somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের গাণিতিক দর্শন

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে দুটি জিনিসের সংজ্ঞা মানুষ এখনও ঠিক করতে পারেনি তা হল- জীবন এবং সময়। বিজ্ঞান "জীবন"-কে বলেছে প্রাণরসায়নের সমষ্টি, ধর্ম "জীবন"-কে বলেছে আত্নার সাময়িক পরিভ্রমণ এবং দর্শন "জীবন"-কে বলছে কিছু মুহূর্তের সমষ্টি। তাই জীবনের সংজ্ঞা নির্ধারণ অনেক দুরূহ একটা কাজ। এই সংজ্ঞা নির্ধারণের কাজে আমিও যাব না। তবে জীবনের কিছু দার্শনিক তত্ত্বের গাণিতিক রুপকে এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। মানুষের জীবনের বিভিন্ন ঘটনাকে গণিতের মতই যোগ,বিয়োগ,গুণ কিংবা ভাগ দ্বারা প্রকাশ করা যায়।
Graph:
আমরা গ্রাফিকালী কোন রেখাকে সাধারণত দুটি অক্ষের (Co-ordinate) মাধ্যমে ক্রমজোড় (Paired) আকারে অনেক বিন্দু বসিয়ে এবং তারপরে সে বিন্দুগুলো যোগ করার মাধ্যমে উপস্থাপন করি। এখানে উল্লেখ্য যে, একটি রেখাকে অনেক সময় একটি বিন্দুর "সঞ্চারপথ" হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। এখানে, "সঞ্চারপথ" মানে আমরা বলতে পারি যে "বিন্দুটি এই পথ দিয়ে হেটে যাচ্ছে"।
এখন আমরা যদি আমাদের চিন্তা/ চাহিদাকে X-অক্ষ এবং সে অনুযায়ী আমাদের কাজকে Y-অক্ষ দিয়ে প্রকাশ করি তাহলে আমরা আমাদের জীবনের "সঞ্চারপথ" বা "গ্রাফ" পাব। চিন্তা আর কাজের পার্থক্যের কারণে জীবনে চলার পথের উঠানামার সাথে সাথে জীবনের গ্রাফও উঠানামা করবে। কারও চিন্তা কম কিন্তু কাজ বেশি হলে তার জীবনের গ্রাফ হবে খাড়া ঊর্ধমুখী। অর্থাৎ সে জীবনে আকাশছোয়া সাফল্য পাবে। উল্টোটা হলে তার গ্রাফ হবে নিম্নমুখী।তাহলে দেখাই যাচ্ছে যে জীবনকে Graphically represent করা সম্ভব। গণিতের কিছু কমন গ্রাফের সাথেই জীবনের তুলনা করে দেখা যাক।
Graph of X:


X এর গ্রাফ হচ্ছে একটা সরলরেখা যা কিনা X-অক্ষ এবং Y-অক্ষের সাথে সমান দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। অর্থাৎ এই রেখার প্রতিটি বিন্দুতে X এবং Y এর মান সমান। যেমন- (২,২),(১,১),(৩,৩) ইত্যাদি। এখন কারও জীবনের গ্রাফ হুবহু X এর মত হওয়া কি সম্ভব ?
হ্যা, সম্ভব। ধরুন একজন খুব সাধারণ মানুষের কথা। সে আজীবন যা চিন্তা করেছে ঠিক সে অনুযায়ীই কাজ করেছে। বা অন্যভাবে বলা যায়, সেই মানুষটা বড় কোন চিন্তা করার সাহস পায় নি। তার জীবনে তাই কোন অ্যাডভেঞ্চার নেই। তার আটপৌরে জীবন তাই সবসময় সরলরেখায় চলেছে এবং চলবে। তার জীবনের গ্রাফও তাই একটা সরলরেখাই হবে। যেহেতু তার চিন্তা আর কাজের মান একই, সেহেতু তার গ্রাফ হবে "X এর গ্রাফের" মত।
আরেকভাবে এটাকে একজন সফল মানুষের গ্রাফ হিসেবেও উপস্থাপন করা যায়। একজন সফল মানুষ যে কিনা তার চিন্তা আর কাজের মাঝে সঠিকভাবে সমন্বয় করতে পেরেছে।
Graph of Sine:


