somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীতল শীতল পরের কথা

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যায় শিল্পকলার সামনের ফুটপাথে বসে মানুষ দেখছি। এমন সময় ইয়াসির বলল― ‘হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন রাস্তাঘাটে যে সব সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ হয়, তা কবিদের দেয়া উচিত।’ কথাটা ভালো। কিন্তু শুনেই মনে হল ইয়াসির তো কবিতা লিখে― নিজেকে জাহির করছে না তো? আমি ওকে বললাম, তাহলে প্রাবন্ধিকদের হাতে শহরের রোডম্যাপ ধরিয়ে দেয়া যাক। এঁরা একজনের কথা বলতে গিয়ে আরেক জনের কথা টেনে আনেন। নানা রকম রাস্তা ঘাট দেখান। কবি আর গম্ভীর থাকতে পারলেন না, হেসে ফেললেন।

বিকেলে ‘বাতিঘর’ (বইয়ের দোকান) গিয়েছিলাম। সেখানে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধসমগ্র দেখলাম। বিশাল কলেবরের ওই বই দেখলে ভীষণ ভয় লাগে। ইয়াসিরকে বললাম, ‘চিন্তা কর তো, রবীন্দ্রনাথ গল্প-কবিতা, গান-উপন্যাস বাদ দিয়ে শুধু প্রবন্ধ লিখেছেন।’ তখন আমাদের বলতে হতো, ‘বিশ্বপ্রাবন্ধিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!’ এমন কল্পনা মেনে নিতে না পেরে দুজনেই কিছুটা বিরক্ত হলাম।

একটু পরে সঙ্গীরা এলো। এক বাউল দম্পত্তি আছেন। স্বামী একতারা বাজিয়ে লালনের গান করছেন, আর স্ত্রী পাশে বসে পা দোলাচ্ছেন। সুখী পরিবার। আমরা গোল হয়ে বসে আছি। এক বড় ভাই নিচুস্বরে আমাকে বলল, ‘ম্যাজিক রিয়েলিজমের দিন শেষ। এখন কনটেম্পোরারি সাহিত্যের দিন।’ তার ধারণা ওয়ালিউল্লাহ যে সময়ে বসে ‘লাল সালু’― উপন্যাসটি লিখেছেন, তা পুনঃপাঠ্য হওয়া প্রয়োজন। কবিতা প্রসঙ্গে হঠাৎ করে বললেন, ‘আমার তো কপোতাক্ষ নদ বুঝতেই দু’বছর লেগেছে। রবীন্দ্রনাথ আরও কঠিন।’

আমাদের আলাপচারিতায় ফ্রান্‌স কাফ্‌কা, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, শহীদুল জহির, মার্কেজ ঘুরছে। আমি মূলত শ্রোতা। আজ সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠে কাফ্‌কার একটি গল্প পড়েছিলাম। ওঁর গল্প বুঝতে হলে― একটা লেখা দশবার করে পড়তে হয়। কীভাবে যে লিখেছে― কে জানে! ওনার হাতে সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের একটি বই ছিল। যার বিষয়― ‘মুসলিম চিত্রকলা ও ইতিহাস।’ আরব সাহিত্যে ওঁর দখল দ্যাখে আমি রীতিমতো মুগ্ধ! ওই বইয়ে কিছু অদ্ভুত তথ্য জানলাম। লেখক বলেছেন, ইহুদিদের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কিছু মিল আছে। যেমন, ওদেরও খৎনা করতে হয়। এছাড়াও ওদের মদ্য পান ও শকুর ভক্ষন পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ইসলামেও ঠিক তাই। অদ্ভুত না?

সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের নাম বাংলাদেশী পাঠক পাঠিকারা খুব একটা জানেন বলে মনে হয় না। ওঁর ভৌতিক গল্পগুলো রীতিমতো অসাধারণ। সম্প্রতি, আমাদের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরুস্কার নিয়ে কিছু বিতর্ক ওঠেছে। পরিচালক মুরাদ পারভেজ― ‘বৃহন্নলা’ নামে যে চলচ্চিত্রটি বানিয়ে পুরস্কার পেয়েছিলেন, তা ছিল সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের গল্প। পরিচালক নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। আমাদের দেশে যারা পুরস্কার দেন, তারা যে মুর্খ হন― এটা নিপাতনে সিদ্ধ। আবারও প্রমাণ হল।

যা হোক, ফুটপাথে বসে ল্যাম্পপোস্টের হালকা আলোয় বইটির কিছুটা অংশ পড়ে ফেলেছি। তাই ইয়াসিরকে বললাম,― ‘শুধু মনীষীরা নয়, আমিও ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে মাঝে মাঝে বই পড়ি। কথাটা মনে রেখো।’

অনেকদিন পর বাসু কাকার সঙ্গে দেখা হল। ওনি কোলকাতার মানুষ। চাকুরীর জন্য নিয়মিত বাংলাদেশে আসতে হয়। অবস্থাটা এক সপ্তাহ এদিকে, আরেক সপ্তাহ ওদিকে। ষাট স্পর্শ করা এই ভদ্রলোক পকেট থেকে গোল্ডলিফের প্যাকেট বের করে সবার দিকে বাড়িয়ে বললেন, ‘কেউ নেবে?’ আমি একটা সিগারেট নিলাম। আগুনটা ওনি নিজেই ধরিয়ে দিলেন। আমি বললাম, ‘আপনাদের ওদিকে তো চার্মিনার সিগারেট খুব চলে।’ ওনি বললেন, ‘আমি সিগারেট ধরেছি কলেজে ওঠে। সময় ১৯৭২। তখন এক প্যাকেট চার্মিনারের দাম ছিল সাত পয়সা।’ আমরা গল্প করছি সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে। কাকা ফ্রি মাইন্ডের মানুষ। এক পর্যায়ে একটি বাণীও দিলেন― ‘যে পুরুষকে তাঁর স্ত্রী বিশ্বাস করে না, সেই পুরুষও স্ত্রীর বিশ্বাস রাখে না।’

এতোটুকু পড়ে আমরা কিছু কি জানলাম? ১৯৭২ সালে প্রতি প্যাকেট চার্মিনার সিগারেট সাত পয়সা করে বিক্রি হতো― এটা কি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নয়? ওই সময় চার্মিনার ছিল ফ্যান্টাসির অংশ। একজন ছাত্রের কাছে কলেজ জীবন মানে প্রথম স্বাধীনতা পাওয়া। তাই ওই সময় যা করা হয়, তাতেই ফ্যান্টাসি জড়িয়ে থাকে। ইতিহাস ঐতিহ্য মানুষের কথায় থাকে। সবসময় যে বইয়ের কাছে যেতে হয়, তা কিন্তু না।

লেখাটা শেষ করার আগে আবার একটু সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের কাছে ফিরে যাই। ওনি লিখেছেন, নবীজি (দঃ) যখন মক্কা জয় করে কাবা ঘরে ঢুকেছেন, তখন ওখানে প্রচুর ছবি ছিল। যেহুতু ইসলাম ধর্মে প্রাণীর ছবি নিষিদ্ধ সেহুতু তিনি ছবিগুলো নষ্ট করে ফেলতে বলেন। শুধু একটি ছবি রেখে দিতে বলেছিলেন। ওই ছবিটি ছিল হযরত ইসা (আঃ) ও তাঁর মাতা মরিয়মের। মাতার কোলে পুত্রের ছবি। নবীজি (দঃ) সেটা নষ্ট করতে নিষেধ করলেও একসময় ছবিটি ঠিকই নষ্ট করা হয়। আর এই কাজটি যিনি করেছেন, ওর নাম বেশ পরিচিত― ‘এজিদ।’ কারবালায় যে ঘটনাটি ঘটেছিল, তার খলনায়ক। আরেকটি তথ্য জানিয়ে রাখি, লেখক জানিয়েছেন, ‘এজিদ’ নাকি রোম্যান্টিক কবি হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন!



২৭ মার্চ, ২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:২৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×