
রমজান মাস অফুরন্ত কল্যাণ ও বরকতের মাস। এই মাসে রোজাদারের দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়। রমজান কেবল ইবাদতের বিশেষ মৌসুম নয়, বরং দোয়ারও এক অতুলনীয় উপলক্ষ। পবিত্র কুরআনে রমজান ও সিয়ামের আলোচনা এসেছে, আর সেই আলোচনার ধারাবাহিকতায় আল্লাহ তাআলা দোয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। এটি রোজাদারের দোয়া কবুল হওয়ার এক স্পষ্ট ইঙ্গিত।
রোজাদারের দোয়ার গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۭ أُجِيبُ دَعْوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا۟ لِى وَلْيُؤْمِنُوا۟ بِى لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
"আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, (তাদের বলো,) আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, আমি তাদের প্রার্থনা কবুল করি, যখন তারা আমার কাছে প্রার্থনা করে।"(সুরা আল-বাকারা: ১৮৬)
তাফসিরকারকদের মতে, রোজার আলোচনার ধারাবাহিকতায় এই আয়াত প্রমাণ করে যে, রোজাদারের দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ বিষয়ে বলেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: ثَلَاثَةٌ لَا تُرَدُّ دَعْوَتُهُمْ: الإِمَامُ الْعَادِلُ، وَالصَّائِمُ حَتَّى يُفْطِرَ، وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ.
“তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, রোজাদারের দোয়া (যতক্ষণ না সে ইফতার করে) এবং মজলুম ব্যক্তির দোয়া।”(তিরমিজি: ২৫২৬)
রোজাদারের জন্য বিশেষ পুরস্কার
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন:
كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلَّا الصِّيَامَ، فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ.
“আদম সন্তানের সমস্ত আমল তার জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য, এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।”(সহিহ বুখারি: ১৯০৪, সহিহ মুসলিম: ১১৫১)
অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
إِنَّ لِلصَّائِمِ عِندَ فِطْرِهِ لَدَعْوَةً مَا تُرَدُّ.
“নিশ্চয়ই, ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না।”(ইবনে মাজাহ: ১৭৫৩, বাইহাকি: ৩৪৩৭)
দোয়ার বিশেষ সময়
রমজানে দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো হলো:
১. ইফতারের পূর্বমুহূর্তে – এই সময় রোজাদারের দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়।
২. শেষ তৃতীয়াংশে (সাহরির সময়) – এ সময় আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ডাকেন এবং তাদের দোয়া কবুল করেন। রাসুল (সা.) বলেন:
يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ، فَيَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ؟
“প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের মহান রব দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: কে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে? আমি তাকে তা দান করব। কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।”(সহিহ বুখারি: ১১৪৫, সহিহ মুসলিম: ৭৫৮)
৩. তারাবির নামাজের পর – এটি দোয়ার উত্তম সময়।
৪. ফরজ নামাজের পর – নামাজ শেষে দোয়া আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
৫. কুরআন তেলাওয়াতের পর – এটি দোয়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়।
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার আহ্বান
আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا عِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا۟ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
“হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই, আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করেন। তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”(সুরা আজ-জুমার: ৫৩)
উপসংহার
রমজান মাস আমাদের জন্য দোয়া কবুলের এক অনন্য সুযোগ। এই মাসে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত—নিজের জন্য, পরিবার-পরিজনের জন্য, উম্মাহর জন্য, সমগ্র বিশ্ববাসীর হেদায়েতের পথপ্রাপ্তির জন্য। আমরা যেন দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি এবং দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র মাসের বরকত অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



