somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধিভৌতিক ঘটনা-দাবাবোর্ড

৩০ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি আমার ছোট মামা আর নানির সাথে থাকি। ছোট মামা খুব ভালো দাবা খেলতে পারেন। উনি ফিদের রেটিংধারী দাবাড়ু। বাংলাদেশের অনেক বড় বড় দাবা খেলোয়াড়ের সাথে উনি খেলেছেন। কারও কারও সাথে জিতেছেনও। উনি Blindfold Chess খেলতে পারেন। অর্থাৎ ঘুঁটি ছাড়া কেবল বোর্ড সামনে নিয়ে দাবার চাল দিতে পারেন। যে ঘটনাটা আমি বলবো এটা মামার সাথে ২০০৪ সালে ঘটেছিলো। আগস্টের শুরুর দিকে। তখন সারা দেশে ভয়াবহ বন্যা। আর ঢাকা শহর তলিয়ে আছে সুয়ারেজের নোংরা পানিতে। আমার নানা বাড়ি দক্ষিণ খিলগাঁও –এ। বন্যার সময় নানা বাড়িতেও পানি ওঠে। নানা-নানিরা তখন উত্তর শাহজাহানপুরের একটা ভাড়া বাসায় থাকতেন। আর খিলগাঁও –এর এই বাড়িতে ছোট মামা মাঝে মাঝে এসে থাকতেন।

দাবা খেলা মামার কাছে নেশার মতো ছিল। উনি যখন একা থাকতেন তখনও দাবা খেলতেন। সেই সময় মামা দাবার কিছু পাজল (Puzzle) সমাধান করতেন। অর্থাৎ দাবার End Game –এ অল্প কিছু ঘুঁটি থাকতো। এই অবস্থায় একটা Parameter সেট করে বলা হতো এটা সমাধান করো। একবার মামা এমন একটা পাজল পেলেন (মামা এসব পাজলের বেশিরভাগই দাবা ফেডারেশনের ম্যাগাজিন থেকে পেতেন) যার ব্যাপারে বলা ছিলঃ এটা এমন একটা পাজল যা কিনা যন্ত্রের উপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। মানুষ কিছু ক্ষেত্রে যন্ত্রকেও যে তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে হারিয়ে দেয় তার একটা প্রমাণ নাকি এই পাজল। আর দাবা সেই খেলা যার পূর্ণ রহস্যভেদ আজ পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি।

মামা দাবার বোর্ড আর ঘুঁটি নিয়ে বসে গেলেন। জায়গামতো দরকারি ঘুঁটিগুলো বসিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে লাগলেন। এই পাজলের Parameter ছিলঃ সাদার জয়। কিন্তু সেই সময়ের প্রায় সব সুপার কম্পিউটারই এর ফলাফল সর্বোচ্চ ড্র পর্যন্ত দেখে। মামা নানাভাবে চিন্তা করে মেলানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। রাত বারটায় বসে বিরক্ত হয়ে যখন ঘড়ি দেখলেন তখন প্রায় সাড়ে তিনটা। মামা ঘুমানোর জন্য বিছানায় গেলেন। সোফার উপর থেকে ছোট্ট প্যাডেস্টাল ফ্যানটা নিয়ে বিছানার কাছে রাখলেন। মাথার কাছের জানালাটা বন্ধ কিনা ভালো করে দেখে নিলেন। এই জানালাটা সন্ধ্যার পর পরই বন্ধ করা হয়। আগে নানা রকম ভূতুড়ে ঘটনা এই জানালা দিয়ে হয়েছে। আগস্টের সেই রাতে অসম্ভব গরম পড়েছিলো। একে তো পচা পানির দুর্গন্ধ তার উপর ভ্যাঁপসা গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার অবস্থা।

রাতে মামা একটা স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নে তিনি যে ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন সেই ঘরেই ছিলেন। সাথে আরও দুজন লোক। দুজনেরই চাদর দিয়ে মাথা ঢাকা। একজনের কালো চাদর দিয়ে আরেকজনের সাদা চাদর। তারা দুজন সোফার উপর বসে দাবা খেলছিলেন। আর মামা তাদের মাঝখানে বসে খেলা দেখছেন। মামা দেখলেন তারা নতুন করে কোন খেলা শুরু করছে না। বরং সেই পাজলের সমাধান করতে দাবা খেলছে। সাদা চাদর পরা লোক সাদা ঘুঁটির চাল দিচ্ছিলো। মামা অবাক হয়ে দেখছেন তাদের খেলা। ঘণ্টাখানেক খেলার পর সাদা ঘুঁটি জিতে গেলো! আর সাথে সাথে ঐ দুজন তাদের চাদরটাকে পাখার মতো বানিয়ে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। ঘরে মোট তিনটি জানালা থাকলেও বিছানার কাছের জানালা বন্ধ ছিল। কেবল সোফার দুই পাশের জানালা দুইটা খোলা ছিল। তারা ভিন্ন ভিন্ন জানালা দিয়ে চলে যায়।

