হেফাজতে ইসলাম নেতারা রাজধানীর শাহবাগের 'গণজাগরণ মঞ্চ' আগামী ৫ মে'র মধ্যে ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সরকার ভেঙে না দিলে তৌহিদি জনতা গণজাগরণ মঞ্চ দখল করে 'ইসলামি চত্বর' হিসেবে ঘোষণা করবে।
আজ সোমবার হরতাল চলাকালে লালবাগ শাহী মসজিদে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ তৈয়ব এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
মুফতি তৈয়ব বলেন, নাস্তিকদের সহযোগী এ সরকারের পতন নিশ্চিত। 'গণজাগরণ মঞ্চের' নামে ইসলাম ধ্বংস করার নীলনকশা চলছে। নাস্তিকদের মাধ্যমে সরকার মনে করছে সবকিছু থেকে পার পেয়ে যাবে। কিন্তু সরকারের এ স্বপ্ন কখনো সফল হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের ১৩ দফা দাবি না মানা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। আগামী ৫ মের মধ্যে শাহবাগ 'গণজাগরণ মঞ্চ' ভেঙে না দেয়া হলে ওই দিন 'গণজাগরণ মঞ্চ' দখল করে 'ইসলামি চত্বর' ঘোষণা করা হবে। ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষায় হেফাজতে ইসলাম আন্দোলনে নেমেছে। সফল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।
মুফতি তৈয়ব বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী। তবে সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে বাধা দিচ্ছে। একদল নাস্তিক শাহবাগের রাস্তা আটকিয়ে দিনের পর দিন সমাবেশ মিছিল করে যাচ্ছে। তাদের কোনো বাধা দিচ্ছে না। অথচ আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাইলে সরকার তাতে বাধা দিচ্ছে। এ কেমন নাগরিক অধিকার?'
নিউজ এখানে : Click This Link
এদের মূল উদ্দেশ্য হল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা। ইসলাম হল উপলক্ষ মাত্র। বাংলাদেশে ইসলামের বিপক্ষে কেউ কথা বলেনি। ধর্ম পালনের ব্যাপারে বাংলাদেশের সবাই স্বাধীন। নাগরিক হিসেবে আমরা যে কোন ধর্ম-আচরণ করতে পারছি স্বাধীনভাবে। ইসলাম ধর্মের কোন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাউকে কেউ বাধা দেয় নি। গণজাগরণ মঞ্চ কখনও ইসলামের বিরুদ্ধে কিছুই বলে নি। বরং গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চ ইসলামের বিরুদ্ধে নয়। গণজাগরণ মঞ্চ কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির ফাসির দাবি জানায়। গণজাগরণ মঞ্চের ৬ দফার কোথাও ইসলাম বিরোধী কিছু নাই। এই যে সেই ৬ দফা :
৬টি দাবী :
১) ঘাতক জামাত শিবিরের হামলায় রাজীব হায়দার, জাফর মুন্সী, বাহাদুর মিয়া, কিশোর রাসেল মাহমুদ হত্যাকান্ডে জড়িতদের আগামী ৭দিনের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।
২) ২৬ শে মার্চের পূর্বে স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক সন্ত্রাসী জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সুশোধনী আইনের অধীনে অভিযোগ গঠন এবং নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
৩) অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধী সংগঠনগুলোর আর্থিক উৎস, যেসব উৎস থেকে সকল প্রকার জঙ্গিবাদী, এবং দেশবিরোধী তৎপরতার আর্থিক জোগান দেয়া হয়, সেগুলো চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
৪) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া গতিশীল ও অব্যহত রাখতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালকে স্থায়ী রূপ দিতে হবে।
৫) গণমানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও তান্ডব বন্ধে অবিলম্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সকল সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ গোপন আস্তানা সমূহ উৎখাত করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এদের ভয়ংকর রূপ প্রকাশ করে দিতে হবে।
৬) যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষক এবং হত্যা ও সাম্প্রদায়িক উসকানিদাতা গণমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এখানে কোন শব্দটি ইসলামের বিরুদ্ধে আছে ? কোন বাক্য বা শব্দ কোনটাই ইসলামের বিরুদ্ধে নাই।
তারপরও পায়ে পাড়া দিয়ে এরা গন্ডগোল করতে চায়। এদের মূল ইস্যু হল গণজাগরণ মঞ্চ বন্ধ করা এবং অবশ্যই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা। এদের ১৩ দফার মধ্যে গণজাগরণ মঞ্চ বন্ধ করার কোন দাবী না থাকলেও তারা এখন এটাকেই সামনে নিয়ে এসেছে। তাদের ১৩ দফার মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার কথা না বলা হলেও তারা এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্যই উঠেপড়ে লেগেছে।
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু এবং ধর্মপ্রাণ। তাই তারা গণজাগরণ মঞ্চকে নাস্তিকের আন্দোলন বলে মিথ্যাচার করছে। এই মিথ্যাচারের মাস্টারমাইন্ড হল দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এই পত্রিকাটির মালিকানা হল জামায়াতে ইসলামী প্রচার সম্পাদক তাসনীম আলমের। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য ইচ্ছামতো মিথ্যাচার ছড়াচ্ছে। বাস্তবতা হল শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দাবীর সঙ্গে ধর্মের কোন বিরোধিতা নাই। যুদ্ধাপরাধীর ফাসির দাবীটা কিভাবে ধর্মবিরোধী ?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্কই নাই। ইসলামের কোথায় লেখা আছে গণহত্যাকারী, গণধর্ষণকারী, লুণ্ঠনকারীদের বিচার চা্ওয়া যাবে না ?
মধ্যযুগীয় তালিবানী শাসন থেকে এই দেশটাকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের সবার।
তাদের প্রথম টার্গেট হবে সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ - আওয়ামী লীগ বিএনপি কেউ রেহাই পাবে না। পরের টার্গেট হবে সাংবাদিকরা, লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীসহ সকল সাধারণ মানুষ। তারা ব্লাসফেমি আইন পাস করে যাকে খুশি তাকে ফাসিতে ঝোলাবে। নাসারাদের স্টাইলের এই আইনের বলে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের জীবন যাবে। তারা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করবে। নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ করবে। নারীদের চাকুরি থেকে বহিষ্কার করবে। বন্ধ হয়ে যাবে গার্মেন্টস সেক্টর। বন্ধ হয়ে যাবে সকল নারীবাদী প্রতিষ্ঠান। আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে তারা এটাই করেছে।
আজ রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবীসহ যারা হাততালি দিচ্ছেন, এই জঙ্গী উগ্রপন্থী তালিবানীরা তাদেরকেই সবার আগে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফাসিতে ঝোলাবে। এখনও যদি ঘুমিয়ে থাকি, পরে আফসোস করলেও লাভ হবে না।
আমাদের পরিণতি হবে এই রকম : Click This Link
কাদের ইন্ধনে হচ্ছে এই তালিবানী আন্দোলন। এইখানে দেখেন :
Click This Link
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:২৫