরা নিজেরাই অনেক ক্ষেত্রে তেমন শিক্ষিত নন বা প্রশিক্ষিত নন। কোথাও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের আদর্শ অনুপাত যেখানে ১: ১০ থেকে ১: ২০-এর মধ্যে (প্রতিজন শিক্ষকের জন্য ১০ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী) হওয়ার কথা, সেখানে দেখা যায় এই অনুপাত ১: ৫০ থেকে ১: ১০০ (শিক্ষকপ্রতি শিক্ষার্থী ৫০ জন থেকে ১০০ জন) পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর সঙ্গে উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ না থাকা ও যথাযথ শিক্ষা উপকরণের অভাব, শিক্ষার্থীদের বয়সের তারতম্য, মেধা ও রুচির পার্থক্য, পারিবারিক বিভিন্ন স্তরের শিশুর অসম অবস্থানসহ নানা প্রভাবক শিক্ষককে শিশুদের শারীরিক শাস্তি প্রদানে প্রভাবিত ও উদ্বুদ্ধ করে।

এর সমাধানের জন্য প্রয়োজন গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষক, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত আদর্শ অনুপাতের কাছাকাছি আনা, শিক্ষকদের বিনোদনের সুযোগ প্রদান, শিক্ষকদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরণ ও মানসম্মত জীবনযাত্রা নিশ্চিতকরণ এবং শিক্ষকদের আধুনিক আন্তর্জাতিক বিশ্বশিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।

কর্মক্ষেত্রে শিশুদের শারীরিক শাস্তি বন্ধ করুনঃ

আমাদের দেশের আইনানুযায়ী শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। কিন্তু গৃহকর্মী বা কাজের লোক পরিচয়ে যারা শিশুদের দাসত্বের নতুন জীবন উপহার দিয়ে থাকেন তাদের জন্য সম্ভবতঃ এই আইন প্রযোজ্য নয়। গৃহকর্মী শিশুদের জীবন মনে হয় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বাড়িওয়ালা বা বাড়িওয়ালীগণ একেকজন যেন সাক্ষাৎ যমদুত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পত্র পত্রিকা এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে শিশু নির্যাতনের যে চিত্র প্রত্যক্ষ করা যায় তা রীতিমত ভয়াবহ। সামান্য ভুলের জন্য নির্মম নির্যাতনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের জীবন সংহারের উপক্রম হয়। এছাড়া, অন্যান্য কর্মক্ষেত্রেও শিশুরা নির্যাতনের শিকার এবং অধিকার বঞ্চিত হয়, অবহেলার শিকার হয়; এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুশ্রমিক বা শ্রমজীবী শিশুরা কম বয়সেই বেশি নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়। এ ক্ষেত্রে গৃহকর্মী শিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও বঞ্চিত হয়ে থাকে। এই গৃহকর্মীরা প্রায় কন্যাশিশু। এদের বয়স ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে গৃহকর্ত্রী ও গৃহমালিকের সন্তানদের দ্বারাই বেশি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি প্রয়োজন।

জালিম ও মজলুমকে সাহায্য করুনঃ

যারা নির্যাতন করেন বা যাদের দ্বারা নির্যাতন অর্থাৎ জুলুম সংঘটিত হয় তাদেরকে বলা হয় জালিম। আর যারা নির্যাতিত হয়ে থাকেন তাদেরকে বলে মজলুম। হাদিস শরিফে রয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

‘উনছুর আখাকা জালিমান আও মাজলুমান।’

অর্থাৎ, তুমি তোমার ভাইকে (প্রত্যেক মানুষকে) সাহায্য করো; হোক সে জালিম অথবা মজলুম। এক সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যখন কেউ মজলুম হবে, আমরা তার সাহায্য করব; কিন্তু জালিমের (নির্যাতনকারীর) সাহায্য করব কীভাবে? রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, জালিমকে জুলুম থেকে বিরত রাখবে, এটাই তাকে সাহায্য করা। -বুখারি, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি

আমরা যা করি, যেভাবে করি; শিশুরা অবচেতন মন তাই রপ্ত করে নেয়ঃ

আমরা শিখছি। নিরন্তর শিখছি। শিশুরাও শিখছে। অহরহ। অবিরত। অনবরত। শিশুদের শিক্ষা নিয়ে আমরা সদা উদ্গ্রীব থাকি। আমরা ভাবি, আমরা যা শেখাই অর্থাৎ যা মুখে মুখে বলে শেখাই, শিশুরা শুধু তা-ই শেখে। আসলে কি তাই? শিশুকে শেখানোর ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটে? কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, শিশুরা আমাদের শেখানোটা মানে, আমরা যা বলে বলে তাদের শিখিয়ে থাকি সেটা হয়তো শেখে; কিন্তু শিশুরা আমাদের দেখে দেখে, অর্থাৎ, আমাদের আচরণ থেকে শিখে থাকে তার চেয়েও বেশি। কারণ, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়; তারা যা দেখে তা আত্মস্থ করে। আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি তাদের কোমল মনে স্থায়ীভাবে রেখাপাত করে। আসন করে নেয়। জায়গা করে নেয়। আর এর প্রতিফলন ঘটে তাদের কর্মক্ষেত্রে বা কাজে-কর্মে, সারা জীবনের আচার-আচরণে। যেমন, ধৈর্য বা সহিষ্ণুতার উপদেশ যদি আমরা অসহিষ্ণুভাবে তাদের সামনে উপস্থাপন করি; তবে শিশু এখান থেকে দুটো বিষয় শিখে নিতে পারে: এক. ধৈর্য বা সহিষ্ণুতার বাণী বা বুলি; দুই. অধৈর্য বা অসহিষ্ণু আচরণ। এখন আমাদের ঠিক করতে হবে, আমরা শিশুদের কী শেখাতে চাই এবং কিভাবে শেখাতে চাই। সেই লক্ষ্যটা স্থির করার পরেই আমাদের সেভাবে আচরণ করতে হবে শিশুদের সাথে।

শিশুকে নির্যাতন নয় কোনো পর্যায়েইঃ

শিশুর প্রথম শিক্ষালয় তার মায়ের কোল, বাবার স্নেহছায়া, সর্বোপরি তার পরিবার ও সমাজ। এরপর মক্তব, মাদরাসা, স্কুল, পাঠশালা, বিদ্যালয় বিদ্যাপীঠ। বলা বাহুল্য, শিশুর সুশিক্ষার জন্য পিতা-মাতা, অভিভাবক ও শিক্ষকের ভূমিকা প্রধান।

আগেই উল্লেখিত হয়েছে যে, শিশুরা মাসুম তথা, নিষ্পাপ। এ কারণে শিশুদের শারীরিক শাস্তি দেওয়া বিধেয় নয়। এমনভাবে তাদেরকে কোনোক্রমেই প্রহার করা যাবে না, যাতে শরীরের কোনো স্থানে কেটে যায়, ফেটে যায়, ফুলে যায়, দাগ হয় কিংবা বিবর্ণ আকার ধারণ করে। রাগের বশীভূত হয়েও শিশুদের শাস্তি প্রদান করা যাবে না। শরীরের এমন কোনো জায়গায় আঘাত করা যাবে না, যাতে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে।

আমাদের সমাজে শিশুরা বঞ্চনা ও নিগ্রহের শিকার হয় গৃহে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মস্থলে। বলতে গেলে, কোথাও তাদের নিরাপত্তা নেই। বিদ্যালয়ে অদক্ষ, অযোগ্য, মানহীন শিক্ষক কর্তৃক অবোধ শিশুদের অমানবিকভাবে প্রহারের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এ বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানপ্রধান বা পরিচালক, কর্তৃপক্ষ বা কমিটি এবং দায়িত্বশীলদের আরও সচেতন ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে শিশুদের প্রতিটি অবস্থানস্থলে, (প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে) প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুরানি মক্তব, হাফেজি মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার (বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত) সব শ্রেণিকক্ষে ও যৌথ শয়নকক্ষে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এজন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, অভিভাবকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে এবং দাতাদের এগিয়ে আসা আবশ্যক।

আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবাসিক শিক্ষকদের সপরিবারে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সামান্য বাড়লেও এর সুফল হতে পারে অনেক বেশি। অধিকন্তু আবাসন সুবিধা ও সপরিবারে রেশন-অন্ন ইত্যাদি সুবিধালাভের ফলে স্বল্প বেতনে, সহজ শর্তে বেশি দায়িত্ব পালনে শিক্ষকগণও আগ্রহী হয়ে উঠবেন স্বাভাবিকভাবেই।

শিশুর মনোদৈহিক উৎকর্ষ ও পরিপূর্ণতা লাভের জন্য খাদ্যনিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা ও সুশিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, আনন্দ–বিনোদন ও সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থার প্রতিও নজর দিতে হবে। এগুলো নিশ্চিত করা গেলে, এতে শিশুর ভেতরে মূল্যবোধ, সুকুমারবৃত্তি ও মানবিক গুণাবলির স্ফুরণ ঘটানো সম্ভব। সভ্যতার উন্নয়নে আদর্শ ও চরিত্রবান নাগরিক সৃষ্টিতে শিশুদের প্রতি দায়িত্বশীল ও যত্নবান হওয়ার বিকল্প নেই।

ইস্যু যখন মাদরাসায় বলাৎকার ও হেফজখানার বেদম প্রহার: এসব অনাচার বন্ধ করতে হবে অবশ্যইঃ

সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারি এলাকার একটি মাদরাসায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সবার বিবেককে নাড়া দিয়েছে। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ছোট্ট একটি শিশুকে মাটিতে ফেলে প্রচন্ডরকম পেটা্চ্ছেন সেই মাদরাসার জনৈক শিক্ষক। তিনি শরীরের সকল শক্তি দিয়ে তাকে পিটিয়ে চলেছেন আর শিশুটি করুন আর্তনাদে মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে মারের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। শিশুকে মারধোরের ঘটনার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে মাদরাসায় শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার বিষয়টি সামনে এসেছে। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় শিশুটির সরলমনা এবং ধার্মিক অভিভাবক প্রথমে মামলা করতে অস্বীকৃতি জানালেও এক পর্যায়ে তাকে বোঝানোর হলে তিনি মামলা করেন এবং উক্ত মামলায় অভিযুক্ত প্রহারকারী শিক্ষককে আইনের আওতায়ও নেয়া হয়েছে।

কিন্তু কথা হচ্ছে, এটা তো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। কিছু কিছু মাদরাসায় শিশু নির্যাতন এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, এগুলো এদের নিত্য দিনের রুটিন মাফিক কাজে পরিণত হয়েছে। এসব অত্যাচার নির্যাতন যেন প্রতিদিনের স্বাভাবিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং, উক্ত শিক্ষককে আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে বলে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার অবকাশ নেই। এর পুনরাবৃত্তি যাতে আর কোথাও না হতে পারে সে লক্ষ্যে পরিকল্পনা নেয়া সময়ের দাবি।

অবশ্য, লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, ব্যতিক্রমীভাবে এই ঘটনাটির ভিডিও কোনো কারণে কেউ একজন ধারণ করেছিলেন এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন বলেই দেশবাসী শিশুটির প্রতি নিষ্ঠুরতার বিষয়টি জানতে পেরেছেন। অন্যথায় ভিডিও ধারণ করা না হলে এটিও হারিয়ে যেত অন্ধকারে, অন্য হাজারো ঘটনার মত। আমরা জানতেও পারতাম না। কারও নজরেই আসতো না। আলোচনা সমালোচনাও হতো না। সে কারণেই প্রশ্ন আসে, ঘটনা তো এই একটি নয়। ঘটনা তো এমন অহরহ ঘটে। হয়তো প্রতি দিনই ঘটে। হয়তো প্রতি রাতেই ঘটে। হয়তো কেউ সাহসী হয়ে ভিডিও করে না সেসব ঘটনার। অথবা, করতে পারে না। অথবা, করতে দেয়া হয় না। অথবা, করার মত পরিবেশ ও অবকাশ থাকে না। ফলে, আলোর মুখও দেখে না ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাগুলো। যার কারণে, অন্ধকারেই চাপা পড়ে থেকে যায় সেসব ঘটনা দুর্ঘটনা। হয়তো পদে পদে, সামান্য ভুলের জন্য, ছোটখাট অপরাধের জন্য কঁচি কোমল শিশু শিক্ষার্থীদের প্রতি ঘটানো হয় নির্যাতনের এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা। প্রশ্ন হচ্ছে- এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? আমাদের শিশুদের রক্ষার পথ ও পন্থা কি? এই অন্ধকার থেকে শিশুদের বের করে আনার রাস্তা কি?

