somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইবোলা ভাইরাসের নয়া উপদ্রব... আফ্রিকার গিনিতে (ক্ষুদে ব্লগ)

৩০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভালমতোই ছড়িয়ে পড়েছে ইবোলা ভাইরাস (Ebola virus ) আফ্রিকার গিনিতে। বিবিসি নিউজের ভিত্তিতে (২৫ মার্চ ২০১৪) এ পর্যন্ত প্রায় ৬২ জন মারা গেছে এই ভাইরাসে সৃষ্ট ইবোলা হেমোরেজিক জ্বরে। কিন্তু এভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণটা কি? বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, স্থানীয় বাদুড় বিশেষ করে গাম্বিয়ান ফ্রুট ব্যাট এই রোগ ছড়ানোতে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু তারপরেও তো প্রশ্ন থেকেই যায়। বাদুড় থেকে এই রোগ মানুষে ছড়ায় কিভাবে? যারা ভাবছেন বাংলাদেশের নিপাহ ভাইরাসের মতো এটা খেজুরের রস (বাদুড়ের সাথে) শেয়ার করার দ্বারা ছড়িয়ে পড়েছে- তাহলে বলতে হয়, দুঃখিত। আপনার ভাবনা অন্তত এই ঘটনার ক্ষেত্রে সঠিক নয়। আসল কাহিনী বোঝা যাবে গিনিয়ান কর্তৃপক্ষের একটা ঘোষণায়। তারা এই রোগের বিস্তার রোধে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা যথার্থই অদ্ভুতুড়ে। গিনিয়ান সরকার যেকোনো ধরণের বাদুড় শিকার করে হাপুস-হুপুস গলাধকরনের উপর ‘কড়া’ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে! কারণ ঐখানকার মানুষজন বিশেষ করে টমা, কিস্সি, গুয়ার্জ নামী কিছু এথনিক গ্রুপ বাদুড় খাওয়াটাকে এক রকমের শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কি নেই সেই শৈল্পিকতায়। বাদুড়ের স্যুপ, বাদুড়ের গ্রিল, ভুনা বাদুড় আরো কত কি! আর এই উদ্ভট ভোজন বিলাসিতাই আজকে গিনিতে ইবোলা ভাইরাস আক্রমণের কারণ। শুধু গিনিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও একটা কথা ছিল। এটা ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনেও।


ইবোলা ভাইরাস সম্পর্কে এবার একটু জ্ঞানদানের চেষ্টা করি। এই ভাইরাসে হেমোরেজিক জ্বর হয়। শুরুটা হয় ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ কিছু লক্ষণ দিয়ে। তারপর আস্তে আস্তে জ্বর, আর্থ্রালজিয়া (অর্থাৎ জয়েন্ট পেইন), মায়ালজিয়া (মাসল পেইন), বুকে ব্যথা থেকে আরম্ভ করে ডায়রিয়া, বমি হওয়া, সর্দি এমনকি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রেও সমস্যা তৈরি করে। তবে সবচেয়ে বেশী ভয়ঙ্কর হয় তখনই যখন শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এই রোগে মৃত্যুহার শতকরা ৯০ ভাগ পর্যন্ত চলে যেতে পারে। মূলত বন্যপ্রাণী যেমন বাদুড়, শিম্পাঞ্জী, গরিলা, বানর, অ্যান্টিলপ থেকে এটি মানুষে যায়। আর একবার মানুষে গেলে সে একাই একশ’ তার আশেপাশে এটি গণহারে ছড়িয়ে দেবার জন্য। কথাটা সারকাজমিকের মতো শোনালেও আসলে সত্য। আশা করি দু’একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা বোধগম্য হবে। মনে করুন, গিনির এক প্রত্যন্ত গ্রামে এই ভাইরাসে একজন মারা গেলো। এখন তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে। আফ্রিকানরা অবশ্য এই ব্যাপারে অন্য মহাদেশের লোকজনদের থেকে যোজন যোজন এগিয়ে। ওরা মরার টাইম পায় না, মাগার তার আগেই শুরু করে দেয় তার শেষকৃত্য। মৃত লাশকে ঘিরে নাচানাচি, মাতামাতি, মাতম করার নাম করে গণহারে লাশের সংস্পর্শে না থাকলে যেন ওদের রাতের ঘুম ঠিকমতো হয় না। কিন্তু এদের কে বোঝাবে, ওদের প্রিয় মানুষটা যে কারণে মারা গেছে সেই কালপ্রিট এখনো বেঁচে আছে অন্য জীবিতদের মারার জন্য। তার উপর রয়েছে ওদের খাদ্য তালিকার বিস্ময়কর উপস্থিতি। বাদুড় ওদের খাওয়া চাইই চাই। এই রোগ থেকে সুস্থ হওয়াটা ভাগ্যের বিষয়। কিন্তু সেটাও শর্তসাপেক্ষে। কারণ ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে সুস্থ হলেও সুস্থ হওয়ার পর থেকে সাত সপ্তাহ পর্যন্ত তার সিমেন (semen) দিয়ে অন্যকে অসুস্থ করে দিতে পারে। তাই এটাও বেশ দুশ্চিন্তার বিষয়। কারণ যে সংস্কৃতিতে মানুষ মরলে উৎসবের মতো মাতম করা হয় সেখানে কেউ সুস্থ হলে কি হবে তা বুদ্ধিমান ব্যক্তিমাত্রই অনুমেয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×