somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি -সংশোধিত পুনঃপোস্ট

১৭ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি -সংশোধিত পুনঃপোস্ট

ছবি কৃতজ্ঞতা, অন্তর্জাল।

প্রাককথনঃ

দেখতে দেখতে পবিত্র মাহে রমজান ২০২৩ আমাদের দোড়গোড়ায় এসে উপস্থিত। রমজান, মুমিনের জীবনের শ্রেষ্ঠতম আনন্দের ক্ষন, অফুরন্ত প্রাপ্তির মাস, অকল্পনীয় রহমতলাভের নৈস্বর্গিক মুহূর্তরাজি। রমজান এলে মুমিনের হৃদয়বাগে জেগে ওঠে আনন্দের হিল্লোল, অন্তরে ভেসে ওঠে সিয়াম সাধনার আলোকোদ্ভাসিত এক নূরাণি পরিবেশ। সারা দিনমান উপোস-অনাহারী থাকার পরে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতারের অনাবিল আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া- এ যেন জান্নাতি মিলনমেলারই নয়নজুড়ানো অপরূপ এক দৃশ্য, এর তৃপ্তি পরিতৃপ্তি ভাষায় প্রকাশ করা যায় কি? এমনিকরেই রাতের প্রথমার্ধে তারাবীহ নামাজ শেষে অপরিসীম তৃপ্তির বাধভাঙ্গা নিদ্রা শেষে রাতের শেষ প্রহরে সাহরিতে জেগে ওঠা- পবিত্র কুরআন নাযিলের পবিত্রতম এ মাসটিজুড়ে এ এক অন্যরকম ভালোলাগা আর ভালোবাসারই যেন গল্প। ফিরে ফিরে আসে, ঘুরে ঘুরে আসে। মুমিনের জীবনে। বছর বছর। কিন্তু আবেদন হারায় না। রমজানের সাথে হৃদ্যতা হ্রাস পায় না। বরং। বেড়েই চলে। অধিক। আরও অধিক। গত বছরের তুলনায়। এই বছরটিতে। রমজান প্রাপ্তির প্রত্যাশা। আরও বৃদ্ধি পায়। আরও। আরও।

এক: অনেকের কাছে এই বিষয়টি গুরুত্বহীন মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এমন একটি সময় আমরা অতিবাহিত করছি যখন রমজান সম্পর্কে বহু মানুষের ধ্যান ধারণা আগেকার দিনের মত নেই। তারা এই মাসকে খাবার-দাবার, পান-পানীয়, মিষ্টি-মিষ্টান্ন, রাতজাগা ও স্যাটেলাইট চ্যানেল উপভোগ করার মৌসুম বানিয়ে ফেলেছে। এর জন্য তারা রমজান মাসের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে; এই আশংকায় যে- কিছু খাদ্য দ্রব্য কেনা বাদ পড়ে যেতে পারে অথবা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এভাবে তারা খাদ্যদ্রব্য কেনা, হরেক রকম পানীয় প্রস্তুত করা এবং কী কী অনুষ্ঠান দেখবে, আর কী কী দেখবে না সেটা জানার জন্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর প্রোগ্রামসূচী অনুসন্ধান করার মাধ্যমে এর জন্য প্রস্তুতি নেয়। অথচ রমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে সত্যিকার অর্থেই তারা অজ্ঞ। তারা এ মাসকে ইবাদত ও তাকওয়ার পরিবর্তে উদরপূর্তি, চক্ষুবিলাস এবং আনন্দ উল্লাসের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে।

দুই: পক্ষান্তরে অপরদিকে কিছু মানুষ রমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতন। তারা রজব এবং শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে থাকে। বস্তুতঃ মুমিন হৃদয়ে রমজানপ্রাপ্তির অনিঃশেষ প্রত্যাশারা ডানা মেলতে থাকে রজবের স্নিগ্ধ একফালি বাঁকা চাঁদ পশ্চিমাকাশে উদিত হওয়ার পর হতেই। তারা মন ও মননে তৈরি করে নিতে থাকেন নিজেদের এবং পবিত্র মাহে রমজানকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। স্বপ্ন দেখতে থাকেন, প্রস্তুতি নিতে থাকেন, কিভাবে অতিবাহিত করবেন এই মোবারক মাসের ততোধিক মোবারক সময়গুলোকে।

পবিত্র মাহে রমজানের জন্য প্রস্তুতির কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হল:

১. ইখলাছপূর্ণ ইবাদতের দৃঢ় সংকল্প করা এবং একনিষ্ঠভাবে তাওবা করাঃ

যে কোন কাজে সফলতার পূর্বশর্ত হ’ল সেই বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প করা। আর ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য খালেছ নিয়তের বিকল্প নেই। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، ‘নিশ্চয়ই সকল কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল’। -বুখারী হা/১

তওবা করা সবসময় ওয়াজিব। তবে ব্যক্তি যেহেতু এক মহান মাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাই অনতিবিলম্বে নিজের মাঝে ও স্বীয় রবের মাঝে যে গুনাহগুলো রয়েছে এবং নিজের মাঝে ও অন্য মানুষের মাঝে অধিকার ক্ষুণ্ণের যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো থেকে দ্রুত তাওবা করে নেয়া উচিত। যাতে করে সে পূত-পবিত্র মন ও প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে এ মুবারক মাসে প্রবেশ করতে পারে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে মশগুল হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا تُوبُوْا إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَصُوْحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ،

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে খালেছ তওবা কর। আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপ সমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাত সমূহে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত’। -তাহরীম ৬৬/৮

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

“আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা কর; যাতে করে সফলকাম হতে পার।” -২৪ আন-নূর : ৩১

ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

( يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّي أَتُوبُ فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ ) رواه مسلم ( 2702 )

“হে লোকেরা, আপনারা আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা করুন। আমি প্রতিদিন তাঁর কাছে ১০০ বার তাওবা করি।” -হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম (২৭০২)

তিনি আরো বলেন,

وَاللهِ إِنِّى لأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِيْنَ مَرَّةً.

‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবাহ করে থাকি’। -বুখারী হা/৬৩০৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৮১৬; মিশকাত হা/২৩২৩

রাসূল (ছাঃ)-এর পূর্বাপর সব গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। অথচ এরপরও তিনি প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ তওবা করেন। সুতরাং আমাদেরকেও গোনাহ থেকে অধিকহারে তওবা করা আবশ্যক।

২. অধিক পরিমানে দোআর ইস্তেমাল করা:

কিছু কিছু সলফে সালেহীন হতে বর্ণিত আছে যে, তারা ৬ মাস আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন যেন আল্লাহ তাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছান। রমজানের পর পাঁচ মাস দোয়া করতেন যেন আল্লাহ তাঁদের আমলগুলো কবুল করে নেন। তাই একজন মুসলিম তার রবের কাছে বিনয়াবনতভাবে দোয়া করবে যেন আল্লাহ তাআলা তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রেখে, উত্তম দ্বীনদারির সাথে রমজান পর্যন্ত হায়াত দেন। সে আরো দোয়া করবে আল্লাহ যেন তাকে নেক আমলের ক্ষেত্রে সাহায্য করেন। আরো দোয়া করবে আল্লাহ যেন তার আমলগুলো কবুল করে নেন। দুআর আদেশ স্বয়ং আল্লাহর-

ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ.

তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। -সূরা মুমিন (৪০) : ৬০

হাদীস শরীফে বলা হয়েছে-

الدّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ

দুআই ইবাদত। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৮১

অর্থাৎ নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতের মতো দুআও একটি ইবাদত। তাই আল্লাহ্র কাছে কোনো কিছু চেয়ে দুআ করার পর সে দুআ কবুল হলে তো ভালো। কিন্তু যদি কবুল নাও হয়, তাহলেও এর সওয়াব পাওয়া যাবে। যেহেতু দুআ একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। এর সওয়াব ও প্রতিদানের সঙ্গে তা কবুল হওয়া বা না হওয়ার কোনোই সম্পর্ক নেই।

দুআ তো কত উদ্দেশ্যেই হতে পারে! আল্লাহ্র বান্দা আল্লাহ্র কাছে তার কৃত গুনাহ থেকে ক্ষমা চেয়ে দুআ করতে পারে, তার সংকট ও পেরেশানি থেকে মুক্তি চেয়ে দুআ করতে পারে, তার ঋণ ও অসুস্থতা দূর করে দেয়ার জন্যে দুআ করতে পারে, যে কোনো বৈধ প্রয়োজন পূরণের জন্যেও দুআ করতে পারে। আল্লাহ্র দয়া ও অনুগ্রহ এতটাই উন্মুক্ত, হাদীসের ভাষ্য অনুসারে তিনি প্রতি রাতেই ডেকে ডেকে বলতে থাকেন- কে আছে প্রয়োজন প্রার্থনাকারী, কে আছে গুনাহ থেকে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী...। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

فَإِذَا مَضَى ثُلُثُ اللَّيْلِ، أَوْ نِصْفُ اللَّيْلِ، نَزَلَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَقَالَ: هَلْ مِنْ سَائِلٍ فَأُعْطِيَهُ؟ هَلْ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَهُ؟ هَلْ مِنْ تَائِبٍ فَأَتُوبَ عَلَيْهِ؟ هَلْ مِنْ دَاعٍ فَأُجِيبَهُ؟

রাতের যখন এক তৃতীয়াংশ কিংবা অর্ধেক কেটে যায়, তখন আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে এসে বলতে থাকেন- কোনো প্রয়োজন প্রার্থনাকারী আছে কি, আমি তাকে দান করব; কোনো ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছে কি, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব; কোনো তওবাকারী আছে কি, আমি তার তওবা কবুল করব; দুআ করার মতো কেউ আছে কি, আমি তার দুআয় সাড়া দেব? -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৫৮৯

মুমিন বান্দা যখন আল্লাহকে ডাকে তখন সে সরাসরি আল্লাহ তাআলার সঙ্গেই কথা বলে। মহামহিম প্রভুর সঙ্গে একান্তে এ কথোপকথনের তৃপ্তিই আলাদা! দুআর মধ্য দিয়ে তাই আল্লাহ্র সঙ্গে বান্দার সেতুবন্ধন রচিত হয়। দুআর পর যদি প্রার্থিত বিষয় অর্জিত হয়ে যায় তাহলে তো হলোই, আর বাহ্যত যদি তা নাও হয় তবে পরম দয়াময় প্রভুর সঙ্গে আবারও একান্তে কথোপকথনের সুযোগ পাওয়া যাবে। ফলে দুআয় আসলেই ব্যর্থতা বলে কিছু নেই।