অপরাধীর পক্ষাবলম্বন নয়, তার শাস্তি নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করাই প্রত্যেকের দায়িত্বঃ

শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি ভয়ানক আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আবাসিক মাদরাসায় বলাৎকার ইস্যু। বলাৎকার কারা করেন? এখানেও অন্য কেউ নন। বরং শিক্ষক নামের মানুষরূপী কিছু পশুই ঘৃণ্য এই অপরাধেরও হোতা। এই অপরাধটির ভিডিও কেউ ধারণ করতে পারেন না। হয়তো পারবেনও না। সেটার হয়তো সুযোগও থাকে না। হয়তো রাতের অন্ধকার গাঢ় হলে, সকল আলোর অনুপস্থিতি নিশ্চিত হয়ে তবেই এই নেকড়ের দল হামলে পরেন নিরীহ দুর্বল শিশুদের ওপর। তবে, ভিডিও না হলেও শেষ রক্ষা সবক্ষেত্রে হয়ে ওঠে না এসব পাষন্ডদের। শিশু বলাৎকারের অনেক ঘটনাই শিশুদের বয়ানে বেরিয়ে আসে শেষমেষ। সহ্যের সকল সীমা অতিক্রম করে শিশুরা যখন কষ্টে নীল হয়ে যায়, তখনই কেবল এসব বিষয়ে তাদের মুখ ফোটে। তখনই কেবল তারা প্রকাশ করতে বাধ্য হয় এসব অনাচারের বিষয়। বাবাকে, মাকে একটি শিশু কিভাবে বুঝাবে যে, তার সাথে তার সম্মানিত শিক্ষক যৌন আচরণ করছেন? অভিভাবককে কি করে একটি ছোট্ট বাচ্চা বুঝিয়ে বলতে পারে যে, তার মুহতারাম শিক্ষক মহোদয় রাতে তাকে বিছানায় যৌন কাজে বাধ্য করছেন? একটি শিশুর যৌন বিষয়ে জ্ঞানই বা কতটুকু? সংকোচ, দ্বিধা, জড়তা, ভয়, শঙ্কা, বেত্রাঘাত, ধমকি, রক্তচক্ষু, হুমকি, শিকল পড়ানোর ভীতি, সর্বোপরি বে-আদবির ভয়- সব কিছুকে উপেক্ষা করে ক'জন শিশু কিশোর এসব ঘটনা বাবা, মাসহ অভিভাবকদের জানাতে সাহসী হয়? ধারণা করা কঠিন নয় যে, এই সংখ্যাটা খুবই কম। কিন্তু এই খুবই কম হওয়ার কথা থাকলেও এত কিছুর পরেও এসব ঘটনা দুর্ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদ কিন্তু একেবারে নগন্য নয়। প্রায়শই এসব সংবাদ প্রকাশ পায়। অনিচ্ছা স্বত্তেও তা আমাদের দেখতেও হয়। এসবের থেকে আমাদের শিশুদের বাঁচানোর উপায় কি? বলাৎকারকারী অপরাধ যে বা যিনিই করে থাকুন না কেন, তার পরিচয় একটাই- তিনি একজন বলাৎকারকারী। ইমাম, মুহতামিম, হাফেজ, শিক্ষক- পরিচয় তার যা-ই হোক না কেন, তাকে ধরিয়ে দিন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করুন এই দুরাচারকে। মনে রাখতে হবে, এই ধরণের অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করা আপনার, আমার, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।

