somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

রমজানের বিদায়: ভারাক্রান্ত্র হৃদয়ের অশ্রুসিক্ত অনুভূতি

২১ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
রমজানের বিদায়: ভারাক্রান্ত্র হৃদয়ের অশ্রুসিক্ত অনুভূতি

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

দেখতে দেখতে রমজানুল মোবারক বিদায়ের পথে। এই পবিত্র মাস আমাদের জীবনে আসে অনিঃশেষ শান্তি, আত্মিক পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অপার সুযোগ নিয়ে। কিন্তু যখনই রমজানের শেষের দিকে পা রাখি, মন কেন যেন ক্রমশ ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। এই ভারাক্রান্ত হওয়ার কারণ শুধুই রমজানের বিদায় নয়, বরং এই মাসের মাধ্যমে পাওয়া আত্মিক প্রশান্তি, ইবাদতের মিষ্টি স্বাদ এবং আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরে যাওয়ার আশঙ্কা।

রমজানের শেষে এই ভারাক্রান্ত অনুভূতির কারণ হলো, আমরা জানি না এই মাসের মতো আরেকটি পবিত্র সময় আবারও আমাদের জীবনে ফিরে আসবে কিনা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

"رَمَضَانُ شَهْرٌ أَوَّلُهُ رَحْمَةٌ، وَأَوْسَطُهُ مَغْفِرَةٌ، وَآخِرُهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ"

(রমজান এমন একটি মাস, যার শুরুটা রহমত, মাঝখানটা মাগফিরাত এবং শেষটা জাহান্নাম থেকে মুক্তি।)

এই হাদিসটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, রমজানের শেষ দিনগুলো আমাদের জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত ও ক্ষমার সুযোগ। কিন্তু এই সুযোগ কি আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পেরেছি? এই প্রশ্নই আমাদের হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে তোলে।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

"يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ"

(হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।) -সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৩

এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, রমজানের মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন। কিন্তু রমজান শেষ হওয়ার পরও কি আমরা এই তাকওয়া ধরে রাখতে পারব? এই চিন্তাই আমাদের মনকে ভারাক্রান্ত করে।

রমজানের শেষ দিনগুলোতে আমাদের উচিত বেশি বেশি ইস্তেগফার করা, নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা এবং গুনাহ থেকে তাওবা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

"مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ"

(যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রমজানের রাতে ইবাদত করে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।)

এই হাদিস আমাদের উৎসাহ দেয় যে, রমজানের শেষ মুহূর্তগুলোও আমাদের জন্য ক্ষমা ও মুক্তির সুযোগ।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

**"وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ"**

(আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন আমি তো নিকটেই আছি। আমি ডাকনেওয়ালার ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তাদের উচিত আমার ডাকে সাড়া দেওয়া এবং আমার প্রতি ঈমান আনা, যাতে তারা সঠিক পথ পায়।) -সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৬

এই আয়াত আমাদেরকে রমজানের শেষ দিনগুলোতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া ও ইস্তেগফার করার প্রেরণা দেয়।

রমজানের বিদায় আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এই পৃথিবীর সবকিছুরই একটি শেষ আছে। রমজানের মতো পবিত্র সময়ও আমাদের জীবনে সাময়িক। কিন্তু এর শিক্ষা ও প্রভাব আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রমজানের শেষ দিনগুলোকে যথাযথভাবে ইবাদত ও তাওবার মাধ্যমে কাটানোর তাওফিক দিন। আমিন।

রমজান আমাদেরকে শেখায় ধৈর্য, সংযম এবং মানবিকতা। এই মাসে আমরা নিজেদের ভুলত্রুটিগুলোকে সংশোধন করার চেষ্টা করি, আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং নিজেদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করি। কিন্তু রমজানের শেষের দিকে এসে মনে হয়, এই সুযোগ কি আবার পাবো? এই রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের মাস কি আবার ফিরে আসবে আমাদের জীবনে?

রমজানের শেষের দিনগুলোতে মন কাঁদে। কাঁদে এই ভেবে যে, এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কি যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি? এই মাসের বরকত, ইবাদত এবং তাওবার সুযোগকে কি পুরোপুরি গ্রহণ করতে পেরেছি? এই প্রশ্নগুলো মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। কিন্তু এই ভারাক্রান্ত হওয়ার মধ্যেও রয়েছে এক গভীর আন্তরিকতা। রমজানের শেষে আমরা আল্লাহর দরবারে হাত তুলি, প্রার্থনা করি যেন এই মাসের বরকত আমাদের জীবনে স্থায়ী হয়, যেন আমরা এই মাসে অর্জিত তাকওয়া এবং আত্মিক উন্নতিকে ধরে রাখতে পারি।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন,

**"الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الْكَبَائِرُ"**

(পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোকে মিটিয়ে দেয়, যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।)

এই হাদিস আমাদেরকে রমজানের শেষ দিনগুলোতে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার এবং ছোট গুনাহগুলোর জন্য তাওবা করার তাগিদ দেয়।

রমজানের বিদায় আমাদেরকে নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে। প্রতিজ্ঞা করি, রমজানের শিক্ষাকে ধারণ করে চলবো, আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা অব্যাহত রাখবো এবং মানবিকতা ও সংযমের পথে অটুট থাকবো। রমজানের বিদায় যেন আমাদের জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়, যেখানে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে অবিচল থাকি।

রমজানের শেষের এই মুহূর্তগুলো হৃদয়ে এক গভীর আবেগের সৃষ্টি করে। এই আবেগ আমাদেরকে আল্লাহর দিকে আরও নিকটবর্তী করে, আমাদের অন্তরকে আরও কোমল করে। রমজানের বিদায় যেন আমাদেরকে নতুন করে চিন্তা করতে শেখায়, নতুন করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার প্রেরণা জোগায়।

রমজানুল মোবারকের বিদায় আমাদের হৃদয়ে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করে, কিন্তু এই শূন্যতা যেন আমাদেরকে আল্লাহর পথে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেয়। আসুন, রমজানের শেষের এই মুহূর্তগুলোকে কাজে লাগাই, আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং এই মাসের বরকতকে আমাদের জীবনে ধরে রাখার চেষ্টা করি।

রমজানের বিদায়ে রমজানের শিক্ষা ও প্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে যেন আমাদের জীবনে নতুন এক সুন্দর অধ্যায়ের শুরু হয়। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:০৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন হাদিসই যদি মানতে হবে তবে আল্লাহ ফিকাহ মানতে বললেন কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৬




সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৬৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭। হে রাসূল! তোমার রবের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা’ প্রচার কর। যদি না কর তবে তো তুমি তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ধর্ম অবমাননার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৯


ঢাকায় এসে প্রথম যে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, সেটা ছিল মিরপুরের একটা নামকরা প্রতিষ্ঠান। লটারির যুগ তখনো আসেনি, এডমিশন টেস্ট দিয়ে ঢুকতে হতো। ছোট্ট বয়সে বুঝিনি যে স্কুলের টিচাররা কোন মতাদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এডমিন সাহেব আমাকে নিয়ে অনেক বক্তব্য দিতেন এক সময়।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৯



আমার "চাঁদগাজী" নিকটাকে উনি কি জন্য ব্যান করেছিলেন, সেটা উনি জানেন; আসল ব্যাপার কখনো আমি বুঝতে পারিনি; আমার ধারণা, তিনি হয়তো নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতেন; মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×