আল্লাহ তাআলার মহানুভবতা কি বর্ণনা করে শেষ করা যাবে! তাঁর কাছে যখন বান্দা প্রার্থনার ঝাঁপি মেলে ধরে, তিনি মোটেও বিরক্ত হন না। যে কেউ যত বেশি ইচ্ছা চাইতে পারে। তাঁর কাছে প্রার্থনা করায়ও কোনো সীমারেখা নেই, তাঁর দানেও কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তিনি যে উল্টো ডাকতে থাকেন- প্রার্থনাকারী কেউ আছে কি, আমি তার প্রার্থনা কবুল করব! কেউ যদি কোনো মানুষের কাছে কিছু চায়, তাহলে সে বিরক্ত হয়, নাখোশ হয়। কিংবা প্রথম এক-দুই বার খুশিমনে দিলেও পরে তার অবস্থা পাল্টে যায়। কিন্তু আল্লাহ্র কাছে কিছু না চাইলে বরং তিনি অসন্তুষ্ট হন। বান্দা তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে, চাইবে। আর তিনি বান্দার প্রার্থনা শুনবেন। সে প্রার্থনায় সাড়া দেবেন। এতেই তিনি সন্তুষ্ট। বরং তাঁর কাছে যে বান্দা যত বেশি চায় তার ওপর তিনি তত বেশি খুশি হন। হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللهِ تَعَالَى مِنَ الدّعَاءِ.

আল্লাহর কাছে দুআর চেয়ে প্রিয় কোনো কিছু নেই। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৩৭০

আরেক হাদীসে আছে-

إِنّهُ مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ.

যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার ওপর অসন্তুষ্ট হন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৩৭৩

আরেকটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

سَلُوا اللهَ مِنْ فَضْلِهِ، فَإِنّ اللهَ عَزّ وَجَلّ يُحِبّ أَنْ يُسْأَلَ.

তোমরা আল্লাহ্র কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। কেননা তিনি তাঁর কাছে কিছু চাওয়াকে পছন্দ করেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৭১

৩. এই মহান মাসের আসন্ন আগমনে খুশি হওয়া:

রমজান মাস পাওয়াটা একজন মুসলিমের প্রতি আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। যেহেতু রমজান কল্যাণের মৌসুম। যে সময় জান্নাতের দরজাগুলো উন্মুক্ত রাখা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয়। রমজান হচ্ছে- কুরআনের মাস, সত্য মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য রচনাকারী জিহাদি অভিযানগুলোর মাস। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

( قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ ) [10 يونس : 58]

“বলুন, এটি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক ।এটি তারা যা সঞ্চয় করে রাখে তা থেকে উত্তম।” -১০ ইঊনুস : ৫৮

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ بِفِطْرِهِ وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ،

ছিয়াম পালনকারীর জন্য দু’টি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে, যখন সে আনন্দিত হয়। যখন ইফতার করে তখন সে আনন্দিত হয়। আর যখন সে তার প্রভুর সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তার ছওমের কারণে আনন্দিত হবে’। -বুখারী হা/১৯০৪; মুসলিম হা/১১৫১; মিশকাত হা/১৯৫৯

৪. কোন ওয়াজিব রোজা নিজ দায়িত্বে থেকে থাকলে তা হতে মুক্ত হওয়া:

আবু সালামাহ্‌ হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:

كَانَ يَكُونُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ فَمَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أَقْضِيَهُ إِلا فِي شَعْبَانَ . رواه البخاري ( 1849 ) ومسلم ( 1146 )

“আমার উপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকলে শা‘বান মাসে ছাড়া আমি তা আদায় করতে পারতাম না।” -হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী (১৮৪৯) ও ইমাম মুসলিম (১১৪৬)

হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আয়েশা (রাঃ) এর শাবান মাসে কাযা রোজা আদায় পালনে সচেষ্ট হওয়া থেকে বিধান গ্রহণ করা যায় যে, রমজানের কাযা রোজা পরবর্তী রমজান আসার আগেই আদায় করে নিতে হবে।” -ফাতহুল বারী (৪/১৯১)

৫. জ্ঞানকে শানিত করে নেয়াঃ

রমজানের মাসয়ালা-মাসায়েল জেনে নেয়া এবং ফজিলত অবগত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্ত্রী-পুত্রসহ পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে বসে রমজানের মাসয়ালা-মাসায়েল আলোচনা করা, রমজান সম্পর্কিত বিবিধ মাসআলা জেনে নেওয়া উচিত। যাতে রমজানের রোজা ত্রুটিপূর্ণ হওয়া থেকে রক্ষা করা সহজ হয়। সেই সাথে প্রাসঙ্গিক মাসআলা মাসায়েল জ্ঞাত থাকার ফলে নানা অসুবিধা ও কষ্ট থেকেও বাঁচা যায়। যেমন সফরকালে রোজা ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ, ভুল বশত খেলে রোজা ভঙ্গ না হওয়া, প্রবল ঘুমের কারণে সাহারী খেতে না পারলেও রোজা সিদ্ধ হওয়া এবং স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভঙ্গ না হওয়া ইত্যাদি মাসআলা জানা থাকলে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একইসাথে ছোটদেরকেও রোজা পালনে উৎসাহ প্রদান করা।

৬. পূর্ববর্তী রমজানের ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠা ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণের চেষ্টা করাঃ

