somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নিবর্হণ নির্ঘোষ
আমি এক প্রব্রজ্যা , আয়ু ভ্রমণ শেষে আমাকে পরম সত্যের কাছে ভ্রমণবৃত্তান্ত পেশ করতেই হবে । তাই এই দুর্দশায় পর্যদুস্ত পৃথিবীতে আমি ভ্রমণ করি আমার অহম দিয়ে । পরম সত্যের সৃষ্টি আমি , আমি তাই পরম সত্যের সৃষ্ট সত্য !! nnhttps://nnirghosh.blogspot.com/

কাকতাল: ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে জন্ম নেয়া একটি ব্যান্ড !

১৫ ই জুলাই, ২০২৩ সকাল ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মে মাসের ১৫ কী ১৬ তারিখের এক রাত ।

মনটা প্রচণ্ড খারাপ হয়েছিল । যদিও কোন কালেই আমার মন ভালো থাকে না , সবসময় বিষণ্ণতা আর বিমর্ষতা আমাকে তাড়া করে বেরায় । তো সেদিনও আমি বিপর্যস্ত এমন নেতিবাচক আবেগ নিয়ে । সেসময় ইউটিউবে স্ক্রল করতে গিয়ে একটা নতুন ব্যন্ডের গানের সাথে পরিচিত হই । গানের নাম হলো “আবার দেখা হলে” । প্রথম সুর শুনেই গানটা বেশ মনে ধরলো । সাইকেডেলিক একটা সুর , যা সবসময় আমার পছন্দের । তো শুনে ভালো লাগাতে আমি এদের আরও গানের খোঁজ করলাম আর পেয়ে গেলাম “কাতর” নামের তাঁদের আরেকটি গান । খুব কম গান আছে যেসব গানে আমি কেঁদেছি , সম্ভবত একমাত্র এই কাতর গানটি শুনে আমি অঝরে কেঁদেছি !


যে ব্যান্ডের নাম বলছি তা হলো কাকতাল আর শুনে অবাক হবেন এই ব্যান্ডের জন্ম ঢাকার কেন্দ্রিয় কারাগারে !


২০১৮ সালে মিথ্যা মামলায় ৭ বছরের সাজা পাওয়া এক যুবকের মাধ্যমে আরও কিছু কারাবন্দীকে নিয়ে গঠিত হয় কাকতাল নামের এই ব্যান্ডটি । সেই সময় কারাগার কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় যে কারাবন্দীদের মধ্যে সৃজনশীল কাজের মধ্যে নিয়োজিত করা । সে সময় কিছু বাদ্যযন্ত্র কারাগারে আনা হয় । ধীরে ধীরে বাদ্যযন্ত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । এই সময় আসিফ কারাগারেই তৈরী করে “মননচর্চা” নামের একটি সংগঠন । যাদের কাজ হলো কারাবন্দীদের মধ্যে বেশি করে সৃজনশীল কাজের প্রচার ও কারাবন্দীদের সুষ্ঠু মননচর্চার ভেতর দিয়ে সংশোধানয়ন করা । আর এরই ফলপ্রসূতে জন্ম নেয় কাকতাল ।


আসিফ

আসিফ ২০২১ সালে কারামুক্তি পায় । এরপর স্বাধীনভাবে যাত্রা শুরু করে কাকতাল । তবে মজার ব্যাপার হলো আসলে এই ব্যান্ডের কোন লাইন আপ নেই । কারণ কারাগারে যারা ছিল তারা হয় কেউ সাজামুক্তি পেয়েছে কেউ পায়নি । তাই এই ব্যান্ডে স্থায়ী সদস্য একজন আর সে হলো আসিফ !

এই ব্যান্ডের গানগুলো শুনলেই বোঝা যায় যে গানের কথাগুলো হলো ছিটকে পড়া মানুষদের আবার ফিরে আসবার গান । কিংবা বলা যায় আবার ঘুরে দাঁড়ানোর গান । যা গেছে তাকে আর না জড়িয়ে যা আছে তাকে জড়িয়ে ধরে বাঁচবার গান । কাকতালের অনেক গানকে স্বাভাবিকভাবেই প্রেমের গান বলে মনে করা হয় আসলে তা নয় । এই যেমন ধরা যাক আবার দেখা হলে গানটি । এই গানটি আসিফ লিখেছে আবার যদি প্রিয় মানুষদের সাথে যারা জেল খানার বাইরে আছে কিংবা ভেতরে আছে তাদের সাথে দেখা হয় তবে যেন সেই আগের মতই টানটা থাকে । অনবদ্য এক গান । এছাড়াও তাদের কাতর গানটিও ছিটকে পড়া মানুষের আবার ফিরে আসা , আবার নিজের সৃজনী শক্তি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো ও এগিয়ে যাবার কথা বলা আছে ।


এটা সত্যিই প্রশংসনীয় কাজ যে, আসিফের মত এক যুবক যে মিথ্যা মামলার আসামি আবার একই সাথে দণ্ডপ্রাপ্ত । কিন্তু দমে না গিয়ে বরং কারাবন্দী অপরাধী যারা আছেন তাদের কীভাবে আবার তথাকথিত সমাজচ্যুত থেকে আবার সমাজাধীনে নিয়ে আসা যায় এবং কীভাবে আবার তাদের সামাজিক মানুষ করা যায় ও অপরাধ জগত থেকে ফিরিয়ে আনা যায় তাই নিয়ে কাজ করে গেছেন । কারাবন্দীদের নিয়ে গান করেছেন , তাদের ভাবনা প্রকাশের সুন্দর মাধ্যম শিখিয়েছেন , নিজেকে প্রকাশ করবার ও ভাববার জন্য তিনি সুন্দর উপায়টাকে হাতে ধরে শিখিয়ে দিয়েছেন । এই পথ ধরে হয়তো বিরাট কিছু হবে না । কিন্তু আইনি শাস্তি পাওয়া মানুষগুলো নেতিবাচক চিন্তা নিয়ে বখে না গিয়ে বরং আবার বাঁচবার ও একই সাথে সুন্দরের পথে আসবার চেষ্টা করবে, এটা কী কম ?


কাকতালের কোন অ্যালবাম নেই তবে ইউটিউবে এদের অনেক গান আছে সেসব থেকে কয়েকটি এই পোস্টে যুক্ত করে দেয়া হলো । আমন্ত্রণ রৈল আপনাদের তাদের গান শুনবার !


কাকতালের জন্য শুভকামনা রৈল । আমি আশাবাদী একদিন তারা পাথরের বুকে মৃদু স্পন্দন তারা খুঁজে পাবেই পাবে আর সেটা গানের মধ্য দিয়ে !!



বিশেষ কৃতজ্ঞতা: সহব্লগার ও বন্ধু অধীতিকে , তার থেকেই আমি কাকতালের এই কারাগারের ঘটনাটি জানতে পাই !!






সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০২৩ সকাল ৯:৫৪
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×