জীবন দর্শনকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা গ্রাফ হল "Graph of Sine"। জীবনে অনেক সময় আমরা যেভাবে চিন্তা করি সেভাবে সব কিছু হয় না। আমাদেরকে চিন্তার চেয়ে বেশি কাজ করতে হয়। তারপরও আমরা কাঙ্ক্ষিত ফল পাই না। ফলে আমাদের কাজের মান হয় ঝণাত্নক (negative)।আবার হয়তো কাজ বা পরিশ্রম ভালোভাবে করার পরেও আমাদের ঝণাত্নক চিন্তার জন্য কাজের ফলও হয় ঝণাত্নক। তাই জীবনের গ্রাফ X এবং Y- উভয় অক্ষেই ধনাত্নক(positive) এবং ঝণাত্নক অংশে উঠানামা করে। অনেকটা Sine এর গ্রাফের মত। তাই জীবনে কখনও ব্যর্থতা আসলে বা কাঙ্ক্ষিত ফল না আসলে হতাশ হওয়া যাবে না। Certainly you will rise in future.
Graph of x-n/x+n:
এখানে (x+n)/(x-n) এর গ্রাফ বলতে বোঝানো হচ্ছে X এর সাথে যে কোন স্বাভাবিক নাম্বার 'n' যোগ করলে কিংবা বিয়োগ করলে যেটা হয় তার গ্রাফ। যেমন- (x-2) এবং (x+2) এর গ্রাফ।
(x+2) এর গ্রাফ:


(x-2) এর গ্রাফ: (গ্রাফটা নিচের মতই হবে। তবে হুবহু একই নয়)


এখানে, (x+2) এর ক্ষেত্রে 'x' এর সাথে '2' যোগ হওয়ার কারণে x এর গ্রাফ x অক্ষের ধনাত্নক দিকে ২ ঘর এগিয়ে গেছে। অন্যদিকে, (x-2) এর ক্ষেত্রে 'x' এর থেকে ২ বিয়োগ হওয়ার কারণে x অক্ষের ঝণাত্নক দিকে x এর গ্রাফ ২ ঘর পিছিয়ে গেছে।
এই (x+n) কিংবা (x-n) গ্রাফ দ্বারা জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস উপস্থাপন করা যায়। সেটা হচ্ছে 'বন্ধুত্বের প্রভাব/ সঙ্গীর প্রভাব'।
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম। আপনি যদি '+n' এর মত ভালো বন্ধু বা জীবনসঙ্গী পান তবে আপনার জীবনের গ্রাফ 'x' অক্ষের ধনাত্নক দিকে 'n' পরিমাণ এগিয়ে যাবে। যেহেতু 'x' অক্ষ মানুষের চিন্তাকে উপস্থাপন করে সেহেতু বলা যায় ভালো বন্ধু/সহকর্মী/সঙ্গীর প্রভাবে আপনার চিন্তাধারা তুলনামুলক পজিটিভ হবে।
অন্যদিকে, '-n' এর মত বন্ধু পেলে আপনার চিন্তাধারা 'n' পরিমাণ ঝণাত্নক হবে। ফলে আপনার জীবনের গ্রাফও ঝণাত্নক দিকে n পরিমাণ পিছিয়ে যাবে। আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে দেরী হবে।
তাই বলা যায়, সঙ্গদোষে লোহা ভাসে।B-)B-)
"Real line" represents 'real life' !!

Real line হচ্ছে এমন একটি রেখা যেটা পৃথিবীর সব নাম্বারকে উপস্থাপন করে। এই রেখার একদম মাঝে আছে '০' বিন্দু। ডানদিকে ধনাত্নক সংখ্যা চলে গেছে "+ infini-D" (ধনাত্নক অসীম সংখ্যা) পর্যন্ত এবং বামদিকে ঝণাত্নক সংখ্যা চলে গেছে "- infin-D" (ঝণাত্নক অসীম সংখ্যা) পর্যন্ত। এখন এই Real line কিভাবে Real life কে উপস্থাপন করে?

Real line :


মানুষের জীবনের শুরুটাকে যদি '০' দিয়ে উপস্থাপন করা হয় তবে পুরো জীবনটাই অনেকটা Real line এর মত। কোন ভাল কাজ করলে বা কোন কাজে সফল হলে সে "+ infini-D" এর দিকে এক ধাপ এগিয়ে যায়। আর উল্টোটা ঘটলে সে "- infini-D" এর দিকে এক ধাপ পিছিয়ে যায়। এভাবে জীবনের শেষে এসে সে যেকোন একটা পজিশনে স্থির হবে। তার কাজের উপর ভিত্তি করে সেটা ধনাত্নক অথবা ঝণাত্নক হবে।
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, Real line তো উভয়দিকে "+ infin-D" এবং "- infin-D" পর্যন্ত বিস্তৃত, কিন্তু মানুষের জীবনের কর্মফলও কি অসীম ? যেহেতু ভালো কাজ কিংবা সফলতা অথবা খারাপ কাজ কিংবা ব্যর্থতার আসলে কোন সীমা নেই; সেহেতু বলা যায় মানুষের কর্মফলের পরিসীমাও "+ infin-D" থেকে "- infini-D"।

৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×