যে কাজগুলো রমজান মাসে একজন মুসলমানের ইবাদত বন্দেগীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে সেগুলো দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করা। পাশাপাশি, রমজানের ফযীলত লাভ করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। ইবাদতের মাধ্যমে রমজানে নিজেকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করতে না পারলে তা হবে চরম ব্যর্থতা। হযরত মালেক ইবনুল হুওয়াইরিছ (রাঃ) বলেন,

صَعِدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمِنْبَرَ فَلَمَّا رَقِيَ عَتَبَةً قَالَ آمِينَ ثُمَّ رَقِيَ عَتَبَةً أُخْرَى فقَالَ آمِينَ ثُمَّ رَقِيَ عَتَبَةً ثَالِثَةً فقَالَ آمِينَ ثُمَّ قَالَ أَتَانِي جِبْرِيلُ فقَالَ يَا مُحَمَّدُ مَنْ أَدْرَكَ رَمَضَانَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ فَأَبْعَدَهُ اللهُ قُلْتُ آمِينَ قَالَ وَمَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ أَوْ أَحَدَهُمَا فَدَخَلَ النَّارَ فَأَبْعَدَهُ اللهُ قُلْتُ آمِينَ فقَالَ وَمَنْ ذُكِرْتَ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْكَ فَأَبْعَدَهُ اللهُ قُلْ آمِينَ فَقُلْتُ آمِينَ-

‘রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতঃপর ১ম সিঁড়িতে পা দিয়ে বললেন, আমীন! ২য় সিঁড়িতে পা দিয়ে বললেন, আমীন! এরপর ৩য় সিঁড়িতে পা দিয়ে বললেন, আমীন! লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে তিন সিঁড়িতে তিন বার ‘আমীন’ বলতে শুনলাম। তিনি বললেন, আমি যখন ১ম সিঁড়িতে উঠলাম, তখন জিবরাঈল আমিন আমাকে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল। অতঃপর মাস শেষ হয়ে গেল। কিন্তু তাকে ক্ষমা করা হ’ল না, সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। আমি বললাম, আমীন’! ২য় সিঁড়িতে উঠলে জিবরাঈল আমিন বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বা তাদের একজনকে পেল। অথচ সে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করল না, সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। আমি বললাম, আমীন! অতঃপর ৩য় সিঁড়িতে পা দিলে তিনি বললেন, যার নিকটে তোমার কথা বলা হ’ল, অথচ সে তোমার উপরে দরূদ পাঠ করল না। অতঃপর সে মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। আপনি বলুন, আমীন। আমি বললাম, আমীন’! -ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪০৯, ছহীহ লিগাইরিহী

অন্যত্র তিনি বলেন,

أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِيْنِ لِلَّهِ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ،

‘তোমাদের জন্য রমজানের বরকতময় মাস এসেছে। এ মাসে ছিয়াম রাখা আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করে দিয়েছেন। এ মাসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের সব দরজা। এ মাসে বিদ্রোহী শয়তানগুলোকে বন্দি করা হয়। এ মাসে একটি রাত আছে যা হাযার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হ’ল, সে অবশ্যই প্রত্যেক কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত রইল’। -নাসাঈ হা/২১০৬; মিশকাত হা/১৯৬২; ছহীহ আত-তারগীব হা/৯৯৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৫

সুতরাং কল্যাণ বঞ্চিত না হয়ে এবং রামাযানে নিজেকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করতে না পারার ব্যর্থতা ঘোচাতে রামাযানে সাধ্যমত ইবাদত-বন্দেগী, যিকর-আযকার ও তাসবীহ, তেলাওয়াতের মাধ্যমে পূর্ণ নেকীর হকদার হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে।

৭. নফস ও শয়তানের কু-মন্ত্রণা হ’তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখাঃ

মানুষের অন্তর মন্দপ্রবণ। আল্লাহ বলেন,إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوْءِ، ‘নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দপ্রবণ’ (ইউসুফ ১২/৫৩)। অপরদিকে শয়তান সর্বদা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ব্যস্ত রয়েছে। আল্লাহ শয়তানের ভাষ্য উল্লেখ করে বলেন,فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ ‘আপনার ইয্যতের কসম! আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করব’ (ছোয়াদ ৩৮/৮২)। সুতরাং ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্তরায় হ’ল মানুষের নফসে আম্মারা ও শয়তানের কু-মন্ত্রণা। এই মাসে যদিও শয়তান শৃংখলিত থাকে তবুও ষড়রিপুর তাড়নায় মানুষ অন্যায় ও পাপ করে বসে। অনেক সময় নিজেকে ইবাদতে মশগূল রাখতে পারে না। তাই এই বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন হয়ে তা মোকাবেলা করতে হবে।

৮. উপকারী গ্রন্থ অধ্যয়নঃ

যে বইগুলো ঘরে পড়া যায় এমন কিছু বই সংগ্রহ করা অথবা মসজিদের ইমামকে হাদিয়া দেয়া যেন তিনি মানুষকে পড়ে শুনাতে পারেন।

৯. রমজানের রোজার প্রস্তুতি স্বরূপ শাবান মাসে কিছু রোজা রাখা:

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ لا يُفْطِرُ وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لا يَصُومُ ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلا رَمَضَانَ ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ . رواه البخاري ( 1868 ) ومسلم ( 1156 )

