somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিতলি এবং বাবা

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিতলিকে বিয়ে করার পর বাবা ৩ বছর আমার সাথে কথা বলেননি,এমনকি মায়ের সাথেও।একই ছাদের নিচে থাকতাম,তবুও কতদূরে।তিতলি ছিল আমার ক্লাসমেট,পরিচয়টা কলেজ-এর ব্যাচ থেকে।
.
তিতলি ছিল ভীষণ কনজারভেটিভ পরিবারের মেয়ে।সারাজীবন গার্লস স্কুল এবং কলেজও গার্লস কলেজই ছিল।এবং তার ব্যাচ গুলা তো শুধুমাত্র মেয়েদের ব্যাচ।কিন্তু ওর একটা ব্যাচের মধ্যে প্রথম ছেলে হয়ে আগমন হয় আমার। দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো মেয়ে না হলেও কেমন জানি চোখ চলে যেত আমার। তারপর আর সে ব্যাচ করেনি।
.
ব্যাচের আগে পরিচয় হয় তার সাথে ফেসবুকে।অল্প-স্বল্প কথা বলত।আস্তে আস্তে কথা বার্তা বাড়ে। একসময় তাকে অবাক করে দিয়ে ব্যাচে যায়।কিন্তু তারে নিয়ে আর ভাবা হয়নি।তখন একটা মেয়ের সাথে রিলেশন ছিল আমার। তার পরিবার রিলেশন টাইপ ব্যাপার কখনই মেয়ের ক্ষেত্রে কল্পনা করেনি।তবুও তিতলি ভালবেসে ফেলে আমায়;বলতে পারেনি।
.
আমার রিলেশনে ব্রেকআপ এর পরপরই তিতলি আসে; বলে তার অনুভূতির কথা।আমি পারিনি সেদিন তাকে ফেরাতে,তার অসম্পূর্ণ ব্যক্ত ভালবাসার কাছে কেমন জানি অসহায় ছিলাম সেদিন আমি।
.
সময়ের সাথে দুইজনের বোঝাপড়াটা ছিল ঈর্ষান্বিত।একদিন সে বলেছিল,"নিলয়,আমার সম্পর্কে তো জানো তুমি।কেমন পরিবারের মেয়ে আমি,আমার মনোভাব আজকালকার মতো না।যারে ভালবাসি তাকেই বিয়ে করব এমন চেতনার মেয়ে আমি,আজকালকার রিলেশন মতো হঠাৎ এসে হঠাৎ উঁবে যাওয়ার মতো না আমি।আজকালকার মতো এতো স্পর্শীয় সম্পর্কের সাথে আমি হয়ত মানাতে পারব না।"
আমি দুই হাত দূরত্ব বজায় রেখে বসতাম সবসময়। সেদিনও বসেছিলাম। তিতলি কথা বলছে,আমি যেন কেমন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেছি।
তিতলি আবার বলা শুরু করল,"নিলয়,আমি ভালবাসি তোমায়।এটাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।তবে আজকালকার মতো হয়ত আমি হতে পারব না।"
আমি যেন কথার খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম,সামনে ডালে বসা দুইটা শালিক পাখি অনেক ধরে একসাথে বসে ছিল।একটা উঁড়ে যেতেই আমি মৌনতা ভাঙেছিলাম।
"তিতলি,আজকালকার সম্পর্কের সাথে কেনো নিজেকে তুলনা দিচ্ছ? সবার মতো হতে হবে এটা কোনো কথা নেই।আর স্পর্শ এটা তো আজকাল অপসংস্কৃতির মতো মানুষ ধারণ করছে। তুমি তো অস্পর্শী;দেবীর মতো,যাকে স্পর্শ ছাড়ায় ভালবাসে মানুষ।কদাচিৎ ছুঁতে গেলে তবুও মাথা নত করে স্পর্শ করে। তুমি অস্পর্শী থাকো,শুধু ভরসার হাতটুকু আমায় দিও।তুমি তে নারী,নারীর প্রতি সম্মানই যদি ধারন না করতে পারি তখন নিজে বাবা হয়ে আমার মেয়ের সম্মান আশা করব কি করে?"
এতক্ষণ পর তিতলির দিকে তাকালাম।চোখটা লাল হয়ে গেছে,চোখের পানি আটকে রয়েছে অনেকক্ষণ।
তিতলি তাও বলল,"তবুও স্পর্শ করতে মন চাইলে?"
-অপেক্ষা করব
-আর অপেক্ষা পর্যন্ত?
- তোমার পাশে থাকব,ভালবাসব।
.
এভাবে সম্পর্ক গড়িয়ে ৪ বছরে গেল,৪ বছরের শুধুমাত্র ৮ বার হাত ধরে হেঁটেছি।তবুও সেটা দুইজনের জন্মদিনে।
বিয়েটা হয়েছিল হঠাৎ,তিতলির মা জেনে যায় কিভাবে যেন! তবুও সে কিভাবে যেন পরিস্থিতি সামলিয়েছিল সেটা আমার কাছে আজও রহস্য।ভালো পরিবারের মেয়ে ছিল,দুই বোনের বড় ছিল সে।তবুও,আমাকে ছাড়ার কথা সে মাথাতেই আনেনি।পুরা পটিবারকে সামলিয়েছিল,আমি প্রচণ্ড অবাক হতাম ওর পরিবার থেকে প্রথমে নানাবিধ কথা বললেও সে যোগাযোগ বন্ধ করেনি।আমি প্রত্যেক মুহুর্তে অনুভব করতাম,কি অসম্ভব ভালবাসে একজন আমায়! তাই তার বাসা থেকে যখন বলে আমায় বিয়ে করে নিতে,আমি বাবাকে বলেছিলাম।বাবা কোনো কথা বলেননি,তবে বাবা রাজি হননি তিতলির পরিবারের সাথে কথা বলতে যাননি।আমার নিজের অবস্থান একদম খারাপ ছিল না,বেশ ভালোই ছিল।তাই সেদিন মা নিজে গিয়েছিল,অনাড়ম্বরভাবেই বিয়ে হয়েছিল।লোক কম এসেছিল না,প্রায় সবাই ছিল।বাবা তাদেরকে এক মুহুর্তের জন্য বুঝতে দেননি,তাঁর বিয়েতে অমত। আমি প্রায় প্রত্যেকদিন বাবার সাথে কথা বলতে যেতাম,বাবা কথা বলতেন না।আমি নিজে নিজে কথা বলতাম,বলার পর পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতাম তাঁর কথা শেনার আশায়।প্রত্যেকবারই নিরাশ হতাম,তিতলিও একই কাজ করত।তবে তিতলি কথা বলার সময় বাবা ওর দিকে তাকিয়ে থাকতেন।তিতলি তাতেই অনেক খুশি ছিল।
.
গল্পটা আমি হসপিটালের করিডোরের এক বেঞ্চে বসে লিখছি,আমাদের মেয়ে হয়েছে।অবাক করা হলেও সত্যি,টানা তিন বছর কথা না বলে থাকা বাবা আমাদের মেয়েকে সবার আগে কোলে নিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×