দায় এড়ানোর হীন প্রচেষ্টা আর নয়, চাই স্পষ্ট প্রতিবাদ এবং তাৎক্ষনিক প্রতিকারঃ

বস্তুতঃ এ ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা সামনে এলে মাদরাসার দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অনেককেই গতানুগতিক দায় এড়ানোর বাক্য আওড়াতে শোনা যায়- ‘স্কুলেও এসব হয়, মাদরাসার বদনাম বেশি হয়।' কিংবা- 'এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। কার্যতঃ এখন দিন বদলেছে, দয়া করে এসব অনাচারকে 'বিচ্ছিন্ন কোনো' আর বলবেন না। মোটেই এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং, বাস্তবতা এখন আমাদেরকে এমন একটি পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছে যে, দায় এড়ানোর জন্য কপচানো এ জাতীয় দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য এসব অপরাধ এবং সমস্যাকে আরো প্রকট করে তোলে। এগুলো অপরাধ এবং অপরাধীর পক্ষে এক প্রকার সাফাই গাওয়ার শামিল। অতএব, সময়ের দাবি, ইসলামের আদর্শ ধারণকারী ও প্রচারকারী প্রত্যেকের নৈতিক ও ঈমানী দাবি হচ্ছে- কোনো প্রকার ইতস্তত: না করে পরিস্কারভাবে এ ধরণের অনাচারের বিরুদ্ধে প্রত্যেকের মুখ খোলা। রুখে দাঁড়ানো। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে সামনে দাঁড়ানো। অন্যায়কারী আপনার পক্ষের লোক বলে তাকে বাঁচানোর জন্যই যদি হয়ে থাকে আপনার চেষ্টা-প্রচেষ্টা, তাহলে তো বুঝে নিতে হবে, কুরআন সুন্নাহ বর্ণিত ন্যায় ইনসাফের পক্ষের আপনি কেউ নন। আপনি বরং তুচ্ছ স্বার্থবাদী। ক্ষুদ্রতায় আকীর্ণ আপনার ভেতরের অবয়ব তথা অন্তর। ঈমান আপনার মুখে। লেবাসে পোষাকে। বুকে বা হৃদয়ে নয়। আপনার আমলে এবং আচরণে ঈমানের প্রকাশ নেই। বাস্তবায়ন নেই। ইক্কামাতে দ্বীনের আপনি কেউ নন। আপনার কি উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর আপন পুত্রকে শাস্তি প্রদানের বিখ্যাত সেই ঘটনার কথা একবারও মনে পড়ে না? আপনি কি করে প্রিয় নবীজীর কেমন উত্তরসূরী দাবি করেন? আপনি তাঁর কেমন উত্তরসূরী?

পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সংস্কারমূলক কিছু প্রস্তাবনাঃ

অমানবিক প্রহারের অধিকাংশ ঘটনা ঘটে হিফজ মাদরাসাসহ কিছু কওমি মাদরাসায়। এগুলো বন্ধে এবং মাদরাসাগুলোর বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সংস্কারমূলক কিছু প্রস্তাবনা পেশ করছি-

এক. সকল হিফজ, নূরাণি, ইবতেদায়ী, দ্বীনিয়া ও নিচের জামাআতের (কমপক্ষে নাহবেমির জামাআত পর্যন্ত) মাদারাসাকে একটি বোর্ডের অধীনে আনতে হবে এবং উক্ত বোর্ড কর্তৃক নিয়মমাফিক মাদরাসাগুলোর সামগ্রিক অবস্থাদি পর্যবেক্ষন করতে হবে, যাতে সুশৃঙ্খলভাবে পাঠদানসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়টি নিশ্চিত করা সহজ হয়।

দুই. দক্ষ, মানবিক এবং আদর্শ শিক্ষক তৈরির লক্ষ্যে বোর্ড কর্তৃক বিশেষ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করতে হবে এবং এই প্রশিক্ষন সকল শিক্ষকের জন্য বাধ্যতামূলক বা আবশ্যিক নির্ধারণ করতে হবে। এমন বিধি প্রণয়ন করতে হবে, যাতে শিক্ষকগণ উক্ত প্রশিক্ষন গ্রহণে বাধ্য থাকেন।