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে সিয়াম পালন করতেন যে, আমরা বলতাম–তিনি আর সিয়াম ভঙ্গ করবেন না এবং এমনভাবে সিয়াম ভঙ্গ করতেন যে আমরা বলতাম–তিনি আর সিয়াম পালন করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রমজান ছাড়া অন্য কোন মাসের গোটা অংশ রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে অধিক সিয়াম পালন করতে দেখিনি।” -এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (১৮৬৮) ও মুসলিম (১১৫৬)

عَنْ أُسَامَة بْن زَيْدٍ قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ لَمْ أَرَكَ تَصُومُ شَهْرًا مِنْ الشُّهُورِ مَا تَصُومُ مِنْ شَعْبَانَ ، قَالَ : ( ذَلِكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَبٍ وَرَمَضَانَ ، وَهُوَ شَهْرٌ تُرْفَعُ فِيهِ الأَعْمَالُ إِلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ فَأُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ ) . رواه النسائي ( 2357 ) وحسَّنه الألباني في " صحيح النسائي "

উসামাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: “আমি বললাম : ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি আপনাকে শাবান মাসের মত অন্য কোন মাসে এত রোজা পালন করতে দেখিনি। তখন তিনি বললেন:“এটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস। এ মাসের ব্যাপারে মানুষ গাফেল। অথচ এ মাসে বান্দাদের আমল রাব্বুল আলামীনের কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার আমল উত্তোলন করা হোক।” -হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম নাসা’ঈ (২৩৫৭) এবং আলবানী একে ‘সহীহুননাসা’ঈ’গ্রন্থে হাসান বলেছেন।

এ হাদিসে শাবান মাসে রোজা পালনের হেকমত (গুঢ় রহস্য) বর্ণনা করা হয়েছে। সে হেকমত হচ্ছে- এ মাসে বান্দার আমলগুলো উত্তোলন করা হয়। জনৈক আলেম আরো একটি হেকমত উল্লেখ করেছেন সেটা হচ্ছে- শাবান মাসের রোজা যেন ফরজ নামাজের আগে সুন্নত নামাজের তুল্য। এই্ সুন্নতের মাধ্যমে ফরজ পালনের জন্য আত্মাকে প্রস্তুত করা হয় এবং ফরজ পালনের জন্য প্রেরণা তৈরী করা হয়। একই হেকমত রমজানের পূর্বে শাবানের রোজার ক্ষেত্রেও বলা যেতে পারে।

১০. রমজান ইবাদতের মওসুমঃ

কুরআন তেলাওয়াত করা সালামাহ ইবনে কুহাইল বলেছেন:“শাবান মাসকে তেলাওয়াতকারীদের মাস বলা হত।”শাবান মাস শুরু হলে আমর ইবনে কায়েস তাঁর দোকান বন্ধ রাখতেন এবং কুরআন তিলাওয়াতের জন্য অবসর নিতেন।

আবুবকর আল-বালখী বলেছেন:“রজব মাস হল- বীজ বপনের মাস। শাবান মাস হল- ক্ষেতে সেচ প্রদানের মাস এবং রমজান মাস হল-ফসল তোলার মাস। ”তিনি আরও বলেছেন: “রজব মাসের উদাহরণ হল- বাতাসের ন্যায়, শাবান মাসের উদাহরণ হল- মেঘের ন্যায়, রমজান মাসের উদাহরণ হল- বৃষ্টির ন্যায়। তাই যে ব্যক্তি রজব মাসে বীজ বপন করল না, শাবান মাসে সেচ প্রদান করল না, সে কিভাবে রমজান মাসে ফসল তুলতে চাইতে পারে?”

এখন তো রজব মাস গত হয়ে গেছে। আপনি যদি রমজান মাস পেতে চান তাহলে শাবান মাসের জন্য আপনার কি পরিকল্পনা? এই হল এই মুবারক মাসে আপনার নবী ও উম্মতের পূর্ববর্তী প্রজন্মের অবস্থা। এই সমস্ত আমল ও মর্যাদাপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে আপনার অবস্থান কী হবে!!

১১. মাহে রমজানের সময়কাল জানুন এবং দিনগুলো গণনা্ করতে থাকুনঃ

একজন মুসলিম মহা মর্যাদাপূর্ণ মাহে রমজানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। তিনি দিন গুনতে থাকেন কবে আসবে মাহে রমজান? কবে থেকে রোজা রাখব; মুসলিমদের কাছে মাহে রমজানের আগমন ঠিক এরকম, যেন: কারো আপনজন দূর বিদেশ থেকে প্লেনে করে বাড়ি ফিরছেন; এ দিকে বিমান বন্দরে এবং বাড়িতে তার স্বজনরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কখন এসে পৌঁছুবে প্লেন? কখন তিনি প্লেন থেকে নেমে আসবেন? কখন পৌছাবেন বাড়ি। মুসলিমদের কাছে মাহে রমজানের আগমনের অপেক্ষাটাও হয়ে থাকে এরকম ব্যাকুলতা নিয়ে। রমজান মাস আমাদের আপনজনের মতােই। সুতরাং ভালোভাবে জেনে রাখুন, আমরা যে ক্যালেন্ডার অনুসরণ করি সেই ক্যালেন্ডার অনুসারে কবে শুরু হতে যাচ্ছে রমজান মাস? অতঃপর দিন গণনা শুরু করুন।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের খুব হিসাব করতেন। এছাড়া অন্য কোনো মাস এত হিসাব করতেন না। অতঃপর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। যদি মেঘলার কারণে চাঁদ গোপন থাকত তবে শাবান মাস ৩০ দিনে গণনা করতেন, অতঃপর রোজা রাখতেন। -সুনানু আবি দাউদ : ২৩২৭

