আয়নাবিবি আপা কেমন আছো ?
এই প্রশ্নটা করতে গিয়ে কিছুক্ষণ থমকে ছিলাম আমি , এই যে তুমি যাকে আমি আয়নাবিবি আপা বলে ডাকি তার অস্তিত্বটুকু কী কেবল ভার্চুয়ালি ? নাকি ভার্চুয়াল দুরত্ব ছাপিয়েও তুমি আসলে অস্তিত্ববান আমার কাছে ? হয়তো তাই , না হলে তোমাকে লিখবো কেন ? যদিও আমার এই লিখাটাও বায়বীয় কিন্তু তাতে কী তুমিও নাহয় আমার মত ভেবে নেবে যে এই চিঠি পূর্ণ বাস্তব যেমন তুমি ভার্চুয়াল দুরত্ব ছাপিয়েও আমার কাছে খুব বাস্তব কেউ !!
সে যাক , আশা করি ভালো আছো তুমি । কেন যেন মনে হচ্ছে তুমি আসলে বাংলাদেশে এসেছো । আমার ধারণা দেশে এলেই তুমি সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করো তুমি । নিজেকে লুকিয়ে রাখবার ও সব কিছু থেকে দূরে থাকবার একটা অদ্ভুত আচরণ তোমার আছে বলে আমার মনে হয় । এই বদঅভ্যাস আমারও আছে । নিজেকে গুটিয়ে রাখবার মত অভিমান কী করে তোমার জন্মালো আমি জানি না । তবে এইটুকু আমি জানি এই অভিমানকে এড়ানো যায় না । কেন যায় না তা আমি বুঝি কিন্তু বোঝাতে পারবো না । কারণ ঐ যে মনোজগতে এমন কিছু থাকে যা গাঠনিক ভাষাতে বোঝানো যায় না সেটা বুঝে নিতে হয় মনোজগতের অলিন্দে যতটুকু অনুভবের রোদ পড়ে তার আলোতে ।
কিছুদিন আমার মাথায় একটা বিষয় মাথায় ঘুরছে । সেটা তোমাকে জিজ্ঞেস করতে যতবার ব্লগে ঢুঁ মারলাম দেখলাম তুমি নেই । প্রশ্নটা আমার ভেতরে ছটফট করেছে আর আমি ছটফট করেছি তোমাকে সেই প্রশ্নটা না করতে পেরে । তবে একদিক থেকে ভালো হয়েছে , আমার চেনা চিরাচরিত অস্বস্তিকে এক পাশে রেখে আমি আপন করে নিয়েছি নতুন অস্বস্তি । আর ধীরে ধীরে আমার প্রশ্নটা নিবিড়ে নিজের ডালপালা ছড়িয়ে যাচ্ছিল নির্বিঘ্নে ।
প্রশ্নটা হলো , “ একজন বোবা মায়ের কী কখনও নিজের সন্তানকে ঘুম পাড়ানি গান না শোনাতে পারবার বেদনা তাড়া করে ? তার মধ্যে একটা হাহাকার একটা যন্ত্রণা , একটা না পাওয়া নিদেন পক্ষে একটা শূণ্যতা কাজ করে কী ? নাকি তার এসবে কিচ্ছু যায় আসে না । সন্তানের প্রতি অপ্রতিম স্নেহ তাকে এইসব ভাবতে দেয় না । ভালোবাসা কী তার অপূর্ণতাকে মিলিয়ে দেয় ?”
প্রশ্নটা হয়তো ছেলে সুলভ কিংবা অমূলক । কিন্তু গভীরে ভাবলে , হুদয় দিয়ে ভাবলে এই প্রশ্নটাকে মনে হবে গুরুত্বপূর্ণ । আমার মনে হয় না তোমার কাছে এই প্রশ্নকে অমূলক মনে হচ্ছে । আমি জানি না তুমি এই চিঠি পড়বার পর ক্রমে ক্রমে প্রশ্নটি তোমার ভেতর বড় হতে থাকবে কিনা যেমনটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে বারংবার । জানো আপা, উত্তরের খোঁজ করতে গেলে দেখেছি প্রশ্নটার বৃদ্ধি আরও বেড়ে যায় ! দ্বিগুণ থেকে বহুগুণ হয়ে যায় এর ব্যপ্তি !
যেমন হবে হোক প্রশ্নটা জানালাম উত্তরটা পারলে জানিয়ো !
তুমি অনেকটা সময় জুড়ে ব্লগে নেই । আমি জানি না আগেও এমনটা হয়েছে কিনা হলেও কতটা সময় ধরে ছিলে না তা জানি না । যদিও আগে বলেছি যে মনে হচ্ছে তুমি ভালো আছো কিন্তু আবার এই আশংকা হচ্ছে তুমি অসুস্থ নও তো !! জানি না , মাঝে মাঝে এই না জেনে থাকবার ব্যাপারটা যন্ত্রণা বাড়ায় । এইজন্য নয় যে আমি জানছি না তাই , এই জন্য যে ঠিক তখন মনে হয় একটা মায়া আষ্টেপৃষ্টে বেড়ে উঠছে ! তোমার হয়েছে এমনটা ? মায়ার মায়াজালে হাঁসফাঁস করবার ব্যাপারটা ? কেমন করে সামাল দাও ? আমাকে জানিয়ো , আমি পরের বার থেকে সেভাবে সামাল দেব !!
আজ একটা পরীক্ষা ছিল । পরীক্ষা দেবার আগে করিডরে দাঁড়িয়েছিলাম , ঝুম বুষ্টি নামলো । আমি গাইতে শুরু করলাম কবির সুমনের “ সাড়া দাও ” গানটা । এতটাই মগ্ন হয়ে গাইছিলাম যে আমার পাশ থেকে কেউ আমাকে ডাকছে এটাই আমি শুনতে পাইনি । আমার খুব কাছে এসে একজন বলল , “ তোর খুব মন খারাপ কী ? ” তার উত্তরও দিতে পারিনি । এতটাই নিবিড় মনে গাইছিলাম । এখন মনে হচ্ছে আমি কাকে সাড়া দিতে বললাম ? কিংবা সুমন কাকে সাড়া দিতে বলল ? তোমাকে ? হাহাহাহা , হয়তো !! তুমি তো লাপাত্তা , তোমাকে উদ্দেশ্য করে এমন আবেদনময়ী গান গাওয়াই যায় তাই না !
এই অযথা চিঠিটা এখানেই শেষ করছি । আচম্বিত এই চিঠি লিখবার প্রয়োজন হলো বলে এক ভার্চুয়াল আপাকে লিখলাম এক বায়বীয় চিঠি । জানি না এর পেছনে কী অনুঘটক কাজ করছে । হয়তো কিছু একটা হবে । শেষ মেশ বলতে চাই আপা ,
“ ফড়িংয়ের ডানাতেও এ জীবন দেয় ডাক
বেঁচে থাক সব্বাই , হাতে হাত রাখা থাক!
সাড়া দাও
সাড়া দাও সাড়া দাও
উদাসী থেকো না সাড়া দাও । ”
কী আপা , সাড়া দেবে, সামুর ডাকেতে ? যত তাড়াতাড়ি পারো সাড়া দাও, উদাসীন থেকো না সাড়া দাও !!
ইতি
এক প্রব্রজ্যা
নিবর্হণ নির্ঘোষ !!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:০৩