তিন. বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণের পরেও কোনো শিক্ষক শিশুদের অমানবিক শাস্তি প্রদান কিংবা কোনো শিশু কিশোরের সাথে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হওয়ার মত ঘটনা প্রমাণ হলে তার পক্ষে সাফাই না গেয়ে বরং তাকে তার প্রাপ্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং বাকি জীবনে তিনি যেন আর শিক্ষকতার মত মহান পেশায় আসতে না পারেন সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চার. এক্ষেত্রে অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচানোর লক্ষ্যে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো গাফিলতি প্রমাণিত হয় তাহলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামের কলঙ্কের এমন পথ রুদ্ধ করার জন্য এগুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে।

পাঁচ. সুবহে সাদিক হবার পূর্বে, সেই তাহাজ্জুদের প্রাক্কালে ঘুম থেকে উঠে যায় অধিকাংশ হিফজ মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। রুটিন মাফিক সেই তখন থেকে রাত অবদি, অর্থাৎ, ইশার নামাজ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে একটানা কিছুটা বিরতি দিয়ে দিয়ে (নামাজ আদায়, গোসলাদি ও খাওয়া দাওয়া ইত্যাদিতে ব্যয় করা সময়টুকু বাদে) শুধু একটি সাবজেক্ট (হিফজ) পড়া এবং পড়ানো ছাত্র এবং শিক্ষক উভয়ের জন্যই কঠিন কাজ। এতে ছাত্র-শিক্ষক উভয়ের মাঝেই একঘেয়েমি চলে আসা খুবই স্বাভাবিক। এ কারণে, তাদের ধৈর্য্যচুতি ঘটা কিংবা উত্তেজিত হয়ে যাওয়াও মোটেই অসম্ভব নয়। আর যতটুকু ধারণা করা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশ মারধোরের ঘটনা মূলতঃ ধৈর্য্যচুতির ফলেই ঘটে থাকে। প্রচলিত এই পদ্ধতিতে সংস্কার আনতে হবে। এর ফলে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েরই ধৈর্য্যচুতির আশঙ্কা হ্রাস পাবে এবং এটি শিক্ষার সঠিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে ধরে নেয়া যায়।

ছয়. শিক্ষকদের নিজেদেরসহ পারিবারিক ভরনপোষনসহ যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে, সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে তাদের বেতন ভাতা, বোনাস এবং ছুটিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি নির্ধারণ করতে হবে এবং সঠিকভাবে এসবের বাস্তবায়ন ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সাত. এসব মাদরাসায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষকদের চাকরির নিশ্চয়তা নেই। পান থেকে চুন খসলেই যে কারও চাকরি চলে যেতে পারে। কমিটির লোক, পরিচালক, মুতাওয়াল্লি প্রমুখের ইচ্ছার উপরে নির্ভরশীল অধিকাংশ শিক্ষকের চাকরি। যখন তখন চাকরি চলে যেতে পারে, তো যত দিন পড়াব, ওস্তাদগিরি জাহির করেই পড়িয়ে যাব। মাইরের উপরে ওষুধ নেই- এই নীতি গ্রহণ করে কঁচি কাচাদের প্রতি নিষ্ঠুরতার আচরণে বেপরোয়া হয়ে উঠে অনেকেই নিজের যোগ্যতা ফলাও করার চেষ্টা করেন। সঠিক নীতিমালার আওতায় শিক্ষকদের চাকরি বিধি তৈরি করতে হবে, যাতে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এতে শিক্ষকদের ভেতরে হতাশা এবং অনিশ্চয়তা দূরিভুত হবে এবং এর পরিবর্তে তাদের ভেতরে তৈরি হবে সাহস এবং আত্মবিশ্বাস, চাকরির প্রতি, দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনের প্রতি বৃদ্ধি পাবে ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ।

