somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

মৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই!

২৬ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ অন্তর্জাল।

মৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই!

জনৈক কবি কতই না চমৎকার বলেছেন-

মৃত্যু থেকে পালাও কোথায়, মৃত্যু তোমায় লইবে ঘিরি,
যদিও তুমি আকাশ পানে লুকাও সেথায় লাগিয়ে সিড়ি।

আসলেই তাই। মৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই। মৃত্যু সুনিশ্চিত। সুনির্ধারিত। সুসাব্যস্ত। মৃত্যুর ফেরেশতা মালাকুল মাউত। যার দায়িত্বই হচ্ছে মানুষের রূহ কবজ করা। আল্লাহ তাআলা যার মৃত্যু যেখানে সাব্যস্ত করেছেন সেখানেই হবে। এটাই আল্লাহর বিধান। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا ۗ وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الْآخِرَةِ نُؤْتِهِ مِنْهَا ۚ وَسَنَجْزِي الشَّاكِرِينَ

নিশ্চয়ই মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারে না। কেউ পার্থিব পুরস্কারের জন্যে কাজ করলে তাকে তার পুরস্কার ইহকালে দান করবো। আর যদি কেউ পরকালের জন্যে কাজ করে তবে তার পুরস্কার সে পরকালে পাবে। শোকরগোজার বান্দাদের কাজের ফল আমি নিশ্চয়ই দেবো। -সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৫

মৃত্যু নিয়ে বিস্ময়কর একটি ঘটনাঃ

মৃত্যু নিয়ে বিস্ময়কর একটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের সময়ে। সেই ঘটনায় মালাকুল মাউত বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। সে ঘটনাই তুলে ধরছি-

মালাকুল মাউতের বিস্ময়!

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম নিজের এক মন্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। এমন সময় খুব সুন্দর চেহারা ও দামি পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি সুলাইমান আলাইহিস সালামের মজলিশে প্রবেশ করলেন এবং কিছুক্ষণ বসার পর চলে গেলেন। তার যাওয়ার পর মন্ত্রী সুলাইমান আলাইসি সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর নবি! এই মাত্র আপনার কাছে যে লোকটি এসেছিলেন, উনি কে?

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম বললেন, আমার কাছে আসা ব্যক্তি ছিলেন মালাকুল মাউত অর্থাৎ, মৃত্যুর ফেরেশতা।

এ কথা শুনে মন্ত্রীর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল এবং তিনি কাঁপতে শুরু করলেন। আর বললেন যে, হে আল্লাহর নবি! অনুগ্রহ করে আমার জন্য বাতাসকে হুকুম দিন, বাতাস যেন আমাকে হিন্দুস্তানে (সেখান থেকে অনেক দূর) পৌঁছে দেয়। কারণ, আমার জন্য এটি অসম্ভব যে, যেখানে মৃত্যুর ফেরেশতা বসে আছে সেখানে আমি বসে থাকি।

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম মন্ত্রীর আবেদন মঞ্জুর করলেন। মন্ত্রীকে দীর্ঘ দূরত্বে হিন্দুস্তান পৌছে দেয়ার জন্য বাতাসকে নির্দেশ দিলেন। বাতাস পয়গাম্বরের নির্দেশ পালন করে তাকে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌছে দিল।

মন্ত্রী সেখান থেকে হিন্দুস্থান চলে যাওয়ার পর মালাকুল মাউত আবারও সুলাইমান আলাইহিস সালামের দরবারে উপস্থিত হলেন। তিনি হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার মন্ত্রী কোথায়?

মালাকুল মাউতকে জানানো হলো- আপনার ভয়ের কারণে বাতাসের সাহায্যে মন্ত্রীকে (মৃত্যুর নির্ধারিত গন্তব্যে) হিন্দুস্তানে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আসলে এটি ছিল মহান আল্লাহর কুদরত। কারণ, যার মৃত্যু যেখানে লেখা রয়েছে তা সেখানেই হবে।

মালাকুল মাউত বললেন- কিছুক্ষণ আগে যখন আপনার মজলিশে এসে ওই মন্ত্রীকে দেখলাম, তখন আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম। কারণ আল্লাহ তাআলা আমাকে হিন্দুস্থান গিয়ে এ ব্যক্তির রূহ কবজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ আপনার এখানে এসে দেখি সে কি না আপনার মজলিসে বসা!

সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- হিন্দুস্থান এখান থেকে হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। যেখানে সহজে যাওয়াও সম্ভব নয়। অথচ আল্লাহর জন্য তা কতই না সহজ! আল্লাহ যা চান তা করতে সক্ষম। তিনি সব সময় সবকিছুর উপরে পূর্ণ ক্ষমতাবান। সুবহানাল্লাহ!

আল্লাহর কুদরত কত মহান! তার কুদরতের প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের অপরিহার্য দাবি। কুরআনের এ আয়াত মুমিন মুসলমানের জন্য সতর্কতা অবলম্বন ও তাঁর কুদরতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের অনুপ্রেরণা লাভের অন্যতম মাধ্যম। তাহলো-

أَيْنَمَا تَكُونُواْ يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ وَإِن تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُواْ هَـذِهِ مِنْ عِندِ اللّهِ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُولُواْ هَـذِهِ مِنْ عِندِكَ قُلْ كُلًّ مِّنْ عِندِ اللّهِ فَمَا لِهَـؤُلاء الْقَوْمِ لاَ يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًا

তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। বস্তুত তাদের কোনো কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোনো অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে। বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোনো কথা বুঝতে চেষ্টা করে না।’ -সুরা নিসা : আয়াত ৭৮

আল্লাহ মহান। তিনি সব কিছু থেকে পবিত্র। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি চাইলে সবই সম্ভব। যে ব্যক্তি আমার (মালাকুল মাউতের) ভয়ে বাতাসের উপর নির্ভর করে এখান থেকে হাজার মাইল দূরে সুদূর হিন্দুস্তান চলে গেল। আমি সেখানে তার রূহ কবজ করতে গিয়ে তাকে সেখানে পেয়ে যাই। আর সেখান থেকে তার রূহ কবজ করে আবার আপনার কাছে ফিরে আসলাম।

এ কারণে এ বিশ্বাস রাখা জরুরি যে, যখন যার মৃত্যু আসবে, সে যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, যেখানেই থাকুক না কেন, তাকে তখন এক কদম সামনে যেতে দেয়া হবে না আবার পেছনেও যেতে দেয়া হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ فَإِذَا جَاء أَجَلُهُمْ لاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ

‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি (মৃত্যুর) মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ (মৃত্যু) এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহুর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে।’ -সুরা আরাফ : আয়াত ৩৪

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মৃত্যুর আগেই নিজেদের খাঁটি তাওবাহ করার পাশাপাশি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে নেয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথে চলার মাধ্যমে মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উপর যথাযথ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:০০
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×