somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“প্রতিশ্রুতি” পর্ব- ০৪

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“প্রতিশ্রুতি” পর্ব- ০৪
-
আমি ওকে রাগানোর জন্য উক্ত কথাটি বলেছিলাম । কিন্তু এটা ভাবিনি যে ও এভাবে কথাটার প্রতিক্রিয়া করবে । ব্যাপারটা নিজের কাছেই কেমন জানি লাগলো । নাহ! আজ একবার যাবো ওদের বাসার সামনে । যে ভাবা সেই কাজ । ওদের বাসার উদ্দ্যেশে রওনা হলাম । বিকাল তখন ৬ টা বাজে । শীতকাল, তাই সন্ধ্যা হয়ে যায় একটু তারাতারিই । বাসার সামনে আমি ল্যাম্পপোস্টের মতো দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু আজ তোমার কোনো সারাশব্দ নেই । আমারও খুব রাগ হলো । কিন্তু কি আর করার । দোষ তো সব আমারই, কেন আমি ঐদিন কথাটা বলতে গেলাম ।
-
যাই হোক, অনেক অপেক্ষার পর তুমি আসলে । কিন্তু তুমি আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে রইলে । তাতেও আমার অনেক রাগ হলো । আমার রাগটাকে কোনোরকম সামলে রাখলাম । তোমার এমন ভাব দেখে আমার ইচ্ছে করছিলো তোমাকে ডাক দেই । তোমাকে ডাক দিব কীভাবে? তোমার নাম তো আমার জানা নেই । মনে মনে বলতে লাগলাম – “সেদিন কি ভুলটাই না করলাম । তোমার নাম জিজ্ঞেস করলে আজ তোমাকে তোমার নাম ধরে ডাকতে পারতাম । তোমার মুখ আমার দিকে ফেরাবার কতই না চেষ্টা করলাম । কিন্তু পারলাম না । রাগে গজগজ করে আমি বাড়ি ফিরবার জন্য চলে আসলাম ।
-
আজ আমি স্কুলে যাইনি । তোমার সাথে কথা বলার জন্য আমি দাঁড়িয়ে রইলাম সেই তিন রাস্তার মুখে । যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম । আমি সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখতে পাচ্ছি তুমি এদিকে আসছো । কিছুটা আসার পর আমি হাঁটতে হাঁটতে তোমাকে বললাম –
_ “একটু দাঁড়াবেন । আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল” ।
_ “আমার সাথে আপনার কিসের কথা থাকতে পারে? আপনার আমাকে কিছু বলার থাকলেও, আপনাকে আমার কিছু বলার নেই” ।
_ “এভাবে রগচটা কথা বলছেন কেন? আমি কি বলতে চাচ্ছি সে কথাটা একটা বার শুনার চেষ্টা তো করুন” ।
_ “বলি, আমি কেন আপনার কথা শুনতে যাব?” ।
নিজের মন কে বলতে লাগলাম, মেয়েটির আসলেই অভিমান আছে । আমার তো এমন অভিমানিই প্রয়োজন ।
_ “ইয়া মানে না, আমি আপনাকে বলছিলাম যে গত পরশু আপনাকে আমি যা বলেছিলাম তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন । আমি আপনাকে পরিক্ষা করার জন্যে ও কথাটি বলেছিলাম” ।
_ “আজব!! আপনি আমাকে পরিক্ষার করার কে” ।
_যাই হোক, আপনার এটা বুঝা উচিৎ ছিল যে আমি আপনাকে যাই বলে থাকি না কেন আমি কিন্তু আপনাকে এক পলক দেখার জন্য আপনার বাসার সামনে গিয়েছিলাম । আপনি আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে ছিলেন” ।
_ “আমার মুখ । আমার মুখ নিয়ে আমি যেদিকে মন চায় সেদিকেই চেয়ে থাকব তাতে আপনার কি”?
বুঝলাম, মেয়েটি কথায় কথায় এক কথাই বলছে বার বার । তার বেশি কথা না বলেই তাকে জিজ্ঞেস করলাম –
_ “আচ্ছা আপনার নাম কি সেটা অন্তত বলেন” । (এটা বলার পর ভাবছিলাম এখনো যদি বলে “আমার নাম আপনাকে বলতে যাব কেন?”)