আট. কথায় কথায় শিক্ষকদের চাকরি হারানোর পাশাপাশি এসব শিক্ষক জীবনের শেষ প্রান্তে এসে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের সময় কিছুই পান না। এদের না কোনো প্রভিডেন্ট ফান্ড থাকে, না কোনো গ্রাচুইটি। সরকারি বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক এবং চাকরিজীবীরা পেনশন পেলেও এদের কোনো পেনশন সিস্টেম নেই। সারা জীবন কুরআন হাদিস পড়ে এবং পড়িয়ে অবশেষে শেষ জীবনে এসে রিক্ত হস্তে ঘরে ফেরা। এই সমস্যার সমাধানে দেশের সকল হিফজ, নূরাণি, ইবতেদায়ী, দ্বীনিয়াও কওমি মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য পেনশন সিস্টেম চালু করতে হবে। এর ফলে তাদের ভেতরে দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতার প্রবনতা তৈরি হবে।

নয়. নিরাপত্তার জন্য হিফজ, নূরাণি, ইবতেদায়ী, দ্বীনিয়াও কওমি মাদরাসাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে অপরাধ মনিটরিং করা সহজ হবে এবং এই ব্যবস্থা কার্যকর করা গেলে আশা করা যায়, অপরাধের সংখ্যা হ্রাস পাবে।

এই ধরণের সংস্কারমূলক আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এসব শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতাগুলো দূর করা সম্ভব।

শেষের প্রার্থনাঃ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নিকট কায়মনোবাক্যে ফরিয়াদ জানাচ্ছি, তিনি আমাদেরকে ঐশী জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করুন। কল্যানের পথে আমাদের সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। শিশুদের প্রতি সকল পর্যায়ে সকল ধরণের নিষ্ঠুরতা পরিহার করে তাদের প্রতি সদয় হয়ে কুরআন হাদিসের দিকনির্দেশনা মোতাবেক তাদেরকে উত্তম শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সত্যিকারের আদর্শ এবং চরিত্রবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আলোকিত সমাজ এবং পৃথিবী বিনির্মানে আমাদের শিশুদের তিনি মঞ্জুর করুন।

নিবন্ধটি প্রণয়নে সহযোগিতা নেয়া হয়েছে যেসব কিতাব ও উৎস থেকে-

এক. কুরআনুল কারিম।
দুই. তাফসীরে জালালাইন।
তিন. সহিহ বুখারি।
চার. সহিহ মুসলিম।
পাঁচ. আবু দাউদ।
ছয়. তিরমিজি।
সাত. নাসায়ী।
আট. ইবনে মাজা।
নয়. মুসনাদে আহমাদ।
দশ. ফাতাওয়ায়ে শামি।
এগারো. ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি।
বারো. সাম্প্রতিক বিভিন্ন অনলাইন পত্র পত্রিকা ও জার্নাল।
তেরো. ইসলামের ইতিহাস।
চৌদ্দ. বিদগ্ধ আলেমে দ্বীন শাইখ আহমাদ উল্লাহ হাফিজাহুল্লাহুর একটি বক্তব্য থেকে কিছু কথা গ্রহণ করা হয়েছে। তাঁর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা।

বিশেষ দ্রষ্টব্য. দেখতে দেখতে কখন যে এতটা পথ হেটেছি, খেয়াল করার অবকাশও হয়তো হয়ে ওঠেনি। এটি যে ৬০০ তম পোস্ট, প্রথমে লক্ষ্য করিনি। যাক, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাআ'লা প্রদত্ত তাওফিকের কারণেই এই ব্লগে এতটা পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছি। সাথে ছিল অন্তঃপ্রাণ অনেক ব্লগারের আন্তরিক উৎসাহ, প্রেরণা আর নির্মোহ ভালোবাসা। প্রিয় সেসব সহযাত্রীদের নামোল্লেখ করতে পারছি না বলে আন্তরিক দুঃখিত! তবে তাদেরসহ সকলের প্রতি ব্লগে ৬০০ তম পোস্ট উপলক্ষে আন্তরিক অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে ব্লগের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা, সহ প্রতিষ্ঠাতা, মাননীয় এডমিনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং হৃদয় নিংড়ানো শুভকামনা। যুগ থেকে যুগান্তরে, কাল থেকে কালান্তরে প্রিয় এই ব্লগ ধরে রাখুক তার অবিরাম, নিষ্কন্টক ও নির্বিঘ্ন পথচলা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:২৬
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×