১২. রমযানে কোথায় অবস্থান করবেন পারলে তা আগেই স্থির করে নিনঃ

রমজানে আপনি কোথায় অবস্থান করবেন? কর্মস্থলে? গ্রামের বাড়িতে নাকি সফর করবেন বাইরে? অবস্থানের স্থান বা এলাকা অনুযায়ী আপনার রমযানের কর্মসূচি প্রণয়ন করুন এবং সেভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিন।

১৩. সিয়াম পালনে পরিবারের সদস্যদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করুনঃ

আপনার নিজের মানসিক প্রস্তুতির সাথে সাথে আপনার পরিবারের সদস্যদের, নিকটাত্মীয়দের এবং অধীনস্থদেরও মাহে রমযানকে স্বাগত জানানোর এবং পুরো মাস সিয়াম পালনের জন্য মানসিকভাবে সচেতন ও প্রস্তুত করতে থাকুন। এ উদ্দেশ্যে পারিবারিক বৈঠক করুন। পরামর্শ করুন। মাহে রমজান সঠিকভাবে পালনের পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কিছু কিছু করে দায়িত্ব বন্টন করুন।

১৪. আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও সমাজ-বন্ধুদের সচেতন করুনঃ

সবাইকে বলুন রমজান আসছে, রােযা এসে যাচ্ছে, রােযার আর মাত্র এতাে দিন বাকি। এভাবে আপনার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, ও সমাজবন্ধুদের মাহে রমযানের সিয়াম পালনের ব্যাপারে পূর্ব থেকে সচেতন করতে থাকুন। লােকদের সিয়াম শুরুর তারিখ জানানাের মধ্যেও রয়েছে নেকি এবং সওয়াব।

১৫. অফিস-আদালত ও কাজ-কর্মের সময় পুনঃনির্ধারণ করুনঃ

একজন মুসলিমকে রমযান মাসে তার দৈনন্দিন জীবন ধারায় কিছু পরিবর্তন আনতে হয়, কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনতে হয়, সময়সূচিতে পরিবর্তন আনতে হয়। তাকে পরিবর্তন আনতে হয়, তার নিদ্রা ও জাগ্রতর সময়সূচিতে, তার বিশ্রাম ও পানাহারের সময়সূচিতে, তার অফিস আদালতের সময় সূচিতে, তার কার্যক্রমের সূচিতে, তার আবাস থেকে বের হওয়া এবং আবাসে ফিরে আসার সময়সূচিতে। তা ছাড়া এ মাসে তার কর্মসূচিতে যোগ করতে হয় কিছু কিছু নতুন কার্যক্রম। এ মাসে সে কমিয়ে আনে তার জাগতিক কার্যক্রম আর বাড়িয়ে দেয় তার ইবাদত-বন্দেগি ও পুণ্য কর্মের ফলগুধারা। এ বিষয়গুলো সামনে রেখে আপনি আপনার গতানুগতিক জীবনধারার পরিবর্তন ও সময়সূচি রমজান আসার পূর্বেই পুনঃনির্ধারণ করে নিন।

১৬. প্রয়োজনীয় আর্থিক প্রস্তুতি গ্রহণ করুনঃ

রমযান শুরু হবার পূর্বেই এ মাসের জন্য আর্থিক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। কয়েকটি কারণে এ মাসে একজন মুসলিমের অর্থ ব্যয় বেড়ে যায়। যেমন: ১. রোজাদারদের ইফতার করানোর কারণে। ২. বেশি বেশি দান-সদকা করার কারণে। ৩. মজুতদার ও অসৎ ব্যবসায়ীদের দ্বারা দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে। ৪. অনেকেই এ মাসে বার্ষিক যাকাত প্রদান করেন। ৫. ঈদুল ফিতর উদযাপনকে সামনে রেখে। ৬. ফিতরা আদায়ের কারণে। সুতরাং এসব খাতে এবং কারণে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয়ের জন্য আপনিও প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।

১৭. বাজার স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত রাখতে উদ্যোগ নিনঃ

নীতি নৈতিকতার দিক থেকে আমাদের সমাজ পুরোপুরি সৎ ও স্বচ্ছ না হবার কারণে দেখা যায়, রমজান মাসেও খাদ্যে ভেজাল, মাপ জোপে হেরফের, ফটকা বাজারি, প্রতারণা ও মূল্য বৃদ্ধির অদম্য প্রবণতা বিদ্যমান থাকে। ফলে রোজাদার জনগণকে প্রচুর ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বাজার স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত রাখার ক্ষেত্রে একজন সচেতন নাগরিক এবং একজন মুসলিম হিসেবে আপনারও রয়েছে বিরাট দায়িত্ব। আপনিও হয়তাে একজন ব্যবসায়ী, আইনজীবী, ডাক্তার, সরকারি চাকরিজীবী, প্রাইভেট চাকরিজীবী, পুলিশ, সেনা সদস্য, কারখানার মালিক, কারিগর, শিক্ষক, ছাত্র, কিংবা কৃষিজীবি বা অন্য কোনো কর্মজীবী। বাজার স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত রাখার ক্ষেত্রে আপনিও ভূমিকা পালন করুন। আপনি নিজের অবস্থানে নিজে স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত থাকুন। অন্যদেরকেও স্বচ্ছতার ব্যাপারে সচেতন করুন, উৎসাহিত করুন, উদ্বুদ্ধ করুন। রমযান শুরু হবার আগে থেকেই একাজগুলাে করুন।

