জানো-
আমার জীবনটা বড় আটপৌরে,
স্বাদহীন গন্ধহীন অষ্টব্যঞ্জন যেন।
তারপরও আমি সুখি।
গায়ে আমার গলির রাস্তার মোড় থেকে কেনা এক নীল চাদর।
দাম ??
মাত্র দুইশ।
হাসছ !!
হাসো, হাসতে তোমরা পারই।
তবে কি জান এই চাদরটা আমার খুব প্রিয়,
আয়নার সামনে কতবার যে দাড়াই চাদর গায়ে,
নিজেকে খুটিয়ে দেখি আর অবাক হই-
আমি এত সুন্দর !!
আমি হাটি নড়বড়ে উড়ালসড়কের নিচ দিয়ে,
হাটি আর অবাক বিস্ময়ে তোমাদের সৃষ্টি দেখি।
মাঝে মাঝে নিজের প্রিয়তমাকে কোন এক শান্তবিকেলে নিয়ে আসি সেই সড়কের উপর,
মিষ্টি হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে সে আমার সামনে-
আমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখি।
ওমা !! আবার হাসছ !!
হাসো, হাসতে তোমরা পারই।
তবে কি জান এই মুহূর্তটুকু আমার কাছে অনেক মুল্যবান,
অনেক উপভোগের।
মাঝে মাঝে অনেক কাজের চাপে ওর লাজুক হাসিটা আমার চোখে ভাসে আর অবাক হই-
জীবন এত সুন্দর !!
জানো-
আমি মাঝে মাঝে তোমাদের আলো ঝলমলে দোকানগুলোর সামনে দিয়ে হেটে যাই,
চোখ বড় বড় করে আমি তাকিয়ে থাকি তোমাদের হাজারো আয়োজনের দিকে।
কিন্তু কেন যেন সেই আয়োজনের মুখগুলোকে আমার প্রাণহীন মনে হয়,
চুপচাপ নিজের ঘরে ফিরি।
সামনে নিয়ে বসি এক থালা গরম ভাত, ভর্তা আর ডাল।
হাসছ !!
হাসো, হাসতেই পার তোমরা।
তবে কি জান-
এই গরম ধোয়া ওঠা ভাত আমার কাছে অমৃত।
দলা দলা করে গিলি আর ভাবি
জীবনটা অনেক সুস্বাদু !!
আমার কোন চাওয়া-পাওয়া নেই,
কারণ আমি জানি আমার চাওয়ার নদী অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে।
আজ সেই নদীতে কোন ঢেউ নেই,
সেখানে জেগে ওঠা ধু ধু চরের উঠোনে কান পাতলে হয়তোবা কিছু নিরব হাহাকার শুনতে পারবে তুমি।
হাসছো !!
হাসতেই পারো তুমি।
তবে কি জানো-
যতই হাস,
আমার এই শুকনো নদীতে বাধ দেওয়ার অধিকার তোমার নেই।
আজ হয়তো এই নদীতে পানি নেই, নৌকা নেই, ঢেউ নেই,
তবে যেদিন হবে,
সেদিনের সুনামী ঠেকানোর সাধ্য কি তোমাদের আছে ?
(উৎসর্গঃ আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া ১২৪টি অতি সাধারণ কিন্তু তরতাজা জীবনের উদ্দেশ্যে।)