মামার ঘুম ভেঙে গেলো। উনি দেখলেন সোফার কাছের জানালা দুটির পর্দা ঝড়ো বাতাসে যেমন দোলে সেইভাবে দুলছে। উনি ভাবলেন ঝড় হয়তো। উঠে গিয়ে জানালা দুটি লাগাতে যাবেন এমন সময় পর্দা উড়া বন্ধ হয়ে গেলো। ততক্ষনে মামার ঘুম কেটে গেছে। লাইট জ্বালানোর পর ঘড়িতে দেখলেন মাত্র পৌনে চারটা বাজে। মানে উনি পনেরো মিনিটও হয়নি ঘুমাতে গিয়েছিলেন। মামা সোফার উপর সাজানো দাবার বোর্ডের দিকে তাকাতেই মনে পড়ে গেলো স্বপ্নটার কথা। স্বপ্নেও বোর্ডটা সোফার উপর সাজানো ছিল। খাট আর সোফা ঘরের ঠিক দু’প্রান্তে। মামা অবাক হয়ে দেখলেন ওনার পাজলের সমাধান বোর্ডের উপর করা। অর্থাৎ সাদার জয়।

মামা স্বপ্নটা মনে করার চেষ্টা করলেন। চালগুলো কি ছিল মনে করার চেষ্টা করলেন। মামার কেবল মনে হচ্ছিলো একটা চক্রের মধ্যে চালগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিলো। চক্রটা সৃষ্টি করেছিলো সাদা ঘুঁটি আর কালো ঘুঁটি কিছুতেই সেই চক্র থেকে বের হতে পারছিলো না। মামা তার দেখা স্বপ্নগুলোর বেশিরভাগই ঘুম থেকে উঠেই লিখে রাখতেন। উনি ডায়েরি এনে স্বপ্নটার কথা না লিখে বোর্ডে সাজানো চালগুলো লিখে রাখলেন। তারপর ঝটপট বোর্ড সাজাতে লাগলেন। ধাঁধার ঘুঁটিগুলো জায়গামতো বসিয়ে মনে করার চেষ্টা করলেন কি ছিল চালগুলো। অনেকক্ষণ চিন্তা করার পর উনি আস্তে আস্তে ধাঁধার জট খুলতে আরম্ভ করলেন। যখন পুরোপুরি ধাঁধাটা সমাধান করে আড়মোড়া ভাঙলেন তখন বাইরের আকাশ ফর্সা হতে আরম্ভ করলো।

পরিশেষেঃ নানার রেখে যাওয়া সেই একতলা বাড়িটা এখন আর নেই। প্রায় অর্ধযুগ আগেই তা ভেঙে ফেলা হয়েছিলো আকাশচুম্বী ইমারত বানানোর নিমিত্তে। আমি নিজে দেখিনি কিন্তু শুনেছি যে এই বাড়িতে কিছু অস্বাভাবিক জিনিসের অস্তিত্ব আছে। অনেকেরই ছায়ামূর্তি দেখার অভিজ্ঞতাও আছে। নানিকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম এসব ব্যাপারে। উনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন। তবে অন্যান্য সবার কাছ থেকে শুনে আমার যা মনে হয়েছে এই বাড়িতে লোকচক্ষুর আড়ালে যে বা যারাই থাকতো সে বা তারা খারাপ প্রকৃতির ছিল না। একা একা নানাবাড়ির যেকোনো একটা অন্ধকার ঘরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই নাকি তাদের উপস্থিতি বোঝা যেতো। আমার আফসোস ওই অবস্থায় থাকার সৌভাগ্য হবার আগেই বাড়িটা ভেঙে ফেলা হয়।
দাবার সেই পাজলটা ছিল এরকমঃ বোর্ডে দুই ঘুঁটির রাজা তো ছিলই; এর সাথে ছিল কালো ঘুঁটির ৭টা সৈনিক যার একটা আবার পরবর্তীতে মন্ত্রী হয়। পক্ষান্তরে সাদার ছিল কেবল একটা সৈনিক, অবশ্য সেও পরবর্তীতে মন্ত্রী হয়। মূলত এই সাদা ঘুঁটিটাই একটা চক্র সৃষ্টি করে যার জাল ছিঁড়ে কালোর কোন ঘুঁটি বের হতে পারে না। তৎকালীন বিশ্বের বাঘা বাঘা সুপার কম্পিউটার দিয়েও নাকি এর কাঙ্ক্ষিত ফলাফল বের করা সম্ভব হতো না। কম্পিউটার নাকি সর্বোচ্চ ড্র বের করতে পারে। কিন্তু সাদা ঘুঁটিকে জেতানো তার কাছে অসম্ভব। আর এর সমাধানই মানুষ অনায়াসে পারে। দুনিয়াকাঁপানো এরকম আরও অনেক পাজল আছে। তার একটা নিয়েই আমার এই গল্প।


সবশেষেঃ এই গল্পটা পুরোপুরিই কাল্পনিক তবে “পরিশেষে” অংশটা বাদে। এটা আসল। মূলত এর উপর ভিত্তি করেই আমার গল্পটা লিখা। যারা এটা সত্য ঘটনা বলে পড়েছেন তাদের কাছে আমি আসলেই অতিশয় দুঃখিত।
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×