১৮. সিয়াম পালনের উপযোগী পবিত্র পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিনঃ

মাহে রমজানের বিশেষ ও মহোত্তম পবিত্র মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে রমজান শুরু হবার আগে থেকেই সমাজে মানসিক ও বাস্তব পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করুন। এ উদ্দেশ্যে আগে থেকেই ১. জনগণকে সচেতন করতে থাকুন। ২. মসজিদের খতিব ও ইমাম সাহেবগণ খুতবায় এবং নামাযের আগে পরে আলােচনা করুন। ৩. ঘরে, মসজিদে, অফিস আদালতে কুরআন ও হাদিসের সিয়াম সংক্রান্ত আয়াত ও হাদিস গুলোর ব্যাপক পাঠ ও আলোচনা করুন। ৪. রমযানের ক্যালেন্ডার মুদ্রণ ও বিতরণ করুন। ৫. লিফলেট ও বুকলেট ছেপে বিতরণ করুন।

১৯. মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের সুবিধা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করুনঃ

রমযান মাসে মুসলিমগণ মহান আল্লাহ প্রদত্ত অবারিত রহমত, মাগফিরাত ও নেকি হাসিলের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন; পুরুষগণ দিনের এবং রাতের নামাজে ব্যাপকহারে মসজিদে আগমন করেন; আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে, শহরে কম হলেও বিশেষ করে মফস্বলের মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।

সুতরাং ব্যক্তিগত ও যৌথ উদ্যোগে মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ০১. স্থান সংকুলান না হলে স্থান সম্প্রসারণ করুন। ০২. ওযু খানার সুব্যবস্থা করুন এবং অযুর পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখুন। ০৩. প্রস্রাবখানা/ টয়লেট ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখুন। ০৪. মসজিদে ফ্যান না থাকলে, ফ্যান লাগানোর ব্যবস্থা করুন। ০৫. ফ্যানের স্বল্পতা থাকলে সংখ্যা বৃদ্ধি করুন। ০৬. বিদ্যুৎ লাইন না থাকলে বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ লাগান। ০৭. শহরের অনেক মসজিদেই এখন এয়ার কন্ডিশনার রয়েছে। মুসল্লিদের সামর্থ্য বিবেচনায় সম্ভব হলে আপনার মহল্লার মসজিদেও তা লাগানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ০৮. মসজিদের জানালা দরজা ইত্যাদি ঠিকঠাক করে রাখুন। ০৯. মুসল্লিদের সুবিধার জন্য চাটাই/ চট/ কার্পেট ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখুন। ১০. যারা ইতেকাফ করবেন, তাদের সুন্দর ও সুরক্ষিত অবস্থানের জন্য ভালো ব্যবস্থা রাখুন। এগুলোসহ এ ধরনের আরো যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে যতােটা সম্ভব করুন। মসজিদ কমিটি এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করুন। এছাড়া আল্লাহ পাক যাদের বেশি তাওফিক দিয়েছেন তারা এগিয়ে আসুন।

২০. মসজিদে তারাবিহ বা রাতের নামাজের সুব্যবস্থা করুনঃ

ব্যাপক সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে তারাবির নামাজে মুসল্লির ব্যাপক সমাগম হয়। এ উদ্দেশ্যে ১. সুন্দর সুললিত কণ্ঠে দীর্ঘ কুরআন তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে হাফেজদের দ্বারা তারাবি পড়ানোর ব্যবস্থা করুন। ২. তারাবির নামাজে দ্রুত কুরআন পাঠ না করে ধীরে ধীরে তারতিলের সাথে পাঠের ব্যবস্থা করুন। ৩. যেদিন কুরআনের যে অংশ পাঠ হবে ইমাম সাহেব বা হাফেজ সাহেব সেদিন নামায শুরুর আগেই সে অংশের অর্থ/মর্ম মুসল্লিদের শুনিয়ে দিন।

২১. মাহে রমযানকে স্বাগত জানানঃ

রমজানের চাঁদ দেখার ছোটবেলার স্মৃতি আমাদের অনেকেরই রয়েছে, যা আজও আমাদের আনন্দিত করে, স্মৃতিকাতর করে দেয়। শাবান মাসের শেষলগ্নে পবিত্র মাহে রমজানের চাঁদ দেখা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত আমলও বটে। একাকি কিংবা দলবেঁধে, যে কোনভাবে রমজানের চাঁদ দেখা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখাে; তাই রমজানের চাঁদ দেখুন; এভাবে চাঁদ দেখার মাধ্যমে মাহে রমজানকে স্বাগত জানান এবং পুরো মাস রোজা রাখার তাওফিক চেয়ে আল্লাহ তাআ'লার কাছে দোয়া করতে থাকুন। রমজানের চাঁদ দেখাকে আজকাল গুরুত্ব দেয়া হয় না অথচ এটি একটি সুন্নাত আমল হিসেবে ইবাদত হিসেবেও আমলটি আমাদের করা উচিত। পবিত্র মাহে রমজানের সর্বপ্রথম সুখবরদানকারী তো এই নতুন চাঁদই, তাই না? তো, চলুন, এ বছর পবিত্র মাহে রমজানের চাঁদ দেখার এই অনন্য আমলটি থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবো না বলে আজই সিদ্ধান্ত নিই ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআ'লা আমাদের প্রতিটি ভালো কাজে অগ্রগামী হওয়ার তাওফিক দান করুন।