_ “আমার নাম অরুণিমা । তবে আপনি আমাকে অরু বলেই ডাকতে পারেন” ।
_ “আপনার নাম তো খুবই সুন্দর । নামের বাহার আছে । ঠিক আছে আপনি আপনার স্কুলে যান, আমিও আমার বাসায় চলে যাই” ।
-
এই বলে আমি চলে আসলাম আমার বাসায় । এসেই ভাবতে লাগলাম তোমার কথা । আসলেই তুমি অনেক সুন্দর কথা বলতে । যদিও তুমি অনেক রাগী এবং অভিমানী ছিলে, তারপরেও তোমাকে আমার মনে অনেক ধরেছিল । আমি তোমাকে নিয়ে সারাক্ষণ ভাবতাম ।
-
আজ মা আমাকে তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছেন যে - তুমি কে । উত্তরে আমি বলেছিলাম – স্কুল ফ্রেন্ড । এরপর মা তোমার প্রশংসা করতে লাগলেন – “মেয়েটা বড় ভালো । তুই (আমি) যখন অসুস্থ্য ছিলি তখন তোর আর কনো বন্ধুরা না আসলেও মেয়েটি ঠিকই এসেছিল তোর খোঁজখবর নিতে । শুন, তুই ওকে কখনো ভুলে যাস নে । মেয়েটি বড়ই ভালো” । মার মুখে তোমার কথা শুনে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম । কেনোনা আমার মায়ের তোমাকে অনেক ভালো লেগেছে ।
-
তোমাকে আমি প্রতিদিন মিস করতাম । পড়াশোনা শেষে বাকি যেটুকু সময় পেতাম তার সবটুকু সময় দিতাম তোমাকে নিয়ে ভাবায় । তোমাকে নিয়ে আমি ধীরে ধীরে ঘর বাঁধার স্বপ্ন বুনতে থাকি । আমি তোমার সহিত আস্তে আস্তে খুব ভালো একজন বন্ধু হয়ে যাই । আমি জানতাম তুমিও আমাকে অনেক পছন্দ করতে । আমি যদি সেই তিন রাস্তার মোরে না দাড়াতাম তখন তুমি আমাকে গালমন্দ করতে । তোমার বাসার সামনে না দাড়ালে আমার কান ধরে বলতে আমি আজ কেন যাইনি তোমার বাসায় । তুমি আমাকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলছো সেটা আমি বুঝতে পারতাম । কিন্তু তুমি সে কথা বলতে চাওনি । তোমার সাথে আমার আপনি আপনি করে সম্বোধন থেকে তুমি তে চলে যায় । আমরা অনেকটা ক্লোজ হয়ে যাই । ধীরে ধীরে দুজনের কাছে দুজনার নাম্বার দেওয়া-নেওয়া হয় ।
একদিন আমি তোমাকে ফোনে বলছি –
_ “অরু আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই” ।
_ “কি বলবে বলো । একটি কেন, হাজারটি বলো” ।
_ (আমি সাতপাঁচ না ভেবেই হুট করে বলে ফেলি) “আমি তোমাকে ভালোবাসি” ।
তুমিও সেদিন আমাকে বলেছিলে যে তুমিও আমাকে ভালোবাসো । কিন্তু কোনোদিন বলার সাহস পাচ্ছিলে না । বলেছিলা, আমি তোমার মুখ থেকেই শুনতে চেয়েছিলাম ভালোবাসার অমর বাক্যখানি । আমি তোমাকে পাগলি বলেছিলাম । তুমি অনেক খুশি হয়েছিলে ।
-
আজ তোমার জন্মদিন । তুমি তোমার বাবা-মার একমাত্র আদরের মেয়ে । তোমার জন্মদিনে অনেক মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হলো । আমি দাঁড়িয়ে আছি তোমার বাসার সামনে । দাঁড়িয়ে ভাবছি এতদিন শুধু এখানে দাড়িয়েই তোমাকে দেখে গেছি, আর আজ তোমাকে দেখতেই আমাকে ভিতরে যেতে হবে । আবার এও ভাবছি আমি তোমাকে দেখতে গেলে যদি তোমার বাবা আমাকে কিছু বলেন । কারণ আমার ভালো পোশাক-আশাক ছিলো না যা পরে যাবো তোমার জন্মদিনের দিন । তখনি হটাৎ তোমার কথাটি মনে হলো, তুমি আমাকে বলেছিলা – “আমি যদি না আসি তো তুমি কেক কাটবে না । আমাকে আসতেই হবে” । আর কিছু না ভেবেই ভিতরে চলে গেলাম ।
-
ভিতরে যাওয়ার পর দেখলাম নানা সম্প্রদায়ের মানুষ । সবাই ভালো মানের পোষাকআশাক পরে এসছে । বাচ্চারা খেলছে । আর কিছুক্ষণ পরেই কেক কাটার সময় । আমি তোমার দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি । ভিতরে ডুকার সাহস পাচ্ছি না । ঠিক তখনি আমাকে আমার নাম ধরে ডাক দিলে । বললে কাছে যেতে । গেলাম, যাওয়ার পর তোমার বাবাকে দেখেই আমি অনেকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । ভাবছিলাম যদি উনি আমাকে কিছু বলেন । নাহ আমার ভয়টা ছিল শুধুই ভিত্তিহীন । তোমার বাবা যে এত ভালো তার ধারণা আমার আগে ছিল না । আমি তোমার বন্ধু শুনে উনি আমাকে কাছে যেতে বললেন । এরপর বললেন – “বাবা তুমি ওর বন্ধু শুনে আমি খুবই খুশি । আমরা এ এলাকায় নতুন এসেছি । অরুণিমা আমাদের সাথে আসতে চায় নি । ও জায়গা পরিবর্তন করতে পছন্দ করেনা । আমি ভাবছিলাম আমার মেয়েটা এখানে এসে কারো সাথে মিশতে চাইবে না । জানো বাবা ও সহজে কারো সাথে মিশতে চায় না বা বন্ধুত্ব করতে চায় না । তোমাকে যখন ও ডাক দিলো তখনি আমি ঠাহর করলাম যে তুমি ওর বন্ধুই হবে । আমি অনেক খুশি যে তোমার সাথে ওর বন্ধুত্ব হয়েছে” ।
-
তোমার বাবা আমার সাথে যেভাবে কথা বলছিলেন মনে হচ্ছিল যে উনি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন । আসলেই তোমার বাবা অনেক ভালো মনের মানুষ । আমি না জেনেই অযথা ভয় পাচ্ছিলাম । সেদিন তোমার কেক কাটার পর তোমার বাবা মাকে আগে খাওয়ালে, এরপর আমাকে । সবাই যার যার মতো গল্পগুজব করছিল । আর তুমি গল্প করছিলে আমার সাথে । আমিও সেদিন অনেক খুশি ছিলাম তোমার আনন্দ-উল্লাস দেখে ।
-
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×