
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিচারিতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের বাস্তবতা
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কি বাস্তবতার প্রতিফলন, নাকি যুক্তরাষ্ট্রের চিরাচরিত ভণ্ডামির আরেকটি প্রকাশ? বাংলাদেশ সবসময়ই একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে পরিচিত, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। যদিও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ নয় বরং ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত অপতৎপরতার ফল। অথচ ভারতের মতো রাষ্ট্র, যেখানে মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুরা রাষ্ট্রীয় মদদে নিপীড়নের শিকার, সে বিষয়ে তুলসী গ্যাবার্ড কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কোনো উদ্বেগ নেই।
ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র
ভারতে গত কয়েক বছরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন চালানো হয়েছে। বিজেপি সরকারের উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতির ফলে মুসলমানরা নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কায় রয়েছে, খ্রিস্টান সম্প্রদায় গির্জায় হামলার শিকার হচ্ছে, শিখরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গোহত্যার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা, মুসলিমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, নামাজের জায়গায় বাধা প্রদান এবং ধর্মীয় পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা—এসব ঘটনার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। শুধু তাই নয়, কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে লাখ লাখ মুসলমানের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উচ্চবাচ্য নেই। বরং তারা ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ববিরোধিতা
যুক্তরাষ্ট্র সবসময় মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে তাদের অবস্থান অত্যন্ত স্ববিরোধী। তারা যে দেশগুলো তাদের রাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উপেক্ষা করে, আর যেসব দেশ তাদের স্বার্থের বাইরে, সেসব দেশকে নানাভাবে চাপে রাখে। উদাহরণস্বরূপ, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা কিংবা সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী? তারা কি কখনো এসব নিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বা কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে? বরং তারা বরাবরই দখলদার ও দমনপীড়নকারী শক্তির পাশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের বাস্তবতা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচার
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বহু বছর ধরে বসবাস করছে এবং সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। কোনো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেই সেটিকে রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হিসেবে চিত্রিত করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর পেছনে বহির্বিশ্বের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল রয়েছে, যারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে, যা মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শের অংশ।
শেষের কথা
যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে বিশ্বের প্রকৃত সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র বিশ্লেষণ করা এবং স্ববিরোধিতা পরিহার করা। শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশকে চাপে রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং ভারতসহ অন্যান্য দেশ যেখানে প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করা হচ্ছে, সেদিকে তাদের নজর দেওয়া উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