২২. পরস্পরের মধ্যে বিদ্যমান বিবাদ মীমাংসা করে নিতে হবেঃ

রামাযানে মহান আল্লাহ অনেক মানুষকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু যাদের মাঝে বিবাদ-বিসম্বাদ আছে, তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না, যতক্ষণ না তারা তাদের মধ্যকার বিবাদ মিটিয়ে নেয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا إِلَّا رَجُلًا كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ: أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا أَنْظِرُوْا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا أَنْظِرُوْا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا-

‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজা খোলা হয় এবং প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করা হয় এ শর্তে যে, সে আল্লাহ তা‘আলার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করবে না। আর সে ব্যক্তি এ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়, যে কোন মুসলিমের সাথে হিংসা ও শত্রুতা পোষণ করে। ফেরেশতাদেরকে বলা হয় যে, এদের অবকাশ দাও, যেন তারা পরস্পর মীমাংসা করে নিতে পারে’। -মুসলিম হা/২৫৬৫; আবূদাঊদ হা/৪৬১৬; তিরমিযী হা/২১০৯; মিশকাত হা/৫০২৯

২৩. আল্লাহর নিকটে তাওফীক কামনা ও কঠোর পরিশ্রম করাঃ

রামাযানে ছিয়াম পালন ও ফরয ছালাত সহ অধিক নফল ছালাত আদায় করার চেষ্টা করা এবং এজন্য আল্লাহর নিকটে তওফীক কামনা করতে হবে। কেননা এ মাসে বেশী বেশী ছিয়াম-ক্বিয়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, দু’ব্যক্তি দূর-দূরান্ত থেকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আসলো। তারা ছিল খাঁটি মুসলমান। তাদের একজন ছিল অপরজন অপেক্ষা শক্তিধর মুজাহিদ। তাদের মধ্যকার মুজাহিদ ব্যক্তি যুদ্ধ করে শহীদ হ’ল এবং অপরজন এক বছর পর মারা গেল। তালহা (রাঃ) বলেন, আমি একদা স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি জান্নাতের দরজায় উপস্থিত এবং আমি তাদের সাথে আছি। জান্নাত থেকে এক ব্যক্তি বের হয়ে এসে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পরে মারা গিয়েছিল তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিল। সে পুনরায় বের হয়ে এসে শহীদ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিল। পরে সে আমার নিকট ফিরে এসে বলল, তুমি চলে যাও। কেননা তোমার (জান্নাতে প্রবেশের) সময় এখনও হয়নি, তোমার পালা পরে। সকাল বেলা তালহা (রাঃ) উক্ত ঘটনা লোকেদের নিকট বর্ণনা করলেন। তারা এতে বিস্ময়াভিভূত হ’ল। বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কানে গেল এবং তারাও তাঁর কাছে ঘটনা বর্ণনা করল। তিনি বললেন, কি কারণে তোমরা বিস্মিত হ’লে? তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই ব্যক্তি তাদের দু’জনের মধ্যে অধিকতর শক্তিধর মুজাহিদ। তাকে শহীদ করা হয়েছে। অথচ অপর লোকটি তার আগেই জান্নাতে প্রবেশ করল! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, অপর লোকটি কি তার পরে এক বছর জীবিত থাকেনি? তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, সে একটি রামাযান মাস পেয়েছে, ছিয়াম রেখেছে এবং এক বছর যাবত এই এই ছালাত কি পড়েনি? তারা বলল, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আসমান-যমীনের মধ্য যে ব্যবধান রয়েছে,

তাদের দু’জনের মধ্যে রয়েছে তার চেয়ে অধিক ব্যবধান’। -আহমাদ হা/১৪০৪, ৮১৯৫; ইবনু মাজাহ হা/৩৯২৫; আত-তা‘লীকুর রাগীব ১/১৪২-১৪৩, হাদীছ ছহীহ

তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা: ইসলাম কিউএবিডি ডটকম, মাসিক আত তাহরিক, মাসিক আল কাওসার এ প্রকাশিত রমজান বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর এবং নিবন্ধ এবং অন্যান্য নির্ভরযোগ্য উৎস অবলম্বনে। রেফারেন্স ও তথ্যসূত্র স্ব স্ব স্থানে সংযুক্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৩৭
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুই পাগল তোর বাপে পাগল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



রাতে অর্ধেক কাউয়া ক্যাচাল দেইখ্যা হুর বইল্যা— মোবাইল ফোনের পাওয়ার বাটনে একটা চাপ দিয়া, স্ক্রিন লক কইরা, বিছানার কর্নারে মোবাইলটারে ছুইড়া রাখলাম।

ল্যাপটপের লিড তুইল্যা সার্ভারে প্রবেশ। বৃহস্পতিবারের রাইত... ...বাকিটুকু পড়ুন

যত দোষ নন্দ ঘোষ...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১

"যত দোষ নন্দ ঘোষ"....

বাংলায় প্রচলিত প্রবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যত দোষ করুক না কেন, সব নন্দ ঘোষের ঘাড়েই যায়! এ প্রবাদের সহজ অর্থ হচ্ছে, দুর্বল মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪১


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়

লিখেছেন বরুণা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৩


চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।

খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরও একটি কবর খোঁড়া

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৪

গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×