আজকের দিনটাতে কাজের চাপের বাইরে যেয়ে একটু খোলাচোখে চারপাশে তাকালাম । সবকিছু কেমন যেন । অবশ্য আমার নিজের জীবনে অনিশ্চয়তার একটা ভাব আছে বলেই সবসময় নিজেকে ব্যস্ততায় মুড়ে রাখি।
দুপুরে অফিস থেকে বের হয়ে বনানী ক্লাব মাঠের যাচ্ছিলাম । বাসে উঠার আগে একটা রিকশায় উঠলাম । রিকশাওয়ালাকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিলো খুব । আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে বলল, স্যার, আজকের দিনটা খুব খারাপ গেল।
: কেন ?
: স্যার সকালে এক ভদ্রলোক আমার রিকশায় প্রায় দেড় ঘন্টা চড়লেন, ভাড়া হয়েছিলো ১৩০ টাকা । শেষমেষ তিনি ভাড়া না দিয়েই চলে গেছেন ।
আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না । একজন খেটে খাওয়া মানুষের পরিশ্রমের টাকা এভাবে কেউ মেরে খেতে পারে তা আমার কল্পনার বাইরে । আর ১৩০ টাকাতো অনেক টাকা । আমি তাকে কী বলব বুঝে পাচ্ছিলাম না । এই টাকা না পাওয়ায় সে সকালে কিছু খায় নি । আমি তার হাতে ভাড়ার চেয়ে বেশি কিছু টাকা দিয়ে অনুরোধ করলাম কিছু খেয়ে নিতে । আর সান্তনা দিলাম, যা হওয়ার হয়ে গেছে, এটা থেকে শিক্ষা নেন । বেচারা রংপুরের মানুষ, শুধুমাত্র সেখানে কোন কাজ নেই দেখে (তাঁর মতে) কষ্ট করে ঢাকা শহরে সে রিকশা চালাচ্ছে ।
বনানীতে কাজ শেষ হয়ে গেল ৩টার মাঝেই । হঠাত করে অনেকদিন পর বিকালে অবসর পেয়ে গেলাম । ঢাবি ক্যাম্পাসের দিকে রওনা দিলাম । কয়েকজন বন্ধুকে ফোন দিলাম, সবাই ব্যস্ত । একা একা কী করব খুঁজে না পেয়ে বইমেলায় ঢুকলাম । ২০১৬ সালে প্রথম বইমেলায় গেলাম । বইমেলায় যাওয়ার সময় আবার মজার কান্ড । কয়েকজন তরুণ-তরুণী এসে হাতে বইমেলার একটা লোগোর মত এঁকে দিলো ।
বইমেলা এখনও জমে উঠেনি । তবে কিছু দৃশ্য পরিচিত । জায়গায় জায়গায় সেলফী তোলার চেষ্টা । সুন্দর পরিপাটি উপস্থাপক-উপস্থাপিকাদের কিছুক্ষণ পর পর বিভিন্ন বিষয়ে রিপোর্ট করা । লিটল ম্যাগ চত্তর এখনও সুনসান । বই/ম্যাগাজিন আছে ভালোই তবে আগ্রহী দর্শক/ক্রেতা কম। মেলায় কর্পোরেট উপস্থিতি বেড়েছে অনেক । IFIC ব্যাংকের সৌজন্য বা আরও ভালোভাবে বললে বসুন্ধরা গ্রুপের সৌজন্য ষ্টলে ভরে গেছে চারপাশ । কর্পোরেটদের জন্য আলাদা একটা ব্লকই রাখা হয়েছে। একটু বাণিজ্যমেলা বাণিজ্যমেলা ভাব আছে । টাকা ছাড়া এখন কিছু হয় না। উন্নত বিশ্বে চলচ্চিত্র ব্যবসার চেয়েও বড় হচ্ছে প্রকাশনা ব্যবসা । আমাদের বইমেলায় এভাবে কর্পোরেট উপস্থিতি দেখলে মনে হতে পারে আমরা যেন উন্নত বিশ্বের দিকেই হাঁটছি । কিন্তু বাস্তবতা খুব সম্ভবত খুবই করুণ । পরিচিত মানুষ ছাড়া আর কারও কাছে লেখকরা বই বিক্রী করতে পারেন বলে মনে হয় না ।
তবে আমি নিজে প্রমথ চৌধুরীর নীতিতে বিশ্বাসী । লেখক লিখেন নিজের মনের আনন্দের জন্য । মনের মত করে লিখতে থাকলে আরেকজনকে আনন্দ দেওয়াটা এমনিতেই চলে আসে ।
আজকে আমি ২টা বই নির্বাচন করে রাখলাম কেনার জন্য । বই গুলোর নাম আমার অক্ষরে অক্ষরে মনে নেই ।
১) Underlying strategy of primary school education of Bangladesh, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা ।
২) Memories of midnight, Sydney sheldon .
আজকের দিনে ছাপা হওয়া বইয়ের তালিকায় লেখক হিসেবে যাদের নাম দেখলাম তারা বেশিরভাগই উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এবং প্রবাসী । বইমেলা এখনও বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত এবং কিছু পরিচিত মানুষের বাইরে সার্বজনীন হতে পারল না ।