
ইলন মাস্ক ছিলেন বিশ্বের সম্পদ; উগ্রবাদী ট্রাম্পের অন্যায় কাজের সহযোগী হয়ে পকেটে ঢুকে গেলেন তার। এক সময় বিশ্বের চোখে ছিলেন ভবিষ্যতের নির্মাতা। প্রযুক্তির বিস্ময়, যিনি বৈদ্যুতিক গাড়ি থেকে শুরু করে মহাকাশ যাত্রা পর্যন্ত মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেই মানুষটিই আজ রাজনীতির এক বিতর্কিত চরিত্রে রূপ নিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে—স্বপ্নবাজ উদ্ভাবক থেকে তিনি কি তবে কেবলই একজন রাজনৈতিক সহযোগী হয়ে গেছেন?
প্রযুক্তির রাজপথে যাত্রা
ইলন মাস্কের নাম এক সময়ই ছিল উদ্ভাবন আর সাহসিকতার প্রতীক। তাঁর হাতে তৈরি হয় Tesla, যা বৈদ্যুতিক গাড়িকে আধুনিক সমাজের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিতে রূপ দেয়। এরপর আসে SpaceX—রকেট পাঠানো ও ফিরিয়ে আনার এক বৈপ্লবিক সাফল্য। শুধু প্রযুক্তি নয়, তিনি Starlink-এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট পৌঁছাতে চেয়েছেন, আর Neuralink দিয়ে মানুষের মস্তিষ্ক ও প্রযুক্তির মধ্যে সংযোগ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এই সবকিছু তাঁকে গড়ে তুলেছিল আধুনিক সময়ের এক আলোকবর্তিকা হিসেবে।
ধীরে ধীরে রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়া
তবে সব স্বপ্নের শেষ হয় না সৌন্দর্যে। ইলন মাস্ক ধীরে ধীরে রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখেন। শুরুটা হয় ‘ফ্রি স্পিচ’ রক্ষার কথা বলে টুইটার (বর্তমানে X) কিনে নেওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু সেই মুক্তমতের প্ল্যাটফর্মই হয়ে ওঠে উগ্র ডানপন্থী ও ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাসীদের অভয়ারণ্য।
তিনি প্রকাশ্যে রিপাবলিকান পার্টির প্রতি সমর্থন জানান, এবং ডেমোক্র্যাটদের “ওক কালচার” ও “উগ্রতা”র সমালোচনা করেন। কিন্তু সবচেয়ে বিতর্কিত হয় তাঁর ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন।
ট্রাম্পের নির্বাচনী মিথ্যা দাবি, উস্কানিমূলক বক্তব্য, এমনকি ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হামলার মতো ঘটনার পেছনেও ইলন মাস্কের প্ল্যাটফর্ম ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। তিনি ব্যক্তিগত মতামতের স্বাধীনতার আড়ালে এমন অনেক অ্যাকাউন্ট পুনর্বহাল করেন, যারা সমাজে বিভাজন ও ঘৃণা ছড়াতে অভ্যস্ত।
ইমেজে ধস: একজন নায়কের বিতর্কিত রূপ
এক সময়ের 'ভবিষ্যতের প্রতিনিধি' এখন পরিণত হয়েছেন এক বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে। বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনামে এখন আর তাঁর উদ্ভাবন নয়, বরং তাঁর উগ্র রাজনৈতিক মতবাদ, কনস্পিরেসি তত্ত্বে বিশ্বাস, ও ট্রাম্পপ্রীতির কথা বেশি আলোচিত।
যেখানে তিনি একসময় ছিলেন মুক্ত প্রযুক্তির মুখপাত্র, সেখানে এখন X প্ল্যাটফর্মে দেখা যায় ট্রাম্পপন্থী পোস্ট, ঘৃণা ছড়ানো কনটেন্ট, এবং মিথ্যা তথ্যের বন্যা। এক সময়ের এক্সপেরিমেন্টাল উদ্ভাবক হয়ে উঠেছেন একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক চরিত্রের ছায়া।
সামনে কী?
এখন প্রশ্ন হলো—এই রূপান্তর কি চূড়ান্ত? ইলন মাস্ক কি আবারো উদ্ভাবনের পথে ফিরবেন, নাকি রাজনীতির অন্ধকার গোলকধাঁধায় পুরোপুরি হারিয়ে যাবেন?
এটা যেমন তাঁর ব্যক্তিগত ভবিষ্যতের প্রশ্ন, তেমনি আমাদেরও প্রশ্ন—যখন একজন স্বপ্নবান উদ্ভাবক হয়ে ওঠেন রাজনীতির হাতিয়ার, তখন নতুন প্রজন্ম কার মধ্যে দেখে আশার আলো?
উপসংহার
ইলন মাস্ক ছিলেন শুধুমাত্র একজন উদ্যোক্তা নয়, ছিলেন একটা সময়ের অনুপ্রেরণা। কিন্তু সেই অনুপ্রেরণা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি আমাদের দেখিয়েছিলেন কীভাবে প্রযুক্তি পারে মানুষকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যেতে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে—তিনি নিজেই হারিয়ে গেছেন এক পুরোনো রাজনীতির খেলায়।
একজন ‘বিশ্ব সম্পদ’ যদি বিভাজনের শক্তির সাথে হাত মেলান, তাহলে মানবতার অগ্রযাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




